১ম পর্বঃ সর্বনাশা টিকটক

in আমার বাংলা ব্লগ9 months ago

05-12-2023

২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


book-6709160_1280.jpg

From pixabay

সোহেল সাহেবের পড়াশোনা পঞ্চম শ্রেণী অবধি! বাবার সংসারের হাল ধরার জন্যই ঢাকা শহরে ছুটে আসা। ঢাকায় একটা ফ্যাক্টরিতে জব ম্যানেজ করে। জব করে যে টাকা পেত তাতে কোনোরকমে সংসার চলে যেত। নিজের কিছু পকেট খরচ বাদে সব বাড়িতে বাবা মায়ের জন্য পাঠিয়ে দিতো। ঢাকা শহরে খাওয়া-দাওয়া সবমিলিয়ে পাচঁ হাজার মতো লেগে যেত! একটা ছিপছাপ রুমেই বসবাস করতো সোহেল সাহেব! রুমের জানালা খুললেই সামনে পাচঁতলা বিল্ডিং এর আরও একটি জানালা দেখা যেত। অফিস শেষ করে মাঝে মাঝেই সোহেল সাহেব জানালার কাছে এসে বসত। আনমনে সিগারেট টানতে টানতে বাহিরেই থাকিয়ে থাকে। একদিন সেই পাচঁতলার বিল্ডিং এ একটি মেয়েকে দেখতে পাই!

মেয়েটির উড়ো উড়ো চুল, ডাগর ডাগর চোখে দেখে প্রেমে পরে যায় সোহেল সাহেব! তারপর থেকে প্রতিদিন সোহেল সাহেব জানালার কাছে এসে বসে থাকতো মেয়েটিকে দেখার জন্য। সোহেল সাহেবের মনে আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। কিন্তু মেয়েটির সাথে কথা বলা দরকার, তার মনের কথাগুলো বলা দরকার। কিন্তু কিভাবে সে বলবে কথা মেয়েটির সাথে! সোহেল সাহেবের পাশের রুমমেট আরিফকে সবকিছু খুলে বলে! আরিফ তখন সোহেল সাহেবকে না করে এসবে জড়াতে। কারণ ঢাকা শহরে মেয়েদের মন বুঝা বড় কঠিন। ভালো কিছু পেলেই তারা আঁকড়ে ধরতে চাই। কিন্তু কে শুনে কার কথা! মেয়েটির সাথে তাকে কথা বলতেই হবে। তারপর আরিফ মেয়েটির খোজঁ নেয়! খোজঁ নিয়ে জানতে পারে সোহেল সাহেব যে ফ্যাক্টরিতে জব করে ঠিক সেই ফ্যাক্টরিতেই জব করে মেয়েটি। মেয়েটির নাম রোজিনা!

শহরে নতুন এসেছে, এখনও শহরের রীতিনীতি আয়ত্ত করতে পারে নি। তবে মেয়েটি খুব সহজ সরল সেটা বলা যায়। মেয়েটির সহজ সরল হাসি দেখেই প্রেমে পরে যায় সোহেল সাহেব। একদিন অফিস থেকে বের হওয়ার সময় রোজিনার সাথে দেখা হয়ে যায় তার! রোজিনাকে দেখে কিছু বলতে পারে না। রোজিনা বাসার দিকেই যাচ্ছিল, সোহেল সাহেবও তার পিছু পিছু বাসার দিকেই যেতে থাকে। অফিসের লাঞ্চ টাইমে প্রতিদিন মেয়েটির পিছু যাওয়া আসা করে সোহেল। মেয়েটি বুঝতে পারে সোহেল তাকে ভালোবাসে। কিছুদিন পর আরিফকে নিয়ে সাহস করেই কথা বলে মেয়েটির সাথে! সোহেলের নাম শুনতেই মুছকি হেসে দ্রুত চলে যায়। সোহেল বুঝতে পারে রোজিনাও তাকে ভালোবাসে। কিন্তু রোজিনার সাথে ফোনে কথা বলা দরকার! পরদিন রোজিনার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে আরিফকে নিয়ে। তারপর থেকে শুরু হয় তাদের প্রেমালাপ! দুজনই তখনও সোস্যাল মিডিয়া সম্পর্কে এতো ধারণা ছিল না। তাদের সম্পর্কের দু-বছর পর বিয়ে হয়।

