ছোটগল্পঃ- অদৃশ্য কেউ
06-03-2024
২৪ ফাল্গুন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
শীতের সময়। গ্রামের দিকে রাত নয়টা বাজতেই সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যায়। কুয়াশার মাঝে অন্ধকারে সবকিছু আরও অন্ধকার মনে হয়। মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। মিঠু অনেকদিন পর শহর ছেড়ে গ্রামে এসেছে। দীর্ঘ বছর পর বলতে গেলে গ্রামে এসেছে। গ্রামে এসেই পুরো অবাক হয়ে যায় মিঠু! আগের রূপ যেন নেই গ্রামের। অনেকটা শহরের মতো পরিবেশ হয়ে গিয়েছে। গ্রামের পাশেই ছোট একটি খাল। অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। মিঠু পকেট থেকে ফোনটা বের করে। ফোন অন করেই দেখতে পায় খালের পানিও অনেকটা শুকিয়ে গেছে। বাশেঁর ছোট সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় ওপারে। আর ওপারেই মিঠুদের বাড়ি। কিন্তু সাঁকো কোথাও দেখতে পাচ্ছে না মিঠু! মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই। ফোন দিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করবে সেটারও সুযোগ নেই।মিঠুর কেন যেন একটু ভয় ভয় লাগছে। এমন অন্ধকারে ওপারে যাবে কি করে।
অনেক বছর শহরে থাকায় ভূত-টূত এসব এখন বিশ্বাস করে না মিঠু। এসব বলতে কিছু নেই। ঠিক তখনই মিঠুর কানে কারো কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। স্পষ্ট মনে হচ্ছে কেউ কান্না করছে। রাতের অন্ধকারে কে কাদেঁ এভাবে! মেয়েলি কন্ঠের কান্নার শব্দ। মিঠু কিছুটা সাহস নিয়ে এগিয়ে যায়। মিঠু যতই সামনে আগাতে থাকে ততই যেন কান্নার আওয়াজ দূরে যেতে থাকে। ফোনের লাইটে দেখতে পায় খালের কিনারায় কেউ একজন বসে কাদঁছে! মিঠু সাহস নিয়ে কাছে যেতেই মেয়েটি যেন কোথায় হারিয়ে যায়! কান্না ভেসে আসার শব্দটা শোনা যাচ্ছে। মিঠুর কাছে মনে হচ্ছে কেউ যেন তার পিছু নিয়েছে। চারদিকের পরিবেশটা হিমশীতল লাগছে মিঠুর কাছে। মনে হচ্ছে কোনো ঘোরের মধ্যে আছে মিঠু।
খালের পাশ দিয়ে আবার সরু রাস্তা। এতো রাতে রাস্তায় রিকশা পাওয়া মুশকিল! কিন্তু মিঠু রাস্তায় যেতেই একজন ভদ্রলোককে দেখতে পায়। বয়স ষাটোর্ধ হবে। এতো রাতে রিকশা নিয়ে কি করে! কাছে যেতেই -
" বাজান কই যাবেন? "
" চাচা, নবাবপুর যাবো। আপনি যাবেন? "
" যামু, উঠেন গাড়িতে। "
" ভাড়া কতো দিতে হবে চাচা! "
" আপনি মনে হয় শহর থেকে আইছেন। "
" জ্বি চাচা! আপনি কিভাবে বুঝলেন? "
" নয়তো আপনি ভাড়া জানতেন! "
মিঠু চাচার কথা শুনেই রিকশায় উঠে বসে। গ্রামে রাস্তাটা করাতে অনেক সুবিধা হয়েছে। আগে তো কিছুই চলতো না।
" ঠিক কইছেন বাজান। আগে এ গ্রাম ভূতের বাড়ি ছিল। কেউই আসতো না এ রাস্তা দিয়ে! "
" চাচা, ভূত-টূত কিছু আছে নাকি। "
" গ্রামের মানুষ তাই কয়। গ্রামে নাকি কিছুদিন আগে এক ছেলের লাশ পাওয়া গেছে খালের এখানে। ভূতে গাড় মটকিয়ে রেখে দিছে! "
" বলেন কি চাচা! সত্যি কি তাহলে ভূত আছে! "
