৪র্থ পর্বঃ নীল শাড়ি

29-09-2022

১৪ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় অনেক ভালো আছেন 🌼। আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। দুদিন হলো ঢাকায় আসলাম। ঢাকা আসলেই বুঝা যায় আসলে মানুষ কতটা ব্যস্ত সময় কাটায়। কাউকে দেখা যায় না অলস বসে থাকতে। জীবিকার তাগিদে সবাই যেন কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত। যায়হোক, আপনাদের সাথে ইতিপূর্বে একটি গল্পের তিনটি পর্ব শেয়ার করেছিলাম। আজকে চতুর্থ পর্বটি লিখলাম। আগের যারা পড়েননি তাহলে লিংকে প্রবেশ করে পড়ে আসতে পারেন। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

hand-1549399_1280.jpg

copyright free image from pixabay

৩য় পর্বের পর

আবির ভালোবাসি তাই বলেই ফেইসবুক থেকে বেরিয়ে। কি জানি কি বলে ফেলে রাগের মাথায় সারা! এই ভয়ে সে আর ফেইসবুকে এক্টিভ হয়নি। সারা আবিরে কথা শুনে রীতিমত হাসতে থাকে। সেদিনের বোকা ছেলেটি যে তার প্রেমে পড়ে যাবে কে জানতো? সারা ভাবতে ভাবতে আবিরের কথা মনে করতে থাকে। এদিকে কখন যে রাত বারোটা বেজে গেল খেয়ালই নেই সারার! সকালে অফিস যেতে হবে। মাথার পাশে ঠিক টেবিল ল্যাম্পের এখানে ফোন রেখে শুয়ে পড়ে সারা। আবিরের মনে ভয়! কাল দেখা হলে কি বলবে কে জানে। আবিরের চোখে তখন ঘুম পাচ্ছিল। টেবিল ল্যাম্প অফ করে আবিরও শুয়ে পরে।

সারা ঘুৃম থেকে উঠেই আবিরকে "শুভ সকাল" মেসেজ দিয়ে অফিস চলে যায়। সারা জানে আবির এতো সকাল সকাল বিছানা ছেড়ে উঠবে না। সারা অফিস চলে যায়। আবির ঘুম থেকে উঠতে নয়টা বেজে যায়। টেবিলের উপর রাখা ফোনটি হাতে নেয় আবির। চোখ এখনও ঘুম ঘুম। মিটিমিটি চোখে ফোনের ডাটা অন করে। অন করতেই টুং করে শব্দ! মেসেজ এসেছে। নোটিফিকেশন চেক করে দেখতে পায় সারা মেসেজ দিয়েছে। মুচকি হেসে উঠে আবির। আবির তখন সারার মেসেজের রিপ্লাই দেয়।

-শুভ সকাল 🌼। অফিস চলে গেছেন?

মেসেজ দিয়ে আবির ফোনের ডাটা অফ করে দেয়। ঘুমের রাশ এখনও যায়নি চোখ থেকে। ফোনটি পাশে রেখে ঘুমিয়ে পরে আবির। ঠিক কিছুক্ষণ পরেই আবিরের মামীর ডাক শুরু!
-মামার এখানে আর কতদিন এভাবে শুয়ে বসে খাবে? কিছু একটা তো করো?

মামীর কথার শব্দে আর ঘুমাতে পারলো না আবির। তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে পরলো আবির। ফ্রেশ হওয়ার জন্য আবির চলে ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে। খাওয়ার টেবিলে বসে মামীর বাণী শুনতে থাকে। প্রতিদিন যা শুনে। শুনতে শুনতে এখন আবির অভ্যস্ত। ছয় মাস ধরে আবির ইন্টার্ভিউ দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু আবিরের মামী কোনোভাবেই বুঝেনা সে যে চেষ্টা করছে।

লাঞ্চের সময়। সারা এখন দুপুরের খাবার খাবে। আবির সারাকে ফোন দেয়। কিছু বলার আগেই সারাকে বলে,
-আমাকে একটি চাকরি দিতে পারবেন?

