সাদা-কালো টিভিটা
08-05-2023
২২ জ্যৈষ্ঠ , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই?? ভালো আছেন তো এই গরমে! নাকি গরমকে সাথে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করছেন! গরমকে সাথে নিয়েই যে ভালো থাকতে হবে আমাদের! এই যে পোস্টটি লিখছি তখন বিদ্যুৎ নেই। সবাই গরমে তখন হাসফাসঁ করছে। দিনের বেলায় তেমন লোডশেডিং হচ্ছে না তেমন। তবে মনে হচ্ছে কাল থেকে রেগুলার লোডশেডিং হবে। তার কারণ তো আপনারা জানেনই! আজকেই পায়রার চুল্লি বন্ধ হয়ে গেল। তো বুঝতেই পারছেন। যাক, এসব নিয়ে বললে আপনাদের মন খারাপ হবেই। ইতোমধ্যে বলেছি কথাগুলো।
যাক, মাথায় হঠাৎই একটা স্টরি মনে পড়ে গেল। সেটা শেয়ার করতেই আসলাম। অন্ধকারে বসে অতীতের স্মৃতিচারণই করছিলাম। অতীত কেমন ছিল আর এখন কেমন! পুরো চিত্রটা এখন ভিন্ন।
গ্রামে তখনও বিদ্যুৎ আসেনি। হারিকেন আর কুপিবাতির উপরই নির্ভর করতে হতো। তবে গ্রামে তখন কুপিবাতি ইউজ করা হতো বেশি। কুপিবাতি দিয়ে যতদূর আলো পাওয়া যায়, তবে পড়ালেখার জন্য টেবিলের বইয়ের উপরেই রেখে পড়তে হতো। কুপিবাতিগুলো তৈরি করা হতো পাট দিয়ে! শুকনো পাট দিয়ে কুপিবাতি তৈরি করা হতো। সে বাতির আবার প্রধান উপকরণ ছিল কেরোসিন! যেটা এখন খুব কম দেখা যায়। বাতিতে কেরোসিন দিলে কয়েকদিন পর্যন্ত সেটা দিয়ে কুপিবাতি জ্বালানো যেত। গ্রামে তখন রাত হলেই চারিপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যেত! বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। সন্ধ্যার পর তো বাড়ি থেকেই বের হলেও ভয় পেতাম তখন!
তবে তখন পুকুর পাড়ে বসে সবাই মিলে আড্ডা দেয়া হতো। মজার মজার সব ভূতের গল্প, রাজা-রানীর গল্প আপুদের কাছ থেকে শোনতাম। চাদেঁর আলোতে চারপাশ আলোকিত হয়ে যেত তখন। সাথে মুক্ত বাতাস তো আছেই। গরমের সময় বেশি গরম লাগলে রাতে সবাই মিলে গোসল করতাম! শরীর ঠান্ডা না হওয়া অবধি পুকুর থেকেই উঠা হতো না। এই নিয়ে মায়ের বকা যে খায়নি তা কিন্তু নয়। তবুও সবার সাথে গোসল করার মজাটাই ছিল অন্যরকম!
গ্রামে তখন আবার চোরের উৎপাতের ভয়ও ছিল না তেমন! সারারাত ঘরের দরজার খোলা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমানো যেত। আর দরজার দিয়ে বাহিরের বাতাস সারারাত উপভোগ করতাম। এতো গেল বিদ্যুৎ আসার আগের কথা! বাড়িতে যেদিন বিদ্যুৎ আসলো সে কি আনন্দ সবার মাঝে! আমাদের বাড়ির ঠিক জলপাই গাছটার কোণায় মস্তবড় একটা পিলার স্থাপন করার হলো। যেটাকে বলা হয় বৈদ্যুতিক খুটিঁ। সেখান থেকে বৈদ্যুতিক লাইন আমাদের ঘরের লাইনে সংযোগ করা হয়েছিল।
বিদ্যুৎ লাইন আসার পর আমাদের একটা সাদা-কালো টিভি আনা হয়েছিল। সম্ভবত প্যানাসনিক মডেলের। ১৪ ইঞ্চি টিভি। গ্রামে তখন আমাদের বাড়িতেই প্রথম টিভি আনা হয়! আমার দাদা টিভিটা কিনেছিল। দাদা এখন নেই আর সাদাকালো টিভিটাও নেই এখন! তো টিভি আনার পর সেটাকে সেটআপ করতে হবে। অনেক লম্বা বাশঁ কেটে তৈরি করা হলো এন্টেনা। টিভিতে এন্টেনা লাগাতে দেখতাম টিভির সিগন্যাল পায় না। কতবার যে এন্টেনা এদিক-সেদিক ঘুরানো হয়েছিল। যখন টিভির সিগন্যাল তখন সবাই তো অনেক খুশি! একদম ক্লিয়ার বিটিভি!
সকালের শুরুটা হতো তখন বিটিভি দিয়ে। সকাল হলেই টিভিতে একে একে কুরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ, বাইবেল পাঠ সব বলা হতো। তারপর সকালের অনুষ্ঠান! কিন্তু সবথেকে মজা হতো বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবারে! আলিফ লায়লা, হাতিম, ম্যাগগাইভার, ছায়াছবি, রেসলিং ইত্যাদি! বিশেষ ছায়াছবি হলেই বাড়ি ভরে যেত! বিকাল তিনটার দিকে শুরু হতো বাংলা সিনেমা! যখন ছবি নাম বলতো তখনই সবার নজর টিভির দিকে। টিভিতে তখন সবথেকে বেশি চলতো আলমগীর শাবানা, মান্না, মৌসুমী, ওমর সানী, সালমান শাহ, শাবনূর তাদের ছবি!
