"টাকা" নাটক রিভিউ
03-10-2022
১৮ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় খুব ভালো আছেন 🌼। আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। তো আজকে বিকালে একটি নাটক দেখছিলাম। নাটকটি দেখে ভালোই লেগেছিল। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথেও শেয়ার করি। নাটকের নাম হচ্ছে টাকা। নিশ্চয় কিছু আন্দাজ করতে পেরেছেন। নাটকের মূল টপিক টাকার উপরেই। আশা করি আপনাদের কাছেও ভালো লাগবে।
নাটকের কিছু তথ্য
নাম | টাকা । |
---|---|
রচনা ও পরিচালনা | নূর ইমরান মিঠু । |
প্রযোজক | শাহরিয়ার শাকিল । |
অভিনয়ে | জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, তাসনুভা তিশা, ইকবাল হোসেন, ডিকন নূর, নাজ নাজনিন সহ আরও অনেকে। |
দৈর্ঘ্য | ৩৯ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড। |
আবহ সংগীত | তাওকির তানজামুল । |
মুক্তির তারিখ | ২০ ই সেপ্টেম্বর , ২০২২ইং |
ধরন | সামাজিক , ড্রামা |
ভাষা | বাংলা। |
দেশ | বাংলাদেশ |
চরিত্রেঃ
শাহীনঃ
জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ।ইরাঃ
তাসনুভা তিশা।কাহিনী সারসংক্ষেপ
নাটকের শুরুতে দেখা যায় শাহীন নামের একজন লোক ব্যবসায় লস খেয়েছে। এজন্য সে খুব আপসেট। এদিকে শাহীন যে বাসায় থাকে, বাড়িওয়ালা তাকে খুজঁছে। তিন মাসের ভাড়া এখনও বাকি। ভাড়ার টাকাও জোগাড় করতে পারে না শাহীন। এম এ পাশ করার পর কোনো চাকরি না পেয়ে ব্যবসা শুরু করে। অর্গানিক ফুড সার্ভিস। যেটাকে বলে নির্ভেজাল খাদ্য। যা বাজারে পাওয়া যায় না। শাহীন চাই প্রত্যেক মানুষ তার খাদ্য পেয়ে লাভবান হোক। কিন্তু সমস্যা হলো অর্গানিক ফুড বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। যথাসময়ে গ্রাহকের দোড়গরায় পৌঁছে দিতে না পারলে খাদ্য নষ্ট হয়ে যায়। ফর্মালিন যেহেতু ব্যবহার করা হয় না তাই খাদ্যও বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। কিছু অর্গানিক প্রোডাক্ট পাঠিয়েছিল। কিন্তু যথাসময়ে দিতে না পারায় সব নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য শাহীনের মনটাও ভীষণ খারাপ। এ শহরে টাকার মূল্য যে কতটুকু সেটা শাহীন ঠিকই বুঝতে পারে।
এদিকে বড়লোক ঘরের মেয়ে ইরা। ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে। ছোট বেলা থেকেই প্রাচুর্যের মধ্যে বড় হয়েছে। কখনো অভাব কি জিনিস দেখেনি। ইরা একটা ছেলের সাথে রিলেশন করে। একদিন জানতে পারে সে ছেলেটি তার ক্লাসমেট আরেকটি মেয়ের সাথে রিলেশন করে। ইরা ছেলেটিকে অনেক কিছুই বলে। কিন্তু ছেলেটি ইরাকে বলে তার বাবার চরিত্র ঠিক করতে। এটা শুনে ইরার অনেক মন খারাপ হয়। বাসায় গিয়ে সে সব বুঝতে পারে। কেন ছেলেটি বলেছিল বাবার চরিত্র ঠিক নেই? পাশের রুমে বসে ইরার মা ও তার বাবা কথা বলতে থাকে। ইরার মা সারাদিন বাহিরে পার্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর তার বাবা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত। টাকা ছাড়া যেন কিছুই বুঝে না। ইরার বাবা পরকিয়া রিলেশন করে। আবার ইরার মা একটি ছেলের সাথে কথা বলে। ছেলেটি নাকি ইরার মায়ের উপর ক্রাশ খেয়েছে। এই নিয়ে ইরার মা ভীষণ খুশি। এটা জানতে পেরে ইরার অনেক মন খারাপ হয়।
