হঠাৎ কিছুক্ষণ পানিহাটি মহোৎসব মেলায়

in আমার বাংলা ব্লগ26 days ago

পানিহাটি মেলায় কিছুক্ষণ


🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻


IMG_20240630_182527_229.jpg

💮সকলকে স্বাগত জানাই💮

🌸🌸🌸

☘️নমস্কার বন্ধুরা। আজ আসুন একটু সবাই মিলে মেলা ঘুরে আসি। মেলা হল বাঙালীর প্রাণোচ্ছলতার উৎসস্থল। তেমন একটি মেলায় আজ কিছুক্ষণ☘️



মেলায় যেতে বরাবরই আমার ভালো লাগে। ব্যস্ত জীবনের কোলাহলে এ যেন কয়েক ঘন্টার এক অদ্ভুত প্রশান্তি। এখন আমার একাদশবর্ষীয় কন্যারত্নটিকে সঙ্গে লইয়া তাহার বিভিন্ন কৌতুহল মূলক প্রশ্নোত্তর জালে নিজেকে বিদ্ধ করিতে করিতে ভ্রমণ ও পরিদর্শন আমার একটি নিত্য অভ্যাসে পরিণত হইয়াছে। রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালার কথা মনে পড়ছে? না গুরুচণ্ডালী দোষ করিনি। ইচ্ছাকৃতভাবেই নকল করলাম কাবুলিওয়ালাকে। মিনি খুকি আর রহমতের যে সমীকরণ গড়ে উঠেছিল, আমার একাদশ বর্ষীয় কন্যাটি যে এমন বহু রহমতকে আশপাশে নিয়ে বেড়ে উঠেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং সবকিছুর শেষে তার সমস্ত প্রশ্নবাণের একমাত্র নিশানা যেন আমি।

IMG_20240630_182649_479.jpg

তো যাই হোক আমি আর সে দুজনে ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গেলাম সোদপুরে গঙ্গাতীরবর্তী পানিহাটি অঞ্চলের দণ্ডমহোৎসব মেলায়। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী ভক্তদের কাছে এ এক বিরাট উৎসব। রঘুনাথ দাস গোস্বামী ঠাকুরের স্মৃতি ধন্য এই উৎসবে দিগ্বিদিক থেকে লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থী আসেন এখানে। রঘুনাথ দাস গোস্বামী ছিলেন শ্রীচৈতন্য পর্ষদ এবং বাংলার বিখ্যাত সপ্তগ্রাম অঞ্চলের জমিদার পুত্র। পানিহাটির মহোৎসবতলা ঘাটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। শ্রীচৈতন্যদেবের সময়ে শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু যখন খড়দা গ্রামে কুঞ্জ বাটিতে বসবাস করতেন, তখন নিয়মিত ভক্তদের সঙ্গে আসতেন পানিহাটিতে গঙ্গার ধারে এই অঞ্চলে। চলতো নিয়মিত কীর্তন ও ভাগবত পাঠ। সেখানেই রঘুনাথ দাস একদিন শাস্তি স্বরূপ নিত্যানন্দ আদেশে সকলকে চিড়া দধি মেখে খাইয়েছিলেন। সেই থেকেই তাঁর স্মৃতিতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চিড়া দধি উৎসব। যাকে বলা হয় দণ্ডমহোৎসব।

IMG_20240630_182520_404.jpg

ভাগ্যক্রমে আমার বাড়ি তার কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিবছর পৌঁছে যাই এই মেলায়। ছোট্ট পরিসরে মেলা হলেও তা ভীষণ প্রাণবন্ত। কি নেই সেখানে? নাগরদোলা, ঘোড়া দোলা, বিভিন্ন রকমের স্টল, ম্যাজিক শো, বাসন-কোসন সব রকম পসরা সাজিয়ে দোকানিরা বসেছেন সারিবদ্ধ হয়ে। আমি আর আমার কন্যা প্রথমেই গিয়ে চড়ে বসলাম ডিস্কো ড্যান্সার নামক রাইডে। ৫০ টাকার বিনিময়ে বেশ কিছুক্ষণ রোমাঞ্চকর আনন্দ লাভ। সেখানে আপনাকে বনবন করে ঘুরিয়ে এক অদ্ভুত শিহরণ জাগানো হবে। আর তার জন্য আমরা বেমালুম ৫০ টি টাকা তুলেও দিই তাদের হাতে। আমিও দিয়েছিলাম। আর পরিবর্তে নিয়েছিলাম কিছুক্ষণের খুশি। এরপর মেয়ে বায়না ধরল ফুচকা খাবে। যারা কলকাতার রাস্তায় নিয়মিত চলাফেরা করেন তারা ফুচকার স্বাদে সকলে কমবেশি অভ্যস্ত। তাই মেলায় এসে ফুচকা, জিলিপি না খেলে যেন মহাপাপ এমন বোধ বহু বছর ধরেই বাঙালীকে গ্রাস করেছে। আমিও তদভিন্ন নই।

