১ম পর্ব || জীবনের ব্যর্থতার গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

04-03-2024

২১ ফাল্গুন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼


sad-2635043_1280.jpg

copyright free image from pixabay

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো ও সুস্থ্য আছেন। তো ভালো থাকতে পারাটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। যেহেতু এখন ওয়েদার পরিবর্তন হচ্ছে। এই সময়ে সতর্ক থাকাটাই ভালো। আমি নিজেও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছি কয়েকদিন ধরে। তো আজকে আপনাদের সাথে আমার জীবনের ব্যর্থতার গল্প শেয়ার করবো। সবাই তো নরমালি সাফল্যের গল্পই শোনাই। আমি ভাবলাম আপনাদের সাথে আমার জীবনের ব্যর্থতার গল্পগুলো শেয়ার করি। জীবনে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছি। তবে আজকের ব্যর্থতার গল্পের মূলে থাকবে আমার প্রাতিষ্ঠানিক গল্পের ব্যর্থতার গল্পগুলো। আমি কয়েকটি পর্বে শেয়ার করবো আমার ব্যর্থতার গল্পগুলো। আশা করছি শেষ পর্যন্ত পাশে থাকবেন।

জীবনে প্রথমবার ব্যর্থতার স্বাদ পেয়েছিলাম ২০১২ সালে। সবেমাত্র ক্লাস পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। বলতে গেলে তখন থেকেই আমি এভারেইজ স্টুডেন্ট। এতো যে ভালো সেটাও না। তবে তখন থেকেই আমি গণিতে ভালো দক্ষ ছিলাম। সেটাও ছিল আমার আপুর কল্যাণে। আপুর হাত ধরেই আমি গণিতে দক্ষ হয়েছিলাম। আপু তখন মেডিকেলের প্রিপারেশন নিচ্ছিল। বাড়িতে থাকা অবস্থায় ইংরেজিটাও ভালো করে আয়ত্ত করি। এনালগ ঘড়ি দেখা সময় বলাটা আপুর কাছ থেকেই শিখা। তো পড়ালেখাটা ভালোই চলছিল। তখন চারিআনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতাম। নাসিম স্যার আমাকে খুবই আদর করতো। কারণ আমি একটু শান্ত স্বভাবের ছিলাম আর গণিতও ভালো পারতাম। ৫ম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো একটা পজিশনও আসে। গণিতে সবসময় আমার ৯০+ মার্ক থাকতোই। পিতা-পুত্রের ম্যাথ, আর গরু-খাসির ম্যাথগুলো আমার তখনই খুবই প্রিয় ছিল।

তো ২য় সাময়িক পরীক্ষার ফল দেয়ার পর আপুরও মেডিকেলে চান্স হয়ে যায়। সিলেট ওসমানী মেডিকেলে চান্স পায়। আমরা তখন ভীষণ খুশি। তবে আমার একটু খারাপ লাগছিল কারণ আপু চলে যাবে। আর আমাকে তখন পড়াবে কে! সেটা নিয়ে আমার খারাপ লাগছিল অবশ্য। তবে আপু বলেছিল কোনো সমস্যা হলে ফোনে বলতে। তখন বাটন ফোনের যুগ। স্মার্টফোন তেমন দেখিনি। আপু নরমাল একটা সিম্পনি মডেলের ফোন ইউজ করতো। তো আপু চলে যাওয়ার পর আমার পড়ালেখাটা একটু স্লো হয়ে গিয়েছিল। তবে একা একাই পড়াশোনা করছিলাম। দেখতে দেখতে বার্ষিক পরীক্ষাও চলে আসে। আর তখনই যেন সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়। আমার আপু প্রচন্ড জ্বর নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। আর আপুর শরীরে মরণব্যধী ক্যান্সার ধরা পরে। আপনাদের সাথে এর আগেও এ বিষয়ে শেয়ার করেছি। তো ডিপলি যাচ্ছ না । তারপর আপুকে হারালাম। আর আপু যেদিন মারা যায় সেদিন আমার ইংরেজি পরীক্ষা ছিল।