ব্যবসার কাজ শেষ করে শাহীন খেতে বসছিল। হঠাৎ দরজার কে যেন কড়া নাড়ছে। দরজা খুলতেই দেখে বাড়িওয়ালা। এসেই টাকা চেয়ে বসে। কিন্তু শাহীনের কাছে তো টাকা নেই। বাড়িওয়ালা প্রচন্ড রেগে যায়। তারপর বাড়িওয়ালা শাহীনকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারপর শাহীন একটি দোকানে যায় পানির বোতল কেনার জন্য। তখন ইরাও আসে পানির বোতল কিনতে। দোকানদারকে বলে পানির বোতল দিতে। কিন্তু একটি পানির বোতল ছিল। শাহীনের পানির বোতল ইরাকে দিয়ে দেয়। ইরা অর্ধেক পানি পান করে শাহীনকে দিয়ে। তারপর ইরা সেখান থেকে চলে যায়। একটা ওভারব্রিজের উপরে গিয়ে দাড়িঁয়ে থাকে ইরা। বাসা থেকে বের হয়ে এসে পরেছে ইরা। বাবা মায়ের এতো বিলাসিতা তার মোটেও ভালো লাগে না। বাসা থেকে ফোন এসেছে। ফোন আসতেই ঢিল মেরে মোবাইল নিচে ফেলে দেয়। ঠিক তখন নিচে দিয়ে যাচ্ছিল শাহীন। শাহীন দেখতে পায় একটি ফোন। উপরে তখন তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে ওভারব্রিজের উপরে দাড়িঁয়ে আছে। ফোনটি হাতে নিয়ে শাহীন মেয়ের কাছে যায়। শাহীন মেয়েটিকে দেখেই চিনতে পারে এটা তো সেই মেয়ে যাকে একটু আগে দেখেছিল।
ফোনটা ইরাকে দিয়ে দেয়। কেন এখানে দাড়িঁয়ে আছে ইরাকে জিজ্ঞেস করে শাহীন। কিন্তু মেয়েটি কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে যায়। শাহীন বুঝতে পারে এতো রাতে মেয়েটি একলা বের হয়েছে, বিপদ হতে পারে । সে মেয়েটির পিছু পিছু যায়। কিছুদূর যেতেই কিছু বখাটে ছেলে ইরাকে ফলো করতে থাকে। ইরা তখন পিছু হাটঁতে থাকে। শাহীনকে দেখে বখাটে ছেলেগুলো চলে যায়। শাহীন তখন ইরাকে বলে, এখন তাহলে পালাচ্ছিলেন কোথায়? ইরা বুঝতে পারে ঐ সময় এসব বলা ঠিক হয়নি। ঠিক একটি লোক দৌড়ে এসে রাস্তার পাশে দেয়ালের পিছনে লুকিয়ে পরে। তখন কিছু পুলিশ আসে। পুলিশ এসে শাহীনকে জিজ্ঞেস করে এখানে কাউকে দৌড়ে যেতে দেখেছে কিনা! শাহীন তখন না করে দেয় । পুলিশ চলে গেলে লোকটি দেয়ালের পিছন থেকে বের হয়ে আসে। লোকটি আসলে একজন প্রফেশনাল ডাকাত। না তার বাদশা। পুলিশের হাত থেকে তাকে বাচাঁনোর জন্য দুজনকে ধন্যবাদ দেয়। শাহীন তখন বলে আমরা দুজনই বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি। কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই। বাদশা তখন তাদের খাবার ও রাতে থাকার ব্যবস্থা করে।
বাদশার রুমে প্রবেশ করতেই আয়নার সামনে একটি মেয়ের ছবি টাঙানো। ইরা তখন বলে, মেয়েটি কে? আপনার ওয়াইফ? বাদশা তখন বলে মেয়েটি আমার ওয়াইফ না। মেয়েটির নাম নূরজাহান। ছয়বছরের রিলেশন ছিল। কিন্তু টাকার জন্য নূরজাহান তার জীবন থেকে চলে যায়। এখন টাকা জোগাড় করার জন্য সে ডাকাতি করছে। দুই লাখ টাকা ম্যানেজ করেছে। আর তিন লাখ হলে সে তার নূরজাহানকে ফেরত পাবে। তখন ইরা বাদশাকে তিনলাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। যদি সে ফেরত আনতে পারে টাকা দিয়ে নূরজাহানকে তাহলে টাকা লাগবে না আর না পারলে ডাকাতি ছেড়ে দিতে হবে। এই শর্তে রাজি হয় বাদশা। পরেরদিন পাচঁ লাখ টাকা নিয়ে নূরজাহানের বাড়িতে যায় বাদশা। কিন্তু সে নূরজাহানকে টাকা দিলেও তার অন্ধস্বামীকে ছেড়ে সে কখনো যাবে না। তখন শাহীন ও বাদশা বুঝতে পারে সবকিছু টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব না। সত্যিকারের ভালোবাসায় কখনো টাকার সম্পর্ক হয় না। তারপর বাদশাকে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। আর এদিকে শাহীনের যে স্বপ্ন ছিল নদীর পাড়ে বাড়ি করার সেটি পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দেয় ইরা। সেটা পূরন করবে একসাথে দুজন। ঠিক আগের জায়গাটিতে কাল দেখা করার কথা বলে ইরা বাসায় চলে যায়। আর এখানেই নাটকের সমাপ্তি ঘটে ।
ব্যক্তিগত মতামত
