ডিসেম্বরের শহর

16-12-2022

০২ পৌষ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন। অন্তত আজকের দিনটি উপভোগ করতে পেরেছেন! আজকের দিনটি আমাদের জন্য গৌরবের। এই দিনটিতেই যে আমরা পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন দেশ! প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে বিজয় দিবস পালিত হয়েছে সারাদেশে। ৫১ তম বিজয় দিবসের বর্ষপূর্তি আমরা উদযাপন করে ফেললাম।

IMG20221216120155.jpg

আসলে আগের বিজয় দিবস উদযাপন আর এখনকার বিজয় দিবস অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আগে ভোর হলেই বিটিভি অন করে দিতাম! সকাল সকাল বসে যেতাম কুচকাওয়াজ দেখার জন্য! একের পর এক বিমান বাহিনীদের রঙের খেলা দেখতাম। সে এক অন্যরকম ভালো লাগা। চারিদিকে শুধু বাংলাদেশের পতাকা টাঙানো। সারা বাজার জুড়ে বাংলাদেশের পতাকা টাঙানো থাকতো। মনে হতো এ যেন বাংলাদেশের সত্যিকারের রূপ! বিটিভিতে সকাল সকাল কিছুক্ষণ কুচকাওয়াজ দেখে চলে যেতাম স্কুলের মাঠ প্রাঙ্গনে। শুরু হতো আবার অনুষ্ঠান! দেশাত্মবোধক গান বেজে থাকতো সবসময়। কিন্তু বর্তমানের কথায় আসি! এখন বিজয় দিবস আগের থেকেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।

IMG20221216115050.jpg

এখন আমাদের মাঝে সংস্কৃতির অবমাননার একটি বিষয় আসলে খুব পরিলক্ষিত হয়। আমরা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিলাম অথচ বিজয় দিবসে আমরা বিদেশী সংস্কৃতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি! যে ভাষার জন্যই প্রাণ দিল রফিক, জব্বার, বরকত সহ আরও অনেক, সে ভাষার মান কি আমরা উপরে রাখতে পেরেছি? আমরা এখন বিদেশী সংস্কৃতি নিয়েই ব্যস্ত! প্রিয় গানের তালিকায় বর্তমান জেনারেশনের ছেলে মেয়ের গান থাকে বাংলা! খুব পাওয়া যায়, যারা বাংলা গান পছন্দ করে! আমরা ইংরেজি ভাষা শিখতে মরিয়া হয়ে পড়ি। কেউ যদি ইংরেজীতে কথা বলতে না পারে তাহলে সে ক্ষেত, মূর্খ! অথচ শুদ্ধভাবে আমরা কয়জনই বা বাংলায় কথা বলতে পারি। আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ জাগ্রত হোক এমনটাই প্রত্যাশা করি।

যাক, গত বৃহস্পতিবার এ ঢাকা এসেছিলাম। উদ্দেশ্য এবারের বিজয় দিবসটা ঢাকা শহরে উদযাপন করবো। কিন্তু তা আর হলে কই! কোথায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় জানিই না! তাই আর যাওয়া হলো না। তবে ডিসেম্বরের আজকের বিকেলটা পুরোপুরি অন্য রকম ছিল। সকাল থেকেই দেখলাম চারপাশে কুয়াশা পড়েছে। ভেবেছিলাম ঢাকা শহরে শীত এখনও পড়েনি। এসে দেখি ভালোই শীত পড়েছে। রাত বারোটা বাজতেই শোনা গেল গুলির আওয়াজ! বিজয় দিবসের রাতটা যেভাবে শুরু হয়! শুরু হয় আকাশে আতশবাজির খেলা! পুরো আকাশ যেন অন্যরকম সাজে সেজে উঠে। এটা আসলে অন্যরকম একটা উৎসব বলা যায়।

