গ্রামীণ পরিবেশে কিছু মুহূর্ত

15-10-2022

৩০ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় অনেক ভালো আছেন 🌼। আমি ভালো আছি। যায়হোক, গত পরশু বাড়িতে আসলাম। আসার পর থেকে খেয়াল করলাম জমিতে যে ধানের বীজ বপণ করা হয়েছিল সেখান থেকে এখন ধান বেরুবার সময় হয়েছে। সবুজে ছেয়ে গেছে পুরো মাঠ। বাতাসে যেন ধানের জমি দুল খাই। গ্রামীণ পরিবেশের সৌন্দর্য সেখানেই। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এ যেন চোখের শান্তি। শুক্রবার সকাল থেকেই অনেক রোদ ছিল। দুপুরে নামাজ শেষ করে ঘরে বসে থাকতে তেমন ভালো লাগতেছিল না। কিছুক্ষণ ল্যাপটপে কাজ করে আর যেন ভালো লাগতেছিল না। তাছাড়া শনিবারে চলে যেতে হবে সেই আশুগঞ্জ এ। বাড়িতে একটা দিন উপভোগ না করলে কি হয়!

IMG20221014165358.jpg

Location:

বিকালে পাচঁটার দিকে আমার ফুফাতো ভাই আসে আমাদের বাড়িতে। সাইকলে নিয়ে চলে আসে। আমার আবার মাঝে মাঝে সাইকেল চালাতে ভালো লাগে। একটা সময় এই সাইকেল চালানোর জন্য কতো কি করেছি! আপনাদের সাথে শেয়ার করবো অন্য কোনো পোস্টে। তো ফুফাতো ভাই আসতে বললাম, চল সাইকেল চালিয়ে ঘুরাঘুরি করি। আমার আব্বার একটা সাইকেল আছে। অনেক পুরনো সাইকেল। সাত বছর হলো সাইকেলটার। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু আব্বার ঐতিহ্যবাহী সেই সাইকেল আর আমার দৌড়ানো হয় না। মোবাশ্বির আমার ফুফাতো ভাইকে বললাম আব্বার সাইকেলটা নিতে। যাক, দুজনে দুই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য গ্রামের মেঠোপথ ধরে সাইকেল চালানো। ছোটবেলায় গ্রামের মেঠোপথ ধরে সাইকেল চালাতে চালাতে এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় চলে আসতাম।

তখন রাস্তাগুলো সরু ছিল, মাটির তৈরি রাস্তা। পাড়ার কিছু ছেলে মিলে সাইকেল চালাতে বেরিয়ে পড়তাম। এখন আর গ্রামের মেঠোপথের রাস্তাগুলো ইটের তৈরি। আগের সেই মাটির রাস্তা পাওয়া যায় না। মানুষের জীবনযাত্রার সাথে সবকিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তো আমি আর মোবাশ্বির সাইকেল নিয়ে আমাদের বাড়ির সামনের হাইওয়ে রাস্তায় চলে আসে। রাস্তাটা এখন আগের থেকেও অনেক বিজি থাকে । একটু সামনে এগোতেই দেখি শিবলু নার্সারি নেই! আমাদের এখানকার প্রথম নার্সারি ছিল শিবলু নার্সারি। তারপর দেখি নার্সারি আছে তবে সেটা অর্ধেক করা হয়েছে। আর কয়েকদিন পর হয়তো এই অর্ধেকটুকু ও থাকবে না। সাইকেল নিয়ে এসে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। সূর্য তখন অস্তমিত যাচ্ছে পশ্চিম আকাশে। একদম মাথা বরাবর সূর্যের আলো এসে যেন পড়ছে।

IMG20221014165814.jpg

IMG20221014165743.jpg

Location:

সূর্যকে নিয়েই যেন আমরা দুজন সাইকেল চালাতে থাকি। ভেবেছিলাম জামতলার দিকে যাবো। আমাদের দিকে ছোট্র একটি গ্রামের বাজার। প্রতি শুক্রবার সেখানে গরুর হাট বসে থাকে। অনেক এলাকা থেকে আসে গরু বিক্র করতে। কিন্তু রাস্তার অবস্থা একটু খারাপ হওয়ায় আর ওদিকে যাওয়া হয়নি। এদিকে আবার মোবাশ্বির এর সাইকেল এর চেইন পড়ে যায়। এটা আরেক ঝামেলা। যথেষ্ট সাবধানে সাইকেল চালাতে হয়েছে। তারপর প্লেন করলাম ওদিকে না গিয়ে বীরপাড়া একটি রাস্তা গিয়েছে সেখানে যায়। রাস্তাটি মাটির রাস্তা ছিল। এখন পীচঢালা রাস্তা! মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে অনেক। বীরপাড়া রাস্তার ভিতর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে সামনে আগাতেই চোখের সামনে ভেসে আসে বিস্তৃর্ণ সবুজ মাঠ। যতদূর চোখ যায় যেন সবুজ ধান ক্ষেত। আর কিছুদিন পর ধান বের হবে। শীতের সময়টার শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে ধান কাটার ধুম পড়ে আমাদের দিকে।

IMG20221014171124.jpg

Location:

