১ম পর্বঃ নীল শাড়ি
23-09-2022
০৮ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন 🌼। আজকে সারাদিন মোটামুটি বৃষ্টি হয়েছে। এরকম ওয়েদারে বাহিরেও যাওয়া যায় না। রুমে বসেই ভাবতে থাকি। বসে বসে ফোনের নোটস ওপেন করে একটা গল্প লেখা শুরু করি। গল্পটি কয়েকটি পর্বে সাজাবো। আপনারা জানেন যে গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে। গল্প লেখাটা যেহেতু ব্রেইনের কাজ। সেহেতু ভেবে চিন্তে চরিত্রগুলো মেলাতে হয়। তবে আমি চেষ্টা করি চরিত্রগুলো আমাদের আশেপাশে থেকে সংগ্রহ করার। চোখ মেললেই দেখা মিলে অনেক ঘটনার।
শীতের সকাল। আবির কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমে বিভোর। আজকে তার জব ইন্টার্ভিউ দেয়ার কথা। ফোনে এলার্ম সেট করা। সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠার কথা। অলরেডি তিন বার এলার্ম বেজে গেছে। এই শীতে কে বা উঠতে চায় বিছানা থেকে! কিন্তু দেরি হয়ে গেলে ইন্টার্ভিউ মিস করে ফেলবে আবির। চারবার এলার্ম বাজার পর আবির ঘুম থেকে উঠে এক দৌড়ে চলে গেল ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে হবে। কর্পোরেট সেক্টরগুলাতে একটু নিয়মমাফিক কাজ হয়। দেরি করে গেলে ইন্টার্ভিউ মিস। রেডি হয়ে বের হয়ে গেল বাসা থেকে। এই যা! নিচে নামতেই মনে হলো ফাইল আনতে ভুলে গিয়েছে। সেই পাচঁ তলায় বাসা। আবার তাড়াতাড়ি করে উপরে গেল। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব ফাইলেই রাখা ছিল রাফির। এগুলো না নিয়ে গেলেও মুশকিল। ভিতরে প্রবেশ করতে দিবে না। বাসায় লিফটের ব্যবস্থা নেই। সো সিড়ি দিয়ে নামতে হবে আবার। আবির ফাইল নিয়ে বেরিয়ে গেল। রুম থেকে বের হওয়ার পূর্বে রুমে লক দিয়ে বের হয়েছিল। নিচে এসে মনে ভাবতে থাকলো, আবার কিছু ফেলে এসেছে কি না! ফেলে আসলেও এখন আর উপরে উঠতে পারবে না। গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল আবির।
শীতের সকালে রাস্তায় রিকশা তেমন পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও ভাড়া একটু বেশি রাখে। আবিরের বাসা থেকে কর্পোরেট অফিসটাও দূরে ছিল। এজন্য কিছুটা পথ হেটেঁই গেল আবির। এতে সকাল সকাল ব্যায়ামও হয়ে গেল সেই সাথে রিকশা ভাড়া কিছুটা কমে গেল। সামনে মোড় থেকে উঠলে ভাড়া ১০-১৫ টাকার মতো নিতে পারে। আবির মোড়ে গিয়ে দাড়িঁয়ে আছে, সাথে ফাইল। আবিরের চোখের সামনে দিয়ে একের পর এক রিকশা যাচ্ছে। রিকশাগুলো সব ফিল আপ করা প্যাসেঞ্জার দিয়ে। ঠিক কিছুক্ষণ পর রিকশায় দেখতে পেল একটি মেয়েকে। পড়নে নীল রঙের শাড়ি। আবিরকে দেখেই মেয়েটি মুচকি হেসে দিল। আবির অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল মেয়েটির দিকে। কিন্তু রিকশা চলন্ত অবস্থায় থাকার কারণে বেশিক্ষণ দেখতে পারেনি আবির। অদ্ভূত রকমের একটা ফিলিংস আবির অনুভব করলো। তাকে দেখে কেন মেয়েটি হেসে দিল? এটার উত্তর আবির খুজেঁ পাচ্ছে না। ঠিক তখন একটি খালি রিকশা পেয়ে গেল। রিকশা করে চলে যাচ্ছে অফিসের দিকে। আবির যেন মেয়েটির কথা ভুলতেই পারছে না। রিকশায় বসে বসে মেয়েটির কথা ভাবতে থাকলো। দেখতে দেখতে অফিসের সামনে চলে এলো।
ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পেলো এখনও পরীক্ষা শুরু হয়নি। বেশ কিছু ক্যান্ডিডেট বাহিরে অপেক্ষা করছে। আবির বাহিরে বসে অপেক্ষা করছে। সেখানেও মেয়েটির কথাই ভাবছে। তাকে দেখে কেনই বা এসে দিল? এটার উত্তর কোনোভাবেই পাচ্ছে না। মেয়েটির এরকম মিষ্টি হাসি আবির ভুলতেও পারছে না। পড়নে নীল শাড়ি পড়া ছিল এজন্য আরও সুন্দর লাগছিল দেখতে মেয়েটিকে। কিছুক্ষণ পরই আবিরের ইটার্ভিউ শুরু হয়েছে। প্রশ্ন সহজ হয়েছে। আবিরের এজন্য বেশিক্ষণ লাগেনি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে। পরীক্ষা শেষ করে আবির বেরিয়ে পড়ে। মনে মনে ভাবতে থাকে যাওয়ার পথে আবার যদি মেয়েটির সাথে দেখা হতো! আবির হেটেঁই রওয়ানা দিয়ে দিল। আবার সেই মোড়ে দাড়িঁয়ে আছে আবির। সেই মেয়েটির অপেক্ষায়। কিন্তু না! আজ আর মনে হয় দেখা হবে না। রিকশা করে আবির বাসায় চলে আসে। আবির বাসায় টেবিল ল্যাম্পের সামনে বসে মেয়েটির কথা ভাবতে থাকে। রুমে আবছা আলো। আবিরের চোখের সামনে মেয়েটির হাসি বারবার ভাসছে। অদ্ভূদ রকমের হাসি।
