ছোটগল্পঃ- বসন্ত শেষে
30-11-2023
১৬ অগ্রহায়ণ , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
বাহিরে শীত শীত ভাব! ইন্টার্ভিউ দিয়ে বেরিয়ে গেল রেহান। এলজিইডি মন্ত্রণালয়ে রেহানের চাকরি পরীক্ষা ছিল। আগে আরও পাচঁটা পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু ভাইবাতে গিয়ে বাদ পরেছে। এবারের পরীক্ষাটিও ভালো হয়েছে। তবে রেহানের মামা খালু নেই এই শহরে। নয়তো কবেই চাকরি পেয়ে যেত! রেহান ইন্টার্ভিউ দিয়ে চলে যায় তালতলা! সেখানে কাওসার মামার দুধ চা খুবই প্রিয় রেহানের। ঢাকাতে যখন আসে তখন মামার চা না খেয়ে যায় না রেহান। এক হাতে চা নিয়ে আনমনে তাকিয়ে থাকে রেহান। আজ চার বসন্ত চলে গেল! মিলির সাথে দেখা হয়না রেহানের। রেহানের বিশ্বাস মিলির সাথে একদিন দেখা হবে, হয়তো অকারণেই দেখা হবে দুজনের।
ঠিক চার বছর আগে মিলির সাথে সম্পর্ক ছিল। মিলি ঢাকায় থাকতো আর রেহান গ্রামে। দুজনের মাঝে দূরত্বটা বেশি হলেও তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল গভীর! মিলির সাথে প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল রেহানের তখন মিলি নীল শাড়ি, হাতে কাচের চুরি, কপালে কালো টিপ আর কানে ঝুমকো কানের দুল পরে এসেছিল। মিলির সাথে পরিচয়টা হয়েছিল ফেইসবুকে! কথা বলতে বলতে তাদের সম্পর্কটা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছিল। কিন্তু দুজনই একই ক্লাসে পড়াশোনা করতো। মিলি তাকে বলেছিল সে কখনো তাকে ছেড়ে যাবে না। সুখে-দুঃখে সে সবসময় পাশে থাকবে।
তাদের দুজনের সম্পর্কটা যতই গভীর হতে থাকে ততই যেন গাড় হতে থাকে। মিলি একটু দেরিতে রিপ্লাই দিলে রেহানের রাগ উঠে যায়। রেহানের কথা মিলি সহ্য করতে পারে না। কিন্তু ঝগড়া হওয়ার পরেও তাদের ভালোবাসা ঠিক আগের মতোই ছিল। হঠাৎ-ই একদিন জানতে পারে মিলির পরিবার মিলিকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। রেহান রীতিমতো পাগলের মতো হয়ে যায়। রেহান মিলিকে ফোন দিয়ে ফোন সুইচ অফ পায়। সেই যে ফোন সুইচ অফ হয়েছিল মিলির এর পরে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি দুজনের মাঝে। কিন্তু রেহানের একটা বিশ্বাস ছিল একদিন দেখা হবে মিলির সাথে!
চা খাওয়া শেষ করে রিকশাতে উঠতেই! ' রেহান ' বলে একটি মেয়ের কন্ঠে ডাক দিল! রেহান পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় সেই মিলি! মিলিকে দেখে হতবাকের মতো তাকিয়ে তাকে রেহান। পরনে এখন শাড়ি, চেহারাটা আগের থেকে মলিন হয়েছে, চোখের নিচে ডার্ক স্পট! মিলির সেই মলিন চেহারাটা আর নেই। বিয়ের পর তাহলে মেয়েদের সৌন্দর্য কমে যায়!
-রেহান, কেমন আছো তুমি?
-কেমন আছি জানতে চাও, তুমি! আমাকে একা করে চলে গেলে! আজ তুমি বলছো কেমন আছি!
- জানি তুমি রেগে আছো! আমার কোনো উপায় ছিল না, বাধ্য হয়েই বিয়েটা করতে হলো! জানো রেহান, আমি ভালো নেই!
- হুমম, তোমার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে। আমি সবসময় দোয়া করতাম তুমি ভালো থাকো।
- হুটঁ করে কি যে হয়ে গেল! আমার কথা বাদ দাও, তোমার কথা বলো!