FunPic_20240705_223751171.jpg

মেলা হল বাঙালীর বারো মাসের চোদ্দ নম্বর পার্বণ। পানিহাটির মেলা বহু প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ। বর্তমানে এখানে ইসকনের মন্দির প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও রাঘব ভবন এবং নিত্যানন্দ স্মৃতি বিজড়িত স্থান গুলি দেখবার মত। বহু ভক্ত বছরের বিভিন্ন সময়ে এখানে ভিড় জমান নিয়ম করে। দেখতে আসেন ইস্কন মন্দির ও রাঘব ভবন। আর এই রাস্তা হল আমার কর্মস্থলে যাওয়ার নিত্যকার পথ। শুধু গঙ্গার এপার থেকে ওপার গেলেই আমার ঘর থেকে পৌঁছে যাওয়া যায় পানিহাটি। তাই দুজনে মিলে সেই ছোট মেলায় কিছুক্ষণ ঘুরে আসার লোক সামলাতে পারিনি। মেলার মধ্যে যে প্রাণচাঞ্চলতা সব সময় ঘিরে রাখে আশপাশ তা হয়তো আর কোথাও সচরাচর দেখা যায় না। এ হল এমন এক পার্বণ যেখানে প্রিয়জন প্রিয়জনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আবার বহুদিনের না দেখা মানুষ খুঁজে পায় তার প্রিয় সঙ্গীকে।

IMG_20240630_182649_479.jpg

💮ফেরার পালা💮
আপনারা নিশ্চয়ই ভারতবর্ষের বিখ্যাত কুম্ভ মেলা বা সাগর দ্বীপে গঙ্গাসাগর মেলার নাম শুনেছেন। মেলা বাঙালীর রক্তে। পশ্চিমবঙ্গে দুটি বিখ্যাত মেলা হল শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা এবং বাঁকুড়া জেলায় বিষ্ণুপুর মেলা। এই মেলাগুলি জাতীয় স্তরে স্বীকৃতিও পেয়েছে। শুধুমাত্র বাউল ফকিরদের নিয়ে কেঁদুলীর জয়দেবের মেলাও বহুল বিখ্যাত। মেলার কোনো ছোট বড় হয় না। মেলা এমন এক মিলনক্ষেত্র যেখানে জীবনের সঙ্গে জীবনের মিলন হয় অনবরত। বিভিন্ন বিক্রেতারা মিশে থাকে অসংখ্য ক্রেতার দরবারে। বহু মানুষের দুবেলা রুটিরুজি এই মেলার মাঠ। তাই ছেলেবেলা থেকেই শুনে এসেছি বাংলার বিভিন্ন মেলা বঙ্গ সংস্কৃতির সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমার পানিহাটি মেলায় ভ্রমণ এবং তদুপরি ব্যস্ত জীবনের মাঝে মেলা ঘিরে এক অনাবিল প্রাণচঞ্চলতাকে সঙ্গী করে ফিরে আসা বাড়ির উদ্দেশ্যে। শুধু আসার সময় কিছু জিলিপি আর বাদাম ঝুরিভাজা নিতে মোটেই ভুলিনি৷

IMG_20240630_183143_451.jpg

(মেলার সমস্ত ছবি আমার ইনিফিনিক্স হট ৩০ মোবাইলে তোলা)

৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুল এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁকের জন্য


images__27_-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 66217.53
ETH 3316.11
USDT 1.00
SBD 2.70