জানালার পাশে মৃদু ঠান্ডা হাওয়া বইছে। আবিরের জীবনে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। একবার যদি মেয়েটির দেখা পেত তাহলে নিশ্চয় বলে দিত কেন তাকে দেখে হেসেছিল? আবির মনে মনে ভাবতে থাকে, মানুষের নাকি আত্নার একটা টান থাকে। যেই সময়ে আমরা যে মানুষটাকে নিয়ে ভাবি ঠিক সেই সময়ে নাকি অন্য মানুষটাও ভাবে। সত্যি কি তাই? তাহলে আবিরের কথাও নিশ্চয় ভাবছে মেয়েটি। না হলে এতো কেন মন পড়তেছে মেয়েটিকে। প্রথম দেখাতেই আবিরের ভালো লেগে যায়। কিন্তু মেয়েটির সাথে কি আবার দেখা হবে? ইট পাথরের এই বিশাল শহরে কোথায় খুঁজে বেড়াবে মেয়েটিকে? হারিয়ে ফেললাম বুঝি মেয়েটিকে। আবির রাতে প্লেন করে মেয়েটিকে যে জায়গায় দেখেছিল সে আবার সে জায়গায় গিয়ে দাড়িঁয়ে থাকবে। ঠিক যে সময়ে মেয়েটিকে দেখেছিল। আবির ফোনে এলার্ম সেট করে রাখে। সকাল হতেই এলার্ম বাজতে শুরু করে। আবিরের মনে পরে যায়। তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে পড়ে আবির। যেখান থেকে রিকশা পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে আবির দাড়িঁয়ে রইল।
অনেক রিকশা সামনে দিয়ে যাচ্ছে। কোথাও মেয়েটিকে খুঁজে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি রিকশা দিয়ে আসতেছিল। কিন্তু আবির খেয়াল করেনি। মেয়েটি ঠিকই চিনতে পেরে যায়, ঐ ছেলেটা যাকে গতকাল এখানে দেখেছিল। তবে কেন আবার এখানে দাড়িঁয়ে আছে। আবির মেয়েটিকে আর খেয়াল করতে পারেনি। মেয়েটির নাম হচ্ছে সারা। একটা কোম্পানিতে জব করে। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়েই যাওয়া আসা করে। পরিবারের দায়িত্ব সারার উপর। কারণ কয়েকবছর আগেই সারার বাবা মারা গিয়েছে। পরিবারে মা আর ছোট একটি ভাই আছে। ছোট ভাইটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। বাসা ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ সারাকেই বহন করতে হয়। সারার মা ঠিকই সারার কষ্টটা বুঝতে পারে। সারার বয়সও হয়েছে। বিয়ে দিতে হবে। এই নিয়ে সারার মা খুব চিন্তায় থাকে। সারা তার মাকে আগে থেকেই বলে রেখেছিল, তাদেরকে ছেড়ে সে কোথাও যাবে না। সারা অফিসে চলে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত এক জায়গায় জব করে আবার রাত আটটা পর্যন্ত আরেক জায়গায় জব করে। এদিকে আবির হতাশ হয়েই বাসায় চলে যায়। আবিরেরও কেউ নেই।। ছোটবেলা থেকেই মা বাবাকে হারিয়েছে। মামা-মামীর বাসায় থেকে বড় হয়েছে। মামা-মামীরা আর খাওয়াতে পারবে না আবিরকে। এজন্য আবির একের পর এক জব ইন্টার্ভিউ দিয়ে যাচ্ছে।
চলবে....
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
Link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ওয়াও 👌👌👌👌👌👌। রাতে ঘুমানোর আগে এত মিষ্টি একটা লেখা যে পড়ব এটা ভাবতেও পারি নি। মন থেকে বলছি ভালো লিখেছেন। আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা একদম নাটকের মত লাগছিল। এত মিষ্টি ছিল সিকুয়েন্স গুলো 👌। দেখা যাক আবীর আর সারার কথা হয় কবে,, অপেক্ষায় থাকলাম। আর হ্যা গল্পের নাম করণ টা বেশি ভালো হয়েছে। মূলত নাম টা ভালো লেগেছিল বলেই পড়তে নিয়েছিলাম। আর পড়ে তো পুরা ফিদা 😅।
ছোট একটা মিসটেক মনে হলো লাইনটাই,, আশা করি ঠিক করে নেবেন। বেশ মন দিয়ে পড়ছিলাম তাই ধুম করে চোখে পরে গেল।
দাদা অশেষ ধন্যবাদ ছোট ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য 🙏।