১ম পর্বঃ শেষটা সুন্দর

22-11-2022

০৯ অগ্রহায়ণ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় অনেক ভালো আছেন! আমি ভালো থাকার চেষ্টা করছি। তবে যায়হোক, আপনাদের সাথে ইতোমধ্যে একটি গল্প শেয়ার করেছি। এখনও আরও কয়েকটা পর্ব বাকি। আজকে নতুন একটি গল্প নিয়ে হাজির হলাম! আশা করি এই গল্পটিও আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

sunset-698501_1280.jpg

copyright free image from pixabay

"কিরে তো ইন্টার্ভিউ কেমন হয়েছে? " ঘরে প্রবেশ করার আগেই মায়ের প্রশ্ন। এই নিয়ে তেরো নাম্বার ইন্টার্ভিউ দিয়েছে আবির! সবসময় শুধু হতাশ হয়েই বাড়ি ফেরে। পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় সব দায়িত্ব এসে পরেরছে তার কাধেঁ । বাবা অসুস্থ! ছয়মাস ধরে বিছানায় শুয়ে আছে। বছর খানেক হলো সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে। কিছু টাকা জমা করে রেখেছিল তার মা। সে টাকাগুলো আবিরের বাবার ঔষধপত্র কিনে প্রায় শেষ! আবিরের চিন্তামাখা মুখটা তার মায়ের কাছে আর ভালো লাগে না দেখতে । আবিরের হাতে ফাইল রেখে ফ্রেশ হয়ে নেই! টেবিলে খাবার রাখা আছে।
"বাবা খেয়েছে, মা।" তোর বাবা সন্ধ্যায় খেয়ে শুয়ে আছে, তুই খেয়ে নে!
তারপর আবির টেবিলে খেয়ে নেই। খাওয়ার শেষে তার মা আসে আবিরের কাছে।
-মা,কিছু বলবে?
-তোর বাবার ঔষধ শেষ হয়ে গেছে! ঔষধ না খাওয়ালে শরীর আরও খারাপ করবে।
-আচ্ছা, মা! তুৃমি এতো টেনশন করো না তো, আমি ব্যবস্থা করে নিবো!
-তোর উপর অনেক চাপ হয়ে যাচ্ছে, তাই না রে!
-আরে না মা! কি যে বলো তুমি! তোমরা আছো বলেই আমি এখনও আছি।

আবির সদ্য অনার্স মাস্টার্স পাস করা ছেলে। ছোটবেলা থেকেই আবির গ্রামে বড় হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিকের পর আর গ্রামে থাকা হয়নি! বাবার পোস্টিং শহরে দিয়ে দেয়। আর সেই সুবাধে পরিবারকে নিয়ে চলে আসে শহরে। আবির সেখানেই উচ্চ মাধ্যমিক সম্পূর্ণ করে। বাবার স্বপ্ন ছিল ভালো একটি ভার্সিটিতে পড়ুক আবির! বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ায় স্বপ্নটাও ছিল বড়। ভালো রেজাল্ট করেছে সবসময়। এজন্য অনেক জায়গা থেকে বৃত্তিও পেয়েছে। ভার্সিটিতে উঠার পর তার বাবাও অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু একটি মাত্র ছেলের পড়ালেখার খরচ চালাতে হবে বলে চাকরি থেকে তখন আর অবসর নেয়নি! আবির ভার্সিটির পড়ালেখা শেষ করার পর তার বাবার শরীরটা আরও খারাপ হয়ে যায়। আবিরকেই এখন সামলাতে হয় পুরো পরিবার। আবির কিছু টাকা জমিয়েছিল টিউশন করে। আর কিছু টাকা মায়ের কাছ থেকে নিয়ে একটি বাইক কিনে। শহরে বাইক শেয়ার করেও টাকা ইনকাম করা যায়।
আবির বাইক শেয়ার করে। পাঠাও এপসের মাধ্যমে কেউ নক দিলে সে লোকেশন অনুযায়ী সেখানে নিয়ে চলে যায়। আবিরকে পাঠাওয়ের মাধ্যমে এক মেয়ে কল করে। উত্তরা আসতে পারবে কি না জিজ্ঞেস করে! আবির রাজি হয়ে যায় তখন!

