কষ্ট হলেও সেই রাতে আনন্দ ছিল //পর্ব--তৃতীয় (শেষ পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago

আজ--০১ অগ্রহায়ণ | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | শুক্রবার | হেমন্তকাল |



আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।


আজ আমি আপনাদের মাঝে একটা জেনারেল রাইটিং পোস্ট টা শেয়ার করব। পোস্টটাতে কোন এক রাত্রের গল্প আমি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার। সেদিনের সেই রাতটা আসলেই স্মৃতি হয়ে থাকবে। আশা করছি এই গল্পটা আপনাদের সবার ভালো লাগবে।



  • প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
  • কষ্ট হলেও সেই রাতে আনন্দ ছিল(তৃতীয় পর্ব)
  • আজ ০১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  • শুক্রবার


তো চলুন শুরু করা যাক...!


শুভ সকাল সবাইকে......!!


গত পোস্টে আমি আপনাদের মাঝে একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম যদিও এই ঘটনাটা কিছুদিন আগেই আমার সঙ্গে ঘটে গিয়েছিল। প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্বে যে গল্পটা আমি আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছিলাম সেই গল্পে আপনারা সকলেই অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছিলেন যার কারণে আমি বেশি দেরি না করে খুব দ্রুতই আপনাদের মাঝে তৃতীয় পর্ব নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছি। তৃতীয় পর্বে আমি গল্পের বাকি অংশটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করব।


প্রথম পর্বের লিংক--এখানে

দ্বিতীয় পর্বের লিংক--এখানে


আমার এই গল্পে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব যারা পড়েছেন তারাই তোমাদের জেনে গিয়েছেন যে দেরি করে বাসায় যাওয়ার কারণে আমরা যে রুমে ঘুমাবো সেই রুমে অন্য মানুষেরা ঘুমিয়ে গিয়েছে যার কারণে আমাদের ঘুমানোর জায়গা ছিল না। যেহেতু ঘুমানোর জায়গা ছিল না তাই আমরা কি করবো এটা ভেবেই পাচ্ছিলাম না কিছুক্ষণ সময় বাসার উঠানের উপর চেয়ার নিয়ে বসেছিলাম ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কিন্তু এত বেশি মশা ছিল যে মশার কারণে আর সেখানে বসে থাকতে পারছিলাম না গ্রামাঞ্চলে বুঝতেই পারছেন মশার উপদ্রব অনেক বেশি। এরপরে অনেকটা রাত হয়ে যাবার কারণে সবার ক্ষুদা লেগে গিয়েছিল। এরপরে চলে যাই রান্নাঘরে রান্না ঘরে গিয়ে দেখি ফ্রিজের মধ্যে কিছু কমলা এবং কিছু আঙ্গুর ফল রাখা আছে। যদিও বুঝতে পেরেছিলাম এগুলো ছোট বাচ্চাদের জন্য রেখে দিয়েছে কিন্তু কি খাব ক্ষুদা লেগেছে প্রচুর খেতে হবে। যার কারণে আর কোন কিছু না ভেবে ফ্রিজে থাকা আঙ্গুর ফল এবং কমলা নিয়ে আসি। আমরা প্রায় পাঁচ জন ছিলাম সেখানে আর কমলা ছিল প্রায় ৮ পিস আর কিছু আঙ্গুল ফল ছিল। পুরোটাই আমরা বাসার উঠানে বসে খাচ্ছিলাম এবং আবার কিছুক্ষণ গল্প করছিলাম আর ভাবছিলাম যে কোথায় ঘুমাবো।

এরপরে আমার সাথে থাকা তিনজন বলল আমরা কিছুটা দূরে ওদের এক আত্মীয়ের বাসায় ঘুমাতে যাবে আমাকে জিজ্ঞেস করল তুই যাবি নাকি..? আমি তাদেরকে সাথে সাথে জানিয়ে দিলাম যে না আমার পক্ষে যাওয়া কখনোই সম্ভব না। কারণ আমার ছোটবেলা থেকেই একটা বদ অভ্যাস আছে যে নিজের বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও ঘুরতে গেলে বিছানা আলাদা হলেই আমার আর রাত্রে ঘুম আসে না। যার কারণেই আমি আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি খুব একটা তেমন যাই না। একেতো এক জায়গায় ঘুরতে এসেছি আবার রাত্রে যদি অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমানোর লাগে তাহলে তো আমার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাবে। আমি চিন্তাভাবনা করেই রেখেছিলাম যদি ঘুমানোর জায়গা না পায় তাহলে ব্যালকনিতে গিয়ে জেগে থাকবো। এরকম চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমি বসে ছিলাম যদিও আমার সাথে থাকা ওরা কয়েকজন কি করবে সেটা ভেবেই পাচ্ছি না।

