১ম পর্বঃ ট্রেন জার্নি

01-10-2022

১৬ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন 🌼 । আমি আপনাদের দোয়া ভালো আছি। তিনদিন হলো ঢাকায় আসলাম। নরমালি ফেনী থেকে যাতায়াতের সুবিধা প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ট্রেন। বাসে আমার জার্নি করতে মোটেও ভালো লাগে না। আর এতোদূর বাস জার্নি করে আসলে একদম শেষ! যদিও বাসে জার্নি করলে অনেকের বমি পর্যন্ত এসে পড়ে। অবশ্য আমার এমন হয়নি। তবে প্রচন্ড মাথা ব্যথা করে। সেজন্য ট্রেন দিয়েই যাতায়াত সুবিধা। আমাদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নিয়ে খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। বোর্ডের রুটিন অনুযায়ী গেলে এ মাসের ৩০ তারিখ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বরাবরই দেখে আসছি রুটিন হয় কিন্তু পরীক্ষা পরে রুটিন অনুযায়ী হয়না। এজন্য ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করা নিয়েও ঝামেলায় ছিলাম। ট্রেনের টিকেট তিন বা চারদিন আগে আবার না কাটলে পাওয়া যায় না। অনলাইনে মাঝে মাঝে তো অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়।

IMG20220924130957.jpg

এক্সাম নিয়ে আমি পরে যায় বিপদে। আজ টিকেট কাটবো নাকি কাল এটা যেন পরীক্ষা শেষ হওয়ার উপর ডিপেন্ড করছে। আর মেসে আমার সব বন্ধুরা তো পরীক্ষা শেষ হলেই সোজা বাড়িতে। নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস দিয়ে গেলে টিকেটও লাগে না। যেকোনো সময় যাওয়া যায়। সব জল্পনা কল্পনার পরে আমাদের পরীক্ষা শেষ হলো এ মাসের ২৫ তারিখে। এর আগেরদিন দুটি পরীক্ষা একসাথে হয়ে যাওয়ায় কিছুটা নিশ্চিত হলাম। তাই ২৪ তারিখ টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। অনলাইনে অনেক খোজাঁ খুঁজির পরেও কোনো টিকেট পেলাম না। তবে পেয়েছিলাম ২৮ তারিখের। কিন্তু মেসে আমি একা থাকবো! বাকিরা সবাই চলে যাবে। এজন্য খুব টেনশনে পরে গেলাম। অনলাইনে ২৭ তারিখের কোনো টিকেট পেলাম না। যা পেলাম সেটা হচ্ছে এসি। যা আমার পক্ষে সম্ভব না এতো টাকা দিয়ে যাওয়ার। কিন্তু দেখলাম কাউন্টারে এস চেয়ারের ১০টি টিকেট এখনও আছে। সেটা আবার মহানগর এক্সপ্রেস এর। যা ২:০৮ মিনিটে ফেনী আসবে আর ঢাকা পৌঁছাবে সন্ধ্যায়। এ যেন আরেক প্যাঁচে পরে গেলাম। ঢাকা শহর রাতে এমনিতেই ভয় করে। বের হয়নি তেমন। আপুও না করছিল কিন্তু কি আর করার। মেসে একলাও যে থাকা যাবে না। চলে গেলাম দুপুরে ফেনী রেলওয়ে স্টেশনে। কাউন্টার থেকে ২৭ তারিখের একটি টিকেট সংগ্রহ করে নিলাম। মূল্য হিসেবে রেখেছে ২৭০ টাকা।

