ছোটগল্পঃ- অভিমানী

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

14-02-2024

০২ ফাল্গুন , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼


girl-7231594_1280.jpg

link

ঘড়িতে তখন একটা বাজে। কানের কাছে ফোনের রিংটন একের পর এক বেজেই যাচ্ছে! এতো রাতে কে ফোন দেয়! আবরার কিছুটা বিরক্ত হয়েই ফোন টা ধরে।

" আপনি কি আবরার সাহেব বলছেন? "
" জ্বি, কেন? "
" উত্তরা হাসপাতাল থেকে বলছিলাম। আপনার নামে একটা লাশ আছে। ছোট খামে আপনার নাম আর ঠিকানা লেখা ছিল। তাই আপনাকে ফোন দিতে হলো! "

এটা শোনার পর আবরার বিছানা থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উঠে দাড়াঁয়! তার নামে লাশ আসবে কোথা থেকে?

" আপনি হয়তো ভুল ঠিকানায় ফোন দিয়েছেন। আমার নামে কোনো লাশ আসার কথা নেই! "

" আপনার ঠিকানায় দেয়া। দয়া করে যদি হসপিটালে এসে নিয়ে যেতেন। আমরা লাশটাকে বাহিরে রেখেছি! "

এই বলেই ফোনটা কেটে দেয় ফোনের ওপারের ভদ্রলোক! আবরারের মাথা মুহূর্তেই ভারী হয়ে যাচ্ছে! কপাল দিয়ে ঘাম বেড় হচ্ছে। এই লাশই বা কেন তার নামে আসলো!

আবরার নিজের বাইক নিয়েই বেরিয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে! এতো রাতে রাস্তাও ফাকাঁ। হাসপাতালে যেতেই আবরার লক্ষ্য করে কোথাও কেউ নেই! হাসপাতালও এমন ভৌতিক পরিবেশ হয়ে যায় রাতে। আবরারের ভয়টা যেন আরও বেড়ে যায়।

ইমার্জেন্সি ইউনিটেও কোনো ডাক্তার নেই! এমনি এমনি কেউ ফোন দিয়ে তাহলে আসতে বললো! কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পায় নাইটগার্ড ড্রেস পরা একজনকে! আবরার সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করে, হাসপাতালে কোথাও কেউ নেই কেন?

" আপনি এতো রাতে এখানে কেন এসেছেন? "

এই হাসপাতাল থেকে ফোন দিয়ে বললো আমার নামে একটা লাশ এসেছে। তাই হসপিটালে ছুটে আসা। কিন্তু কাউকেই পাচ্ছি না।

এটা শোনার পর নাইটগার্ড ব্যক্তির চোখ যেন বড় বড় হয়ে যায়। আপনিই কি আবরার সাহেব!

" জ্বি কেন?"

আপনাকে বাচঁতে দিবে না। আপনি লাশটা নিয়ে দ্রুত চলে যান। এই বলে নাইটগার্ড ম্যান চলে গেল!

আবরার নিজেও বুঝতে পারছে না তার সাথে কি এমন হচ্ছে। সে খুব টেনশনে পরে যায়। তারপর একজন নার্স আসে। আর তখন আবরারকে বলে, " আপনি কি ঝুমুরের লাশ নিতে এসেছেন? " ঝুমুর মানে? যে মেয়েটি আজ আত্মহত্যা করেছে।

" ওয়েট! ওয়েট! আপনি কোন ঝুমুরের কথা বলছেন? "

আপনার জন্য পাগল যে ঝুমুর! তার লেখা ছোট্র খাম থেকেই আপনার সম্বন্ধে জানতে পেরেছি। মেয়েটি আপনাকে অসম্ভব ভালোবাসতো। আপনি তার ভালোবাসার কোনো দামই দিলেন না! ছি! আবরার সাহেব। এমন কাজ করতে পারলেন আপনি!

