ভাই বড় ধন❤️
"হ্যালো",
সবাইকে আমার নতুন একটি ব্লগে স্বাগতম। আমি আজকে আপনাদের সামনে নতুন একটি গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি। আমি মাঝে মধ্যেই চেষ্টা করি আমার আশেপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো গল্প আকারে আপনাদের সাথে শেয়ার করার। যখন গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম আমার এক চাচার মুখে একটি ঘটনা শুনেছিলাম। শুনে বেশ ভালো লাগছিল তাই কৌতুহলবশত তার কাছে আমি পুরো গল্পটি শুনেছিলাম। "ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন যদিও তা ছিন্ন হয় নারীর কারণ।"কথাটা আমরা সবাই জানি।আমার আজকের গল্পটি দুই ভাইকে নিয়ে।পৃথিবীতে মধুর সম্পর্ক এবং পবিত্র সম্পর্ক হচ্ছে ভাই-বোন, ভাই-ভাই,বোনের সাথে বোনের। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
রহিম করিম দুই ভাই।তাদের বয়সের খুব বেশি পার্থক্য নেই।রহিম করিমের থেকে বয়সে বছর দুয়েক বড়। ছোটবেলা থেকেই একসাথে পথ চলা তাদের খেলাধুলা, পড়াশোনা, খুনসুটি সবকিছুই একসঙ্গে। এভাবে বছরের পর বছর কেটে যায় রহিম করিম দুইজনেই বড় হতে থাকে। পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না তাই খুব বেশী পড়াশোনা তারা করতে পারিনি অল্প বয়সে সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়েছিলো।যেহেতু রহিম বড় তাই পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রহিমকে বিয়ে করানো হবে। করিম তখন চিন্তায় পড়ে যায় যদি বড় ভাই বিয়ে করে তাহলে বউ এসে হয়তো তাকে ভাইয়ের সঙ্গে মিশতে দিবে না।
দেখতে দেখতে রহিমের বিয়ে হয়ে যায়। তবে রহিমের বউ খুবই ভালো ছিল সে করিমকে ছোট ভাইয়ের মতোই দেখতো।করিম অনেক খুশি যে ভাইয়ের সঙ্গে সে একজন বোনও পেয়েছে। এভাবে আরও কিছু বছর কেটে যায় তাদের।কিন্তু কথায় আছে সুখ বেশিদিন কারো কপালে সয় না।করিমও বিয়ে করে। আর অশান্তি তখন থেকেই শুরু হয়। কারণ করিমের বউ মোটেই পছন্দ করে না বড় ভাই এবং ভাবীর সঙ্গে করিম মেলামেশা করুক।এটা নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক অশান্তিও হয়েছে।
রহিম করিমকে বোঝায় আমরা বাড়িতে না মিশতে পারলে কি হবে আমরা বাজারে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাবো। একদিন রহিম বাজার থেকে ৫ টাকার চানাচুর কিনে গ্রামের রাস্তার মাথায় বসে আছে যখন করিম আসবে একসঙ্গে বসে খাবে। অপেক্ষা করতে করতে এক সময় করিম আসে এবং তারা দুই ভাই মিলে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে এবং চানাচুর খায়। এভাবেই তাদের দিন যেতে থাকে এবং কয়েক বছরও কেটে যায়। তাদের ভালোবাসার মধ্যে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
একদিন রহিম খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার দেখানো হলে ডাক্তার বলে রহিমের ক্যান্সার হয়েছে। করিম তখন অনেক ভেঙ্গে পড়ে। জন্ম মৃত্যু তো বলে কয়ে আসেনা তাই রহিম একদিন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যায়। করিম কবরস্থানে গিয়ে রহিমকে উদ্দেশ্য করে বলে "ভাই আমি তোকে ছাড়া একা একা থাকতে পারবো না ।আমিও কিছুদিনের মধ্যেই তোর কাছে চলে আসব।তুই একদম ভয় পাস না। "
