ছোটগল্পঃ- ফাইজু
08-11-2023
২৩ কার্তিক , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কিছুটা মন মরা হয়ে বসে আছে রাহেলা বেগম! একটা স্বপ্ন ছিল তার বড় মেয়েকে নিয়ে! মেয়েটাকে ডাক্তার বানাবে, শহরের নামকরা ডাক্তার হবে সে। পরিবারের বড় মেয়ে হওয়ায় পরিবারের দায়িত্বটাও নিবে। দুই ছেলে আর এক মেয়ে রাহেলা বেগমের সংসার। রাহেলা বেগম ভূঁইয়া পরিবারে আসার পর থেকেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। দুলনের সাথে সাত বছরের সম্পর্ক ছিল তারপর বিয়ে! কিন্তু বিয়ের পরের জীবনটা এতোটা বিভীষিকাময় হবে রাহেলা বেগম ভাবতেও পারেনি। উঠতে বসতে স্বামীর কথা শুনতে হয়। বড় মেয়ে ফাইজা এবার এস এস সি পরীক্ষা দিবে। রাহেলা বেগমের স্বামীর সোজা কথা! এস এস সি তে এ+ না পেলে তাকে তালাক দেয়া হবে। স্বামী ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে সবসময়। ছেলেমেয়েদের খোজঁখবরও তেমন নিতে পারে না
কিন্তু পরিবারের চাহিদা ঠিকই মিটিয়েছে। মেয়ের পড়াশোনার যত টাকা সব দিয়েছে। কিন্তু তার একটা চাওয়া মেয়ে যেন এ+ পায়। বড় মেয়ে হওয়ায় মা আদরও করে বেশি। কিন্তু অতিমাত্রায় আদরই যে কাল হয়ে দাঁড়াবে কে জানতো! উঠতি বয়সে মনে দোলা দেয় প্রেমের! নতুন প্রেমে পরলে মানুষ যা করে। ফাইজু মাঝে মাঝেই শাড়ি পরে, ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়! ঘুরতে বের হয় মাঝে মাঝে! রাহেলা বেগম ঠিকই বুঝতে পেরে যায়! তার মেয়ে যে প্রেমে পরেছে! কিন্তু রাহেলা বেগম চাইনা তার মেয়ে ভুল করুক। রিলেশন করে বিয়ে করার পর আজ রাহেলা বেগমের এই দূর্দশা!
ফাইজু যে প্রাইভেটে পরে ঠিক একই প্রাইভেটে পড়াশোনা করে আবিদ। প্রাইভেট ছুটির শেষে ফাইজুর পিছন পিছন এসে এগিয়ে দেয় আবিদ। চোখাচোখি হয়েছে কয়েকবার! দুজনেরই মনে তখন প্রেমের ঘন্টা বেজে গেছে। একদিন কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারে না। আবিদের সাহস হয়নি ফাইজুর সামনে গিয়ে কথা বলার! খাতার টুকরো কাগজে লিখে লিখে ভাবের আদানপ্রদান হয় দুজনের! আবিদের আবদার একদিন যেন কপালে ছো টিপ আর কানে দোল পরে আসে! ঠিক পরদিনই ফাইজু সেভাবেই সেজে আসে। রাহেলা বেগম কিছুটা অবাক হয়! মেয়ে কোনদিন কপালে টিপ দেয়নি হঠাৎ করে সেজে যাচ্ছে!
ফাইজু প্রাইভেটে যাওয়ার পরে তার মা রাহেলা বেগমও পিছন পিছন যায়। একটু দূরে ফাইজা যেতেই দেখতে পায় আবিদ দাঁড়িয়ে আছে! শ্যামলা রঙের একজন ছেলে, কাধেঁ ব্যাগ! ফাইজার সাথে সমান তালে হেটেঁ যাচ্ছে! আবিদ টুকরো কাগজে কিছু কথা লিখে এনেছিল সেটি ফাইজুকে দেয়! ফাইজু হাত নিয়েই সোজা হাটঁতে থাকে! ঠিক তার পিছনে রাহেলা বেগম সবকিছু দেখতে পায়! রাহেলা বেগম ডায়াবেটিস রোগী! এজন্য বেশি টেনশন করতে পারে না! মেয়ের অবস্থা দেখে রাহেলা বেগমের টেনশন যেন বেড়ে যায়।
রাহেলা বেগম ছেলেটির ব্যাপারে খোজঁ নিয়ে জানতে পারে ছেলেটির পরিবার তেমন ভালো নই! এ ছেলের সাথে কখনোই যাবে না তাদের পরিবার! প্রাইভেট শেষ করে আসতেই মায়ের সোজা প্রশ্ন! ' ছেলেটি কে? '
ফাইজা চুপ হয়ে থাকে। কিন্তু রাহেলা বেগম রাগে আগুন! তার জন্য এতোকিছু সেই সব স্বপ্ন ধ্বংস করে দিচ্ছে! 'তোর বাবা জানতে পারলে কি করবে তুই জানিস! ' ফাইজা তার মাকে অনুরোধ করে বলে তার বাবাকে যেন না বলে! আবিদের সাথে কথা বলবে না আর! প্রথম ভালোলাগা, প্রথম প্রেম কি ভুলা যায়! ফাইজা শুধু আবিদের কথায় ভাবছে। তার সবটা ঘিরেই আবিদ!
