ছোটগল্পঃ- মৃতদেহ
28-02-2024
১৬ ফাগুন , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
নুসরাত আপুর সাথে পরিচয় হয় অফিসের সিড়িতে। মোটাসোটা দেহ! দেখতে মাশাআল্লাহ। প্রথম যেদিন জয়েন করেছিল অয়ন অফিসে সেদিনই নুসরাত আপুর সাথে দেখা। নুসরাত আপু সিনিয়র ম্যানেজার কোম্পানির। অয়ন মাস্টার্স শেষ করে জুনিয়র ম্যানেজার হিসেবে জয়েন করেছে অফিসে। প্রথম দিনেই নুসরাত আপু রাগ দেখে অবাক হয়ে যায়। অফিসে কেউ লেইট করে আসলে তাকে কড়াঘন্টায় জবাবদিহি করতে হয়। এটাই হলো বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বড় অসুবিধা। অয়ন ভাবছে তার উপর দিয়ে কি যায় আল্লাহই ভালো জানে।
" আসসালামু আলাইকুম, ম্যাম! "
" ওয়ালাইকুম আসসালাম! আপনি আজ নতুন জয়েন করেছেন তাই তো। "
" জ্বি, আজই জয়েন করলাম অফিসে। "
" আপনার সম্পর্কে আমার ইতোমধ্যে জানা হয়ে গিয়েছে। মনে রাখবেন, কাজ না করলে ভাত পাওয়া যায় না! কাজ করতে হবে, তবেই ভাত পাবেন! "
এমন প্রশ্ন শোনার অপেক্ষায় মোটেও ছিল না অয়ন। নুসরাত আপুর কথা শুনে মুচকি হেসে কথাটা উড়িয়ে দেয়। তবে আপু যে বেশ রাগী মানুষ সেটা অয়ন ঠিকই বুঝতে পারে।
নুসরাত আপুর সাথে অয়নের সখ্যতাও ভালো হয়েছিল। জুনিয়র ম্যানেজার হিসেবে জয়েন করায় আপু অয়নকে তুই করেই বলতো। কয়েকদিনেই অয়ন আপুর কাছে প্রিয় হয়ে উঠে। এটা অয়নের বিশেষ গুণ। সহজেই মানুষের সাথে মিশতে পারে। নুসরাত আপু মাঝে মাঝেই বলতো জীবনটা কত বিচিত্র তাই না! আমরা যা চাই তা পায় না আবার যা পায় তা চাই না। আপুর এসব কথা বলার পিছনে উদ্দেশ্য কি ছিল অয়নের জানা নেই। জানার আগ্রহও নেই। মাঝে মাঝে নুসরাত আপু এসব বলতো।
নুসরাত আপুর বিয়ে হয়েছে এক বছর হয়েছে। ভূড়িওয়ালা একজনকে দেখে বিয়ে করিয়েছে তার পরিবার। কিন্তু নুসরাত আপু মোটেও ভূড়িওয়ালা লোকটাকে পছন্দ না। মুশফিক ভাইয়ের সাথে আট বছরের সম্পর্ক। সেটাও আবার ক্লাস টেন থেকে। আপুর কাছ থেকে চা খেতে খেতে একদিন জানতে পেরেছিল অয়ন! মুশফিপ ভাই নাকি এখনও অপেক্ষায় রয়েছে আপুর। কিন্তু আপুর যে রাগ সে রাগে একটা ছেলে থাকলোই বা কি করে!
নিজের পছন্দ মতো বিয়ে না করায় প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয় নুসরাত আপুর। টাকা পয়সা ভালোই আছে নুসরাত আপুর হাসবেন্ডের। অয়ন দুই বছর চাকরি করে। কিন্তু নুসরাত আপু কয়েকদিন পরেই চাকরিটা ছেড়ে দেয়। চাকরি করবাই বা কেন। ঢাকা শহরে যে ছেলের নিজস্ব জমি বাড়ি গাড়ি আছে তার আবার চাকরি করা লাগে। পায়ের উপর পা তুলেই খেতে পারবে। নুসরাত আপুর হাসবেন্ডের সাথে কথা বলেই চাকরিটা ছেড়ে দেয়। আপু মাঝে মাঝেই অয়নকে বলতো, "আমাকে রাগাবী না! খুন করে ফেলবো। অয়ন সেটা মোটেও পাত্তা দিতো না।
নুসরাত আপুর চাকরিটা ছেড়ে যাওয়ার পর আর তেমন যোগাযোগ হয়নি। এ শহরে কার খবর কে রাখে! সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। অয়নও এখন অন্য আরেকটা কোম্পানিতে জয়েন দিয়েছে। সেখানে আবার ম্যানেজার পোস্টে আছে। ঢাকা শহরে মাকে নিয়েই তাকে অয়ন। উত্তরার ১৩ নাম্বার সেক্টরে থাকে। দীর্ঘ পাচঁ বছর পর। অয়ন ফোনে কথা বলতে বলতে বাসার দিকে হেটেঁ যাচ্ছে! হঠাৎ করেই একটা রিকশা এসে শরীরে লাগিয়ে দেয়ার মতো অবস্থা! অয়ন কিছুটা বিরক্ত হয়ে পিছনে তাকায়।
" আমাকে দেখে পালাচ্ছিলি কোথায়? একদম খুন করে ফেলবো কিন্তু! "
" আরে, নুসরাত আপু যে! কেমন আছো তুমি? "
" ভালোই আছি। এদিকে কোথায় যাচ্ছিস তুই? "
" এদিকেই তো থাকি। উত্তরার ১৩ নাম্বার সেক্টরে। "
" ওহ আমি তো এদিকেই থাকি। ডুপ্লেক্স একটা বাড়িতে। "
" টাকা পয়সা ভালোই কামিয়েছে তোমার হাসবেন্ড তাহলে, হাহা! "
" হাসবি না, খুন করে ফেলবো কিন্তু! "
" তোমার রাগ এখনও তাহলে কমেনি! "
" না না! রাগের কি যে করে ফেলি। ডাক্তার দেখিয়েছি ঔষধ খেয়েছি কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না! আচ্ছা শোন, আমাকে একটা হেল্প করতে পারবি! "
" কি হেল্প বলো? "
" রাগের মাথায় তোর ভাইয়াকে খুন করে ফেলেছি। লাশটা ফালানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারবি! "
অয়নের সারা শরীর থরথর করে কাপঁছে। এমন কথা শুনে। আপু তুমি আমার সাথে মজার করছো না তো!
