ছোটগল্পঃ- এক ফালি চাদঁ

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago

31-01-2024

১৮ মাঘ , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼


couple-3064048_1280.jpg

Link

কর্পোরেট একটা কোম্পানিতে ডাটা অপারেটর হিসেবে কাজ করে রুমেল! সারাদিন কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে কাজ করতে হয়। চোখের কোণে জল আসলেও কিছু করার নেই! চাকরিটা তাক করতেই হবে। ঘরে রাগচটা বউ। সারাদিন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান। বউয়ের ঘ্যানঘ্যান শুক্রবারেই বেশি শুনতে হয় রুমেলের। কারণ শুক্রবারে রুমেলের অফিস বন্ধ থাকে। এ সপ্তাহে বউয়ের যত আবদার সব বলতে থাকে। ঘরে ছোট মেয়েটিও রুমেলের কাছে আসতে চাইনা। গুটিগুটি পায়ে হাটেঁ। বাবার কাছে আসতেও কেউ ভয় পায়! ভয় পাবারই কথা সারাদিন অফিসের কাজ করে পরিবারকে আর সময় দেয়া হয় না। এদিকে যে রুমেলের অর্ধাঙ্গিনী শ্যামা পরিবারটাকে আগলে রেখেছে। মাঝে মাঝে নিজের কাছেও খুশি লাগে, আমার মতো একটা অগোছালো ছেলের সাথে কেউ অন্তত সংসার করছে।

অফিস শেষ করে বাজার করতেই পকেট যেন ফাকাঁ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে প্রতিনিয়ত দাম যেন বাড়ছেই। ১০ টাকার আলু কিনতে হয় ৮০ টাকা দিয়ে। রুমেল সবসময় বেশি বেশি কিনে ফেলে। যেটা কিনার কথা এক কেজি, সে কিনে দুই কেজি! এ নিয়ে শ্যামার সাথে ঝগড়া হয়। রুমেল কিছু বলতে চাই না। কারণ অফিস শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাজার করতেও ভালো লাগে। কয়েকদিনের বাজার একসাথে করে রাখে। কিন্তু এতো টাকার বাজার করার কি দরকার। শ্যামা রাগে গড়গড় করে বলতে থাকে,

  • হাত বেশি টাকা থাকলেই আপনি এমন করেন! এতো টাকার বাজার করার কি দরকার ছিল? শুধু শুধু টাকা নষ্ট।

রুমেল কিছু বলে না। বলার আগ্রহও নেই। বউয়ের কথা সে কানে নেয় না। তবে সে নিজের জন্যই বেশি বাজার করে। এখন যদি বউকে এটা বুঝাতে চাই তাহলে বউয়ের রাগ আরও বাড়বে! এ রাগ ভাঙাবে কে!

রোযার মাস! এ মাসেও অফিস করতে হয়। তবে সারাদিন নয়। বিকেল চারটে নাগাদ! অফিস শেষে বাসায় ফিরতেই রুমেল দেখতে পায় সব রেডি। ছোট মেয়ে তোয়া ফ্লোরের উপরে খেলা করছে। মেয়ের দিকে এগিয়ে না গিয়ে রুমেল কাধেঁর ব্যাগটা সোফায় রেখে দিল। সোফায় রেখে দিয়ে সোজা চলে যায় রুমে। ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পরে রুমেল। কখন যে সে ঘুমিয়ে গেল টেরই পেল না। ঘুমের মাঝেই সে তার মিষ্টি বউ শ্যামাকে দেখতে পাচ্ছে!

অফিস শেষ করে শ্যামা এক গ্লাস শরবত আগেই বানিয়ে দেয়। এতো ব্যস্ততার পরেও সে আমাকে ভীষণ যত্ন করে। এটাই তো অনেক। শ্যামাকে নীল শাড়িতে খুব ভালো লাগতো। বিয়ের প্রথম দিন শ্যামকে নীল শাড়িতেই দেখেছিল রুমেল! তার উড়ুউড়ু চুল সবকিছুই ভালো লেগেছিল। এ যেন আকাশের এক ফালি চাদঁ!