সংসারের জীবনের শুরুটা সুন্দর ছিল। এক বছর না পেরোতেই তাদের ঘরে মুখ উজ্জল করে আসে ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান! ছেলের নাম রাখে অলি। সন্তান হওয়ার পর পরিবারের দায়িত্বটা এখন সোহেল সাহেবে র উপরই বেশি। রোজিনা জবটা ছেড়ে দেয়। সোহেল সাহেব জব করে যে টাকা পায় সেটা দিয়েই সংসার চলে যেতে থাকে। অলির বয়স যখন বছরের কাছাকাছি তখন গ্রাম থেকে তার মা বাবা ও চাচাতো ভাই বোনেরা বেড়াতে আসে! রোজিনা যেহেতু সোস্যাল মিডিয়া সম্পর্কে অবগত নয় তখন তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে জানতে পারে ঘরে বসেই মোবাইল দিয়ে টাকা আয় করা যায়! খুব সহজেই টাকা আসবে ফোনের মাধ্যমে। লোভে পরে পা দিয়ে দেয় রোজিনা! নিজের জমানো টাকা যেগুলো ছেলের জন্য রেখেছিল সেখান থেকে কিছু টাকা দিয়ে ফোন কিনে রোজিনা! রোজিনার ফোন কেনাটা মোটেও পছন্দ করেনি সোহেল সাহেব! তারপরও স্বামীর অগোচরে ঠিকই ফোন ব্যবহার করতে থাকে। গ্রামের সেই চাচাতো ভাই রোজিনাকে টিকটক একাউন্ট খুলে দিয়ে যায়। একবার যদি ভাইরাল হওয়া যায় তাহলে শুধু টাকা আর টাকা!

শুরু হয় রোজিনার টিকটক জার্নি! শুরুতে নিজেকে আড়াল করেই রাখে রোজিনা। কিন্তু ভিউয়ার আসে না! তারপর রোজিনা ক্যামেরার সামনে সামনে এসে নিজেকে উপস্থাপন করে! নেচে, গান মিলিয়ে একের পর এক ভিডিও শেয়ার করতে থাকে রোজি না! কয়েকদিনেই তার ফলোয়ার্সও বেড়ে যায়। তার ভিডিওগুলো সবাই শেয়ার করতে থাকে। রোজিনার ইনবক্সে তখন ছেলেদের মেসেজ আসতে থাকে! স্বভাবতই এতো ছেলের মেসেজ দেখে সে আরও বেশি আনন্দ পায়! কিন্তু রোজিনা বুঝতে পারে না যে সে ভুল রাস্তায় পা দিয়েছে! টিকটকের মাধ্যমেই পরিচয় হয় একটা ছেলের সাথে! সোহেল সাহেবের অগোচরে প্রায়ই ছেলেটির সাথে কথা হয় রোজিনার। সোহেল সাহেব কিছুই জানে না। তার স্ত্রী টিকটক চালাচ্ছে সেটাও না!

চলবে........



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 9 months ago 

এরকম জাহারও সোহেল রোজিনা আছে দেশে। সোহেল সাহেব ভালোবেসে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে থাকছিলো।কোল জুড়ে সন্তান আসে কিন্তুু রোজিনার চাচাত ভাই রোজিনাকে এই টিকটকের রাস্তায় নামায়।সোহেল সাহেব কিছু জানে না জানলে কি অবস্থা হবে সোহেল সাহেবের না কি সব মেনে নেবেন। জানার অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পোস্টে।

 9 months ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে এবং আমি এই গল্পটা একটা বাস্তবিক প্রেক্ষাপট কেন্দ্র করেই লিখছি। পরের পর্ব খুব শীঘ্রই আসছে 🌼