" হাহা, মজা নারে সত্যি বলছি। আচ্ছা ভালো থাক যায় তাহলে! "
আপু কি তার সাথে মিথ্যা বললো নাকি সত্য বললো সেটা বুঝতে পারছে না। অয়ন বাসায় চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে। হাতে রিমোটটা নিয়ে টিভিটা অন করে। আর টিভিটা অন করেই জানতে পারে। উত্তরার তেরো নাম্বার সেক্টরের ডুপ্লেক্স বাড়িটাতে গলাকাটা লাশ পাওয়া গিয়েছে। এটা দেখার পর অয়ন আর ভাত গিলতে পারছে না। তাহলে কি সত্যিই আপু ভূড়িওয়ালা লোকটাকে রাগের মাথায় মেরে দিল। সেটাও আবার জঘন্যভাবে!
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
twitter share
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে নুসরাত আপুর যতই রাগ থাকুক না কেন এমন করা মোটেও উচিত হয়নি।কোন ভালো মানুষ এমন কাজ করতেই পারে না। সত্যি তারজন্য মেয়ে কিংবা ছেলে তাদের পছন্দ অনুযায়ী দিয়ে দেওয়া উচিত। ভুড়িওয়ালা লোকটা বিনাকারণে বউয়ের হাতে খুন হল।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর লিখেছেন।
জি, আপু রাগ মোটেও ভালো নয়। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 🌼
ভাইয়া আপনি খুব সুন্দর গল্প লিখেছেন। আপনার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো। টাকা পয়সা থাকলেই সবকিছু হয় না।মনের মিল হলো সবচেয়ে বড় মিল। তবে প্রতিটি পরিবারের উচিত বিয়ে দেওয়ার আগে সন্তানদের মতামত নেওয়া। তাহলে কখনও এই সমস্যায় পড়তে হয় না। নুসরাতের এতটাই রাগ যে সে কন্ট্রোল করতে না পেরে তার স্বামীর গলা কেটে ফেললো। সে তার সাথে মানাতে পারছে না ঠিক আছে চলে যাবে। তাই বলে তো মেরে ফেলবে না। নুসরাত আবার সমস্যার সমাধানের জন্য হেল্প চাইলো অয়ন ছেলেটার কাছে। অয়ন বেচারা পড়েছে বিপদে। এরপর কি হলো জানার অপেক্ষায় রইলাম।
আপু এটা তো ছোটগল্প তাই এক পর্বেই শেষ করেছি।
আসলেই অতিরিক্ত রাগ মানুষকে হিংস্র বানিয়ে দেয়। তাইতো নুসরাত আপু রাগান্বিত হয়ে তার স্বামীকে খুন করে ফেলেছে। আমাদের উচিত নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করা। তাহলে আমাদের জীবনটা সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে পারবো। যাইহোক গল্পটি পড়ে আসলেই খুব ভালো লাগলো ভাই। এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো ভাইয়া। অসংখ্য ধন্যবাদ 🌼
রাগ কখনোই ভালো নয়। অতিরিক্ত রাগ হলে তা আরো বেশি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। এই রাগকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে আমরা নিজেকে কোন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা যে কাজ করে ফেলি তা ভালো বা খারাপ তা বিবেচনা করার সেই সময়টুকু আমাদের মধ্যে থাকে না। তাইতো নুসরাত আপু এত রাগান্বিত হয়ে তার স্বামীকে খুন করে ফেলেছে। এই ঘটনা খবরেও আমি অনেক দেখেছি এবং এরকম ঘটনা বেশিরভাগ সময়ই অতিরিক্ত রাগ এবং ঘৃণার কারণে হয়ে থাকে৷ যাইহোক গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো৷ বাস্তবেও এই ঘটনা অনেক সময় শোনা যায়৷
অতিরিক্ত রাগ কোনো ভাবেই ভালো নয়। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাই 🌼
জি ভাই৷ এটি হতে পারে কারো জন্য একটি বড় অভিশাপ।