এরা একবার বলছিল যে আমরা বাহিরে কোথাও ঘুমাতে যাব,আবার আমাকে রেখেছে তারা ঘুমাতে যাবে এটাও তারা কোনভাবে করতে পারছিল না। যদিও আমি তাদেরকে অনেকবার রিকোয়েস্ট করেছিলাম যে তারা যেন অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমায় আমার কোন সমস্যা নেই। এরপরে আমি তাদেরকে অনেক রিকোয়েস্ট করার পরে অবশেষে তারা চার জন অন্য কোথাও ঘুমাতে চলে গেল আর আমি এবং আমার ফুফাতো ভাই ব্যালকনিতে গিয়ে বসে ছিলাম অনেকটা সময় ততক্ষণে প্রায় ফজরের আজান পরছে। বুঝতে পারলাম আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সকাল হয়ে যাবে কিন্তু ফজরের আজান হবার সাথে সাথে আমার চোখে প্রচুর ঘুম চলে আসে। আমি আর একটুও বসে থাকতে পারছিলাম না।

পাশে থাকা আমার ফুফাতো ভাই দেখি সে অলরেডি বেলকনিতে দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। আমার ফুফাতো ভাইয়ের এই ঘুম দেখে আমি আর কোন কিছু না ভেবে চিন্তা ভাবনা করেই নিয়েছিলাম আমিও ওর মতো করে এভাবে দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে যাব। কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারেনি হয়তোবা আধাঘন্টা ৪৫ মিনিট ঘুমিয়ে ছিলাম। এরপরে আবার কারো ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ঘুম চোখে, চোখটা খুলতেই দেখি যে আমার ফুপি দাঁড়িয়ে আছে।

group-3348989_1280.jpg

source

এরপরে আমার ফুপি আমাদের দুজনকে বেলকনি থেকে ঘুম থেকে জেগে তুলে তাদের রুমে নিয়ে যায়। সেদিন বাসায় অনুষ্ঠান থাকার কারণে অনেকেই অনেক সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। ফুপির রুমে গিয়ে দেখি তাদের খাটের উপরে এখন পর্যন্ত মানুষ গাদাগাদি করে শুয়ে আছে। এরপরে কোথায় ঘুমাবো সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না কোথা থেকে যেন ফুপি দু থেকে তিনটা কাঁথা এবং দুটো বালিশ নিয়ে এসে দেয় আর আমরা রুমের মেঝেতেই সেগুলো ছরিয়ে দিয়ে সেখানে শুয়ে পরি। আহ্, কি শান্তির ঘুম ঘুমাবো এখন এটাই ভেবে অনেক বেশি ভালো লাগছিল সারারাত যেহেতু ঘুমাতে পারিনি রাত্রি শেষে ভোরের দিকে এরকম একটা বিছানা পেয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। কত সময় ঘুমিয়েছি মনে নেই হঠাৎ করে কারো ছুড়ে মারা পানি আমার চোখে পড়াতেই আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। পাশে তাকিয়ে দেখি যে আমার ফুফাতো ভাই এখন পর্যন্ত নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। এরপরে পানির উৎস টা কোথা থেকে আসলো এটা জানার আর কোন ইচ্ছে ছিল না কারণ চোখে প্রচুর ঘুম।