মজার ব্যাপার হলো, বীরপাড়া রাস্তা থেকে আমাদের বাড়ি দেখা যায়! ধান ক্ষেতের মাঝ আইল দিয়ে হেটেঁ সোজা আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় উঠা যায়। বীরপাড়া আবার আমার এক দাদুর বাড়ি। ছোটবেলায় দাদুর বাড়িতে এসে কত পেয়ারা খেয়েছি হিসেব নেই। অনেকদিন হলো দাদুর বাড়িতে যাওয়া হয় না। ভেবেছিলাম যাব কিন্তু সন্ধ্য হয়ে যাওয়ায় আর যাওয়া হয়নি। বীরপাড়া রাস্তার পাশে দেখলাম অনেক তালগাছ! ছোটবেলায় এই তালগাছগুলো অনেক ছোট দেখেছিলাম। এখন অনেক বড় হয়েছে। তালগাছ থাকার কারণে রাস্তার পাশে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন সূর্যিমামার আলো এসে তালগাছের উপরে এসে পড়ছে। ওয়েদার পুরো অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল। আসলে এমন জায়গায় গেলে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে।। আর অনেকদিন পর প্রায় চার বছর পর বীরপাড়া রাস্তায় বেরিয়েছি সাইকেল নিয়ে।

IMG20221014170444.jpg

Location:

সন্ধ্যার সময়টাতে তেমন বাতাস ছিল না। তবে সাইকেল চালাতে চালতে শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। বীরপাড়া রাস্তায় কিছুক্ষণ দাড়িঁয়ে পরিবেশটা উপভোগ করার চেষ্টা করেছি। আসলে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে এরকম ওয়েদারের ফিলটা তেমন পাওয়া যায় না , যতটা না পাওয়া যায় সেখানে গিয়ে ওয়েদারটা উপভোগ করতে পারলে। কিছুক্ষণ এর জন্য হলেও আপনি সবুজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। যারা গ্রামে থাকেন তারা নিশ্চয় এমন পরিবেশ উপভোগ করে থাকেন। শহরের ক্ষেত্রে সেটা ভিন্ন চিত্র। যাক, এবার বাড়ি ফিরতে হবে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।। মুবাশ্বির আবার টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিল আব্বার সাইকেল চালিয়ে। রাস্তায় কয়েকবার চেইন পরে গিয়েছিল। চেইন ঠিক করতে করতে আমি কতক্ষণ গ্রামীণ পরিবেশে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। মাঝে মাঝে এমন পরিবেশে হারিয়ে যেতেও ভালো লাগে। সমুদ্র আর পাহাড় থেকেও গ্রামীণ পরিবেশের এমন প্রকৃতি আমাকে ভীষণভাবে টানে। যেখানে মুক্ত বাতাস প্রানখুলে উপভোগ করা যায়।

DeviceOppo A12
Photographer@haideremtiaz
Date14 October, 2022

তারপর বাড়ি ফেরার পালা। সাইকেল এর প্যাডেল মেরে বাড়ির দিকে রওয়ানা করে দিলাম। পাচঁ মিনিটের মতো লাগে বাড়িতে যেতে সাইকেল দিয়ে। যেতে যেতে সূর্যিমামাও দেখলাম পশ্চিম আকাশে ডুবে গেছে।



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

প্রথমেই গ্রামের চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ফটোগ্রাফ শেয়ার করা জন্য ধন্যবাদ।আপনার সাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি করা ও প্রকৃতি কে উপভোগ করার বিষয়টি অনেক ভাল লেগেছে।যা আমার পুরোনো স্মৃতি কে তাজা করেছে।আমিও এরকম সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়তাম বিকেলে।আপনার পোস্ট পড়তে পড়তে আবার সেই অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম।ধন্যবাদ গ্রামের সৌন্দর্য আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

জি ভাইয়া গ্রামীণ পরিবেশে গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালাতে ভালোই লাগে। আপনাকেও ধন্যবাদ 🌼

 2 years ago 
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ আমাদের দেশ বাংলাদেশ। আপনি শনিবারে আশুগঞ্জে চলে আসবেন বলে দিনটি উপভোগ করতে চাইছিলেন।তাই আপনার ফুপাতো ভাইয়ের বাড়িতে সাইকেলে নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন । আসলে গ্রামের মেঠোপথে সাইকেল চালানো মজাই আলাদা। শুক্রবার গরুর হাট বসে। আপনারা বীরপাড়া রাস্তায় কিছুক্ষণ দাড়িঁয়ে পরিবেশটা উপভোগ করেছিলেন।শহরের জীবন, গ্রামের জীবন অনেক তফাত আছে।
 2 years ago 

জি ভাইয়া শহরের জীবন থেকে গ্রামীন জীবন একদম আলাদা। শহরের ইট পাথরের ভিতরে থাকতে থাকতে কেমন যেন মনে হয় নিজেকে।

 2 years ago (edited)

সবুজে ঘেরা গ্রাম্য পরিবেশ আমার ও খুবই ভালো লাগে।তাছাড়া গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাঁটতে বেশ মজার।ছবিগুলো সুন্দর ছিল, তাছাড়া আপনি ও আপনার ফুফাতো ভাই দারুণ সময় উপভোগ করেছেন আশা করি ।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

জি দিদি অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি । আর অনেকদিন পর বেরিয়েছিলাম। ভালোই ছিল সময়টা 🌼

 2 years ago 

কি বলেন ভাইয়া আপনার আব্বার সাইকেলটার বয়স সাত বছর। আসলে পুরনো জিনিস ভালোই হয়। আর পুরনো জিনিসের সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। সাইকেল চালিয়ে গ্রামে ঘোরার মুহূর্ত কিন্তু বেশ ভালই লাগে। ফুফাতো ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছেন এটা বেশ ভালই লেগেছে। গ্রামের মাটির রাস্তায় চলাচল করতে অনেক সুন্দর একটা অনুভূতি হয়। আর প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে এসব থেকে বেশি ভালো লাগে। অনেক সুন্দর আবার রাস্তার ফটোগ্রাফি করেছেন।

 2 years ago 

জি আপু অনেকদিন পর বেরিয়েছিলাম সাইকেল নিয়ে। আর সাইকেলটা অনেক আগের, অনেক স্মৃতি জরিয়ে আছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64349.87
ETH 2775.11
USDT 1.00
SBD 2.65