মিঠুর কেন জানি অনেক বেশি ভয় করছে। চাচার কথা শুনে আবার মনে হচ্ছে লোকটি বানিয়ে বলছে না তো! আরে দূত! শুধু এসব চিন্তা করছি কেন? গ্রামের মানুষ এখনও আধুনিক হয়নি। নয়তো এসব ভূতের ভয় কেউ করতো নাকি।
মিঠু পকেট থেকে সিগারেট বের করে। কিন্তু লাইটার নেই। মিঠু তখন চাচাকে জিজ্ঞেস করে লাইটার আছে কি না।
" বাজান, আপনি দেখছি ধূমপান করেন। এটা ভালা না শরীরের লাইগ্যা! ছাইড়া দেন সিগারেট খাওয়া! "
" কি যে বলেন চাচা! সিগারেট খেলে তো মানসিক শান্তি পায়। নয়তো ভালো থাকতে পারতাম না! "
ভালা থাকার আরও উপায় আছে, বাজান। এসব শরীরের লাইগ্যা ক্ষতি।
" ঠিক আছে চাচা। আপনার কথাটা ভেবে দেখবো। "
মিঠু যখনই পকেট থেকে লাইটার বের করতে যায়, তখনই চাচার ভয়েস যেন পরিবর্তন হয়ে যায়! আবারো সেই কান্নার আওয়াজ মিঠুর কানে ভেসে আসে। হঠাৎ করেই চাচা রাগের স্বরে বলে উঠে, " তোরে কইছি সিগারেট না খাওয়ার জন্য! "
মিঠুর দিকে তাকাতেই মিঠু যা দেখে সেটার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। টগবগে লাল চোখ, দাতঁগুলো বড় বড়। মনে হচ্ছে কোন রাক্ষস! মিঠু সাথে সাথে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পরে যায়।
সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখে তার পাশে সবাই বসে আছে। কিন্তু মিঠু বাড়িতে আসলো কি করে! তখনই তার রহমান চাচা বললো রাতে তোকে খালের রাস্তায় পরে থাকতে দেখলাম। তুই না বাড়িতে আসবি বলছিলি। খালের দিকে গিয়েছিলি কেন? রহমান চাচার এমন কথা শুনে মিঠুর মাথা ঘুরে গেল। তার কিছুই মনে পরছে না।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে এমন অদৃশ্য কিছু দেখলে ভয় লাগা স্বাভাবিক। যাইহোক আমার মনে হয় রিক্সাওয়ালায় চাচা হয়তো অদৃশ্য কিছু হতে পারে। তবে সকালে মিঠু বাড়িতে এলো তবে তার কোন কথা মনে নেই। যাইহোক অবশেষে মিঠু সবার কাছে পৌঁছাতে পেরেছে।
twitter share
ছোটবেলায় এমন ভূতের গল্প অনেক শুনতাম। রাতের বেলা খাল-বিলের পাশে নাকি এমনিতেই এসবের আনাগোনা থাকে অনেক। ভূতেরা তো আগুন ভয় পায়। তাইতো মিঠুর উপরে রিকশাওয়ালা অর্থাৎ ভূত এতটা রাগ করেছিল। এমন ভয়ংকর দৃশ্য দেখার পর তো যে কেউ অজ্ঞান হয়ে যাবে। আমি হলে তো ভয়ে মনে হয় স্ট্রোক করতাম। যাইহোক গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো ভাই। এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভূতের গল্প পড়তে অনেক ভালো লাগে৷ ভুতের যে মুভিগুলা হয় সেগুলো দেখার জন্য একসময় পাগল ছিলাম। তবে এখন তেমন একটা দেখা হয় না৷ আজকে আপনার কাছ থেকে এই ভূতের গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো৷ এখানে এই গল্পের মধ্যে মিঠুর উপরে ওই ভূত রাগ করেছিল, কারণ সে আগুনে ভয় পায় এবং আমি অনেক শুনেছি যে ভূত আগুন দেখলে যেন কোথায় পালিয়ে যায়৷ অনেক ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য৷