কিছুক্ষণ পরেই গছগছিয়ে কে যেন পা টানতে থাকে। পায়ে মোজা পরেই শুয়ে পরে রুমেল।

" পায়ের রুমাল খোলারও সময় নেই। সব কাজ আমাকেই করতে হয়। আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে লাথি মেরে সংসার থেকে চলে যেত! "

এই বলে অন্য রুমে চলে যায় শ্যামা। একটু পর আবার আসে।

" এই উঠুন! ইফতারির সময় হয়ে গিয়েছে। আযান দিয়ে দিবে এখনি! "

শ্যামার কথা শুনে হুড়মুড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো রুমেল। শ্যামা হাতে শরবতের গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর দু মিনিট পরেই আযান দিবে। এই নিন আপনার শরবত।

মেয়েদের রাগ বোধহয় বেশিক্ষণ থাকে না। শ্যামা রুমেলের সাথে রাগ করলেও কখনো রুমেলের আগে খাইনি কিছু। সবসময় রুমেলকে খাইয়ে তারপর শ্যামা খেয়েছে। মাঝে ছোট মেয়েটা ভীষণ অভিমান করে বাবার সাথে। রাগের স্বরে কিছু বলাও যায়না মেয়েটাকে। তবে মেয়েদের রাগ বেশিক্ষণ থাকে না। কিছুক্ষণ পরই খেতে চাইবে।

রাতে শোবার সময় শ্যামা ফেইসবুক থেকে দেখায় রুমেলকে। কার বর বউকে কাজে সাহায্য করে, পরিবারকে সময় দেয়, কোথায় ঘুরতে নিয়ে যায় । রুমেল নিরুপায় হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিছু করার থাকে না রুমেলের! অফিস থেকে ফিরে যে কাজ করার শক্তিতে কুলোয় না এটাই বা কে বুঝাবে শ্যামকে? তার চেয়ে ভালো হজম করা।

রোযার মাসে দিন যত যেতে থাকে চাদেঁর আকারও যেন বাড়তে থাকে। পূর্ণিমার আলোতে চারদিক জ্বলজ্বল করে। আজ রুমেলের অফিস নেই। রুমেল বেলকনিতে গিয়ে বসে। ঠিক কিছুক্ষণ পর দুই কাপ চা নিয়ে আসে শ্যামা। ছোট মেয়েটা ঘুমিয়ে গিয়েছে। এক হাত এগিয়ে রুমেলকে এক কাপ চা দেয় শ্যামা।
জানালার গ্রিল ধরে শ্যমা বাহিরের চাদঁ দেখছে।

" আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দেয় তাই না! রাগের মাথায় কতো কিছু বলে ফেলি। আপনি আমার কথা হজম করেন। আমার আরও ভীষণ রাগ হয় আপনার উপর। আমি কিন্তু মোটেও এমন না। আপনার বেলায়ই আমার যত রাগ অভিমান! "

হুম একটু তো কষ্ট হয়। কিন্তু কষ্ট নিয়েই তো জীবন। তুমি আমাকে, আমাদের ফ্যামিলিকে আগলে রেখেছো। এটাই বা কজন করে।

" একটু বেশি বলে ফেললেন না! সব মেয়েরাই বিয়ে পরে স্বামীকে আগলে রাখার চেষ্টা করে! "

হুম হতে পারে। তবে আমার বউটা ভীষণ জেদি। আমি তাকে অনেক ভালোবাসি।

শ্যামা কেঁদে দেয়। গড়গড়িয়ে চোখ থেকে জল পরতে থাকে। রুমেল শ্যামাকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর আকাশের চাদেঁর সাথে বুকের ভিতর এক ফালি চাদঁ এসেছে। ভীষণ ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে রুমেলের।

রুমেল শ্যামার কাদাঁ থামায়। শ্যামা রুমেলকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে। আসলে জীবনে কাদাঁর মতো বিশ্বস্ত একটা কাধঁ থাকলেই জীবন সুন্দর ।


