আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২৩ | স্কুল জীবনের তিক্ত অনুভূতি
28-09-2022
১৩ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন 🌼। আপনারা অবগত আছেন যে আমার বাংলা ব্লগ নতুন একটি কন্টেস্ট আয়োজন করা হয়েছে। এবারের প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে, "শেয়ার করো স্কুল জীবনের তিক্ত কোনো অনুভূতি। " আমার বাংলা ব্লগকে নিয়ে আমি সবসময় যে কথাটা বলি সেটা হচ্ছে আমার বাংলা ব্লগ সবসময় সৃজনশীল কাজে বিশ্বাস করে । প্রত্যেক ইউজারের মাঝে সুপ্ত গুণাবলি বের করার মাধ্যম আমার বাংলা ব্লগ। যেখানে ইউজারদের সৃজনশীল কাজগুলো প্রাধান্য দেয়া হয়। এবারের প্রতিযোগিতাটিও ইউনিক। যায়হোক, আমি আর কথা না বাড়িয়ে আসল ঘটনায় আলোকপাত করি।
স্কুল জীবনে আসলে আমাদের জীবনের সেরা কিছু মুহূর্ত কেটে থাকে। জীবনের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হয় যেখানে। স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো কখনো ভুলার নয়। আজও মনে পড়ে ঐ তো সেদিন একসাথে মিলেমিশে ক্লাস করলাম। ক্লাসরুমটা আমার চেনা, শুধু আমি নেই সেখানে। স্কুল জীবনে বেস্ট মোমেন্ট এর পাশাপাশি কিছু খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিলাম। সেটার মধ্যে একটি ঘটনা বলি।
স্কুল জীবনের শুরুটা হয়েছিল ২০০৮ সালে। গ্রামের ভিতরের একটি স্কুল। নাম ছিল আচারগাও উত্তরপাড়া প্রাইমারী স্কুল। বাড়ি থেকেও কাছে ছিল স্কুলটি। আমাদের গ্রাম ছিল আচারগাও মধ্যপাড়াতে। বলতে পারেন ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বড় হয়েছি। হাফ প্যান্ট পরি তখন। পড়নে হাফহাতা শার্ট। পায়ে জুতা নেই। খালি পায়েই হেটেঁ চলে যেতাম স্কুলে। প্রথমবার যেদিন স্কুলে ভর্তি হতে গেলাম তখনই স্যার যেন শারীরিক পরীক্ষা নেয়া শুরু করে দিলো। ডান হাত দিয়ে মাথার বাম পাশে কান স্পর্শ করতে পারলে ভর্তি হতে পারবো। কানের নিচ পর্যন্ত যেতে হবে। পড়ে গেলাম বিপদে কোনো ভাবেই যেন কানে হাত লাগাতে পারছিলাম না। তারপর বললো বাম হাত ডানের কানে লাগাতে। তাও ব্যর্থ হলাম। ভয়ে যেন শরীর থরথর করে কাপঁছে। সাথে আব্বা ছিল। তবুও যেন সাহস পাচ্ছিলাম না। তারপর আমাকে ধরলো অফিসের উপরে কি লেখা? আমি তখন বানান করে বলে দিলাম শ্রেণিকক্ষ লেখা। তারপর ভর্তি হতে পারলাম ক্লাস ওয়ানে। স্কুল জীবনের শুরুটা হয়ে যায়।
বাড়িতে আব্বা একটি বই নিয়ে আসে। একের ভিতরে সব। অ,আ, ক,খ সব যেন বইয়ে ছিল। সব থেকে ভালো লাগার বিষয় ছিল কবিতা। মামার বাড়ি, আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা, ভোর হলো দূর হলো খুকু মণি উঠো রে, ঐ দেখা যায় তাল গাছ সহ আর অনেক কবিতা। শুরুতে রিডিং পড়তে পারতাম না। আমার বড় আপু আমাকে রিডিং পড়া শেখাতো। বানান করে করে। রিডিং না পারলে খেতে হতো আপুর হাতে স্কেলের মার। কাঠের স্কেল। হাত একদম লাল বানিয়ে দিতো। অনেক কষ্টে যেন রিডিং পড়া শিখলাম। শুরুতে নিয়মিত ক্লাসেও যেতাম। কিন্তু এই আচারগাও স্কুলে পড়ালেখার মান তেমন ভালো না। আমাকে এখন ভর্তি করানো হলো বাড়ি থেকে একটু দূরে চারিআনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ক্লাস ওয়ান শেষ করে এসেছিলাম। ইচ্ছে ছিল এখানে এসে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হবো। কিন্তু না! আমাকে আবার পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিলো নাসিম স্যার। আমাকে কিছু ইংরেজি ওয়ার্ডের শব্দার্থ ধরেছিল কিন্তু পারেনি। তাই আর ক্লাস টুতে ভর্তি হতে পারেনি। আবার পড়তে হবে ক্লাস ওয়ানে। কি আর করা ভর্তি হয়ে গেলাম ক্লাস ওয়ানে।