সারা তখন বলে,
-আমাদের এখানে আপাতত কোনো ভেকেন্সি খালি নেই। তবে আপনাকে একটা পরামর্শ দিতে পারি!
-বলেন শুনি(আবির)
-আমি যে রেস্টুরেন্ট এ কাজ করি আপনি চাইলে আমার সাথে পার্ট টাইম জব করতে পারেন!
-জি আমি রাজি। আমার একটা জব খুব দরকার ছিল। প্রতিদিন মামীর কথা শুনতে আর ভালো লাগেনা (আবির)

সারা তখন আবিরকে বলে আজ সন্ধ্যায় যেন তার সাথে দেখা করে। রেস্টুরেন্ট এ এর সবকিছু বুঝিয়ে দিবে। আবির সন্ধ্যার আগেই রেস্টুরেন্ট এ চলে যায়। সারার জন্য অপেক্ষা করছে। এখনও সারা আসছে না। ঠিক কিছুক্ষণ পর দেখতে পায় আবির, সারা রিকশা থেকে নামছে। সারা তখন এসে আবিরকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজার মতিন ভাইয়ের কাছে। মতিন ভাই সারাকে ছোটবোনের মতো আদরকে। মতিন ভাই সারার কথা রাখবে এটা সারা জানতো। আবিরকে মতিন ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সারা তখন বলে, "আমাদের সাথে এখন আবির কাজ করবে। তাই নিয়ে আসলাম। তাছাড়া উনার জবটা দরকার ছিল! মতিন ভাই তখন বলে,
-কাজ করতে পারবে তো? স্যালারিও কম চলবে?
আবির সবকিছু করতে পারবে। মতিন ভাইয়ের কথায় আবির রাজি।
মতিন ভাই তখন বলে, তাহলে কাল থেকেই কাজ শুরু করে দেন
-ঠিক আছে (আবির)

সারা আবিরকে কিছু কাজ দেখিয়ে দেয়। বেসিক কাজগুলো কিভাবে করতে হয়। আবির অবশ্য এই চাকরিটা নিয়েছে সারার জন্যই! দুজন পাশাপাশি থেকে চাকরিটা করতে পারবে। তাছাড়া একটা জব আবিরের দরকার ছিল খুব।

আবির কিছু কাজ দেখে সারার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে সে তো মহাখুশী। মামীকে জানায় যে চাকরি হয়েছে। মামীও বেশ খুশি তা শুনে। আবির ফ্রেশ হয়ে তার মামীকে বলে এক কাপ কফি দেয়ার জন্য। মামী এবার কথা না শুনে উপায় আছে। চাকরিটা যখন হয়েই গেলো। এদিকে সারা কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসে। আজকে সারার বাসায় আসতে একটু লেইট হয়ে গেল। কিছু কাজ শেষ করে আসতে হলো। এসে দেখে জিহান ঘুমিয়ে গেছে। জিহানের জন্য দুটি আইসক্রিম নিয়ে এসেছিল সারা। সেটি ফ্রিজে রেখে দেয়। সারার মা বললো, আজ এতো দেরি করলি যে?

-অফিসের কাজ কিছু শেষ করতে দেরি হয়ে গেল,মা। শেষ করে তারপর বের হলাম। কি খাওয়ার আছে দাও,প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে।

সারার মা খাবার টেবিলে রেখে রুমে চলে যায়। সারা একা একা বসেই খেতে থাকে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সে রুমে চলে যায়। রুমে প্রবেশ করেই ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করে সারা। ফোনটি হাতে নিয়ে বিছানায় বসে। ফোনের ডাটা অন করতেই আবিরের মেসেজ।
-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আসলে আপনাকে ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যাবে। আপনি জানেন, একটি চাকরি আমার কত দরকার ছিল?

সারা মৃদু হাসি দিয়ে বলে,
-চাকরি যখন পেয়েছেন আমাকে ট্রিট দিয়েন। আর আমাকে এতো ধন্যবাদ দিতে হবেনা। আপনার একটা জবের দরকার ছিল আমি বুঝেছিলাম। তাই ভাবলাম এই জবটা করতে পারেন।

-যায়হোক, কি খাবেন বলেন? আপনি যা বলবেন তা খাওয়াবো।
-বেশি কিছু না এক কাপ কফি হলেই চলবে (সারা)
-আচ্ছা ঠিক আছে। কাল তাহলে আপনাকে আমি ট্রিট দিবো।
-সারা, ঠিক আছে । কাল যথাসময়ে চলে আসবেন। এই বলে সারা ফোনটি রেখে দেয়
-আচ্ছা, তাহলে ঘুমিয়ে পড়ুন। বলে আবিরও ফোন রেখে দেয়।

আবিরের কোনোভাবেই ঘুম আসছে না। তার প্রিয় মানুষটির সাথে কাল একসাথে কাজ করবে। শুরুটা হয়েছিল যেখানে না পাওয়ার আশা নিয়ে আজ তার সাথেই চাকরি করতে হবে। ভাবতে ভাবতে আবির ঘুমিয়ে পড়ে।

চলবে....



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56588.25
ETH 2399.94
USDT 1.00
SBD 2.32