তাজপুরের বিলাসবহুল নিশ্চিন্ত গন্তব্য - কৃষ্টি রিসর্ট
উইকেন্ডে তাজপুর ও কৃষ্টি রিসর্ট
ভ্রমণ পোস্ট
শনি ও রবিবার উইকেন্ড। বাঙালির এই দুদিন উড়ু উড়ু মেজাজ। তাও বিভিন্ন কাজের চাপে সবসময় যাওয়ার ফুরসত থাকে না কোথাও। তাই মাঝেমাঝে ঠিক হয় কাছে কোথাও এক দুটি দিন কাটিয়ে আসার প্ল্যান। আমি তো কখনো কখনো একাই বেরিয়ে পড়ি ঠিকানাহীন পথে। যে পথের কোনো লাগাম নেই, উদ্দেশ্য নেই। শুধু আছে বোহেমিয়ান কিছু সময়৷
ঠিক এমন ভাবেই আজ এসে পৌঁছেছি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সমুদ্র সৈকত তাজপুরে। তাজপুর দীঘার মত জনবহুল সমুদ্র সৈকত নয়। এখানে মানুষের আনাগোনা বড় কম। আগে এই সমুদ্র সৈকতে খুব একটা মানুষজন আসতো না। কিন্তু এখন দীঘা সমুদ্র সৈকতে ভিড় হওয়ার কারণে মানুষ এই ধরনের ফাঁকা ও আরামদায়ক সৈকত পছন্দ করে। একটি দিন একটু নিরিবিলি ও নির্জনে কাটাবার জন্য তাজপুর সৈকতের জুড়ি মেলা ভার। আজ তাজপুরে এসে পৌঁছানোর পর যে রিসোর্টে উঠেছি তার নাম কৃষ্টি রিসোর্ট। এই রিসোর্টটি সবদিক থেকে ভীষণ সুন্দর ও সুসজ্জিত। দু একটি দিন ছুটি কাটানোর জন্য এর থেকে ভালো গন্তব্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। রিসর্টটিতে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সব রকম বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা আছে। এখানে প্রত্যেকটি ঘর যত্ন করে সাজানো। রিসর্টের লাগোয়া রয়েছে সুইমিং পুল। যেখানে প্রতিনিয়ত বিনোদনে মেতে থাকে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে ছোট শিশুরাও। তাই সব মিলিয়ে এমন একটি ছোট ভ্রমণ গন্তব্য হিসাবে কৃষ্টি রিসোর্টের জুড়ি মেলা ভার।
দৈনন্দিন জীবন যাপনের মাঝে এমন দু একটি বিনোদনমূলক দিন কোন মানুষের না ভালো লাগে। আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য নিছক একটি দিনের বিনোদন এবং হাওয়া বদল মাত্র। ইট কাঠের জঙ্গলে দিনগত পাপক্ষয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এই হাওয়া বদলের গুরুত্ব অনেক। আর সেই নিরিখে তাজপুরের মতো সমুদ্র সৈকত সবদিক থেকেই ভীষণ উপযোগী। অত্যধিক খরচের বহরে না গিয়ে শুধুমাত্র বিনোদনটুকু লুটেপুটে নেবার জন্য বন্ধু অথবা পরিবার সমেত চলে আসতে পারেন এই তাজপুরে। এখানে সমুদ্র আপন খেয়ালে ডেকে চলেছে প্রত্যেকটি ভ্রমণপিপাসু বাঙালিকে। সমুদ্রের সৌন্দর্য অপার। আর সেই সৌন্দর্যের আনাচে-কানাচে বাঙালির আনাগোনা। আজ তাজপুরে এই নির্জন সমুদ্র সৈকতে বসে বারবার মনে পড়ছিল শহর কলকাতার কর্মব্যস্ত এবং ভিড়ে ঠাসা দিনগুলো।
তাজপুর দীঘার অদূরেই অবস্থিত। কিন্তু দীঘার কোলাহলের একেবারে বিপরীত ছবি এই তাজপুরে। সমুদ্রস্নানের ব্যবস্থা না, এখানে নিস্তব্ধ ঝাউবন আর সমুদ্র ঢেউয়ের কুলকুল শব্দ যেন টেনে নিয়ে যায় কোন এক প্রাচীন ভোরে। হাতে গোনা কয়েকটি হোটেল এবং রিসোর্ট এই জায়গায় থাকবার একমাত্র ঠিকানা। অবশ্যই আগে থেকে বুক করে এলে ভালো হয়। কারণ জায়গাটি নির্জন এবং কোলাহলশূন্য হলেও এখানে বর্তমানে মানুষজন খুব একটা কম আসেন না।
আমাদের আজ এখানে আসার মাধ্যম ছিল গাড়ি। যদিও কলকাতা থেকে খুব সহজেই এখানে পৌঁছে যাওয়া যায় ট্রেনে অথবা বাসে। উভয় ক্ষেত্রেই কাঁথি থেকে তাজপুরের সুন্দর যানবাহন সংযোগ আছে।
তাছাড়া শুধু তাজপুর নয়। ফলে সময় কম হলে এখান থেকে ঘুরে আসা যায় দীঘা মন্দারমনি অথবা উদয়পুরের মত সমুদ্র সৈকত গুলি। তাই কয়েক দিনের জন্য সমুদ্র ভ্রমণের ইচ্ছে হলে চলে আসতে পারেন এই নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত তাজপুরে।
রাতের বেলা যখন রিসোর্ট গুলি সেজে ওঠে রঙিন আলোয়, তখন সমুদ্রের তীরে যেন তৈরি হয় এক স্বপ্ন নগরী। আর সেই স্বপ্ন নগরীতে।
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বাহ,অনেক সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন দাদা।আসলেই মানুষ যান্ত্রিক শহর থেকে মুক্তি খুঁজে পেতে সমুদ্রের কাছে বিশুদ্ধ হাওয়ার মাঝে শান্তি চায়।এমন নিরিবিলি সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে পারলে বেশ মজা হয়, ভিড়ের মধ্যে সময় কাটাতে আমারও ভালো লাগে না।ওখানে সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে জেনে ভালো লাগলো, খুব ভালোভাবে আনন্দ করুণ সময়গুলি দাদা।
অনেক ধন্যবাদ বোন। আমার ব্লগ তোমার ভালো লাগায় আমি আপ্লুত। সত্যই মাঝে মাঝে এমন আউটিং খারাপ লাগেনা। বেশ একটা হাওয়া বদল বটে।