- এই যে যেমন রেখে গিয়েছিলে তেমনি আছি।
- বিয়ে করোনি এখনও! নাকি মনের মতো কাউকে পায়নি!
- এক মনে কি দুজনকে জায়গা দেয়া যায়! আমি শুধু তোমাকেই জায়গা দিয়েছিলাম।
- বুঝেছি, চাকরি পেয়েছো?
- না!
- আমি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে করবে তুমি?
- তুমি কি দয়া দেখাতে আসছো। আমি কারো দয়ায় চাকরি নিতে চাই না।
- তুমি অন্যভাবে দেখছো কেন! আমি একটা জব করছি সেখানে চাইলে তুমিও করতে পারো।
- না, তুমি করো চাকরি। তোমাকে অনেকদিন পর দেখে ভালো লাগলো। আমার যেতে হবে।
এই বলে রেহান রিকশায় উঠে যায়। ফাইল হাতে নিয়ে রিকশা মামাকে বলে রিকশা চালাতে।
পিছন থেকে মিলি ডাকছে। কিন্তু মিলির ডাকে পিছনে ফেরার আগ্রহ নেই! একটা সময় সে রেহানের সবটা জুড়েই ছিল। আসলে জীবনে কিছু ভালোবাসা নিজের জন্য রাখতে হয়। প্রিয় মানুষ চলে গেলেও যেন নিজের জন্য রাখা ভালোবাসাটুকু দিয়ে বেচেঁ থাকা যায়। রেহান পকেট থেকে রুমাল বের করে! ঠিক চার বছর আগে মিলির চলে যাওয়াতে অনেক কেদেঁছিল। আজ মিলির সাথে দেখা, কিন্তু মিলি ভালো নেই এটা ভেবেই রেহানের কান্না পাচ্ছে। প্রিয় মানুষটা ভালো থাকলেই যেন খুশি আমরা।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
twitter share
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনি তো দেখছি বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে রোমান্টিক গল্প গুলো লিখতে পারেন। যেমন আপনার আজকের রেহান আর মিলির গল্পটি পড়ে বেশ খারাপ লাগলো। রেহান চার বছর যাবৎ মিলির দেওয়া সেই রোমালটি আকঁড়ে ধরে আছে। এই বিষয়টা আমার বেশ ভালো লেগেছে। দারুন ছিল গল্পটি।
আপনার ভালো লেগেছিল জেনে খুব ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ☘️
বাস্তবিক গল্প যেন সিনেমাতে রূপ পায়। সেটাই যেন আপনার গল্পের মধ্যে খুঁজে পেয়েছি । সত্যি এরকম হাজারো ভালোবাসা সম্পর্কটা এভাবে শেষ হয়ে যায় কিছুই করার থাকে না। সবই পরিস্থিতির শিকার যখন দেখা হয়েছিল সে অনুভূতিটাই অন্যরকম চাইলেও আর ফিরে আসা যায় না। ভালো লাগলো খুবই সুন্দর করে গুছিয়ে গল্পটি লিখেছেন।
চেষ্টা করে যাচ্ছি ভাই আপনাদের সাথে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করার জন্য। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ☘️
আপনার রোমান্টিক কিংবা বিরহের গল্প গুলো এককথায় দুর্দান্ত হয় ভাই। এর আগেও আপনার বেশ কয়েকটি গল্প আমি পড়েছিলাম। যাইহোক কিছু কিছু প্রকৃত ভালোবাসার পূর্ণতা হয়তো আল্লাহ তায়ালা লিখে রাখেন না,তাইতো দু'জনের তীব্র ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও, প্রকৃত ভালোবাসা গুলো পূর্ণতা পায় না। তবুও ভালোবাসার মানুষ ভালো থাকলে ভীষণ শান্তি লাগে। এটাই প্রকৃত ভালোবাসার গুণ। রেহান এবং মিলি,কারোরই দোষ নেই এই গল্পে। সবই নিয়তির খেলা। তবে দুজনেই দিনশেষে কষ্টে আছে, এটা জেনে ভীষণ খারাপ লাগলো। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
আসলেই ভাইয়া, কিছু বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতেই হয়। যায়হোক অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার একটি মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহিত করার জন্য ☘️