সবথেকে কষ্টের মুভি হতো শাবানার! শাবানার মুভি দেখে দেখতাম অনেকেই চোখ মুছছে! মনে মনে হয়তো ভেবেছিল মেয়েদের জীবন কতো কঠিন! আবার রাতে যখন হাতিম আর আলিফ লাইলা হতো তখন তো আরও মজা হতো। শুক্রবার আসলেই সবাই আগেভাগেই চলে আসতো। এসে বসার পিরি নিয়ে যে যার মতো বসে যেত। সিনিয়র যারা থাকতো তারা চেয়ারে বসে দেখতো আর ছোটরা মাটিতেই বসে যেত! ঘড়িতে কয়টা বাজে এসব দেখার খেয়ালই থাকতো না কারো! তবে মাঝে খারাপ লাগতো যখন বিদ্যুৎ চলে যেত! অনুষ্ঠানের মাঝে বিদ্যুৎ চলে গেলে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগতো। আমরা ছোট যারা ছিলাম তারা বসে বসে হাতে গোনতাম! এই বুঝি কারেন্ট চলে আসবে।
কারেন্ট না আসলে যে যার মতো চলে যেত! তবে অনেক সময় অনুষ্ঠানের শেষের পার্ট শুধু দেখতে পারতাম! আর সেটাই পরদিন বর্ণনা দিতাম! আর আগামী পর্বে কি হতে চলেছে সেটাও বলে দেয়া হতো! আবার গ্রামে যখন জমিতে সেচ দেয়া হতো তখন তো কারেন্ট যেন সারাদিনের জন্য উধাও হয়ে যেত! বার বার ঘরের ইনক্যান্ডিসেট ল্যাম্পের দিকে তাকিয়ে দেখতাম লাল বাতি জ্বলে কি না! জ্বললেই সোজা দৌড়ে গিয়ে টিভি ছাড়া হতো।
আর এখন!! সাদা-কালো টিভি এখন নেই। সাদা-কালো টিভির সেই রঙিন দিনগুলো অনেক আগেই যেন হারিয়ে ফেলেছি। কতদিন হলো বিটিভি দেখা হয় না! আমাদের শৈশবে অট্রহাসিতে যে মাতিয়ে রাখতো প্রয়াত দিলদারের সেই মজার সব কান্ডও দেখা হয়না! প্রযুক্তির কল্যাণে হারিয়েছি অনেক কিছুই আবার বড় হওয়ার সাথে সাথে অনেক কিছুই যে পরিবর্তন হয়েছে।
যাক, আজ এই পর্যন্তই! আবারো হাজির হবো নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ 🌼🦋
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার পোস্টটি পড়ে শৈশবে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। সাদা কালো এই টিভি তখনকার সময়ে ছিল বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। টিভির সামনে ঠাঁয় বসে থাকতাম, আর অনুষ্ঠান দেখতাম। এখন টিভি রঙিন হয়েছে কিন্তু দেখার সময় নেই।
বিদুৎ নিয়ে বলার কিছু নেই, মনে পরলে মেজাজ গরম হয়ে যা ।
সময় পরিবর্তন হয়েছে ভাইয়া। এখন টিভি থাকলেও আমাদের দেখার সময় যেন নেই।
আগেকার দিনে সাদা কালো টিভি হলেও টিভি দেখায় যে আনন্দ ছিল এখনকার দিনের বড় বড় টিভিতে সে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। কোন একটা অনুষ্ঠান দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকা আর সেই মুহূর্তে কারেন্ট গেলে কি যে খারাপ লাগতো। ভাইয়া আপনার সাদাকালো টিভির গল্প পড়ে ছোটবেলায় ফিরে গেলাম। ধন্যবাদ ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
এখন তো সব আধুনিক আপু! টিভি দেখে আর কয়জন! ফোনেই সব বিনোদন নিয়ে নেয়। আগের সাদাকালো দিনগুলো ভালো ছিল খুব আপু
খুব সুন্দর একটি পোস্ট দেখেছেন আপনি ।পোস্ট পড়ে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে ।আপনার ছোটবেলার গল্প গুলোর সাথে আমার আম্মুদের গল্প গুলোর অনেক মিল উনার কাছে এ ধরনের কথাগুলো প্রায় সময় শুনি। আপনার সাদাকালো টিভির গল্প পড়ে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে ধন্যবাদ আপনাকে আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।
আপনার আম্মু অবশ্যই সময়টা উপভোগ করেছে। বিশেষ করে নব্বই দশকের সবাই বলতে গেলে।
লেখাটা পড়তে পড়তে একদম পিচ্চিকালে চলে ফিরে গিয়েছিলাম ভাই 😅। কি সব দিন ছিল সেসব, হায়রে হায়। সব থেকে মজা ছিল যে, টিভি একটু ঝিরঝির করলেই অ্যান্টেনা ধরে পাকাপাকি 🤪🤪। অবলা বস্তুটার জীবন একদম তেজপাতা করে দিতাম হাহাহাহা। সোনালী এই শৈশব গুলো হারিয়ে ফেলেছি। সত্যিই খুব মিস করছিলাম লেখাটা পড়তে নিয়ে।