গ্রামের একটি বিয়েতে কিছু মুহূর্ত
09-10-2022
২৪ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় সবাই অনেক ভালো আছেন 🌼। আমি ভালো আছি। তবে কয়েকদিন ধরে খুবই ব্যস্ততার মধ্যে সময় যেন চলে যাচ্ছে। আপনারা হয়তো জানেন যেন আমি কয়েকদিন ঢাকায় ছিলাম। কিছুদিন আগে অর্থাৎ এ মাসের ৫ তারিখে বাড়িতে আসলাম আপুদের নিয়ে। অনেকদিন পর বাড়িতে আসলাম মনে হচ্ছিল। প্রায় তিন মাস পরে বাড়িতে আসলাম। বাড়িতে এসে দেখলাম আশেপাশের প্রকৃতি পরিবর্তন হয়েছে। এখন শরৎ চলছে সারাদেশে। সবখানে যেন কাশফুল দেখা যাচ্ছে। তবে আমাদের দিকে এখনও কাশফুল দেখতে পেলাম না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ধান ক্ষেতের উপরে কুয়াশা জমতে দেখা যায়। রাতে কিছুটা ঠান্ডা ফিল হয়। গ্রামে এখন যেন শীত শীত ভাব। রাতে কুয়াশা পড়তে দেখা যায়। বাড়িতে এসে শীতের আমেজ অনুভব করছি।
বাড়িতে এসেই বিয়ের দাওয়াত পেয়ে গেলাম! সেটাও আবার বন্ধুর বড় ভাইয়ের বিয়ে। এবার দুবাই থেকে দেশে ফিরেছে। যতদূর শুনেছিলাম, পলাশের বড় ভাই আট বছর ধরে দুবাই থাকে। দেশে এসেই বিয়ে করার প্লেন। আসলে পলাশের সাথে আমার বন্ধুত্বটা সেই হাই স্কুল লাইফ থেকে। এখনও বন্ধুত্বটা আগের মতোই আছে। বন্ধুত্বের স্মৃতি প্রতিযোগিতায় আপনাদের সাথে শেয়ার করবো সেসব ফেলা আসা কথা। বাড়িতে আসতেই পলাশের মেসেজ। ওদের বাড়িতে বিয়ে লেগেছে। আমি কোথায় জিজ্ঞেস করেছিল পলাশ। তখন অবশ্য বলেছিলাম গতকাল বাড়িতে এসেছি। এটা শুনেই সে বলে, কাল বিয়ে ওদের বাড়িতে যেতে হবে। আমি আবার না করতে পারলাম না। আমি যে কাজে তাকে ডেকেছি সব কাজেই তাকে পেয়েছি। জামাইয়ের সাথে যেতে হবে। আমাকে বলে দিয়েছিল যেন দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে তাদের বাড়িতে থাকি।
পলাশদের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে কাছেই বলা যায়। আমার নানু বাড়ির কাছে পলাশদের বাড়ি। আমার নানু বাড়ি ধলাপাতা। আর পলাশদের বাড়ি বটতলা। বটতলা থেকে দশ মিনিট হেটেঁ গেলেই আমার নানুর বাড়ি। পলাশদের বাড়িতে এর আগেও আমি কয়েকবার গিয়েছি। এসএসসিতে যখন পড়াশোনা করতাম তখন প্রায়ই যাওয়া হতো। তো আমি সকাল এগারোটার দিকে রেডি হয়ে পড়ি। যেতে ত্রিশ মিনিটের মতো লাগে। অনেকদিন পর গ্রামের একটি বিয়েতে যাচ্ছি। বাড়ি থেকে অটো দিয়ে যেতে হয়। তখন অনেক রোদ ছিল বাহিরে। পাঞ্জাবী পড়ে বের হয়েছিলাম। শরীরের ঘামে যেন পাঞ্জাবী ভিজে গেছে। তবে ভালো লাগার বিষয় হলো পলাশদের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটা এখন মেরামত করেছে। এখন ত্রিশ মিনিটও লাগে না। আমি অটোতে উঠে গেলাম। অটোতে উঠে পলাশকে ফোন দিয়ে বললাম বাড়ির সামনে এসে যেন সে দাড়ায়। বাড়ির সামনে আসতেই পলাশকে ফোন দিলাম। কিন্তু সে ফোন ধরছেই না।
কিছুক্ষণ পর পলাশ ফোন দিয়ে বললো আর কিছুসময় দাঁড়াতে। জামাইকে চিড়া আর মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। আমাদের সমাজের রীতি অনুযায়ী জামাইকে বউ আনতে যাওয়ার সময় ভেজা চিড়া এবং মিষ্টি খাওয়ানো হয়। এজন্য কিছুক্ষণ লেইট হবে। আমি কিছুক্ষণ চায়ের দোকানে বসলাম। সেখানে বসেছি চা না খেলে কি হয়! এক কাপ চা নিয়ে নিলাম। চা খেতে কিছুক্ষণ ডিস্কর্ডে কথা বলে ফেললাম। চা খাওয়া শেষ হলে পলাশকে আবার ফোন দিলাম। তখন ঘড়িতে বাজে আড়াইটা। এদিকে আমার আর অপেক্ষা করতে ভালো লাগছিল না। তখন কিছুক্ষণ পরই পলাশ বাইক দিয়ে এসে আমাকে রিসিভ করলো। বাড়ির কাছেই বিয়ে হচ্ছিল। এজন্য বাইক দিয়ে যেতেও বেশিক্ষণ লাগেনি।