আমি মানসিকভাবে এতোটাই ভেঙে পড়েছিলাম পরীক্ষা কিভাবে দিবো সেটাও আসতেছিল না। সেদিন আমি কিছু না পড়েই পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মন বাড়িতেই পড়েছিল। কখন বাড়িতে আসবো। পরীক্ষায় কতো কেঁদেছি!! আমার খাতা প্রায় চোখের পানিতে ভিজে গিয়েছিল। ক্লাসের ম্যাডাম আমার কান্না দেখে তারপর আমার কাছে জানতে চাই আমি কান্না করি কেন। আমার মুখে কোনো কথায় আসছিল না। তারপর আমার এক বন্ধু জানতো যে আমার বড় আপু মারা গিয়েছে আজ। তাই সে কান্না করছে। তো পরীক্ষাটা কোনোভাবে দিলাম আসলে। না পড়েও পরীক্ষাটা ভালোই হয়েছিল। তবে আপুর স্বপ্ন ছিল আমি যেন পিএসসি তে এ+ পায়।

কিন্তু ফাইনালি আমি সেটা পারলাম না। নিজের কাছে মনে হয়েছিল তখন আমি ব্যর্থ হলাম। রেজাল্ট বের হওয়ার দিন প্রচুর কান্না করেছিলাম। কারণ আমি পারলাম না একটা এ প্লাস পেতে! আপু বেচেঁ থাকলে হয়তো আমার রেজাল্টটা অন্যরকম আসতো। তবে জীবনের আবার আপুর অনুপস্থিতি উপলব্ধি অনুভব করলাম যখন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা চলে আসে।

চলবে,,,,,


10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG-20211205-WA0092.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 months ago 

আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার কারণে সবারই কম বেশি সর্দি কাশি হচ্ছে সেজন্য নিজেকে সাবধানে রাখতে হবে। আপনার প্রাইমারির ফাইনাল পরীক্ষায় এ প্লাস না পাওয়ার ব্যর্থতার জন্য আসলে আপনার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। সেজন্যই এই পরিস্থিতির শিকার। আসলে মানুষের কখন কোন ধরনের বিপদ আসে সেটা কেউ জানে না খুবই খারাপ লেগেছে। আপনার আপু মেডিকেলে চান্স পেয়েছিল কিন্তু ক্যান্সার হয়ে মারা গিয়েছে যেটা জীবনে অনেক বড় কষ্টের গল্প।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

আসলেই ভাই, মানুষের জীবনে কখন বিপদ আসে বলা যায় না

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

আসলে ভাইয়া জীবনে সফলতা ব্যর্থতা থাকবেই, তারপরে ও জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।সত্যি আপনার আপুর মৃত্যু এভাবে হবে ভাবলেই অবাক লাগে।আসলে ভাইয়া এই মৃত্যুর পথ আমাদের সবারই আসবে।তবে সেই মূহুর্তে আপনি যে পরিক্ষা দিয়েছেন এটাই অনেক। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

খুব শীঘ্রই পরের পর্ব আসবে আপু

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

আপনার আপুর কথা পড়ে খুব খারাপ লাগলো। দোয়া করি ওপারে ভালো আছেন। জীবন মানেই সাফল্য আর ব্যর্থতা। ব্যর্থতাই সাফল্যকে মহিমান্বিত করে তোলে। আর ছোট পরীক্ষায় A+ না পাওয়া কোন ব্যর্থতা নয়। তবে হ্যা বোনের ইচ্ছে পুরন হয়নি, তাই মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। সামনে পড়ে আছে অসীম পথ। আপনার সাফল্য নিশ্চিত। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 4 months ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনাকে 🌼