IMG20221216115358.jpg

সকালে ঘুম থেকেও উঠতে দেরি হয়ে গেল! ভাবলাম আজকে তাহলে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে আসি। আমি ঢাকা শহরে ঘুরাঘুরি করে ভালোই আইডিয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে ঘুরাঘুরি করতে হলে আপনার পকেটে অবশ্যই টাকা থাকতে হবে। অথবা আপনি যদি হাটঁতে পারেন তাহলে টাকা কম হলেও চলবে, হাহাহা! সত্যি বলছি! আপনি যদি রাস্তা চিনেন আর হাটঁতে পারেন তাহলে ঘুরতে পারবেন। আমি বাসে চলাচল করে থাকি বেশি। সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তা ফাকাঁ মোটামোটি। শুনেছিলাম, আজকে রাস্তা ব্লক থাকবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত থাকবে। সোজা চলে গেলাম যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে! গিয়ে দেখি ভালোই ভীড়! যানবাহন তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।

IMG20221216115428.jpg

গন্তব্য আগারগাঁ! শিকড় বাসে উঠে পড়লাম। লোকাল বাসগুলো একটু বেশি প্রবলেম করে! যাত্রী যতক্ষণ না পূর্ণ হবে ততক্ষণ গাড়ি ছাড়বে না। বাসে উঠি সিটে বসে পড়লাম। একে একে যাত্রী দিয়ে বাস ফিল আপ হলো তারপর গাড়ি স্টার্ট দিল। রাস্তা ফাকাঁ । গুলিস্তান পর্যন্ত তেমন জ্যাম পেলাম না! তাড়াতাড়ি চলে গেল। তারপরও রাস্তা ফাকাঁ। কিন্তু বিপত্তিটা হলো ফার্মগেটের পর থেকে! আগারগাঁ রোডের রাস্তা ব্লক করা! গাড়ি ভিতরে ঢুকতে দেয়া হবে না। তার পর বাস শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের এদিকে দিয়ে গেল। আমি গেটের সামনে নেমে গেলাম। এদিকে রাস্তাটাও আমার চেনা। প্রিয় মানুষকে নিয়ে হেটেঁছি অনেকটা পথ এখানে। ভার্সিটির ভিতরের এরিয়াটা খুব সুন্দর। আমার কাছে ভালো লাগে এরিয়াটা।

হাটঁতে হাটঁতে চলে গেলাম কৃষি অনুষদ হলের সামনে! গিয়ে দেখি সেখানে কিছু মানুষ বসে আছে। ভাষা শহীদদের স্মরণে সেখানে একটা স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। অনেকেই সেখানে ছবি তুলছে। আমিও গেলাম ভিতরে। পায়ের জুতা নিচে রেখে উপরে উঠলাম। উপরে উঠে কিছু ফটোগ্রাফি করে নিলাম। এরই মাঝে খেয়াল করলাম আকাশে বিমান যাচ্ছে! একসাথে চারটা বিমান! অনেক শব্দে মনে হলো মাথার একদম নিচ দিয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় চার রকমের রঙ মিশ্রিত দোয়া বের করে গেল। অনেকেই ব্যাপক উৎসাহের মধ্যে দিয়ে এই মোমেন্টটা খেয়াল করছিল। সেখানে বসে আমিও কিছুক্ষণ মোমেন্ট কাটালাম একা একা। তখনও কুয়াশা দেখাচ্ছিল। ভালোই ঠান্ডা লাগছে তখন। সেখানে কিছুক্ষণ বসে সামনে চলে গেলাম। শেরে বাংলা হলের সামনে। সেখানে গিয়ে দেখি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে।

