২য় পর্বঃ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা [ লাটিম খেলা ]
09-01-23
২৬ পৌষ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
১ম পর্বের পর
আমার মনে হয় শৈশবের সুন্দর একটা মুহুর্ত ছিল লাটিম ঘুরানো নিয়ে! কে কত স্পিডে ঘুরাতে পারবে অথবা কার লাটিম শেষ পর্যন্ত ঘুরতে থাকবে! যার লাটিম শেষ পর্যন্ত মাটিতে থাকবে তার লাটিমই বিজয়ী হবে! তবে লাটিম ঘুরানোর কৌশলটাও কিন্তু শুরুতে এতো সহজ ছিল না! ফিতা দিয়ে লাটিম ঘুরানো হতো! লাটিমের গায়ে ভাজে ভাজ করে ফিতা পেঁচিয়ে লাটিম ঘুরানোর ট্রাই করা হতো! একটা ঘটনা শেয়ার করি আপনাদের সাথে! আমি তখন পাচঁ টাকা দিয়ে নতুন একটা লাটিম কিনেছিলাম! কমলা রঙের! উপরে ফুলের নকশা করা! পাড়ার ছেলেরা আমার আগেই লাটিম ঘুরানোতে এক্সপার্ট! আমি এতোদিন শুধু তাদের লাটিম ঘুরানো দেখে আসছিলাম! কি সুন্দর করে মাটিতে ঘুরতে থাকে লাটিম! এই অনুভূতি আপনাদের বলে বুঝানো যাবে না!
লাটিম কিনে তো মহা বিপদে পড়ে গেলাম! একি, লাটিম তো ঘুরাতে পারি না! পাড়ার ছেলেদের কাছে শুনেছিলাম, একটু বাকাঁ ভাবে মাটিতে লাটিম ঘুরাতে হয়! মাটিতে লাটিমটাকে ফেলেই টান দিতে হয়! একটু নড়চড় হলেই বিপদ! উল্টো রিয়েকশন করে বসবে লাটিম! সজোরে আগাত করতে পারে মুখে! তবে লাটিম ঘুরানোর সবচেয়ে সহজ উপায় শিখেছিলাম আমার চাচাতো ভাইয়ের কাছে! নরমালি ডান হাত দিয়ে ক্লকওয়াইজ লাটিমের ফিতা ঘুরানো হতো। তারপর লাটিম ঘুরানো হতো মাটিতে কিন্তু না! এবার শিখলাম ঠিক উল্টাভাবে লাটিমের ফিতা পেঁচিয়ে ঘুরানো! ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল! চাচাতো ভাই কয়েকবার দেখালো! লাটিম মাটিতে পড়তেই যেন হালকা করে টান দেয়! তবেই ঘুরবে! ফাইনালি আমি পেরেওছিলাম! আহ! মনে হয়েছিল যেন অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি! তখনও কিন্তু লাটিম ঘুরানো পারফেক্টভাবে শিখেনি! কয়েকদিন তো শুধু উল্টাভাবে পেঁচিয়ে লাটিম ঘুরিয়েছি!
কিন্তু উল্টাভাবে লাটিম ঘুরালে খেয়াল করলাম লাটিমের স্পিড বেশিক্ষণ থাকে না! অল্প কিছুক্ষণ ঘুরেই থেমে যায়! না,এভাবে আর লাটিম ঘুরানো যাবে না! রাইট ওয়েতেই লাটিম ঘুরাতে হবে! আবার শুরু করলাম লাটিম ঘুরানোর! একই উপায়ে! কয়েকবার চেষ্টা করার পর পেরেছিলাম! এবার লাটিমের স্পিডও বেশি! সব থেকে মজার ব্যাপার ছিল, লাটিম যখন এক জায়গায় ঘুরতো তখন সেখানে ছোট করে গর্ত হয়ে যেত! ঘুরার শেষে দেখতাম কতটুকু গর্ত হয়েছে! এতো গেল প্রথম স্টেজ! আরেকটি কঠিন কাজ ছিল লাটিম মাটিতে ঘুরানো অবস্থায় হাতের তালুতে নেয়া! এটা আমার কাছে অনেক কঠিন কাজ মনে হতো! পাড়ার ছেলেরা দেখতাম অনায়াসে লাটিম মাটিতে ঘুরিয়ে হাতে নিয়ে নেয়! আমি এটার রহস্য খুজঁতে লাগলাম! এক আঙুল দিয়ে হালকা করে উপরে তুলে নিয়ে তালুতে ঘুরায়! আমি তো কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম! লাটিমের কাছে আঙুল যেতেই স্পর্শ লেগে লাটিম ঘুরানোই বন্ধ হয়ে পড়ে!