 9 months ago 

আসলে মানুষ লোভে পড়ে অনেক কিছুই করে ফেলে। তেমনি রোজিনা লোভে করে এখন এগুলো করতেছে। তাদের সংসারটা কতটাই না সুন্দর ছিল। রোজিনা নিজের হাতেই তা নষ্ট করে দিচ্ছে আস্তে আস্তে। এখন আবার অন্য একটা ছেলের সাথে ও কথা বলতেছে রোজিনা। সে তার ছোট্ট একটা সন্তানের কথা ভাবছে না। শুধু টাকার কথাই ভাবছে এখন। আর ওই ছেলেটার সাথেও কথা বলছে। দেখা যাক তাদের জীবনে শেষ পর্যন্ত কি হয়। সেটা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

 9 months ago 

জি আপু! সুখের সংসারে আগুন লাগলে যা হয়। যাক, পরের পর্ব খুব শীঘ্রই আসছে

 9 months ago 

কত জন যে এই ফালতু অ্যাপের জন্য, সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য নিজের সুখের সংসার নষ্ট করেছে।প্রথম পর্ব খুব ভালভাবেই উপস্থাপন করেছেন ভাইয়া।বেশ উপভোগ্য ছিল প্রথম পর্ব,পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।(ভাইয়া অন্যের কাজ লেখায় সময় হয় "য়", যেমন:যায়,খায়,নেয় ইত্যাদি। আর নিজের কাজের বেলায় " ই" যেমন:যাই,খাই,নেই ইত্যাদি।আশা করি পরবর্তীতে খেয়াল রাখবেন।)

Posted using SteemPro Mobile

 9 months ago 

জি ভাইয়া বুঝতে পেরেছি
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য 🌼

 9 months ago 

সত্যি বলতে tiktok করার মাধ্যমে বর্তমান সমাজের নৈতিক অবক্ষয় অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। রোজিনার মতো অনেক মেয়ে আছে যারা tiktok এর নেশায় অভ্যস্ত হয়ে ভুল পথে চলে যাচ্ছে। যাহোক পরবর্তী পর্বটি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

 9 months ago 

ভাই আপনি একদম ঠিক ধরেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে

 9 months ago 

আমার মনে হয় যারা বেশি সুখে থাকে তারা শেষ পর্যন্ত এরকমটাই করে। আসলে মানুষকে বেশি সুখে রাখলে এরকমটাই হয় বলে আমি মনে করি। টিকটকের জানে পা দিয়েছে তাও আবার এত কিছু করতেছে, এসব কিছু জেনে আমার কাছে তো খুব খারাপ লেগেছে। কতটাই না সুখের সংসার ছিল তাদের। তবে এখন সে অন্য আরেকটা ছেলের সাথে কথা বলছে। আমার তো মনে হচ্ছে রোজিনা হয়তো পালিয়ে যাবে ওই ছেলেটার সাথে। যাইহোক অনেক কিছুই মাথায় আসতেছে জানিনা কি হবে। শেষ পর্যন্ত কি হয় এটাই দেখার পালা।

 9 months ago 

হুমম ভাইয়া, বেশি সুখ মানুষ সহ্য করতে পারে না। পরের পর্ব খুব শীঘ্রই আসছে

 8 months ago 

আসলে কাউকে মন থেকে ভীষণ পছন্দ করলে, তার সাথে কথা না বলে থাকা যায় না। অনেকে সাহস করে বলতে পারে না, আবার অনেকে বলতে পারে। যাইহোক সোহেল এবং রোজিনার বিয়ে তো হয়ে গেল,তারপর সন্তান ও হলো। সবকিছুই ঠিকঠাক মতো চলছিল। তবে গ্রামের চাচাতো ভাই রোজিনাকে টিকটক একাউন্ট খুলে দিয়েই তো সব ঝামেলার সৃষ্টি করলো। দেখা যাক পরবর্তীতে কি হয়। সোহেল জানলে তো রোজিনার অবস্থা খারাপ করে দিবে। পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 8 months ago 

গ্রামের চাচাতো ভাইয়ের কারণেই রোজিনা হয়তো টিকটকের মতো সোস্যাল মাধ্যমে যোগ দিয়েছিল

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.17
JST 0.033
BTC 63915.30
ETH 2740.13
USDT 1.00
SBD 2.59