মরণব্যধি ক্যান্সার
09-01-2024
২৬ পৌষ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
🌼 আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
সালটা ছিল ২০১২। সবেমাত্র ৫ম শ্রেণিতে পা দিলাম। বলতে গেলে তখনও দূরন্তপনার মধ্যেই সময় কেটে যেত! মা-বাবার আদরের থেকেও বোনের আদর বেশি পেয়েছি বলতেই হয়। আমাদের পাচঁ ভাইবোনের সংসারে আমার আপু যারা নাম পলি সে ছিল সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই আপু অনেক মেধাবী ছাত্রী ছিল। ক্লাস ৫ম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী অবধি জিপিএ-৫ পেয়েই উত্তীর্ণ হয়েছিল। মধ্যবিত্ত পরিবার ছিল আমাদের। আহামরি এতো আশাও করা হতো না। তবে আমার মামারা সবাই আবার আপুকে পছন্দ করতো। আর্থিকভাবে যতটা সহযোগিতা করার সবটাই করতো। আমার বাবা যদিও ফার্মেসির ব্যবসা করতো। বলতে গেলে যথেষ্ট টানাপোড়নের মধ্যে দিয়েই সংসার চলতো তখন। মা-বাবার আশাও ছিল আপুকে নিয়ে অনেক। আপু ছিল আমার বাবা মায়ের বাধ্যগত সন্তান! আপুকে কখনো দেখিনি বাবা মায়ের সামনে উচ্চস্বরে কথা বলতে।
এসএসসি তে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর বাবা মায়ের ইচ্ছেটাও ছিল আপু মেডিকেলে পড়ুক সেজন্য ভালো একটা কলেজে পড়াশোনা করলে ভালো। আপুকে ভর্তি করানো হলো গুরুদয়াল সরকারি কলেজে। কিন্তু কিশোরগঞ্জ থেকে পড়াশোনা করাটাও কঠিন ছিল। বলতে গেলে আমার মা বাবার পক্ষে সম্ভব না । আর মেয়েকে চোখের আড়ালও করাটা ঠিক হবে। আপুকে ভর্তি করানো হলো নান্দাইলের সমূর্থ জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজে! এইস এস সি তেও আপু বিজ্ঞান নিয়েই পড়াশোনা করেছিল। কিন্তু এইস এস সি তে গ্রুপ সাবজেক্ট বেশ কয়েকটা এগুলা আবার আলাদা করে প্রাইভেট পড়তে হবে। কিন্তু আপু তা না করে বাড়িতেই পড়াশোনা করতো সারাদিন। আম্মা-আব্বাকে কখনোই বলে নাই প্রাইভেট পড়ার কথা! আমি তখনও ছোট ছিলাম। প্রাইমারিতে থাকাকালীন পড়াশোনার পর্বটা আপুর কাছ থেকেই রপ্ত করা। সবচেয়ে মজার ছিল ঘড়ির টাইম শেখাটা। আমাদের ঘরে একটা দেয়াল ঘড়ি ছিল অ্যানালগ। সে দেয়াল ঘড়িটি আবার "মা" ডিজাইন করা ছিল। আপু আমাকে প্রথম ঘড়ির ঘন্টা, মিনিট ও সেকেন্ডের কাটাঁ শিখিয়েছিল।
তারপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটাও আপুর কাছ থেকেই শেখা। তবে আপুর এইস এস সি পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর চলে গেল ময়মনসিংহে। যেহেতু মেডিকেলে পড়াশোনা করার স্নপ্ন ছিল আপুর। তাই রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলো আপু। রেটিনা কোচিং করে মোটামোটি ভালো একটা প্রিপারেশন নিয়েছিল আপু। এদিকে মেডিকেলে প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে আপুর চান্স হয়নি। তার পরের বছর আবারো পরীক্ষা দেয় এবং চান্স পেয়ে যায়। আপু তখন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছিল! মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর পরিবারের সবাই অনেক খুশি হয়েছিল। বাবা মায়ের আশাটা পূরণ করতে পেরেছিল আপু। আপু সিলেট চলে যাওয়ার পর আমিও মোটামোটি একাই হয়ে যায়। কারণ আপু সবসময় শাসন করতো পড়াশোনার জন্য! পড়ালেখা হতো না তেমন। তবে আমি আবার আপুর মতোই ছিলাম। বলতে গেলে পড়াশোনা করেছি ছোটবেলা থেকেই।