আবরার মাথায় কিছুই ঢুকছে না! ঝুমুর তাকে ভালোবাসতো কিন্তু সে কখনো জানতো না! ঝুমুর হলো আবরারের ব্যাচমেট বলা যায়। ছোটবেলা থেকেই দুজনে একসাথে বেড়ে উঠা! কিন্তু ঝুমুর আবরারকে যে ভালোবাসতো সেটা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু ঝুমুরকে আবরার কখনো ভালোবাসার চোখে দেখেনি। রিকশায় করে আবরার কোন মেয়ের সাথে বের হয়েছিল আর সেটা দেখেই ঝুমুরের ভীষণ অভিমান হয়। তারপর আবরারকে সবকিছু থেকে ব্লক করে দেয় ঝুমুর। আবরার ঝুমুরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু কোনো খোজঁই পেল না!

আজ ঝুৃুমুর তার জন্যই মারা গিয়েছে। নিজেকে খুব অপমানিত মনে হচ্ছে। একটা আক্ষেপ থেকে গেল আবরারের! তার ভালো লাগার কথাটা বলতে পারলো না আবরার ঝুমুরের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে কাদঁছে। কিছুই যেন বলার নেই তার। মনে হচ্ছে ঝুমুর এখনও জীবিত। তার পাশেই আছে। কিছুক্ষণ পরেই আবরারের কাধেঁ একজনের হাত। আবরার আস্তে করে মুখ ফেরায়। সে দেখে ঝুমুর! " আমি তোমার পাশে আছি। তুমি আমার ছাড়া আর কারো নও! " বলে উদাও হয়ে যায়।


10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG-20211205-WA0092.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 months ago 

আসলে অনেক সময় বন্ধুত্বের মধ্যেও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে অনেকে এটা মেনে নিতে পারে না। কারণ বন্ধুত্বের সম্পর্ক একরকম, আবার ভালোবাসার সম্পর্ক আরেক রকম। তবে যা ই হোক না কেনো,আত্মহত্যা কখনোই কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না। অভিমান জিনিসটা খুব খারাপ। অনেক মানুষ অভিমান করে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ঝুমুর এবং আবরারের ঘটনাটা বেশ বেদনাদায়ক। গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ভাই। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 5 months ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া আমার গল্পটি পড়ে চমৎকার মন্তব্য করার জন্য 🌼

 5 months ago 

মনের ভিতর কিছু কিছু চাপা কষ্ট লুকিয়ে থাকে। কিছু অভিমান লুকিয়ে থাকে যেগুলো আসলে কারো সাথে শেয়ার করা যায় না। এভাবেই ঝুমুর আবরারের জন্য নিজেকেই শেষ করে দিল। হয়তো আবরার তা বুঝতেও পারেনি। এই ধরনের হাজার হাজার কষ্ট নিয়ে মানুষ এই পৃথিবী থেকে চলে যায়। হয়তো কেউ নিজেকে শেষ করে দেয়। আবার কেউ এভাবে কষ্ট ভোগ করতে করতেই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। গল্প আপনি খুব ভালোই লিখেছেন।

 5 months ago 

হুমম, মনের ভিতর জমানো কষ্ট বড্ড পীড়াদায়ক! অসংখ্য ধন্যবাদ আপু গল্পটি পড়ার জন্য 🌼

 5 months ago 

আপনি আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর একটা ছোট গল্প শেয়ার করেছেন। আবরার তো ভাবতেই পারেনি ঝুমুর মারা গিয়েছে। নার্স যখন তাকে বলেছিল ঝুমুরের লাশ তখন সে একটু অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল বুঝতে পারতেছি। ঝুমুরকে আবরারের ও ভালো লাগতো তা বুঝতে পেরেছি শেষটা পড়ে। আসলে অনেক ভালোবাসা রয়েছে যারা মনের ভিতর অনেক রকমের অভিমান রেখে চলে যায়। আর তাদের ভালোবাসা থাকে সুন্দর, তবে চলে যাওয়াটা অনেক কষ্টের।

 5 months ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু চমৎকার মন্তব্য করার জন্য 🌼

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64867.61
ETH 3451.61
USDT 1.00
SBD 2.55