আমি সেখানে যেতেই দেখি জামাইয়ের গাড়িও এসে গেছে। জামাইকে গেইটে আটকানো হয়েছে। কনের পক্ষ থেকে দশ হাজার টাকা দাবি করছে। দশ হাজার টাকা না দিলে জামাইকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিবে না। তারপর মুরব্বিরা কনের পক্ষকে পাচঁ হাজার টাকা দিতে রাজি হলো। গেইটের ব্যাপারটা সেখানেই ক্লোজ হয়ে গেল। তারপর জামাইকে নিয়ে আমরা বাড়ির ভিতরে চলে গেলাম। জামাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট একটি বসার জায়গা বানানো ছিল। সেখানে গিয়ে জামাই সাহেব বসে পড়েন। ঠিক কিছুক্ষণ পরেই জামাইয়ের এক জুতা উধাও! জামাই সাহেব মিটিমিটি হাসছে। এগুলো সিম্পল বিষয়। বিয়ে বাড়িতে হয়েই থাকে। টাকা না দিলে জুতা ফেরত দিবে না। যাক, দুপুর ঘনিয়ে বিকাল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্ষুধাও লেগেছে। আমি পলাশ একসাথে বসে পড়লাম খেতে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়েছিল এজন্য যেখানে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেখানে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। তারপরও আমরা সেখানে চেয়ারে বসে পড়লাম। খাবার আমাদের জন্য রেডি। শুরুতেই সবজি দিয়ে দিল। সবজি শেষ হলে মুরগীর রোস্ট, তারপর গরুর গোশত। যদিও আমি গরুর গোশত খায়না। আমার এলার্জিজনিত সমস্যার কারণে।
খাবারের শেষে আমাদের পায়েস দিয়ে দিল। বিয়েতে বেশি খাওয়া যায় না। হাহাহা! আমি এমনিতেও খেতে পারি না। খাওয়া শেষ করে বিয়েতে আসছি, একটু পান না খেলে কি হয়! আমি আর পলাশ হালকা পান আর সুপারি খেয়ে নিলাম। এদিকে দেখি মুরব্বিরা কাবিননামা নিয়ে ব্যস্ত। কাজী সাহেব বিয়ে পড়াচ্ছেন। এরই মাঝে লেগে হেল গন্ডগোল! দেনমোহর দেয়া হয়েছে তিন লক্ষ টাকা। কিন্তু ছেলেপক্ষ এতো টাকা দিতে রাজি নয়। বিয়ের আগে সবকিছু ফিক্সড করা ছিল। তখন বলা হয়েছিল আড়াই লাখ টাকা দেনমোহর দিবে। তারপর অবশ্য মীমাংসা হলো। বিয়ের কাজ প্রায় কমপ্লিট। এখনও জামাই সাহেব খাওয়া দাওয়া করেনি। তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা বউকে নিয়ে এসে পড়ি। আসার সময় সে কি কান্না বউয়ের। হাহাহা! কোনোভাবেই যেন কান্না থামছিল না। তারপর আমার পকেটে টিস্যু ছিল। আমাদের ভাবীকে টিস্যু দিলাম চোখের পানি মুছার জন্য। ভাবীকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আমি বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। আসার সময় পলাশ বলেছিল কাল যেন তাড়াতাড়ি এসে পড়ি।
Device | Oppo A12 |
---|---|
Photographer | @haideremtiaz |
Date | 6 October, 2022 |
আশা করি গ্রামের বিয়েতে কাটানো মুহূর্ত আপনারাও কিছুটা উপভোগ করতে পেরেছেন। গ্রামের বিয়েগুলো আসলেই ভালো লাগে। নরমালভাবে সবকিছু হয়ে যায়। তবে একটু গন্ডগোল লেগে যায়। অনেকদিন পর গ্রামের একটি বিয়ে খেলাম। আবার জামাইয়ের সাথে গেলাম। সবমিলিয়ে ভালো ছিল। আপনাদের সু্স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ 🌼।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
Link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.