আসলে নাটকটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। টাকার নেশায় আমরা সবাই যেন অন্ধ। কেউ টাকা দিয়ে বিলাসিতায় ব্যস্ত। আবার কেউ টাকার অভাবে না খেয়ে আছে। দিনশেষে টাকাই যেন সব । সবকিছুর পেছনের গল্পটা টাকাকে নিয়েই। কারো প্রেমিকা চলে যায় টাকার অভাবে, কারোবা স্বপ্নগুলো স্বপ্নই রয়ে যায় টাকার অভাবে। তবে টাকা দিয়ে সব কিছু সম্ভব হলেও। সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়া যায় না । যেখানে টাকার কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমান সময়ের জন্য যথোপযোগী একটি নাটক আমি মনে করি। পরিচালক খুব সুন্দর করে নাটকের গল্পটি উপস্থাপন করেছেন। অপূর্ব বরাবরই সেরা অভিনয় করে থাকে। আর তাসনুভা তিশাও ভালো অভিনয় করেছে।
ব্যক্তিগত রেটিং
নাটকটির লিংক
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
Link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অপূর্ব ভাইয়া যেকোন নাটক আমি সব সময় দেখার চেষ্টা করি ভাইয়া। আমার কাছেও ওনার অভিনয় অনেক ভালো লাগে। এই নাটকটি আমি দেখেছি। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর নাটকের রিভিউ আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।
জি আপু। নাটকটি আমার কাছে ভালোই লেগেছিল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।
এই নাটকটি দেখা হয়নি, তবে আপনি যেভাবে খুব সুন্দর ভাবে রিভিউ করেছেন নাটকটি দেখার একটা ইচ্ছে পোষণ করছি মনে মনে। ধন্যবাদ আপনাকে আর খুব শীঘ্রই নাটকটি দেখে নেব।
জি ভাইয়া নাটকটি ভালো ছিল। উপভোগ করতে পারবেন দেখলে। আপনাকে ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য।
অবশ্যই দেখবো এবং ধন্যবাদ আপনাকে গঠনমূলক একটি ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য
নাটকটি খুবই শিক্ষনীয় একটি গল্প ভাইয়া। নাটক এর রিভিউ পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। যখন কেউ টাকার অভাবে না খেয়ে মরছে তখন অন্যদিকে কেউ টাকা উড়াতে ব্যস্ত। অপূর্ব নাটক আমার কাছে সব সময় খুব ভালো লাগে। তাসনুভা তিশা ও ভালো অভিনয় করে। সবমিলিয়ে নাটকটি দেখতে মনে হয় বেশ ভালো হবে।
জি আপু বর্তমান সময়ের জন্য ভালো একটি গল্প। নাটকটি দেখলে উপভোগ করতে পারবেন।
ঠিক বলেছেন ভাই, টাকা দিয়ে সত্যি কারের ভালোবাসা কখনোই কেনা সম্ভব নয়। আর তাইতো নুরজাহান তার অন্ধ স্বামীকে রেখে টাকার লোভে বাদশার হাত ধরতে পারেনি। খুব সুন্দর একটি নাটকের রিভিউ শেয়ার করেছেন ভাই। নাটকের গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো তাই সময় ও সুযোগ করে নাটকটি দেখার চেষ্টা করব।
জি ভাইয়া আপনি একদম ঠিক ধরেছেন। সত্যিকারের ভালোবাসা তো এটাই যেখানে টাকার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
আমার কাছে সব সময় অপূর্ব এর নাটক দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু এই নাটকটি এখনো দেখা হয়নি। আপনি নাটকের রিভিউ করেছেন দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। অবশ্যই সময় করে নাটকটি দেখে নিব। এই নাটকের মধ্যে অনেক শিক্ষনীয় বিষয় ছিল। বিশেষ করে টাকা দিয়ে ভালোবাসা সম্ভব নয়।
জি আপু নাটকটি ভালো ছিল। উপভোগ করবেন দেখলে। আপনাকে ধন্যবাদ
বাহ আপনি খুব সুন্দর নাটক আমাদের মাঝে রিভিউ করেছেন। নাটকটি আমি কয়দিন আগে দেখেছি। আসলে নাটকটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে আমার। এত দুর্দান্ত নাটক আমাদের মাঝে রিভিউ করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।