জীবনে চলার পথে অর্জিত কিছু সামাজিক অভিজ্ঞতা। জেনারেল রাইটিং।
জীবনে চলার পথে অর্জিত কিছু অভিজ্ঞতা
আজ আপনাদের সঙ্গে একটা জেনারেল রাইটিং শেয়ার করব। অর্থাৎ জীবন দর্শন নিয়ে আমার কিছু সংক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনা। মানুষের অন্তরে যেমন একটি শিশুত্ব থাকে, ঠিক তেমনি থেকে যায় একটি দানবীয় চরিত্র। এ এক অদ্ভুত লক্ষণীয় বিষয়। একজন মানুষকে যখন খুব কাছ থেকে দেখবেন, তখন হয়তো তার সার্বিক চরিত্র সম্বন্ধে একটি ধারণা লাভ করবেন। কিন্তু সেই মানুষটিই আবার কখনো কখনো আপনার সামনে প্রকাশিত হবে তার দানবীয় চরিত্রের দিকটি উন্মোচিত করে। তখন তাকে যেন চিনতেও কিছুটা সময় লেগে যাবে আপনার। আসলে জীবন এক স্রোতের মত। প্রয়োজন মত কোন দিকে যে বেঁকে যায় আর কোন গন্তব্যে ধাবিত হয় সে যেন নিজেও বুঝে ওঠা যায় না। আর সেই এঁকেবেঁকে চলার রাস্তাটিতে প্রচুর মানুষ আসবে এবং যাবে জীবনে। এমনও হয় কিছু কিছু মানুষের সাথে হঠাৎ পরিচয় হয়, বন্ধুত্বের বন্ধনে জড়িয়ে যায় তারা। কত আদান-প্রদান, ভাব বিনিময় এবং গল্পগুজব। সবকিছু নিয়ে দিন কেটে যায় নিজের মত। কিন্তু হঠাৎ কোন একদিন ছন্দপতন ঘটে সবকিছু। কোন অনভিপ্রেত ঘটনা থমকে দেয় সেই বন্ধুত্বের অভিমুখ। আর তখন থেকে সেই সম্পর্ক যতটা দূরবর্তী হয়ে যায় তা যেন এক কথায় চলে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন কত মানুষ জীবনে এসেছে এবং গেছে। আমি জানি আপনাদের ক্ষেত্রেও এসেছে।
জীবনের ফেলে আসা দিনগুলিতে মিশে থাকা কিছু মানুষের কথা এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়বার সময় এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল আমার। নাম ধরে নিন চিরন্তন (নাম পরিবর্তিত)। তার সঙ্গে দুটি বছর বেশ ভালো কেটেছিল। তখন দুজনে একসঙ্গে পড়তে যাওয়া, আড্ডা মারা এবং গান-বাজনা করার মাধ্যমে ভীষণ এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যেন তাকে ছাড়া তখন কিছুই বুঝিনা। কিন্তু কোনো একদিন যে তার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছেদ হয়ে যাবে, এমন কস্মিনকালেও ভাবিনি তখন। কিন্তু বাস্তবটা দেখুন কত কঠিন। তার একটি ব্যবহার আমায় এমনই পীড়া দিয়েছিল যে তারপর থেকে আর কোনদিন বসাই হয়নি আমাদের। মাঝখানে কেটে গেছে দীর্ঘ প্রায় তেইশটি বছর। হঠাৎ কিছুদিন আগে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং মাধ্যমে তার ছবি দেখে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম। সেখানে কথা হলো কিছুক্ষণ। কিন্তু সেই একবারই। জানেন মাঝের ২৩টি বছর সেই যে দীর্ঘ ছেদ, তা আর জোড়া লাগেনি কোনদিন। এমনই হয় জীবনের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া কিছু সম্পর্ক। যেন আগন্তুকের মতো আসে হঠাৎ, আবার হারিয়েও যায় নিজের খেয়ালে। যেমন এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি। মা বলেন, আমি নাকি নিজের জিনিসপত্র দান করে দিতে বেশি সাবলীল ছিলাম। যদিও আজও কাউকে না করতে পারিনা খুব একটা। কাউকে কিছু দিয়ে মুখে হাসি টুকু দেখলে আনন্দ হয় বরাবরই। এইতো সেদিন, নতুন একটি হেডফোন কিনলাম অনলাইন শপ থেকে। এরপর আমার ভাই এসে বলল হেডফোনটি খুব ভালো৷ তখন তাকে দিয়ে দিলাম এবং তার সেই হাসিটুকু আমার অনেক বড় প্রাপ্তি হিসেবে বিবেচনা করলাম। কাউকে কিছু দিয়ে দেখবেন, এক পরম আনন্দ এবং শান্তি ভর করে মানুষের