ছোটগল্পঃ- প্রতিশ্রুতি
17-01-2024
০৪ মাঘ , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
সূর্যের সোনালী আলো সেগুন গাছের পাতা ভেদ করে বেলকনিতে এসে পরছে। বেলকনির গ্রিলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে নিতু। সূর্যের আলোতে নিতুর মুখটাও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে বাহির থেকে। আবিদ নিতুর দিকেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেই দুই পাড়া পেরিয়ে বিকেল হতেই খেলতে আসে আবিদ। শুধু নিতুকে এক পলক দেখার জন্য। নিতুও আবিদকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। আবিদ বিকেলে পাড়ার ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলে। তার ক্রিকেট খেলা নিতুর কাছে ভালো লাগে। নিতু এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে এখন বাবা মায়ের সাথে বাসাতেই অবস্থান করছে। পরিবারের ছোট মেয়ে হওয়ায় তার মা বাবা তাকে ভীষণ আদর করে।
বড় দুই বোনের বিয়ে আগেই হয়ে গেছে। তবে বাবা মায়ের ইচ্ছে নিতুকে মেডিকেলে পড়াশোনা করানোর। এস এস সি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারলে তাকে মেডিকেল এ পড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে। কিন্তু নিতুর মা বাবা জানে না আবিদের সাথে তার দিনদিন সখ্যতা বেড়ে চলছে। আবিদের সাথে নিতুর পরিচয় হয় সাদিয়ার জন্মদিনে। সাদিয়ার জন্মদিনে তার বয়ফ্রেন্ড রকির সাথে আবিদও আসে। আর তখন দুজনের চোখাচুখি থেকে এক পর্যায়ে তাদের মাঝে ভালো লাগার সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে। আজ চারমাস চলছে তাদের ভালো লাগার কথা! বিকেল হলেই নিতু চলে যায় বেলকনিতে একপলক দেখার জন্য আবিদকে। আবিদ নিতুকে দেখেই যেন বড় বড় ছক্কা মারা শুরু করে দেয়।
আবিদের সাথের নিতুর সম্পর্কটা গাঢ় হতে থাকে। লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলা শুরু করে নিতু! সারারাত কিভাবে কথা বলে চলে যায় সেও বুঝতে পারে না। নিতু আর আবিদের সম্পর্কের যখন ৬-৭ মাস হয় তখন আবিদ নিতুকে বলে, চলো আমরা কোথাও একদিন ঘুরতে যায়। আবিদের সাথে বাসার আসে পাশে অনেকবার দেখা হয়েছে। কিন্তু কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। ৬-৭ মাস আবিদের সাথে কথা বলেও বুঝতে পারে নিতু তার সাথে যাওয়ায় যায়। কারণ ভালোবাসার মানুষের সাথে কোথাও ঘুরতে পারলে ভালোই লাগবে। নিতু আবিদের কথায় রাজি হয়ে যায়।
আবিদের সাথে ঘুরতে যায় নিতু তার বাবা মাকে না জানিয়েই। আবিদ নিতুকে নিয়ে একটা হোস্টেলে উঠে। সেই হোস্টেলের খাট, আলমারি আবিদ দেখাতে থাকে। কিন্তু নিতু জানতো না আবিদের যে খারাপ কোনো মতলব রয়েছে! আবিদ নিতুর শরীর স্পর্শ করে। নিতুও তখন কোনো বাধা দেয়নি। কারণ আবিদের সাথেই যে তার বাকি জীবনটা কাটাতে হবে। নিতুর প্রবল বিশ্বাস ছিল আবিদের প্রতি। তারপর থেকে আবিদের সাথে নিতুর ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। আবিদের সাথে নিতুর সম্পর্কটা আরও বাড়তে থাকে। একদিন নিতুর বাবা মা কোথাশ বেড়াতে চলে যায়। আর তখন আবিদকে আসতে বলে নিতুর বাসায়। তাদের দুজন শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে।
কিন্তু নিতু বুঝতে পারেনি তার জন্য খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে। তাদের সম্পর্কের এক বছর পর হঠাৎ করেই আবিদ তাকে বলে সে বিদেশ চলে যাবে। এটা শুনে নিতুর ভীষণ মন খারাপ। এদিকে নিতু গর্ভে তার সন্তান চলে আসে। এ অবস্থায় সে সমাজের সামনে দাঁড়াবে কি করে! তার মামা বাবা যদি জানতে পারে তাকে খুন করে ফেলবে। আবিদকে বলে বিদেশ যাওয়ার আগে যেন তাকে বিয়ে করে যায়। তারপর সে আলাদা কোনো বাসা নিয়ে থাকবে। তার মা বাবা জানতে পারলে ঘর থেকে বের করে দিবে। নিতু আবিদকে বলে তার বাবা মাকে যেন পাঠায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
