১ম পর্বঃ ট্রেন জার্নি [ কমলাপুর টু ভৈরব ]
23-10-2022
০৮ কার্তিক ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন 🌼। আমি ভালো খারাপ মিলিয়েই আছি। আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন যেন আমি ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করে থাকি। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। তো আজকে ট্রেন জার্নির নতুন এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
গত পরশু অর্থাৎ শুক্রবারে ঢাকা গিয়েছিলাম আপনারা হয়তো জানেন। আপুরা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। কিন্তু ঢাকা একা একা যেতে পারে না, অনেকদূরের পথ! আর আমিও ব্যস্ততার মধ্যেই সময় পার করছিলাম। আপনারা জানেন যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং এর জন্য আশুগঞ্জ থাকি। শুক্র ও শনিবার দুদিন আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং বন্ধ থাকে। আর দুদিন বাড়িতেই কাটায়। তবে বাড়িতে যেতেই আপু বললো ঢাকা নিয়ে যেতে হবে তাদেরকে! মাত্র জার্নি করে আসলাম আবার কাল ঢাকা যেতে হবে! কি আর করা! শুক্রবার সকাল সকাল বেরিয়ে পরি। রাস্তা ফাকাঁ থাকবে আজ। এই একটি দিন শহরের মানুষগুলো মনে হয় একটুর জন্য হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। আপুদের বাসায় নরমালি বাস দিয়ে যেতে হয়। জার্নি করতে করতে আমি এখন যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। দুপুর দুইটার দিকে আপুর বাসায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। পরেরদিন আবার আশুগঞ্জ যেতে হবে! আপুর বাসা থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বেশিদূরের রাস্তাও না। আগেরবার যখন কমলাপুরে যখন গিয়েছিলাম বাইক শেয়ার করে ১০০ টাকা দিয়ে।
তবে একটু চিন্তা হচ্ছিল টিকেট ছাড়া হেলে ঝামেলা হবে না তো! কারণ এর আগেও অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছি। আগেভাগেই সব চিন্তা করে ফেলেছিলাম। তবে শুনেছিলাম স্ট্যান্ডিং টিকেট পাওয়া যায় এখন! আগে যখন ট্রেনে জার্নি করতাম তখন আর স্ট্যন্ডিং টিকেট পেতাম না। যাক এবার তাহলে ভালো হলো। আপুর বাসা থেকে শনিবার সকাল ১১:৪৫ এর দিকে রওয়ানা দিয়ে দেয়। আমার টার্গেট চট্রলা এক্সপ্রেস ট্রেন। দুপুর ১ টায় ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এজন্য বাসা থেকে আগেভাগেই বের হয়েছিলাম। বাহিরে প্রচন্ড রোদ ছিল। এবারও ইচ্ছে ছিল বাইকে করে স্টেশনে চলে যাওয়া। কিন্তু গেন্ডারিয়া রেলস্টেশনের সামনে অনেকক্ষণ দাড়াঁনোর পরেও বাইক আর পেলাম না! কিছুটা পথ সামনে হেটেঁ গেলাম। কিন্তু রোদের তাপে মাথা অনেক গরম পরছিল। শরীর ঘামে ভিজে যাওয়ার মতো অবস্থা। তারপর কিছু রিকশা দেখতে পেলাম। একজন রিকশা চালককে বললাম কমলাপুর রেল স্টেশনের এখানে যাবে কি না? রিকশা চালক অবশ্য রাজি হলো কিন্তু ভাড়া হিসেবে চেয়ে বসলো ১০০ টাকা! অনেকটা পথ তো হেটেঁই এলাম! যাক, শেষমেশ ৮০ টাকা দিয়ে রাজি হলো। আমার মনে হয় ঢাকা শহরে রিকশা চালকদের অনেক চাহিদা। আর শহরের মানুষ এমনিতেও অনেক অলস। যেখানে দশমিনিটের রাস্তা হেটেঁ যাওয়া যায় সেখানে তারা ব্যবহার করছে রিকশা। আবার রিকশাচালকদের কথা যদি ধরি, তাদের জীবিকাও যে এটার উপর নির্ভর করে। গ্রাম থেকে শহরে এসে কাজ না পেয়ে অনেকেই রিকশাচালক পেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে।
