শৈশবের কুরবানি ঈদ!

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

16-06-2024

০২ আষাঢ় , ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼


eid-8683303_1280.webp

copyright free image from pixabay

প্রথমেই সবাইকে জানাচ্ছি পবিত্র ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা। ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক সবার হৃদয় সে আশায় ব্যক্ত করছি। পবিত্র ঈদ উল আযহা আমাদের আত্মত্যাগ করতে শেখায়। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমরা পশু কুরবানি করে থাকি। আর সেই কুরবানি ঈদকে কেন্দ্রকে শৈশবের কিছু মধুর স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল!!

তখন ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়ি! পড়াশোনার প্রেসার তেমন একটা ছিল না। আর পড়াশোনার জন্য বাহিরে থাকার তো প্রশ্নই নেই! রোযা ঈদের পর কুরবানি ঈদে আমাদের প্রচুর মজা হতো। বিশেষ করে যখন গরু কেনা হতো! তখন আমাদের বাপ চাচারা ছয়জন কি সাতজন হবে! তারা সবাই মিলে গরুর হাটেঁ গিয়ে গরু কিনতো! আর গরুর হাটেঁ যাওয়ার সময় বড়দের সাথে আমরাও যেতাম! বাজারে গিয়ে দেখতাম বিশাল বিশাল সাইজের গরু! বড় বড় গরু দেখে খুবই ভালো লাগতো। সারা বাজার ঘুরে দেখতাম কতো রকমের গরু উঠেছে! গরু কেনার সময় অনেক মানুষের ভীড় থাকতো! গরুদের যাতে সমস্যা না হয় এজন্য ফ্যানের ব্যবস্থা করা হতো! আমি আবার গরুর শরীর ধরে আদর করে দিতাম। তেমন ভয় পেতাম না বিশাল বিশাল সব গরু দেখে!

তো কুরবানির গরু কেনা হয়েছিল আমাদের পাশেই জামতলা বাজার থেকে! আমাদের বাপ চাচারা কয়েকজন মিলে দরদাম করে গরু কিনতো! গরু কেনার পর সেটা আমাদের বাড়িতেই রাখা হতো! কারণ আমাদের বাড়ি বড় ও একটা গোয়ালঘরও ছিল! তো ঈদের তিনদিন কি চারদিন আগেই গরু কেনা হয়ে যেত! গরু যখন আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতো তখন আমার মতো সমবয়সী সবাই মিলে অনেক আনন্দ করতাম। গরুকে খড়, ঘাস খাওয়ার ব্যবস্থা আমরাই করতাম। বাড়ির বড়রা শুধু গরুকে গোসল করাতো! তে একদিন হলো কি আমরা কয়েকজন পন্ডিত মিলে সাহস করে ভাবলাম যে আজ গরুকে আমরা গোসল করাবো! সম্ভবত ঈদের দুদিন আগের ঘটনা। গোয়াল ঘর থেকে ভালোই ভালোই গরুকে বের করে আমাদের বাড়ির উঠোনে জলপাই গাছটার নিচে এসেছিলাম। পাশেই ছিল আমাদের পুকুর! গরুকে গোসল করাতে হলে গরুর শরীর খড় দিয়ে মেজে দিতে হয়। নয়তো ময়লা থেকেই থাকে!

আমার সমবয়সী চাচাতো ভাইকে বললাম পুকুর থেকে পানি এনে দিতে আর আমি গরুর শরীর খড় দিয়ে মেজে দেয়! কয়েক মগ পানি ঢালার পর যেইনা গরুকে মাজতে গেলাম ওমনি আমাকে দিলে শিং দিয়ে এক গুতা! সোজা মাটিতে পরে গেলাম। তারপর আমার সে কি কান্না, হাহা! এখনও ভাবলে হাসি পায়! গরুর কাছ থেকে চলে আসার পর লাফালাফি শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে রশি খুলেই দেয় এক দৌড়!! আমরা তো ভয়ে একদম শেষ! তখন বাড়ির এক কাকাকে গিয়ে বললাম গরু ছুটে পালিয়েছে। আর তখন উনি গরুকে ধরে নিয়ে আসে! তারপর থেকে গরুর ধারে কাছেও তেমন যেতাম না। ঈদের আগের রাতে গরুকে ভরপেট খাওয়ানো হতো। আর সকালে মাঠে যাওয়ার আগে ভালো করে গোসল করানো হতো!

সবচেয়ে খারাপ লাগতো যখন গরুকে জবাই করা হতো! আমি দেখার আগেই চলে যেতাম। জবাই শেষ হলো তখন আবার ফিরে আসতাম। শৈশবে গরুকে নিয়ে অন্যরকম একটা রোমাঞ্চ কাজ করতো! আর ঈদের দিনে সারা পাড়া ঘুরে বেড়াতাম। কোথায় কোথায় গরু জবাই হয়! তবে ঈদের দিন বিকালে বেশি মজা হতো। পরিবারের সবাই মিলে আমরা ঘুরতে যেতাম। বেশিরভাগ সময় নানু বাড়ি যাওয়া হতো। নানু বাড়িতে সবাই আসতো। মামাতো ভাই ও বোনেরা সবাই থাকতো। অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করতো তখন! শৈশবের সেই ঈদের সময়টাকে এখন বড্ড মিস করি ।



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG-20211205-WA0092.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 months ago 

আপনি শৈশবকালের ঈদের আনন্দ ও অনুভূতি আমাদের মাঝে ব্যক্ত করেছেন। আপনার এই সুন্দর পোস্ট করতে দেখে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আপনার এই গল্প করতে গিয়ে আমি ও আমার অতীতের অনেক সুন্দর মুহূর্ত মনে করতে পারলাম। তবে আগের দিনের চেয়ে এখন অনেক পার্থক্য চলে এসেছে। মানুষের অতীতের দিনগুলো একের পর এক মনে পরল আপনার গল্প পড়ে।

 4 months ago 

সত্যি ভাইয়া ছোটবেলার সেই ঈদের আনন্দের স্মৃতিগুলো এখনো মনে পড়ে। কুরবানী ঈদে সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে গোসল করে সবাই প্রস্তুত হয়ে যেতাম। আর বাড়ির বড়দেরকে দেখতাম কোরবানির পশুকে ভালোভাবে গোসল করা তো। আপনার পোস্ট পড়ে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল ভাইয়া। দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 4 months ago 

ঈদ মোবারক ভাইয়া। আপনি আজ ঈদকে নিয়ে শৈশবের স্মৃতিচারণ করলেন।সত্যি ছেলেবেলার স্মৃতি গুলো মধুর।আর ঈদের আনন্দ তো আরো বেশী মধুর।আপনার ছেলেবেলার কুরবানি নিয়ে গরুর ঘটনাটি শুনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ জানাই আপনাকে অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62036.41
ETH 2418.43
USDT 1.00
SBD 2.61