বাইক দিয়ে যাওয়ার পথে আবিরের চোখে পড়ে একটি মেয়ে কাঠগোলাপ বিক্রি করছে! আবিরের দেখে কেন জানি মনে হলো কাঠগোলাপ কেনার জন্য! ২০ টাকা দিয়ে একটি কাঠগোলাপের মালা কিনে। বাইকের সামনে রেখে দেয় কাঠগোলাপের মালাটা। আবির তখন উত্তরা এসে হাজির! হলুদ জামা পড়া এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাধেঁ একটি ব্যাগ! আবির তখন ফোন দেয়! তারপর দেখতে পায়। মেয়েটি শেরেবাংলা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। বাসা থেকে প্রতিদিন যাওয়া আসা করতে হয়! আবিরের বাইকে উঠতেই মেয়েটির নাকে এসে কাঠগোলাপের সুঘ্রাণ এসে লাগে! মেয়েটির নাম জারা। জারা তখন বলে ফুলের গন্ধ আসছে কোথা থেকে? আবির তখন বলে, আমি একটি কাঠগোলাপের মালা কিনেছিলাম এজন্য।

-প্রেমিকার জন্য কিনেছেন কাঠাগোলাপের মালা?
-আরে না, তা হবে কেন! প্রেমিকা থাকলে তো!
-তাহলে মালা কিনেছেন যে!
-এমনি, কাঠগোলাপের মালাটা আমার কাছে ভালো লেগেছিল। তাই কিনে নিয়েছিলাম। স্পেশাল কাউকে দেয়ার জন্য না।
-আমি কি মালাটা পেতে পারি?
-হ্যাঁ, সিউর!
-জানেন, কাঠগোলাপ আমার খুব প্রিয়! ছোট বেলা থেকেই কতো কি করেছি কাঠগোলাপ দিয়ে! ঢাকাতে আসার পর তেমন করে কাঠাগোলাপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারিনাই! আচ্ছা, আপনার নামটাই তো জানা হলো না!
-আমি আবির! কয়েকমাস হলো মাস্টার্স শেষ করেছি!
-আমি জারা! তবে আপনি গ্রাডুয়েশন শেষ করে বাইক চালাচ্ছেন কেন? চাকরির চেষ্টা করলেই পারেন?
-আপনার কি মনে হয়! আমি বসে আছি! প্রতিনিয়ত চাকরির ইন্টার্ভিউ দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কপালে না থাকলে কি করবো বলেন!
-তা ঠিক! আপনার সাথে পরিচয় হয়ে ভালোই হলো! আপনাকে প্রতিদিন যদি বলি আসতে পারবেন?
-সেটা নির্ভর করবে ভাড়ার উপর! আপনি বেশি ভাড়া দিলে আসবো।
-হাহাহা, আচ্ছা সমস্যা নেই!

জারার কাছে আবিরের কথাবার্তা অদ্ভূত রকমের লেগেছে। হয়তো পরিবারের কারণে এতো প্রেসার নিচ্ছে। চেহারায় শুধু চিন্তার চাপ! ভার্সিটির সামনে চলে আসে আবির। জারা তখন বাইক থেকে নেমে পড়ে। কতো টাকা দিব? আবির তখন দুইশত টাকা চাই। জারা পাচঁশত টাকা দেয় । আরে পাচঁশ টাকা দিলেন যে! আমার কাছে ভাঙতিও নেই! জারা তখন বলে, "সমস্যা নেই রেখে দেন! কাল কিন্তু আসবেন। আমি অপেক্ষা করবো আপনার জন্য! "

আবির তখন চলে যায়। বাবার ঔষধ কেনার টাকা আজকের জন্য হয়ে গেছে! আবির সোজা চলে যায় ফার্মেসীতে। পকেট থেকে প্রেসক্রিপশনটা বের করে দেয় আবির দোকানদারকে। উপরের তিনটা ঔষধ দিয়ে দিতে বলে আবির! আবির তখন ঔষধ নিয়ে বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে মায়ের কাছে বাবার ঔষধপত্র দিয়ে দেয়। আবির তখন বলে, বাবাকে যেন তাড়াতাড়ি ঔষধগুলো খাইয়ে দেয়। এই বলে আবির রুমে চলে আসে।

আবিরের সামনে আরেকটা জবের ইন্টার্ভিউ। টেবিলে বসে বসে আবির পড়ছে। ঠিক তখন জারার ফোন। নাম্বারটা আননোন কিন্তু চেনা নাম্বার। ফোন ধরেই আবির সালাম দেয়! জারা তখন সালাম উত্তর দিয়েই বলে, কি করেন? "একটু পড়াশোনা করছিলাম "।
কি, চাকরির প্রিপারেশনের জন্য? হুম, কিছুদিন পর আবার একটি জব ইন্টার্ভিউ আছে।
"কাল কখন আসবেন? " গতকাল যে সময়ে এসেছিলাম সে সময়ে আসলে চলবে?
হুমম, চলবে! মনে করে চলে আসবেন কিন্তু! তারপর জারা ফোন রেখে দেয়! আবির একা একা হাসছে। এই প্রথম কোনো মেয়ে তার সাথে ফোনে কথা বলছে। মেয়েটা যে একটু অন্যরকমের আবির বুঝতে পারে। জারাকে আবিরের ভালোই লাগে। হঠাৎ পরিচয়েই মেয়েটার সাথে এতো ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেল!

