আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [ চক চকের মহত্ব ]
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি আমার মতো আছি, মানে ভালো-মন্দ মিশিয়ে। কারন শুধু ভালোকে নিয়ে যেমন থাকতে পারি না ঠিক তেমনি শুধু মন্দকে নিয়েও থাকতে পারি না, তাই শান্তি চুক্তির আওতায় ভালো-মন্দ নিয়ে থাকার চেষ্টা করছি, হা হা হা মজা পেয়েছেন নিশ্চয়, নেন বেশী করে মজা নেন বিয়ে শাদি করুন তারপর আপনিও শান্তি চুক্তিতে বিশ্বাসী হয়ে উঠবেন, হা হা হা। আজকে অনেক দিন পর আবোল তাবোল নিয়ে কিছু লেখার আগ্রহ প্রকাশ করছি। যদিও আমার ভেতরে থাকা কথাগুলো আমি কম বেশী প্রতিদিনই পোষ্টের মাধ্যমে শেয়ার করে যাচ্ছি। তবুও পুরো অনুভুতি কিংবা ভাবনাগুলো শেয়ার করে থাকি এই আবোল তাবোল সিরিজের মাধ্যমে।
আমি বহু বার বলেছি আমাদের মানসিকতা নিয়ে এবং আবোল তাবোলের মাধ্যমেও আমাদের চরিত্রকে নিয়ে লিখেছি। কিন্তু তবুও আজকে পুনরায় আরো একটা বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলবো সেটাও আমাদের চরিত্রের সাথে গভীরভাবে জড়িত। আমরা একটা বিষয়ে খুব বেশী আকর্ষণবোধ করি, যদিও জ্ঞানে কিংবা বুদ্ধিতে আমরা অনেক উপরে থাকার পরও সেটার ব্যবহার করি না কখনো এই ক্ষেত্রে। সেই স্কুল জীবন হতেই এটা পড়ে আসছি ‘চক চক করলে সোনা হয় না’ কিন্তু আমরা কি আদৌ এটা মানছি বা মানার চেষ্টা করছি? কি অবাক হচ্ছেন? কেন অবাক হবেন, এটাতো আমাদের একটা চলমান বৈশিষ্ট্য। যেখানে চক চক করবে আমরা সবাই সেখানে ছুটে যাবো। আর চক চক না করলে সোনা হলেও আমরা সেটাকে ছুড়ে ফেলতে দ্বিধাবোধ করি না। উদাহরণ চাচ্ছেন? অবশ্যই আমার স্টকে সেটা বহু পরিমানে আছে, কোন সমস্যা নেই।
দেখুন বাজারে এখন যা দেখবেন বা পাবেন সব কিছুতেই একটা চক চক ভাব থাকে। কারন ঐ যে আমরা চক চক জিনিষ বেশি পছন্দ করি। একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন বাজারে অনেক কিছুতে আজকাল সরিষা তেল মাখা হয় কারন ঐ যে তাতে জিনিষটি একটু বেশী চক চক করে। যেমন বড়ই, কালো জাম, খেজুর, এই রকম আরো অনেক ফল আছে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই দেখতে পারবেন। সেদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম সড়কের পাশে এক ছেলে তার হাতে এক বোতল সরিষার তেল আর তার পাশেই রয়েছে অনেকগুলো বড় সাইজের দেশী মোরগ। যেহেতু শীতকাল সেহেতু মোরগ আর হাঁসের বেশ চাহিদা এখন। আর দেশী মোরগ কিংবা হাঁসের দাম সবার উপরে। তাই সে খুব কায়দা করে একটা গামছায় সরিষার তেল মাখছে এবং সেটা দিয়ে প্রতিটি মোরগের উপর সুন্দর করে মুছে দিচ্ছেন। একটু পরই দেখা যাবে মোরগগুলোর শরীর চক চক করা শুরু করে দিয়েছে।