কিন্তু ফাইজা ভুলে যায়! তার পরিবারের শত স্বপ্ন তাকে নিয়ে। ভুলে যায় মায়ের কথা, ভুলে যায় বাবার কথা! ফাইজা আবিদকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার চিন্তা করে! আবিদও ফাইজাকে হারাতে চাইনা! দুজনই অজানার উদ্দেশ্য পালিয়ে যায়। বিয়ে করে ফেলে দুজন! এদিকে রাহেলা বেগমের সংসারের ইতি শেষ! দুলন ভূঁইয়া রাহেলা বেগমকে তালাক দেয়!
ঠিক দশ বছর পর! কোলে ফুটফুটে একটা ছোট্র শিশু! ঠিক তার মায়ের মতো হয়েছে! ফাইজু তার মেয়েকে নিয়ে মায়ের কাছে আসে! জীবনের একটা পর্যায়ে এসে বুঝতে পেরেছিল সে অনেক ভুল করেছে। অনেক অন্যায় করে ফেলেছে। আজ যেমন রাহেলা বেগমের মুখে হাসি নেই ঠিক তেমনি ফাইজুর মুখেও হাসি নেই! স্বামীর নির্যাতনে তার প্রতিটা দিন কাটে কষ্টে! শুধুমাত্র মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে আজও স্বপ্ন দেখে ফাইজু! যেমন স্বপ্ন একসময় তার মা দেখেছিল তাকে নিয়ে।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
রাহেলা বেগমের অনেক বেশি স্বপ্ন ছিল তার বড় মেয়েকে নিয়ে। কিন্তু মেয়েটা নিজের মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। প্রেমে পড়ে যাওয়ার কারণে আবেগের বসে সবকিছু করে ফেলেছিল। আর পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটাও নিয়েছিল, যা ছিল তার সব থেকে ভুল সিদ্ধান্ত। অনেক বছর পরে ফাইজা বুঝতে পেরেছিল তার ভুলটা। তবে তখন আর কিছুই করার ছিল না। তখন কারো মুখে হাসি ছিল না। অনেক সুন্দর করে গল্পটা লিখেছেন দেখে ভালো লাগলো
শুরুতেই যদি বুঝতে পারতো তাহলে এতো দূর পর্যন্ত গড়াত না ব্যাপারটা! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া ☘️
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
twitter share link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
ফাইজু গল্পটা অনেক সুন্দরভাবে লিখেছেন আপনি, যেটা পড়তে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। মেয়েটা নিজের হাতে নিজের ভবিষ্যৎ একেবারে নষ্ট করে ফেলেছে। যদিও তার মা তাকে অনেক বার এটা বারণ করেছিল। সুন্দর করে সম্পূর্ণটা লিখে ভাগ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
জি আপু, মায়ের কথা শুনলে হয়তো ব্যাপারটা অন্যরকম হতো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ☘️
পুরো গল্পটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। আসলে এই প্রথম প্রেম প্রথম অনুভূতি মানুষের জীবন অনেক কিছু খারাপ বয়ে আনে। এসব কিছু যখন মাথা থেকে ফেলে দেওয়া যায় তাহলে খুব সুন্দর ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। এই ভুলের কারণ সারা জীবন ভোগ করে মরাতে হয়। একেবারে না মরে এভাবে ভোগ করে করে মেরে ফেলা হয়। রাহেলা বেগমের মত মেয়েটাও সেম ভুল করল। শেষমেষ মায়ের সংসারটা ভেঙে গেল। অসাধারণ একটি গল্প শেয়ার করলেন বেশ ভালই লাগলো পড়ে।
আসলেই আপু প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোলাগা আমাদের মনে একটা স্মৃতি হিসেবেই রয়ে যায়। সেটা আবার মাঝে মাঝে আমাদের জীবনের অন্তরায় হয়ে যায়। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে