"কুড়িয়ে পাওয়া পদ্ম" নাটক রিভিউ

নাটকের শুরুতে দেখা যায় সকালবেলা তুর্য ঘুমাচ্ছে! আজ তুর্যর অফিসের ছুটির দিন। ভেবেছিল আরামছে কিছুক্ষণ ঘুমাবে। কিন্তু তা আর হলো না! তুর্য এর কানে নিচে থেকে বাজনার আওয়াজ আসছে! ঠিক তখন তুর্যর মা আসে রুমে। তুর্য তখন তার মায়ের কাছে জানতে চাই, এতো সকাল সকাল বাজনা বাজাচ্ছে কে? তুর্য এর মা তখন বলে তাদের বাড়িওয়ালা দাদুর নতুন মানুষ আসছে! তুর্য কিছুটা অবাক হয়ে যায়! এই বয়সে নতুন মানুষ! তুর্য এক লাফে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। সোজা চলে যায় তার দাদুর রুমে! তুর্য গিয়ে দেখে বুড়ো তো অনেক খুশি! কারণ জানতে চাইলে দাদু সব তুর্যকে খুলে বলে।

দাদুর এক ছেলে ও বউমা এবং তিন বছরে একজন নাতনি ছিল! লঞ্চ ডুবিতে তার ছেলে ও বউমা মারা যায় এবং তাদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল! কিন্তু নাতনির লাশ পাওয়া যায়নি। দাদুর বিশ্বাস ছিল তার নাতনি হয়তো বেচেঁ আছে! এজন্য দাদু একটি এনজিও এর কাছে একটা হারিয়ে যাওয়ার নোটিশ দিয়েছিল সাথে তার নাতনির ছবি! ঠিক তিন বছর পর অর্থাৎ আজ তার নাতনিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। দাদুর নাতনি আজ বাড়িতে আসছে তাই এতো আয়োজন! তুর্য তখন বুঝতে পারে ব্যপারটা।

দাদুর নাতনি গ্রামের বস্তিতে বড় হয়েছে! এজন্য শহরের রীতিনীতি তেমন বুঝে না। প্রথমদিন বাড়িতে এসেই এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলে। হাই কমট বাথরুমকে বালতি ভেবে খুলি করতে চেয়েছিল। ভাগ্যিস পানি না থাকায় করে নি! গ্রামে নরমাল টয়লেট ইউজ করে বড় হয়েছে। দাদু তার নাতনিকে আদর করে লোটাস নামে ডাকে। লোটাস মানে পদ্মফুল! কিন্তু তুর্য যখন লোটাস বলে ডাকে তখন লোটাস রাগ করে। কারণ তার আসল নাম শাহানা। তার মা আদর করে এই নাম রেখেছে। কিন্তু দাদু তাকে লোটাস নামেই ডাকে। এতে অবশ্য তার কোনো আপত্তি নেই।

তবে বিপদ হলো লোটাসকে নিয়ে! শহরের রীতিনীতি এখনও বুঝে উঠতে পারছে না। তাই দাদু তুর্যকে বললো লোটাসকে যেন একটু পড়াশোনা করাই! অফিস শেষ করে ফ্রি সময়টুকু যেন লোটাসকে পড়ায়। লোটাসের পড়ায় আগ্রহ আছে। প্রথমদিন পড়াতে না আসায় লোটাসের অবশ্য খুব মন খারাপ করে বসে থাকে। তারপর তুর্য গিয়ে তার রাগ ভাঙায়! লোটাস ধীরে ধীরে শহরের রীতি বুঝতে থাকে। ভালো করে কথা বলতেও শিখে যায়। লোটাসকে তুর্য স্মার্ট হিসেবে তৈরি করে পার্লার থেকে লোটাসকে সাজিয়ে নিয়ে আসে। আর তাতেই অবাক তার দাদু! এতো সুন্দর লাগছিল লোটাসকে! এদিকে লোটাস তুর্যকে পছন্দ করে ফেলে। তুর্যকে যে পছন্দ করে সেটা তার দাদু ভালো করেই বুঝতে পারে ।

কিছুদিন পর দাদু তুর্যের মায়ের সাথে কথা বলতে যায়। সেখানে তুর্য উপস্থিত। তার দাদু একটা আবদার নিয়ে এসেছে। তার নাতনিটাকে যেন বিয়ে করে তুর্য! তুর্য আবার না করতে পারিনি। সে লোটাসকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়! কিছুদিন পর বিয়ে হবে তুর্য আর লোটাসের! বিয়ের আয়োজনের লিস্ট হচ্ছে। লিস্টে লোটাসের পালিত মা বাবার নাম দেখে অনেক কষ্ট পায়। তখন লোটাস গিয়ে তার পালিত মা বাবাকে বিয়েতে নিয়ে আসে। নাটকের স্বার্থকতা সেখানেই। লোটাস আর তুর্যর বিয়ের মাধ্যমেই নাটকের সমাপ্তি ঘটে।

নাটকটি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। কমেডির সাথে রোমেন্স! সবমিলিয়ে দেখার মতো একটি নাটক ছিল! কেয়া পায়েলের কথা না বললেই নয়! গ্রামের উঠে আসা মেয়েটার চরিত্রটা খুব সুন্দর করে কভার করতে পেরেছে। অভিনয় দেখে বুঝায় যায়নি সে যে অভিনয় করছে! আর অপূর্বের কথা আর কি বলবো! বরাবরের মতো যথার্থ অভিনয় করেছে! পরিচালককে ধন্যবাদ দিতে চাই, ভিন্ন গল্পের মধ্যে একটি নাটক উপহার দেয়ার জন্য!