যাইহোক এদিকে ৭ম দিনে রহিমের মিলাদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছিল। বাড়িতে অনেক আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত করা হয়েছে ওই দিনে। এরমধ্যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায় করিম।অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি।রহিম মারা যাওয়ার সাত দিন পরেই করিমও মারা যায়।তখন গ্রামবাসী এবং আত্মীয়-স্বজন রহিমের কবরের পাশে করিমের বলা কথাগুলো বারবারই ভাবছিল। আর এভাবেই দুই ভাই আজও গ্রামবাসী আত্মীয়-স্বজনের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
আমি যখন আমার ওই চাচার মুখে তাদের গল্প শুনছিলাম তখন আমি অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। যে এখন তো কত মারামারি কাটাকাটি হয় ভাইয়ে ভাইয়ে আর তারা কতই না ভালো ছিল। একে অপরের প্রতি কত টান। এবং কি মৃত্যু তাদেরকে আলাদা করতে পারল না। তাদের এই ভালোবাসা দেখে অবশ্যই আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। যে চাইলেও রক্ত কখনো আলাদা করা যায় না।
তো বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে পরবর্তীতে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে আপু যদি ও দুই ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য খারাপ লাগলো। তবে ভাই ভাইয়ের জন্য ভালোবাসাটা অনেক। যাইহোক দুই ভাইয়ের অনেক মিল ছিল বিধায় এক সাথে চলে গেল। ধন্যবাদ আপু পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য।
আপনার লেখা এই গল্পটা পড়ে আমি অনেক আবেগপ্রত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু এ ব্যাপারটা আমার কাছে একটু অন্যরকম লেগেছে ভাই মৃত্যুর ৭ দিন পরেই ওপর আরেকটা ভাই মারা গিয়েছে যদিও এটা সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর করে। বর্তমান সময়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এক ভাই অপর ভাইকে দেখতে পারেনা তবে এক্ষেত্রে করিম এবং রহিম পুরোপুরি ভিন্ন ছিল এরকম ভাইয়ের সম্পর্ক খুব একটা দেখা যায় না। শেষমেষ তারা দুজনেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করল এটা জেনে খুবই খারাপ লাগছে। আসলে তাদের এই আত্মার বন্ধন কখনোই শেষ হবার নয়। ধন্যবাদ সুন্দর একটা পোস্ট তুলে ধরার জন্য।
আমিও প্রথম যখন গল্পটা শুনেছিলাম অনেকটাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ এ যুগে এমন ভাবে ভাই ভাইয়ের মিল দেখাই যায় না। যাইহোক ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
রক্তের সম্পর্ক কখনো আলাদা হয় না যদিও বা পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে আলাদা হতে হয় তাও সাময়িক। রহিমও করিমের গল্পটি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। রহিম করিম দুই ভাই কিন্তু বউয়ের কারণে সামরিক আলাদা হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ভালোবাসার কারণে রহিমের ক্যান্সার হয়ে মারা যাওয়ার সাত দিনের মাথায় করিমও পরপারে রহিমের কাছে চলে গেলো।মর্মান্তিক কষ্টকর বাস্তব ঘটনা নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
গল্পটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার গল্পটা পড়ে আমি একটা জিনিস মিল পেয়েছি,তা হলো একজন সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে চায় আর অন্যজন এসব সহ্য করতে পারে না । যাইহোক ২ভাইয়ের মধ্যকার ভালোবাসা থেকেই তারা একে অপরের সাথে আলাদাভাবে হলেও মিশতে যেত।২ভাই মিলে বাড়ির বাইরে গল্প করতো।এদিকে রহিম মারা যাওয়ার ৭দিন পর করিমও মারা যায়।গল্পটা হৃদয় বিদারক ছিল আপু।