২০১২ সালের রমজান মাস! হঠাৎই একদিন ফোন দিয়ে বললো আপুর অনেক জ্বর কয়েকদিন ধরে। সিলেটের চা বাগানে একদিন ঘুরতে গিয়েছিল আর আসার সময় ভিজে এসেছিল। তারপর থেকে কয়েকদিন জ্বরে ভুগছিল। কিন্তু আপুর জ্বর আরও আগে থেকেই ছিল। বাবা-মা চিন্তা করবে বলে কখনো বলেনি তার জ্বর! জ্বর হলেই আপুর শরীর আবার হলুদের মতো হয়ে যেত। যেদিন আম্মা জানতে পারে আপুর ভীষণ জ্বর। মুখে ঘা হয়ে গিয়েছে এবং সে ঘা আবার যাচ্ছেও না! আম্মা তখন বলে বাড়িতে চলে আসার জন্য। দুদিন পরই আপু চলে আসে। আপুর শারীরিক অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল কোনো কিছুই যেন খেতে পারছিল না। রমজান মাসে আপু যখন বাড়িতে আসে তখন আবার আমার মডেল টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়। আপুর শারীরিক অবস্থা দেখে কিশোরগঞ্জ ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়! সেদিন ছিল এগারো রমজান। ফোনের প্রচলন বলতে গেলে কম। বাড়িতে আমি বড়মা আর আমার ছোটবোন ছাড়া কেউ ছিল না।
পরদিন ছিল আমার ইংরেজি পরীক্ষা! স্বভাবতই পরীক্ষার আগে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরি। ঠিক বারোটার কিছুক্ষণ আগে ফোন আসে আমাদের পাশের বাড়ির চাচাতো কোন এক ভাইয়ের কাছে। ফোন দিয়ে বলে আপুর নাকি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এটা শোনার পর আমার হাত-পা কাপাঁকাপি শুরু করে দেয়! হার্টবিট অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ঠিক একটার দিকে আরেকটা ফোন আসে। শুনতে পেলাম পলি আর নেই!! এটা শোনার পরে যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আমি কোনো ভাবেই আসলে নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলাম না। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরতে থাকে! আপুর সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকে। ডাক্তাররা বলেছিল আপুর ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছিল আর সেটা অনেক আগে থেকেই ছিল। পোস্টটি যখন লিখছি চোখ দিয়ে পানি পরছে । একটা দশক পেরিয়ে গেল! আপুকে বড্ড মিস করি এখনও। তবে আমার আপুর জন্য দোয়া করবেন। মরণব্যধী ক্যান্সার থেকে আল্লাহ তায়ালা যেন সবাইকে রক্ষা করে।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
আমি যখন আপনার লেখাগুলো পড়ছিলাম তখন আমার ভেতরটা একেবারে কান্নায় ভেঙে আসছিল। আসলে প্রিয়জন হারানোর ব্যথা হয়তো সেই জানে যে প্রিয়জন হারিয়েছে। আপনার আপু জীবনে সফলতা পেয়েও শেষ পর্যন্ত আর বেঁচে থাকতে পারলো না। আসলে এমন একজন মেধাবী মানুষকে হারিয়ে সবাই যেমন কষ্ট পেয়েছে তেমনি পরিবারের মানুষগুলো আরো বেশি কষ্ট পেয়েছে। 😭😭😭
হুমম আপু, আসলে মানুষের জীবনটা হয়তো এমনই! যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখা হয় সেই যদি চলে যায় তাহলে কষ্ট লাগে ভীষণ 😓
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
twitter share
আপনার পোস্ট টি পড়তে গিয়ে আমারও চোখের কোণে জল চলে আসলো।মধ্যবিত্ত পরিবারর থেকে টানাপোড়েনের সংসার থেকে মেডিকেল চান্স পাওয়াটা অবশ্যই চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই।কতো সপ্ন ছিলো আপনার পরিবারের এবং পলি আপুর।সৃষ্টিকর্তর ইশারায় সব মাটির সাথে মিশে গেলো।আমার শ্বাশুড়ি ও এই মরনব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। পরপারে ভালো থাকুক পলি আপু।
আপনার শ্বাশুরির ব্যাপারটা শুনে খারাপ লাগলো আপু। আসলে ক্যান্সার রোগটার নাম শুনলেই বুক কেপেঁ উঠে