10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG-20211205-WA0092.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 6 months ago 

আপনার লেখা ছোট গল্পটা আমার কাছে সত্যি খুব ভালো লেগেছে। রুমেল সামলাচ্ছে অফিস, আর শ্যামা সামলাচ্ছে সংসার, দুটোই কিন্তু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শ্যামা রুমেল এর উপর রাগ করলেও, সে নিজের সংসার এবং স্বামী দুটোকে লাগলে রাখার চেষ্টা করেছে। যাইহোক আমার কাছে কিন্তু গল্পের শেষটা সত্যি অনেক বেশি ভালো লেগেছে। এরকম গল্প গুলো পড়তে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে। সম্পূর্ণটা অনেক সুন্দর করে তুলে ধরেছেন সবার মাঝে।

 6 months ago 

জি আপু, আপনি একদম ঠিক ধরেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু চমৎকার একটি মন্তব্য করে অনুপ্রাণিত করার জন্য ☘️🌼

 6 months ago 

হা হা হা 😄
প্রথমত এটা একটা গল্প, তবে হ্যা এর অর্ধেকটা বাস্তবতার সাথে মিলে যায়। আর অর্ধেক কখনও সেক্রিফাইস করে না। যাইহোক তোমার গল্প লেখার হাত বেশ ভালো হচ্ছে দিন দিন। এগিয়ে যাও এই কামনা করছি, আর বানানের দিকে খেয়াল রাখবে।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

জি ভাইয়া, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য। আপনার উপদেশ অবশ্যই মাথায় রাখবো 😍🌼

 6 months ago 

রুমেল শ্যামাকে ইমোশনাল কিছু কথা বলতে শ্যামা কেঁদে ফেলেছিল আসলে শ্যামা রুমেলকে অনেকটাই বেশি ভালোবাসে। গল্পটা পড়ে বেশ মজা লাগলো ভাই চমৎকার গল্পটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

জি ভাই, আপনার মজা লেগেছে জেনে খুশি হলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 🌼

 6 months ago 

একজন অফিসে থাকতো আরেকজন বাড়িতে। আর দুজনে দুটো সামলাতো, যার কারণে রুমেল কখনো শ্যামাকে সময় দিতেই পারত না। মেয়েদের রাগ আসলেই বেশিক্ষণ থাকে না। তাইতো সবকিছুর পরেও শ্যামা রুমেল এর কাছেই আসতো। এবং কি তার সাথে ভালোভাবেই কথা বলতো। দিনশেষে তারা দুইজন আবারো এক হয়ে গিয়েছিল দেখে ভালো লেগেছে। শ্যামা যখন কান্না করেছিল তখন রুমের তার কান্না থামায়। তবে একটা ছেলের উচিত শত ব্যস্ততার মাঝে হলেও ফ্যামিলি কে একটু সময় দেওয়া। যাই হোক আমার কাছে ভালোই লেগেছে কিন্তু পুরো গল্পটা।

 6 months ago 

আপনার আজকের গল্পটা কিন্তু বর্তমান সমাজের একটা দর্পণ বলা যেতে পারে। কারণ নিজের পরিবারকে সময় দেওয়া তাও কাজের চাপের মধ্যে, এটা সচরাচর সব জায়গাতেই দেখা যায়। তাছাড়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং নিজের বউয়ের বেশি কথা শোনা, এগুলো কমন একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে রুমেল যে তার বউ শ্যামা এর সাথে খারাপ ব্যবহার না করে সবকিছু ম্যানেজ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছে সব সময়, এটাই অনেক বড় ব্যাপার। যদিও পরবর্তীতে শ্যামা সবকিছু বুঝতে পারে এবং স্বামীর প্রতি দয়া দেখায়। গল্পের কনসেপ্টটা খুব দুর্দান্ত ছিল ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60589.35
ETH 2628.62
USDT 1.00
SBD 2.53