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

আমি আপনার জীবনের এত কিছু বিস্তারিত জানতাম না। আজকে পড়েই তো খুব খারাপ লাগলো। সৃষ্টিকর্তা যা করেন সবকিছু মঙ্গলের জন্যই করেন। আপনার আপু চলে গেল আপনাদের জীবন থেকে। জীবনের অনেক মূল্যবান একটা জিনিস হারিয়ে ফেললেন। তাছাড়াও বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। একটা মানুষ যখন জীবনে ঘুরে দাঁড়ায় তার পিছনে হাজার হাজার ব্যর্থতার গল্প লুকিয়ে থাকে। হয়তো সৃষ্টিকর্তা আপনার মঙ্গল করবেন। অপেক্ষা করবো পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার জন্য।

 4 months ago 

জি আপু, সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন 🌼

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

আজকে আপনার এই জীবনে ব্যর্থতার গল্পের প্রথম পর্ব পড়ে অনেকটা খারাপ লাগলো। আসলে আমাদের জীবনে যাদের বড় বোন, ছোট বোন থাকে তার মতো ভাগ্যবান আর কেউ হয় না৷ আপনার পরিবার থেকে আপনাদের সবচেয়ে মূল্যবান ও ভালোবাসার জিনিস আপনার আপু আপনাদের জীবন থেকে চলে গেল শুনে খুব খারাপ লাগলো৷ আপনি প্রতিনিয়তই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছেন তা শুনে আরো অনেক বেশি পরিমাণে খারাপ লাগলো। তবে একদিন সফলতা আসবেই। হয়তো সৃষ্টিকর্তা আপনার জন্য আরো ভালো কিছু তৈরি করে রেখেছেন৷ তাই হয়তো আপনাকে এই ছোটখাটো কিছু সফলতা অর্জন করে এখানে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না৷ তিনি হয়তো চান আপনাকে আরো অনেক বড় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার৷ পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার আশায় রইলাম।

 4 months ago 

আসলেই ভাই সৃষ্টিকর্তা হয়তো ভালো কিছু রেখেছে 🌼

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

হুম। ভাই৷ অপেক্ষা করেন৷

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

🌼💜

 4 months ago 

আপনার পোস্ট টি পড়তে গিয়ে চোখের কোনে জল চলে আসলো।আগেও পড়েছি আপনার আপুর অকালে চলে যাওয়া। আপনি আপুকে ভীষণ ভালোবাসতেন তাই আপনার পোস্ট এতোটাই আবেগঘন হয় যে পড়তে গিয়ে চোখে জল চলে আসে।আপু থাকলে সত্যি আপনার রেজাল্ট অন্যরকম হতো।আপনাকে আপু সারাজীবন কাঁদাবে এতটুকু বুঝতে পারছি আপনার পোস্ট পড়ে আপুর প্রতি ভালোবাসা দেখে।আসলে ভুলে থাকতে চাইলেও ভুলে থাকা যায় না আপনজনের অকাল মৃত্যু। আমি হারে হারে জানি। নিজেকে সামলাতে বল্লেও জানি সামলানো অনেক কঠিন। এটুকুই বলবো ভালো থাকবেন আপুর জন্য প্রার্থনা করবেন পরপারে যেন স্বর্গীয় সুখ লাভ করতে পারেন।

 4 months ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপু 😍

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

মানুষের জীবনে কখন কি হয়ে যায়, সেটা বলা যায় না ভাই। তবে আপনার আপুর মৃত্যুর ব্যাপারে জানতে পেরে সত্যিই খুব খারাপ লাগলো। আসলে কিছু কিছু মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আপনি যে সেই পরিস্থিতিতে পিএসসি পরীক্ষা দিতে পেরেছেন, সেটাই অনেক। তবে আপনার আপু মারা না গেলে অবশ্যই এ+ পেতেন। মন খারাপ করবেন না ভাই। আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং শুভকামনা রইল ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 58051.31
ETH 3136.86
USDT 1.00
SBD 2.44