চলবে....



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

আপনার লেখা শেষটা সুন্দর, গল্পের প্রথম পর্বের সত্যি খুব ভালো লাগলো। আপনার লেখা খুবই দুর্দান্ত। গল্পটি অনেক রোমাঞ্চকর পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার কাছে ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য 🌼🦋

ওয়াও দারুন প্লট বানাতে পারেন তো ভাই 👌👌। এক কথায় অসাধারণ লেগেছে গল্পটা। কেন যেন মন বলছে মিষ্টি প্রেমের কিছু একটা হতে যাচ্ছে আবির আর জারার মাঝে। বাকি টা তো সময় বলে দেবে।
লেখার ধরণ টা খুব সুন্দর ছিল। বিশেষ করে কথোপকথন গুলো। এই কমিউনিটিতে এই প্রথম কারো গল্প লেখার ধরণ টা বেশ ভালো লাগলো আমার কাছে। বাকি পর্ব গুলো চোখে পরার সাথে সাথেই পড়ে ফেলবো আশা রাখছি।

 2 years ago 

দাদা চেষ্টা করেছি মাত্র। আপনাদের অনুপ্রেরণা পেলে সামনে আরও ভালো প্লট বানানোর চেষ্টা করবো। আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগলো দাদা 🌼🦋

 2 years ago 

আপনার লিখা শেষটা সুন্দর গল্পের প্রথম পর্ব পড়ে খুবই ভালো লাগলো।গল্পটি রোমাঞ্চকর হবে মনে হচ্ছে। আসলে কোন মেয়ের সাথে ফোনে প্রথম কথা হলে মনের মধ্যে অন্যরকমের ভাব চলে আসে। যা আবিরের মধ্যে হয়েছে।সামনে পর্বে আরো সুন্দর কিছু অপেক্ষা করছে মনে হচ্ছে। সেই অপেক্ষায় রহিলাম। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য 🌼

 2 years ago 

আপনার গল্পটির নাম তো খুবই চমৎকার " শেষটা সুন্দর" । আবির এবং জারার এই পরিচয় এর মাধ্যমে হয়তো তাদের ভালোবাসা হয়ে যাবে আমার মনে হয়। আবির কিন্তু মনে মনে জারা কে একটু পছন্দ করছে আপনার গল্প পড়ে আমি যতটুকু বুঝলাম। আবিরর সাথে জারাই সর্বপ্রথম কথা বলেছে আর আবিরের সাথে আগে কোন মেয়ে কথা বলেনি ফোনে। ভাগ্যে থাকলে আবিদের ইন্টারভিউ অবশ্যই ভালো হবে এবং সে খুবই ভালো একটি চাকরি পাবে। আবিরের উপরে এখন অনেক বড় একটি চাপ কারণ তার পরিবার তাকেই সামলাতে হবে এখন। আশা করি খুবই তাড়াতাড়ি পরের পর্বটি নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হবেন। পরের পর্ব দেখার অপেক্ষায় থাকবো।

 2 years ago 

জি আপু আপনি কিছুটা ধরতে পেরেছেন। তবে সামনের পর্ব নিয়ে খুব শীঘ্রই হাজির হবো 🌼🦋

 2 years ago 

জারার আর আবিরের গল্পটি বেশ রোমাঞ্চকর।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।আবিরের বাবা অবসরে গিয়েছিল।তাই পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব আবিরের উপর।আবির পাঠাও এপস এর মাধ্যেমে বাইক চালাতে গিয়ে প্রেমে পড়া।ভালো লেগেছে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।ধন্যবাদ ভাইয়া গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম আপু 🌼🦋

 2 years ago 

জারা আর আবিরের মিষ্টি প্রেমের গল্পটা অসাধারণ লাগলো।ভালোবাসাগুলো বোধহয় এমনই হয়। যখন তখন যেখানে খুশি হয়ে যায় আর এটা একদমই ঠিক একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে অনেক সময়ই এমন হয় ,যে বাবা অসুস্থ হলে বা কোনভাবেই বাবা চলে গেলে পৃথিবী থেকে, তখন সমস্ত দায়িত্ব তার সন্তানের উপরে এসে পড়ে। সবদিক ব্যালেন্স করেও ,কাউকে ভালোবেসে কর্তব্য পালন করা সত্যিই খুব কষ্টের।কিন্তু তা সত্ত্বেও যারা এটা করতে পারে তারাই প্রকৃত পুরুষ।

 2 years ago 

আপনি একদম ঠিক বলেছেন দিদি 🌼🦋। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64041.25
ETH 2762.17
USDT 1.00
SBD 2.66