মধ্যে। তাহলে এই অনুভূতি কি আপনার শিশুত্ব? আসলে প্রতিটি মানুষই শিশু হতে ভালোবাসে। আর সেই ছেলেবেলাটুকু ফিরে পাওয়ার লোভ আজীবন তাড়া করে বেড়ায় প্রতিটি মানুষকে। এই যে নিজের মধ্যে নিজে একটি জগত তৈরি করা অথবা নিজের মত করে অন্য মানুষকে প্রতিক্রিয়া দেওয়া, এসবই মানুষের সহজ সহজাত বৈশিষ্ট্য। আর মানুষ এমন একটি যার মধ্যে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর বিচার করে মন ও মানসিকতার পরিবর্তন বড় সাধারণ একটি বিষয়।
ধরুন আপনি একজন মানুষের থেকে এক্ষুনি সুন্দর একটি জবাব পেলেন, কিন্তু তার কিছুক্ষণের মধ্যেই যে আপনি তার বিকৃত মানসিকতার পরিচয় পাবেন না তা কিন্তু নয়। তাই আজকের যুগে মানুষের সঙ্গে বড় বুঝে মিশতে হয়। হেঁটে যাওয়ার নাম জীবন। আর সেই জীবনে জুড়ে আছে বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপট। মানুষ যতই একা থাকতে চাক, দিনের শেষে সে আশপাশের জগৎকেই হাতড়ে বেড়ায়। প্রতিটি মানুষের একটি নিজস্ব চাহিদা আছে। আর সে সবকিছুকেই মিলিয়ে দেখতে চায় সেই চাহিদার সাথে। যদি তার সামান্যও হেরফের হয়, তবে তার ভেতরে থাকা একটি অচেনা মানুষ যেন ফুটে বেরিয়ে আসে তৎক্ষণাৎ। আর তার ফল ভুগতে হয় সেই মানুষটির আশেপাশে থাকা আরো বহু মানুষকে।
কি বন্ধুরা? নিশ্চয়ই আপনারাও মিলিয়ে দেখছেন নিজেদের জীবনের সাথে? একটু গভীরভাবে ভাবুন তো। মিলে যাচ্ছে না আপনার জীবনের সাথে? আপনিও কি সেই একটি নির্দিষ্ট চাহিদার বশবর্তী হয়ে মিলিয়ে দেখতে চান আপনার আশপাশটা? তবে এখনই থেমে যান। যা পেয়েছেন আর যা পাবেন তাতে যদি হাসিমুখে থাকতে পারেন তবে জীবনে আর কিসের সমস্যা? জীবনে তো একমাত্র সারসত্যটির নাম মৃত্যু। আর মাঝখানের এই যাত্রাপথটুকু যেন এক রঙ্গমঞ্চ। তবে আমরা কি চেষ্টা করতে পারিনা সেই রঙ্গমঞ্চে একজন দক্ষ অভিনেতার মত নিজের হাসিমুখটুকু সামনে দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে? আপনিও তো জানেন, কমেডির কত চাহিদা। ট্রাজেডি কার জীবনে নেই। তাই সেই ট্রাজেডির উপরেও যদি আপনি কমেডিতে আশ্রয় করতে পারেন তবেই তো কেল্লাফতে। না থাকবে দানবীয় আচরণ আর না থাকবে শিশুর মতো কল্পনা। মাঝখানে আপনিও ভীষণ দক্ষ ভাবে বানিয়ে নিতে পারবেন একটি কংক্রিটের সেতু।
ধন্যবাদ সকলকে। জীবনের প্রতি আমার সংক্ষিপ্ত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম আজ। ভালো লাগলে বা সহমত হলে নিশ্চয়ই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। আর যদি অন্য কোন বক্তব্য থাকে তাও জানাবেন। আজকের এই কঠিন জীবনে সকলের জন্যই এই বিষয়ে একটি সার্বিক আলোচনা বড় প্রয়োজন।
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
খুব সুন্দর চিন্তা ভাবনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইয়া। বেশ ভালো লাগলো এত সুন্দর সুন্দর চিন্তা গুলো এবং কথাগুলো। আসলে আমরা আমাদের জীবন সংগ্রামের মধ্যে অনেক কিছু ভুলে থাকি। কিন্তু বাস্তবতা এবং বাস্তব জীবনের বেশ কিছু বিষয় এড়িয়ে যায়। ঠিক তেমনি অনেক কিছু চিন্তাধারা মাথায় আনার সুযোগ করে দিয়েছেন এই পোস্টে।
আপনার সুচিন্তিত মন্তব্য ভীষণ ভালো লাগলো। আপনি যে আমার পোস্ট পড়ে নিজের অনুভূতি থেকে কিছু কথা বললেন সেটা বড় ভালো লাগলো৷ হেঁটে চলার পথে হয়ত এই চিন্তাটি বড় প্রয়োজনীয়। তবেই নিজেকে শোধন করে এগিয়ে চলা যায়। খুব ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।