IMG20220924130942.jpg

টিকেট সংগ্রহ করে অবশ্য বাসায় চলে গেলাম। মেসে দুদিন আরও থাকতে হবে। পরীক্ষা শেষ করে সবাই ব্যাগ ঘুছিয়ে রেখেছে। বিকালে চলে যাবে। একদিন থাকতে হলো আমাকে মেসে। পরদিন দুপুরে ট্রেন। ব্যাগ সব ঘুছিয়ে রেখেছিলাম। রুমে একা। কোনোভাবেই যেন রুমের ভিতরে মনকে স্থির করতে পারতেছিলাম না। কখন যে দুইটা বাজবে সে চিন্তায় করেছি। রুমের সবকিছু ঘুছিয়ে দুপুর ১ টা বেজে গেল। আগেই স্টেশনে যেতে হবে। মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে নিলাম। একা একা যাত্রা দিবো। আর ফেনীর মায়া প্রায় ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। নামাজ শেষ করে বাসার সামনে থেকে একটি সিনএনজি নিয়ে নিলাম। ব্যাগের ওজন অনেক হয়ে গিয়েছে এগুলো নিয়ে যাওয়াও টাফ। সিনএনজি করে সরাসরি রেলগেট চলে গেলাম। রেলগেট থেকে স্টেশন খুব কাছেই। তবে এতো ভারী ব্যাগ বহন করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। রেললাইনের উপর দিয়ে অনেক কষ্টে ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছিলাম। ঠিক কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম একটি ছোট ছেলে রেললাইনের পাশে বসে আছে। বয়স আট কি নয় হবে। পড়নে ছেড়া জামা। আমি বললাম ব্যাগ নিয়ে দিতে পারবে স্টেশন পর্যন্ত? ছেলেটা এক কথায় রাজি হয়ে গেল। নিয়ে যেতে পারবে ব্যাগ। শরীরে যেন শক্তি নেই তবে মনের জোরে মাথায় ব্যাগ নিয়েছে। আমি অবশ্য ধরে রেখেছিলাম ব্যাগ। স্টেশনের কাছে গিয়ে ব্যাগ মাথা থেকে নামিয়ে নিলাম। ছেলেটাকে বকশিশ হিসেবে বিশ টাকা দিলাম। খুশি হয়েছিল ছেলেটা। সকাল থেকে মনে হয় কিছু খায়নি।

IMG20220924131150.jpg

এদিকে ঘড়ির কাটাঁতে ১টা বেজে ৩০ মিনিট। আর কিছুক্ষণ পর ট্রেন চলে আসবে। প্রচন্ড গরমও ছিল বাহিরে। বেঞ্চে বসে কিছুক্ষণ ফোন ব্যবহার করতে থাকলাম। স্টিমিটে তখন বসে বসে কিছু কমেন্ট করে ফেললাম। সময় কোনদিক দিয়ে চলে গেল টেরও পায়নি। ২ টা বেজে গেল। ট্রেন আসার কথা ২ টা বেজে ৮ মিনিটে। কিন্তু তার আগেই ট্রেন চলে এলো। এ ব্যাগ ট্রেন তোলাও কঠিন মনে হচ্ছিল। জ বগীতে ছিল আমার সিট। একদম শেষের দিকে থাকে এ বগীটা। তখন সেই ছেলেটি দেখলাম আসছে। আমি বললাম আমাকে আরেকটু হেল্প করো। দুই হাতে দুজন ব্যাগ ধরে নিয়ে গেলাম জ বগীর কাছে। মানুষের চাপাচাপিতে ভিতরে প্রবেশ করাই যাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ বাহিরেই দাড়িয়ে ছিলাম। মানুষজন নামলে তারপর ভিতরে প্রবেশ করবো। ছেলেটাকে বললাম তুমি এবার চলে যাও। আমি ভিতরে নিতে পারবো। ছেলেটির হয়তো আরও কিছু টাকা লাগতো। কিন্তু আমার কাছে ভাংতি তেমন টাকা ছিল না। ব্যাগ নিয়ে চলে গেলাম ভিতরে। জ বগীর ২৬ নাম্বার ছিল আমার সিট। সিট দেখি জানালার পাশে না! টিকেট কাটার সময় বলতে মনে নেই যে জানালার পাশে সিট দেয়ার জন্য। কিন্তু একজন ভদ্রলোক দেখি জানালার পাশে সিটে বসে আছে। আমি অবশ্য আর বললাম না। পাশের সিটেই বসে গেলাম।