না,এটা যেন কোনোভাবেই পারছিলাম না! চাচাতো ভাই আবার দেখালো কিভাবে লাটিম হাতে নিয়ে আসতে হয়! লাটিম ঘুরিয়ে আমার হাতের তালুতে দিতো! আমার প্রথম প্রথম এতো কুতুকুতু লাগতো হাতের তালুতে, হাহাহা! তার আর কি বলি! তবে হাতের তালুতে লাটিম অনেকক্ষণ ঘুরন্ত অবস্থায় থাকতো। একদিন সকাল সকাল লাটিম নিয়ে প্র্যাকটিস করি! কয়েকবার ট্রাই করলাম কিন্তু না, হচ্ছে না! অবশেষে হাতের তালুতে লাটিম নিয়েই নিলাম! তবে স্পিড কমে গিয়েছিল! তুলতে গিয়ে লাটিমের স্পিড কমে যেত! আস্তে আস্তে সেটাও ঠিক হয়ে যায়! তখন পাড়ার ছেলেরা লাটিম খেলায় এক্সপার্ট! একদিন দেখি লাটিমকে মাটিতে না ফেলিয়েই মাটিতে ঘুরাচ্ছে! একি, এটা কিভাবে সম্ভব! আমি পুরাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম! এটা আমার দ্বারা হবে না ধরেই নিয়েছিলাম!
পাড়ার ছেলেরা তখন একসাথে মিলে খেলা করতো! লাটিমের জন্য ছোট একটা ঘর তৈরি করা হতো! যার লাটিম ঘরের খুব কাছে হবে সে উঠে যাবে আর যার লাটিম ঘরের অনেক দূরে হবে সে হবে কাক! যে কাক হবে তার আবার লাটিমকে সবাই মিলে আঘাত করতো! অনেক সময় দেখতাম লাটিমের একপাশ ভেঙ্গেই যেত! যেহেতু লাটিম কাঠের তৈরি ছিল! আর গ্রামের ছেলেরা লাটিম কিনে নিচের লোহাটা খুলে ফেলতো। কারণ নতুন লাটিমের লোহার অংশটা ছোট থাকতো সেটা আবার লাটিমকে বেশি জোরে আঘাত করতে পারতো না! নতুন লোহা লাগিয়ে সামনের অংশটাও ধারালো করা হতো! যাতে একটাতেই লাটিমকে ভেঙে ফেলা যায়! আমি নতুন নতুন লাটিম খেলি! গ্রামের ছেলেদের সাথে তেমন খেলা হয়নি! একদিন খেলতে গিয়েই হলো বিপত্তিটা! হয়ে গেলাম কাক! চারজন মিলে আমার নতুন লাটিমটাকেই একদম শেষ করে দিল!
তারপর কিন্তু লাটিম খেলা ছেড়ে দেয়নি! নতুন লাটিম কিনে আবার খেলেছি। তখন প্রায় অনেকটাই এক্সপার্ট হয়ে গিয়েছিলাম। আমারও সুযোগ এসেছিল! কতো লাটিম ভেঙেছি তখন! আমারও লাটিম ভেঙেছে অবশ্য! তবে লাটিম খেলার সেই যুগটাকে বড্ড মিস করি! শেষ কবে লাটিম ঘুরিয়ে হাতের তালুতে নিয়েছিলাম মনেও নেই! এখন তো গ্রামে গেলে কোনো ছেলে মেয়েদের লাটিম খেলতে দেখিও না! এটাও প্রায় বিলুপ্তির দিকে! দোকানগুলোতেও এখন আর লাটিম পাওয়া যায় না! মজার ব্যাপার হলো, মেয়েরাও কিন্তু লাটিম ঘুরাতে পারতো! তবে এতো স্পিডে পারেনা! হাতের তালুতেও নিতে পারতো!