নীল শার্ট ছিল স্কুলের ড্রেস। নেবি ব্লু হাফপ্যান্ট পরে প্রতিদিন ২ কিলোমিটার পথ হেটেঁ স্কুলে এসে পড়তাম। দেখতে দেখতে ক্লাস টুতে উঠে গেলাম। পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি দেয়াও যেন শুরু হয়ে গেল। গ্রামে বড় হয়েছি এজন্য সারাদিন বাড়ির বাইরে খেলাধুলা করেই পার করে দিতাম। ক্লাস টুতে রিচাল্ট খুব খারাপ হয়। আপুর হাতে খুব মার খেয়েছিলাম সেজন্য। ক্লাস থ্রি থেকে যেন একটু সিরিয়াসনেস আসলো। তখন একজন বন্ধু পেলাম। নাম তার দস্তগীর। প্রতিদিন বাসা থেকে নিয়ে যেতাম আমি। দুপুরে এক ঘন্টা টাইম দিতো টিফিনের তখন বাড়ি থেকেই ভাত আর ডিম ভাজি নিয়ে আসতাম সেটাি খেয়ে নিতাম ক্লাসে বসে। আমার এখনও মনে আছে ডিম নিয়ে কতো মারামারি হয়ে যেতো। একজনের ডিমের ভাগেরটা আরেকজন নিয়ে যেত। মাঝে মাঝে শেয়ার করে খেয়ে নিতাম। সেবার ক্লাস থ্রিতে ভালো রিচাল্ট করি। দশের ভিতরে রোল চলে আসলো। চতুর্থ শ্রেনীতে উঠে গেলাম। আমি খুব লাজুক ছিলাম আসলে। ক্লাসের মেয়েদের সাথে খুব কম কথা বলতাম। তবে মীমের সাথে খুব কথা হতো এমনকি মারামারি লেগেও যেত। মীমকে ডিম ডাকলে সোজা এক দৌড়ানি দিত। ক্লাসে ভিতরে ব্যাগ দিয়েই মারামারি লেগে যেতাম।
আমাদের ক্লাসেই আরেকটি মেয়ে ছিল। নাম ছিল হিমু। দেখতে সুন্দর ছিল, স্টাইলিশ। ক্লাসে তাকে নিয়ে সবাই মজা করতো। তবে হিমু খুব রাগী ছিল। নিজের কানে যখন শুনতে পারে যে তার নামে কেউ কিছু বলেছে তখন আর রক্ষে নেই। দস্তগীর আর আমি একসাথেই চলাফেরা করেছিলাম বেশি। দস্তগীর ক্লাসে একটি মেয়েকে চয়েস করতো নাম তার দিনা। দুজনেই আর্টে বেশ দক্ষ ছিল। কিন্তু তাদের ভালোলাগার কথাটা আমি ছাড়া ক্লাসের আর কেউ জানতো না। লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলা, চিঠি দেয়া। সবকিছু আমাকে নিয়েই করতো। দস্তগীরের বাসা থেকে দিনার বাসা কাছেই ছিল। নদীর এপার-ওপার। সাঁকো পার হয়ে গেলে দিনাদের বাসা। লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের ভালোলাগার কথাগুলো ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ দিনা আর দস্তগীরের মাঝে ঝামেলা বেধেঁ গেলে। মাঝখানে এসে আমাকে দোষারোপ শুরু করে দিছে। আমি নাকি ক্লাসের অনেককেই তাদের কথা বলেছি। অথচ আমি কাউকে কিছু বলেনি। দিনাদের বাসায় পর্যন্ত জানাজানি হয়ে যায় ব্যাপারটা।
লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোলাগার কথাগুলো আমার কাছে ভালোই লাগছিল। কিন্তু হঠাৎ এভাবে সব ভেঙে যাবে আর দোষ এসে পড়বে আমার ঘাড়ে সেটা ভাবতেও পারিনি। আমি তাদের দুজনকেই বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কাজ হয়নি। একটা আফসোস থেকে গেল। এটা আমার লাইফের তিক্ত ঘটনার মধ্যে একটি। আরও কিছু ডিপলি যেতে পারতাম। সামনে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আজও দস্তগীর আর দিনা কথা বলে না। ইভেন পাশাপাশি বাসা হলেও দেখা হয়না। আমারও অনেকদিন হলো কথা হয়না। তাদের মাঝের সম্পর্কের ভাঙনের পিছনে আমি দায়ী এটা আমাকে এখনও পীড়া দেয়। তারা আমাকে এখনও ভুল বুঝে আছে।
আর কথা বাড়ালাম না। আজ এই পর্যন্তই থাক। আমার বাংলা ব্লগকে ধন্যবাদ এমন কিছু কথা শেয়ার করে দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। না হয় কথাগুলো আজীবন বুকের ভিতরে লুকিয়েই রাখতে হতো। সবার সু্স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
Link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আপনি খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার লেখনী অনেক ভালো ছিল। আসলে ভুল বুঝাবুঝিতে একটি ভালো সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য। 🥰
ভাইয়া আপনার স্কুল জিবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা পড়ে বেশ ভালো লাগলো ,দিনা এবং দস্তগীর এর প্রেমের মাঝে আপনি ভিলেন হয়ে গেলেন, ভাইয়া আপনি কি হিমুকে পছন্দ করতেন? আসলে দোষ না করে দোষী হলে খুব খারাপ লাগে। ধন্যবাদ ভাই ।
হিমুকে পছন্দ করিনাই, কিন্তু এটার পিছনেও একটা কাহিনী আছে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।