ঝরে গেল একটি প্রাণ!

06-05-2023

২৩ বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


accident-3714897_1280.jpg

copyright free image from pixabay

বয়স মাত্র ১৮। গত বছর এস এস সি পাস করেছে। বাবা মায়ের আদরের ছোট ছেলে। বড় একজন ভাই আছে। বড় ভাই আবার সম্পর্কে আমার বন্ধু। ছোট বেলার বন্ধু। বন্ধু রিপনের বাবা ক্লাস সপ্তম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় মারা যায়। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বটাও তার কাধেঁ এসে পরে। পড়ালেখা তখনও শেষ হয় নি। অনেক কষ্টে এস এস সি পাশ করার পর নান্দাইলে একটা ছোট খাটো ব্যবসা দিয়েছিল। এই ব্যবসাটাই ছিল শেষ সম্ভল। যা আয় হতো তা দিয়েই মোটামোটি সংসার চলে যেত। কিন্তু দিনকে দিন পরিবারের খরচটাও বেড়ে যায়। উপায় না পেয়ে রিপন ঢাকা চলে যায় একটা চাকরির সন্ধানে। চাকরি পেয়েও যায়।

চাকরির সুবাধে পরিবারের সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। অথচ বন্ধু রিপন নিজের পড়ালেখা বাদ দিয়ে পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব নেই। এদিকে তার ছোট ভাই নাইম! গত বছর এস এস সি পাস করেছে। বড় ভাইয়ের কাছে আগেই আবদার করে রেখেছিল পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে যেন একটা বাইক কিনে দেয়। কিন্তু বন্ধু রিপনের পক্ষে বাইক কিনে দেয়া সম্ভব ছিল না। এজন্য ছোট ভাইকে মিথ্যে আশ্বাসও দেয়নি। বরং বুঝিয়েছিল। কিন্তু তার ছোট ভাইয়ের আচরণ দিনকে দিন রুড হতে লাগল। তার মায়ের সাথে মাঝে মাঝেই খারাপ ব্যবহার করতো।

তারপর রিপন সেটা জানতে পারে। বাবার দেয়া সেই দোকানটা উপায় না খুজেঁ বিক্রি করে দেয়। যা টাকা পেয়েছিল সেটা দিয়ে ছোট ভাইকে একটা বাইক কিনে দেয়। বাইক পেয়ে ছোট ভাই ভীষণ খুশি।

কিন্তু সব সময় একটা জিনিস আপনি মনে রাখবেন। কাউকে কষ্ট দিয়ে আপনি কখনো ভালো থাকতে পারবেন না। কখনোই না! নাইম বাইক শিখে রাস্তাঘাটে হাই স্পিডে চালাতো। গ্রামের মানুষরা ঠিকই হয়তো মনে মনে অভিশাপ দিতো। হাইওয়ে রাস্তাগুলো বেশিরভাগ দূর্ঘটনা ঘটে বাইক আর সি এন জি এর। নিমিষেই প্রাণ ঝরে যায় কত শত মানুষের! স্বপ্ন ভেঙে একটি পরিবারের।

গতকাল ফেইসবুকে প্রবেশ করেই জানতে পারি রিপনের ছোট ভাই বাইক এক্সিডেন্ট করেছে। বাইক এক্সিডেন্ট করে সেখানেই মারা যায়। নিউজটা দেখতেই যেন ধুক করে উঠলো। অথচ দুদিন আগেও ছেলেটাকে ভালো দেখেছিলাম। রিপনের কাছ থেকে বিস্তারিত সব তথ্য জানতে পেরেছিলাম।

এখানে আপনি দোষ কাকে দিবেন? পরিবারকে নাকি সমাজকে?
আসলে একটা শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবার ও সমাজ দুটোরই অবদান থাকে। শিশুর বেড়ে উঠার সাথে সাথে কিন্তু সে পারিবারিক শিক্ষাটা শিখতে থাকে, আয়ত্ত করতে থাকে। পরিবার তাকে যেভাবেই শিক্ষা দিবে সে সেভাবেই বেড়ে উঠবে। বেড়ে উঠার পর কিন্তু সে সমাজের রীতিনীতি ও শিখতে থাকে। মানুষের আচরণও থাকে অনুপ্রাণিত করে। তবে সব থেকে বড় শিক্ষাটা কিন্তু পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে একটা শিশু। আমরা কি আদৌ একটা শিশুকে বেড়ে উঠার সাথে সাথে নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দিতে পেরেছি বা পারছি! প্রশ্নটা আপনাদের কাছেই রেখে গেলাম।

শুনেছিলাম নাইম কিশোর গ্যাং এর পাল্লায় পরে এমনটা করেছে।কিশোর গ্যাং আমাদের সমাজের আরেকটি ব্যাধি। কিশোর গ্যাং এর খপ্পরে কত ছেলে মেয়ে বিপথে যাচ্ছে। তারা কিন্তু পরিবার, সমাজ এসবের কথা ভাবেই না। শুধু তাদের ইচ্ছে, স্বপ্ন পূরণ হলেই হলো। আর তাদের স্বপ্ন অনেক টাকা দিয়ে চিল করা বন্ধুদের নিয়ে, বাইকে করে ঘুরে বেড়ানো, আমার একটা বাইক থাকবে আরও কত কি! এসব ব্যাধি আমার আপনার একার পক্ষে কিন্তু সম্ভব নয় দূর করার। দরকার সবার সহযোগিতা। সমাজের এমন ব্যাধি দূর করতে হলে পরিবার, সমাজ সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।