একটি পরিবার চেয়ে থাকে তাদের উপর! আমি যে রিকশায় উঠেছিলাম, সে লোকটির বয়স পঞ্চাষোর্ধ হবে। এই বয়সে বিশ্রামে থাকার কথা! কিন্তু জীবিকার জন্য যেন শরীর না দিলেও কাজ করতে হচ্ছে। শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা কমা পাওয়া যায়, যদিও গ্রামের ঠিক উল্টো! চাচার সাথে পরিচয় হলো কিছুক্ষণ এর জন্য। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে। এখানে ঢাকা দক্ষিণসিটি এলাকায় থাকে। পরিবারে দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। চাচার মুখ থেকে জানতে পারলাম। সবার বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ে করে ছেলেরাও এখন স্যাটলড! ঢাকা শহর একাই বসবাস করে। গত দশবছর ধরে ঢাকা শহর বসবাস করছে। যাক, চাচার সাথে পরিচয় হয়ে ভালোই লাগলো। আমার পরিচয়টাও দিলাম চাচাকে। তবে শ্রমজীবী এই মানুষগুলো ভালো থাকুক, এটাই প্রত্যাশা করি। দেখতে দেখতে কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে এসে পড়লাম। আসতে আসে পঁচিশ মিনিটের মতো সময় লেগেছে। চাচাকে ৮০ টাকা দিয়ে চলে গেলাম রেলস্টেশনে। বাংলাদেশের সবথেকে বড় রেলস্টেশন। ভিতরে প্রবেশ করে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। বাহিরে দেখলাম একটি টিকেট কাউন্টার! কিন্তু সেখান থেকে আমাকে বলা হলো এখানে টিকেট দেয়া হয়না। ১৪ ও ১৬ প্লাটফর্মে টিকেট দেয়া হয়। আমি চলে গেলাম সেখানে। গিয়ে দেখি লম্বা সিরিয়াল। ঘড়িতে তখন বারোটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। ১টা বেজে যাওয়ার আগেই টিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
সিরিয়ালে দাঁড়ালাম। একে একে সব যাত্রীরা টিকেট সংগ্রহ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। খেয়াল করলাম অনেকেই তিন বা চারদিন আগেরও টিকেট সংগ্রহ করছে। আমি ১৬ নাম্বার প্লাটফর্ম এ গিয়ে দাড়িঁয়েছিলাম। সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট এখানে পাওয়া যায়। যাক, অবশেষে আমার সিরিয়াল আসলো। কিন্তু আমাকে বলা হলো এখানও টিকেট দেয়া হয়না চট্রলা এক্সপ্রস ট্রেন এর। বলা হলো ১ ও ৩ নাম্বার প্লাটফর্ম থেকে টিকেট সংগ্রহ করার জন্য। হাতে আছে আর বিশ মিনিট! তাড়াতাড়ি করে চলে গেলাম ১ নাম্বার প্লাটফর্ম এ। প্লাটফর্ম কিছুটা খালি পেলাম। সিরিয়ালে পাচঁ জন। কিছুক্ষণ পর আমার সিরিয়াল আসলো। তারপর ভৈরব পর্যন্ত একটি স্ট্যান্ডিং টিকেট কিনে নিলাম। টিকেট কিনতে ৮৫ টাকা লেগেছিল। যেহেতু স্ট্যান্ডিং টিকেট এজন্য বেশি টাকা লাগেও নি। আমি অবশ্য অনলাইনে দেখেছিলাম ১১৫ টাকা করে ভৈরব পর্যন্ত। যাক, টিকেট পেয়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম। উপরে একটি চার্টে খেয়াল করলাম ট্রেন ছাড়ার সিডিউল দেয়া এবং সেখানে উল্লেখ করা ছিল কোন ট্রেন কখন ছেড়ে যাবে। আমি দেখতে পেলাম চট্রলা এক্সপ্রেস দুপুর এককটায় অর্থাৎ কিছুক্ষণ পরেই এখান থেকে ছেড়ে যাবে। আরেকটি জিনিস খেয়াল করলাম সিডিউলে উল্লেখ করা হয়েছে চট্রলা এক্সপ্রেস ট্রেন কোন প্লাটফর্ম এ দাড়িয়েছিল!