কিন্তু আবিদ," তুমি পাগল নাকি বলে উড়িয়ে দেয়! " তার কিছুূদিন পর সব জানাজানি হয়ে যায়। নিতুর পেটে সন্তান! এটা জানার পর তার বাবা তাকে ঘর থেকেও বের করে দেয়। এদিকে আবিদ নিতুর জন্য একটা বাসা ঠিক করে। সে বিদেশ থেকে আসা অবধি এখানেই থাকবে। নিতু একা একাই সে বাসায় থাকতে থাকে। আবিদকে ফোন দিলে কেটে দেয়। সপ্তাহে একদিন ফোনে কথা হয়। নিতু ভাবে আবিদ হয়তো ব্যস্ত কাজ নিয়ে সেজন্য সে বিরক্ত করে না তাকে। একদিন বিকেল বেলা নিতুর ব্যথা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। নিতুর পাশের রুমে থাকতো রূপা খালা! বিকেল বেলা নিতুর রুমে এসে দেখতে পায় নিতু ব্যথার যন্ত্রণায় কাতারাচ্ছে! রূপা খালা নিতুকে হসপিটালে ভর্তি করায় এবং নিতু কন্যা সন্তানের জন্ম দান করে।
তার কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার খবরটা আবিদকে আগে জানানোর চেষ্টা করে। হয়তো আবিদ সবকিছু ভুলে তার কন্যা সন্তানের কথা চিন্তা করে হলেও তার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু আবিদ যা বলে নিতুকে সেটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না নিতু! আবিদ বলে, আমি যে তোমাকে বিয়ে করেছি তার কোনো প্রমাণ আছে! আমি বিয়ে করে ফেলেছি এবং আমার ওয়াইফ এখন প্রেগন্যান্ট! আর হ্যা,যে বাসাটায় তোমাকে তুলে দিয়েছিলাম, কয়েকদিনের ভিতরে সে বাসাটা ছেড়ে দিয়ে চলে যাও অন্য কোথাও! এটা শোনার পর নিতুর চোখ দিয়ে গড়গড়িয়ে যেন পানি পরতে থাকে। কিন্তু নিতু তার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখে। হয়তো একদিন তার মেয়েই এমন কালপ্রিটদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করবে!
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
twitter share
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
নিতু ও আবিদের প্রেমের গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে আবিদ যেহেতু নিতুকে মেনে নিল তারপরেও নিতুর সাথে এমন কেন আচারণ করলো।আসলে মানুষের মন বোঝা অনেক কঠিন। যাইহোক নিতু সবকিছু মেনে তার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আশা করি ভালো কিছু হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
আসলেই আপু মানুষের মন বুঝা কঠিন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু 🌼
এই ধরনের গল্প পড়তে আসলেই ভীষণ ভালো লাগে। তবে নিতুর জন্য খুবই খারাপ লাগলো। আবিদ নিতুর সাথে অনেক অন্যায় করেছে। বাস্তবেও নিতুর মতো অসংখ্য মেয়ে আবেগের বসে এমন ভুল কাজগুলো করছে এবং পরবর্তীতে আফসোস করছে। আসলে প্রতিটি ছেলে মেয়ের উচিত মা-বাবার কথা মতো চলা। কারণ মা বাবা নিজের সন্তানদের অবশ্যই ভালো চায় এবং ভালো কিছু করার চেষ্টা করে সব সময়। যাইহোক সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই কামনা করছি। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
বাবা মা যে কোনো সন্তানের খারাপ চাই না সেটা বুঝতেই দেরি হয়ে যায় আমাদের। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া গল্পটি পড়ার জন্য 🌼
খুব ভালো লাগলো আপনার কাছ থেকে এই গল্পটি পড়ে। এরকম গল্প করতে খুব ভালো লাগে৷ সকল সন্তানদের উচিত তাদের মা-বাবার কথা মেনে চলা৷ কখনো তাদের পিতামাতার অবাধ্য না হওয়া৷ তবে নিতুর মতো এখনো অনেক মানুষ আছে যারা আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেক ভুল কাজ করে থাকে৷ কারণ তারা এই বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারে না যে, তাদের মা বাবা তাদের জন্য ভালো কিছুই চিন্তা ভাবনা করে রাখে৷ তবে তারা কখনো এই বিষয়টি মেনে নেয় না এবং তাদের এই ভুল কাজ চালিয়ে যেতে থাকে৷ আপনার কাছ থেকে এই পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো৷ অসংখ্য ধন্যবাদ৷
হুম ভাই নিতুর মতো এমন অনেক মেয়েই আছে, পরে ঠিকই বুঝতে পারে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই 🌼