IMG20221216141034.jpg

কিছুক্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সেখানে দাড়িঁয়ে দেখলাম। একে বাড়ে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ছিলাম সেখানে। অনুষ্ঠান শেষ হলে সোজা চলে যায় তালতলা। মূলত বেরিয়েছিলাম প্রিয় মানুষকে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরবো। কিন্তু সে ক্লাসে ছিল। এদিকে শুক্রবারের দিনও ক্লাস থাকে । মিরপুরে ট্রেনিং এর ক্লাস করে। চলে গেলাম মিরপুরে। সেখানে গিয়ে দুঘন্টা অপেক্ষা করলাম। জুম্মার নামাজের টাইম হয়ে গিয়েছিল। আমি বলেছি দাড়িঁয়ে আছি। নামাজ শেষ করে দেখা করবো। নামাজ শেষ করে দেখি সে দাড়িঁয়ে আছে। ডিসেম্বরের শহরের রাস্তাটা তাকে নিয়ে কিছুক্ষন হাটঁলাম! আসলে প্রিয় মানুষের সাথে হাটঁলে দেখবেন সময়গুলো খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। হাটঁতে হাটঁতে বাসার সামনে চলে এলাম। তাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আমি চলে এলাম বাসস্ট্যান্ডে। বাসে উঠে চলে এলাম সোজা বাসায়! এইতো দিনটা ভালো কেটে গেল।

DeviceOppo A12
Photographer@haideremtiaz
LocationW3w
Date16 December, 2022

যাক, বেশি কথা আর বাড়ালাম না। আজ এই পর্যন্তই। আপনাদের সু্স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ 🌼।



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 2 years ago 
ঢাকা আসার উদ্যেশ্য কি শুধু বিজয় দিবস উদযাপন দেখা নাকি পাশাপশি প্রিয় মানুষের সাথেও কিছু সময় অতিবাহিত করা । যাই হোক বিজয়ের এই দিন আমরা কুচকাওয়াজ করে পালন করছি ঠিকই কিন্তু এই বিজয় আনার জন্য লাখ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার পর আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। আপনি দিনটি খুব সুন্দরভাবে উদযাপন করেছেন। ছবিগুলো দেখে ভাল লেগেছে । ধন্যবাদ ভাইয়া।
 2 years ago 

জি ভাইয়া। বিজয় দিবস পালন সাথে প্রিয় একজনের সাথে দেখা 😁। আপনাকে ধন্যবাদ

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago 

আপনি আপনার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। শুক্রবারে যদি ক্লাস না থাকতো তাহলে হয়তো আরো বেশি সময় কাটানো যেত 😅😅। যাইহোক ভাইয়া আগেকার দিনের বিজয় দিবসের উদযাপন আর এখনকার বিজয় দিবসের উদযাপনের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আগে সকাল হলেই মাইকের শব্দ ও বিজয়ের জয়ধ্বনি শুনে জেগে উঠতাম। চারপাশে বিজয় দিবসের আনন্দ উল্লাস শুনতে পাওয়া যেত। সবাই নিজেদের মতো করে বিজয় দিবস পালন করত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সবকিছু পাল্টে গেছে। কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানগুলো সরাসরি দেখানো হতো। সময় যেমন বদলে গেছে তেমনি বিদেশি শিক্ষা কিংবা ভাষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে গেছে।

 2 years ago 

একদম আপু। এখন বিদেশী ভাষার প্রতি মানুষের আগ্রহটা অনেকে বেড়েছে! বাংলা ভাষার চর্চা খুব কম মানুষই করে।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

একেবারে ঠিক বলেছেন ভাই আগের বিজয় দিবস এবং এখনকার বিজয় দিবসের মধ্যে বেশ ভালো পার্থক্য তৈরি হয়ে গেছে। বিজয় দিবসের দিনে উৎযাপনের নামে বাজানো হচ্ছে অশ্লীল হিন্দি গান এটা অপসংস্কৃতি ছাড়া আর কিছুই না। তবে বিজয় দিবসে আপনি তো মোটামুটি বেশ ভালোই ঘোরাফেরা করেছেন আমি বাড়ি থেকে বেরই হয়নি হা হা। ধন্যবাদ আপনাকে।।

 2 years ago 

বের হতেন ভাই। ঘুরাঘুরি করলে তো ভালোই লাগে 😁

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 67421.82
ETH 2623.68
USDT 1.00
SBD 2.68