কিছুটা সময় যাওয়ার পরে আবার আমার মুখে পানি পড়ল এবার সত্যিই অনেক বেশি রাগান্বিত হয়ে গিয়েছিলাম। যেহেতু রাত্রে ভালো ঘুম হয়নি আর এখন একটু ঘুমাচ্ছি তারপরেও আশেপাশের মানুষগুলো এরকম ডিস্টার্ব করছে তাহলে আপনারাই ভাবুন কতটা খারাপ লাগছিল সেই সময়টাতে। এবার আমি পানির উৎস খুঁজতে শুরু করলাম দেখলাম যে পাশে থাকা কয়েকজন ভাবি আমাকে তারা প্রচন্ড রকম ভাবে বিরক্ত করছে আসলে তারা চাচ্ছে না যে আমরা এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাই। এরপরে তাদেরকে রিকোয়েস্ট করলাম রাত্রে ঘুম হয়নি এখন একটু ঘুমাব। চোখ দুটো রক্তাক্ত লাল বর্ণ ধারণ করেছিল এটা তারাও বুঝতে পারছিল। এরপরেও ওই যে ভাবি আর দেবরের মাঝে যে ফাইজলামির একটা সম্পর্ক তারা আমাদের সঙ্গে সেটাই করছিল। কিন্তু আমার আর তখন ফাজলামি করতে ভালো লাগছিলো না।

man-8369721_1280.jpg

source

এরপরে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। চোখে প্রচন্ড ঘুম আর এই ঘুম নিয়ে কারো সঙ্গে যে দু মিনিট কথা বলব কিংবা ভালো করে তাকাবো সেটাও পারছিলাম না কারণ সারারাত না ঘুমানোর জন্য শরীরটা অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এভাবে মনে হয় কয়েক ঘন্টা আবার ঘুমিয়েছে তারপরে হঠাৎ করেই দেখি কেউ একজন আমার মাথার উপরে পানি মারছে। এবার আর ঘুমাতে পারলাম না ঘুম থেকে উঠেই পড়লাম পাশে থাকা ফুফাতো ভাইকে টেনে উঠালাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি সাড়ে বারোটা বাজে মোটামুটি ভালোই একটা ঘুম হয়েছে এদিকে আমার চুল ভিজে গিয়েছে জামা ভিজে গিয়েছে। যদিও তখন একটুও রাগ হচ্ছিল না কারণ তখনই গোসল করব এখন পুরা গা ভিজে গেলেও কোন সমস্যা নেই।

যাই হোক এরপরে গোসল করতে যাব ঠিক সেই সময়টাতেই, সবাই রং খেলায় মেতে ওঠে। কি আর করার যেহেতু সবাই রঙ খেলায় মেতে উঠেছে আর এখন গোসল করে বাসায় আসলে আবার রং লাগিয়ে দেবে আবার গোসল করতে হবে এটা ভেবে কিছুটা সময় অপেক্ষা করলাম। যদিও কেউ আমার গায়ের রং লাগায় নি,কারণ আমি আগেই বলেছিলাম আমার গায়ে রং লাগালে আমি তাকে রঙ খাইয়ে দেবো। হয়তোবা এই ভয়ে কেউ রং লাগাতে আসেনি, যদিও কয়েকজন এসেছিল তবে তারা পাত্তা পায়নি। যাইহোক তবে পুরোটা রাত থেকে সকাল অব্দি অনেক এনজয় করেছিলাম এটাই সব থেকে বড় পাওয়া।

এটাই ছিল আমার সেই রাতের আনন্দের তৃতীয় পর্বের গল্প। আশা করছি এই গল্পটা আপনাদের সকলের অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আজ আর নয় এখানেই শেষ করছি। সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে...!!



সমাপ্ত


আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা

বিবরণ
বিভাগজেনারেল রাইটিং
বিষয়কষ্ট হলেও সেই রাতে আনন্দ ছিল //পর্ব--তৃতীয়
পোস্ট এর কারিগর@jibon47
অবস্থান[সংযুক্তি]source

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 10 months ago 

ঘুমানোর জায়গায় কেউ এসে ঘুমিয়ে পড়লে তো আর কিছু বলার থাকে না।সারারাত পরে একদম ভোররাত্রিতে বিছানা পেয়ে বেশ ভালই ঘুম পেরেছিলেন ভাই। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে বিস্তারিতভাবে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

সারারাত ঘুমাতে পারিনি আর শেষ রাতের দিকে ছোট্ট একটা বিছানা পেয়েছিলাম তারপরেও ছোট্ট সেই বিছানাতে অনেক ভালো একটা ঘুম হয়েছিল। বাসায় অনেক মানুষ থাকার কারণে একটু প্রবলেম হয়েছিল তবুও ঘুমিয়ে ছিলাম ভালোই। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 53929.89
ETH 2263.00
USDT 1.00
SBD 2.35