আমাদের সমাজের লোকেরা তো এমনই অনেকে আছে সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে চায়। অনেকে আবার কারো সাথে মিশতে চায় না বা একজন আরেকজনের সঙ্গে মিশলে সেটা সহ্যও করতে পারে না। যাইহোক সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
আপু আগের দিনের সব কিছুই ভেজাল মুক্ত ছিল। আর ভাই বোনে মধ্যে ছিল না কোন ব্যবধান। এখন তো আমরা সবাই নিজেদের ভালোটাই আগে বুঝি। আপনার কাছে রহিম আর করিমের গল্পটি শুনে আমিও আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েছি। আসলে তাদের কথাগুলো যদি আমরা বিবেচনায় আনি তাহলে দেখেন তারা দুই ভাই ঠিক ছিল বিধায় কিন্তু তারা ঘরের বাহিরে যেয়ে মিলিত হতো। আর এখন তো ভাইয়ে ভাইয়ে চেহারাও দেখে না।
হ্যাঁ আপু আগের দিন আর এখনকার দিনের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। গল্পটা শুনে আমার কাছেও খুবই ভালো লেগেছিল। একটি গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন যদিও তা ছিন্ন হয় নারীর কারণ এই কথাটা শত গুনে সত্য আমার মনে হয় ৷ কারণ বাস্তবিক দিক গুলোতেও তাঁকালে তাই দেখা যায় ৷ ভাই ভাইয়েই মধুর সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে একজন নারী জন্য ৷ ততদিন ভাইয়ের সম্পর্ক ঠিক থাকে , যত দিন কোনো নারীর প্রবেশ হয়নি সে সম্পর্কে ৷ যদিও সবার ক্ষেত্রে হয় না এমনটা ৷ তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্পর্ক নষ্ট হয় ৷ যেমন আপনার গল্পেই হয়েছে ৷ অনেক খারাপ লাগলো আপনার গল্পের শেষটা ৷ দুভাই চলে গেলো.. ৷ যাই হোক অনেক সুন্দর লিখেছেন আপু ৷ খুবই ভালো লাগলো এমন একটা সুন্দর গল্প পড়ে ৷ ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ৷
ভাইয়ে ভাইয়ে এত ভালো সম্পর্ক ছিল যে হয়তো মৃত্যু তাদেরকে আলাদা করতে পারল না। গল্পটি যখন আমি আমার চাচার মুখে শুনছিলাম তখস আমার খুব ভালো লাগছিল যে ভাই ভাই কত ভালবাসা কত মিল। এখন তো শুধু মারামারি কাটাকাটি হানাহানি। কিন্তু শেষে তাদের মর্মান্তিক মৃত্যু আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছিল। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
পৃথিবীতে যত সম্পর্ক আছে তার মধ্যে বড় সম্পর্ক হলো ভাই ভাইয়ের সাথে এবং বোন ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক।বর্তমান সমাজে ভাই ভাই ভালো সম্পর্ক খুব একটা চোখে পড়ে না তার কারন হলো ভাই চাইলেও ভাই এর বউ কখনো চায় না যে ভাই ভাই এক্ষেত্রে থাকুক।রহিম করিমের ভালোবাসা একে-অপরের পরিপূরক ছিলো তাই একজন কে ছেড়ে আরেকজন থাকতে পারলো না।গল্পের মধ্যে যেমন ভালোলাগা ছিলো ঠিক তেমনি কষ্টও লাগলো।সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই ভাবি।
ঠিক বলেছেন বৌদি বর্তমান সমাজে এই ভাই ভাইয়ে ভালো সম্পর্ক দেখাই যায় না। তার মাঝে তাদের এই দুই ভাইয়ের সম্পর্ক সত্যি মনে রাখার মত। ধন্যবাদ বৌদি সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আপু পোস্টটি পড়ে চোখের এক কোণায় পানি চলে এলো। ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন, এই কথাটি সবাই জানলেও, অনেকেই মানতে চায় না বর্তমানে। তাইতো এতো ঝগড়াঝাটির সৃষ্টি হয় ঘরে ঘরে। যাইহোক রহিম এবং করিম,তাদের দুই ভাইয়ের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখে মনটা একেবারে ভরে গিয়েছে। আসলে প্রকৃতপক্ষে ভাই ভাইয়ের সম্পর্ক এমনটাই হওয়া উচিত। এমন ঘটনা থেকে আমাদের অবশ্যই শিক্ষা নেওয়া উচিত। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।