যাক, আজ এই পর্যন্তই! আবারো হাজির হবো গ্রাম বাংলার নতুন কোনো খেলার শৈশবের সেই অনুভূতি শেয়ার করার জন্য! সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন! আল্লাহ হাফেজ 🌼🦋
চলবে.......
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
twitter share link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আমি লাটিম ঘোরানো তে এলাকার এক্সপার্ট ছিলাম ভাই। কত ধরনের ঘুরানোর কৌশল যে আয়ত্ব করেছিলাম।এখনো আমার ড্রয়ারে লাটিম আর সুতা আছে।এখন সবাই ফোনে বিজি ভাই,আর আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে এই মজার খেলাগুলি। ধন্যবাদ আপনার এই সম্পূর্ণ সিরিজটির জন্য।
আমার পছন্দের লাটিমটি নেই! তবে খেলাটাকে বড্ড মিস করি এখন!
ঠিকই বলেছেন ভাইয়া লাঠি খেলা গ্রাম বাংলার এক ঐতিহ্য। যদিও এখন এই অ্যান্ড্রয়েড ফোনের কারণে এমন খেলা চোখে মেলেই না।। যদিও আমাদের সময় আমরা খুব করে এমন লাটিম খেলায় মেতে থাকতাম বিশেষ করে স্কুল ছুটির দিন হলে প্রায় সারাদিনই গরমের সময় এই খেলায় খেলতাম।।
ভালো লাগলো আপনার লাটিম খেলার অভিজ্ঞতার কথা গুলো জানতে পেরে।।
এই স্মার্টফোন বের হওয়ার পর থেকে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের সৃজনশীল বিকাশ লোপ পাচ্ছে!
লাটিম খেলা নিয়ে আপনার অনুভূতিগুলো পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। আমার ছোট ভাই ও লাটিম খেলে। তবে এখন লাটিম খেলা নিয়ে ঐরকম কোন কিছু নেই যেরকমটা আগে ছিল। এখন এই ধরনের খেলা প্রায় নেই বললেই চলে । তাও মাঝেমধ্যে দেখি আমার ছোট ভাই খেলে।
এখন তো এ খেলা দেখায় যায়না!! আর দোকানে গেলে তো লাটিমও পাওয়া যায় না
আপনি তো দেখি ভাই ছেলেবেলার খেলার ইতিহাস তৈরি করছেন। অনেক খেলার মধ্যে লাটিম খেলাও কিন্তু একটি জনপ্রিয় খেলা। ছেলাবেলায় দেখতাম পাড়ায় পাড়ায় ছেলেরা লাটিম খেলতো। মাঝে মাঝে দাড়িঁয়ে থেকে নিজেও দেখতাম। যাক অবশেষে তাহলে আপনিও লাটিম ঘুরানো শিখে ফেললেন। আপনার কষ্ট তাহলে স্বার্থক হলো।
হুমম আপু! শৈশবের সেই সময়টা কেমন ছিল তা আপনাদের সাথে শেয়ার করতেছি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু
আপনার আগের পর্বে মার্বেল খেলা নিয়ে পড়তে গিয়ে খুব নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম। আজ দেখি আপনি আরো একটি মজার খেলার বেপারে শেয়ার করেছেন। আপনার লাটিম খেলার স্মৃতি লিখে শেষ করা যাবে না। আপনার লাটিম ঘুরানো শিখার ঘটনা পড়ে মজা পেলাম। গোল দাগ দেয়া ঘরের মধ্যে লাটিম কত যে ভেঙেছি হিসেব নেই। ধন্যবাদ ভাইয়া।
হাহাহা ভাইয়া! এসব তো এখন শুধুই স্মৃতি! সময়গুলো কিভাবে চলে গেল টেরই পায়নি! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া 🌼