IMG20220925124047.jpg

ব্যাগ উপরে রেখে দিলাম। দিয়ে বসে পড়লাম সিটে। কিছু সিট ফাকাঁ ছিল দেখলাম। বাহিরেও প্রচন্ড রোদ ছিল। মনে মনে ভাবতেছিলাম জানালার পাশে না বসে ভালোই হলো তাহলে। রোদের তীব্রতা থেকে বাচাঁ গেল। উপরে যে ফ্যান থাকে সেটা দিয়ে শরীর ঠান্ডা মোটামুটি হয়ে যাবে। ঠিক কিছুক্ষণ পরই চাচার সাথে কথোপকথন শুরু। চাচার বাড়ি কিশোরগঞ্জ এর হাওড়ে। অর্থাৎ ইটনা থানায়। কথার ভাষা শুনেই বুঝে গেছিলাম আমাদের আশে পাশের এলাকার মানুষ বোধহয় হবে। কিশোরগঞ্জ আর ময়মনসিংহ এর ভাষার মধ্যে অনেকটা মিল আছে আসলে। বুঝায় যায় মোটামুটি ভাষা। তবে অন্য এলাকার মানুষজন আবার আমাদের ভাষা তেমন বুঝে না আর আমরাও তেমন বুঝি না। তবে আঞ্চলিকতা ভালোই, এটা আমাদের গর্ব। এই ভাষার জন্যই জীবন দিতে হয়েছে। আমাদের উচিত আঞ্চলিক ভাষাকে ব্যঙ্গ না করে মায়ের ভাষার প্রাণ খুলে কথা বলার চেষ্টা করা। এটাই যে আমাদের গর্ব। যায়হোক, যেকথা বলতেছিলাম। চাচার নাম রহমত আলী। পরিবারে তিন ছেলে এক মেয়ে। ছোট্র এই পরিবারের দাদিত্ব চাচাকেই সামলাতে হয়। ছেলে তিনটি পড়াশোনা করছে। একজন পড়াশোনা শেষের দিকে, আরেকজন ক্লাস অষ্টম শ্রেণীতে ও আরেকজন ক্লাস ফাইভে পড়াশোনা করছে।

DeviceOppo A12
Photographer@haideremtiaz
Locationw3w
Date27-09-2022

চলবে....



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 2 years ago 

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

আমার বাস জার্নির থেকে ট্রেন জার্নিই ভাল লাগে।একটু হাত পা ছেড়ে জার্নি করা যায়।আবার হাতপা লেগে গেলে হাটাহাটি করা যায় এক বগি থেকে অন্য বগিতে।আবার ট্রেনের টিকিট পাওয়াও একটা ঝামেলা।সিন্ডিকেট করে সব আগেই গায়েব করে দেয়।অনেক সুন্দর লাগল আপনার অভিজ্ঞতা।

 2 years ago 

ট্রেন জার্নিতে আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে। এক বগী থেকে আরেক বগীতে হাটাঁও যায়। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া 😍

 2 years ago 

আপনার ট্রেন যাত্রা পড়লাম, যদিও টিকিট নিয়ে বিড়ম্বনা ছিল সেটা কেটে গেছে। কোন একটা জায়গায় দীর্ঘদিন থেকে চলে যাওয়াটা আসলেই কষ্টকর ।ব্যাগটা ভারি হওয়ায় ছেলেটির ২ টাকা রোজগার হয়েছে, ছেলেটার আশা ছিল দ্বিতীয়বার ও কিছু টাকা সে পাবে কিন্তু সেটা হয়নি। নিজের এলাকার লোক পাশে থাকলে সবসময়ই ভালো লাগে। ধন্যবাদ ভাই এমন একটি ভ্রমন আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

জি ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভ্রমন কাহিনী পড়ার জন্য। সামনে আরও ইন্টারেস্টিং কিছু আছে।

 2 years ago 

রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা না হলে অনেক সমস্যা তাছাড়া আগে থেকে টিকিট কেটে রাখাটাও ঝামেলা,আমাদের এখানে অবশ্য বাংলার মধ্যে সাথে সাথেই টিকিট কেটে ভ্রমন করা যায়।আপনি ছেলেটাকে ব্যাগ বয়ে নিয়ে যাওয়ার বদলে কুঁড়ি টাকা বকশিশ দিয়ে ভালো করেছেন, ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

জি দিদি আমাদের এখানেও টিকেট কেটে যাওয়া যায় যেকোন সময়, তবে মাঝে মাঝে পাওয়া যায় না। আর দূরের পথ হলে তো পাওয়ায় যায় না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দিদি।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56588.25
ETH 2399.94
USDT 1.00
SBD 2.32