যাক, প্রাণ তো চলে গেল। সাথে বাবার শেষ সম্ভল বিক্রি করে কিনে দেয়া বাইকটিও গেল। এতে কার ক্ষতি হলো! একটি পরিবার হারিয়েছে তার আপনজনকে। আবেগের বশে অনেকেই অনেক কিছু করে ফেলে। কিন্তু যখন হারিয়ে যায় তখনই টের পায় সেটার মূল্য। আমি বলবো, পরিবারকে আরও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আপনার ছেলে বা মেয়েকে নীতি নৈতিকতা শিক্ষটা ছোট থেকেই দিতে হবে। যেন সে বড় হয়েও তা লালন করতে পারে।

এমন অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনার মাধ্যমে যেন কারও আপনজনের প্রাণ না হারায় এমনটাই প্রত্যাশা করছি। সমাজের সবাই যেন হাতে হাত রেখে এ সমাজটাকে পরিষ্কার রাখতে পারে এমনটাও প্রত্যাশা করছি। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ 🦋🌼



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আপনার বন্ধু রিপন ভাইয়া হয়তো বাধ্য হয়ে তার ভাইকে বাইক কিনে দিয়েছিল। এই বাইক তার জীবনে সর্বনাশ করে দিল। একটি তাজা প্রাণ একেবারে নিভে গেল। আসলে পরিবার থেকে শুরু করে সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত। কম বয়সে যদি কেউ বাইক কিনে চায় তাকে বোঝানো উচিত।

 last year 

জি আপু। বাইকই যেন তার জীবনে সর্বনাশ ঢেকে আনলো। তাই তো অল্প বয়সে প্রাণ হারাতে হলো

 last year 

আপনি ঠিক বলেছেন ভাই, কারো মনে কষ্ট দিয়ে কখনো ভালো থাকা যায় না। আর তাইতো আপনার বন্ধু রিপনের কাছ থেকে জোর করে তার ছোট ভাই বাইক কিনে নেয়ার কারণে আজ তার এই পরিণতি। তবে রিপনের ছোট ভাইয়ের অকাল মৃত্যুর কথা শুনে খুবই খারাপ লেগেছে। কেননা অল্প বয়সেই ছেলেটিকে তরতাজা প্রাণ হারাতে হলো। সেই সাথে হারাতে হলো তার বাবার শেষ সম্বল টুকু। রিপনের ভাইয়ের মত এমন পরিণতি যেন কারো না হয় এই কামনা করছি।

 last year 

জি ভাইয়া। আজ বাইক না থাকলে হইতো এভাবে প্রাণ ঝরে যেত না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া

 last year 

দুঃখজনক হলেও একটি সমাজ সচেতনতা মূলক পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন,এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। একটি দূর্ঘটনা একটি জীবনের সমাপ্তি।পরিবারের সারা জীবনের কান্না।আমাদের সবার কিশোর-তরুণ সন্তান,ভাই-বোনের খরর নেয়া দরকার।তাদের বেশি করে সময় দেয়া, ভালবেসে-কাছে টেনে বদলে দেয়া দরকার। তাহলেই কিশোর গ্যাং বা বখাটেপনা মুক্ত কিশোর তরূণ পাবো। আপনার বন্ধুর ভাই নাইমের জন্য গভীর শোক।

 last year 

জি আপু আপনার মতামত অবশ্য ঠিক। দরকার সহমর্মিতা আর সাহায্যের হাত সবার। ।

 last year 

ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক খারাপ লাগল। সত্যি ভাইয়া আমাদের সমাজে এমন ঘটনা অনেক ঘটে থাকে। আসলে আমাদের সবারই উচিত সন্তানের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। আর প্রতিটি সন্তান বেশির ভাগ শিক্ষা তার পরিবার থেকে পায়।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর লিখেছেন।

 last year 

জি আপু! প্রত্যেক মা বাবার উচিত তার সন্তান সুশিক্ষা অর্জন করতে পারে সেটা নিশ্চিত করা।

 last year 

রিপনের ছোট ভাই নয়নের কথা শুনে খুবই খারাপ লেগেছে আমার কাছে। এভাবে এত অল্প বয়সে প্রাণটা চলে গেল তার। বাবার শেষ সম্বল বিক্রি করে রিপন তার ভাইকে এই বাইকটি কিনে দিয়েছিল। কিশোর গ্যাং এর পাল্লায় এখন অনেক ছেলে পড়ে বিভিন্ন রকম নিজেদের ক্ষতি করছে। নাঈম ও তাহলে কিশোর গ্যাং এর পাল্লায় পড়েছিল। এরকম কঠিন পরিণতি যেন কারো না হয় সেই কামনা করি।

 last year 

জি আপু! আমাদের সমাজের মারাত্নক একটা ব্যধি হলো কিশোর গ্যাং।

 last year 

ঠিকই বলেছেন আসলে কারো মনে কষ্ট দিয়ে কেউ কোনদিন চির সুখী হতে পারেনা। আপনার বন্ধু হয়তো বাধ্য হয়ে ভাইয়ের আবদার রাখার জন্য তাকে বাইক কিনে দিয়েছে। আসলে আমাদের পরিবারের সবাইকে আরো সচেতন হয়ে সন্তানদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। এরকম অকাল মৃত্যু আসলে কারোই কাম্য নয়। একটি তাজা প্রাণ-ওকালে ঝরে পড়ে গেল। আসলে এরকম করুন পরিনিতি যেন কারো জীবনে না ঘটে।

 last year 

জি এমন ঘটনা যেন কারো পরিবারে না ঘটে এমনটাই প্রত্যাশা করছি

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62149.46
ETH 2438.84
USDT 1.00
SBD 2.68