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Location | w3w |
Date | 22 October, 2022 |
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
ট্রেন ভ্রমণের দারুণ অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ট্রেন ভ্রমণ করতে আমারও অনেক ভালো লাগে।।
আমি দূরে কোথাও গেলেই সব সময় ট্রেন পথে জার্নি করে থাকি কেননা এটি নিরাপদ এবং অনেক সেভ।।
ভাই ঢাকা শহরটা এরকমই দীর্ঘ পাঁচটা বছর ধরে আছি এখানে মানুষ চেনা খুবই কষ্টকর আর রিক্সাওয়ালারা তো মনে করেন যে এক একজন কোটিপতি।। তারা যেটা বলবে তাদের কথাটাই শেষ হইলে আসো না হইলে অন্য পথ দেখো কি যে একটা অবস্থা।। তবে আবার সবাই এরকম না অনেক ভালো মানুষও আমি পেয়েছি।।
হুমম আপনি তাহলে ঢাকা শহরের রীতিনীতি সম্পর্কে অবগত আছেন দেখছি! যদিও আমি এতোদিন ঢাকা শহরে থাকি নাই তবে কয়েকদিনে কিছু বুঝতে পেরেছি 🌼
Link
ট্রেন জার্নি কমলাপুর টু ভৈরব দোয়া করি আপনার যাত্রা পথ শুভ হোক। সত্যি বলতে ভাই আমি কখনো ট্রেন জার্নি করেছিলাম না গত বছর আমি চারদিন ট্রেন জার্নি করেছিলাম। আলমডাঙ্গা টু খুলনা। আসলে আমি সেখান থেকে বলতে পেরেছি ট্রেনে অনেক মানুষ যাত্রা করে। আপনার কাছে যে রিক্সাওয়ালা ১০০ টাকা ভাড়া চেয়েছিল পরবর্তীতে ৮০ টাকায় মিটিয়ে নিয়েছিলেন সত্যি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম 😁 । ধন্যবাদ আপনাকে 🌼
আপনি তো জার্নিয়ের পর জার্নি করছেন। জার্নি আমার একেবারে সহ্য হয় না। যদিও অনেক সময় বিপদে পড়ে জার্নি করতে হয়। তবে ট্রেনের ভ্রমনটা আমার কাছে একমাত্র টিকিট কাউন্টারে ঝামেলার কারণেই একেবারেই পরিহার করে দিয়েছি। ট্রেনের টিকিট পাওয়ার সোনার হরিণ পাওয়া একই রকম হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে টিকিট কাটা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। শুভ হোক আপনার জার্নি, মনের ভাবগুলো আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
হাহাহা ভাই আসলেই ঠিক বলেছেন। ট্রেনের টিকেট পাওয়া যেন এখন সোনার হরিণ 😁। ধন্যবাদ আপনাকে 🌼
ট্রেন ভ্রমন আমার সবচাইতে প্রিয় কিন্তু দুঃখের বিষয় ট্রেন হচ্ছে বাংলাদেশের দূনিতীগ্রস্থ একটি সেক্টর। আর ট্রেনে সিট পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ঢাকায় রিকশাওয়ালাদের যে হারে ভাড়া বেড়েছে তাতে রিকশায় চড়া বাদ দিয়ে এখন হাটার প্রাকটিস করতে হবে। পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
একদম ঠিক বলেছেন। ট্রেন সেক্টরটাতে সবথেকে বেশি দুর্নীতি হয়ে থাকে। আমিও শিকার হয়েছি কয়েকবার। আপনাকে ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার ট্রেন জার্নির প্রথম পর্ব খুবই সুন্দর হয়েছে। আপনি খুবই সুন্দরভাবে এই প্রথম পর্বের মধ্যে অনেক কিছুই উপস্থাপনা করেছেন। আশা করি আপনি পরের পর্বগুলোতে আরো ভালোভাবে এটি প্রকাশ করবেন।
জি আপু। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।
আপনার ট্রেন জার্নি প্রথম পর্ব পড়ে বেশ ভালো লাগলো। রিক্সাওয়ালা চেয়ে ছিল আপনার কাছে ১০০ টাকা করে ৮০ টাকা দিয়ে বিদায় করে দিয়েছেন পুরো পোস্ট অসাধারণ ছিল। আপনার যাত্রা শুভ হোক। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি পরবর্তী পর্ব নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হবেন। পরবর্তী পর্ব দেখার অপেক্ষায় থাকবো।
জি ভাইয়া ঢাকা শহরে রিকশাওয়ালাদের চাহিদা অনেক বেশি 😁 । আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।
আসলেই ভাই শরীর শায় না দিলেও বেচে থাকার তাগিদে মানুষকে অনেক কিছুই করতে হয়।আর এখন ট্রেনের সিস্টেম অনেক কড়া, তাই টিকেট কেটে ভ্রমণ করাই উত্তম।আর আপনার ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং কেমন চলছে?
হুমম ভাই তবে আগে জানলে টিকেট কাটতাম না 😁। ইন্ডাস্ট্রিয়াল তো ভালোই যাচ্ছে। আপনার কি অবস্থা?
হ্যা ভাই যাচ্ছে মোটামুটি ভালোই।তবে যে এলাকায় আছি নেট নাই,এই নিয়া বহুত সমস্যায় আছি😆
হাহা তাহলে তো আরেক জামেলা 😁। কোন জায়গায় আছেন?
ঢাকায় রিকশা ভাড়া দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। আপনি অনেক কষ্ট করে টিকেট কেটে ট্রেন ভ্রমন করেছেন। রেলের টিকেট কাটতে গেলে লম্বা সিরিয়াল ছাড়া পাওয়া যায় না। ট্রেন ভ্রমন কিন্তু অন্যান্য যানবাহন থেকে আরামের ভ্রমণ। আমার খুবই ভাল লাগে ট্রেন ভ্রমন। ধন্যবাদ ভাইয়া।
জি ভাইয়া, রিকশা ভাড়া বেড়ে গেছে অনেক। তবে শহরের মানুষগুলো এ যানের সাথে যেন মিশে গেছে।