এটা বাস্তব দেখা বিষয়, আপনি চেষ্টা করুন ফলের দোকানের আশে পাশে কিছুটা সময় থাকুন তাহলে দেখতে পারবেন সত্যটা কতটুকু। দেখবেন তাদের কাছে একটা গামছা আছে এবং সেটা কিছুটা কালচে ধরনের, যাতে তেল মাখানো থাকে সর্বদা। আর ঐ ফল বিক্রেতা একটু সময় পর পর সেই গামছা দিয়ে তার সামনে থাকা ফলগুলো মুছতে থাকবে, যাতে চক চক ভাবটা ঠিক থাকে। কেন এমনটা হলো? বলুন এর জন্য কারা দায়ী? হ্যা, আপনি আমি এর জন্য প্রকৃত দায়ী। কারন আমরা চক চক দেখলেই সেটাকে একটু বেশী দাম দিয়ে কেনার চেষ্টা করি আর চিন্তা করি এটা একদম ফ্রেশ জিনিষ, দাম যতই হোক কিনে নিতে হবে এটাই। তাহলে আমরা কি পড়লাম আর কি করলাম, আমাদের শেখা, বুঝা এবং জ্ঞানের পরিপূর্ণ কি ব্যবহার আমরা করছি? না মোটেও করছি না, যার কারনে দিন দিন আমরাই ঠকছি এবং প্রতারিত হচ্ছি।
আচ্ছা আরো একটা বাস্তব ঘটনা শেয়ার করি, কলা পছন্দ করেন নিশ্চয় আপনারা? আচ্ছা কখনো কলা কিনতে আপনি নিজে বাজারে গিয়েছিলেন? যদি গিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার দারুণ একটা অবিজ্ঞতা রয়েছে এ ব্যাপারে। কলা বিক্রেতাদের কাছে দেখবেন একই ধরনের কলা কিন্তু দেখতে দুই রকম, একটা একটু কালচে কিন্তু ফুল পাকা, আর এক ধরনের দেখতে পাবেন একটু কাঁচা কিন্তু বেশ চক চক করছে। আপনি ফুল পাকা কলার দাম জিজ্ঞেস করেন সেটার দাম স্বাভাবিক কিন্তু ঐ যে একটু কাঁচা ধরনের যেটা বেশী চক চক করছে সেটার দাম কিন্তু তুলনা মূলকভাবে বেশী চাইবে এবং বেশী দামে বিক্রি করবে। কারনটা কি জানেন এক শ্রেণীর বুদ্ধিমান মানুষ আছে আমাদের মতো যারা চক চক জিনিষ খুঁজেন এবং বেশী দামে কিনে নিয়ে যান। কিন্তু হওয়ার কথা কি ছিলো? সবাই পাকা কলা কিনবে আর কাঁচা কলার কেনা হতে বিরত থাকবেন।
আসলে আমাদের অবস্থানটাই এখন এই রকম, আমরা বিষ পান করি তবে সেটা না বুঝে না বরং বুঝে শুনে। চক চক করলে সেটা সোনা হয় না বরং সেটার প্রতি আরো সন্দেহ দ্বিগুন হয়, না না না এটা আমাদের ভাবনা না বরং শুধুমাত্র বইয়ের বিষয়। কিন্তু আমাদের ভাবনা হলো, চক চক করলেই সেটা খাঁটি জিনিষ, দাম বেশি হলেই সেটা ভালো জিনিষ। আর চক চক না করলে সেটা ভালো না, দাম কম হলে সেটা কেনা যাবে না! কি নিদারুণ সমীকরণ আমরা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী কাজ করছি। অথচ আমাদের জ্ঞান বুদ্ধির কমতি নেই, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করার আগ্রহ কিংবা ইচ্ছা কোনটাই আমাদের মাঝে নেই। আমরা ঠকতে ঠকতে এখন না ঠকলে বরং বেশী কষ্ট পাই, কি আজব আমাদের মানসিকতা, আমরা আজকাল টাকা দিয়ে ঠকছি হাসি মুখে!
পরিবর্তন আসুক আমাদের ভাবনাগুলোর মাঝে, পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠুক আমাদের কাজের মাধ্যমে, যা জানি সেটাই ফলো করবো কিন্তু চক চক করলেই সেটার নিকট ছুটে যাবো না। যদিও এটা আমরা করতে পারি তাহলে হয়তো কিছুটা পরিবর্তন আসবে আমাদের এই সকল অভ্যেসগত ভুলের ক্ষেত্রে। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি, অন্য কোন দিন অন্য কোন বিষয়ে আবোল তাবোল কথাবার্তা নিয়ে আবার ফিরে আসবো।
Image taken from Pixabay 1 and 2
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
>>>>>|| এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আপনার লেখাগুলো পড়লে জাস্ট স্তব্ধ হয়ে যাই। কারণ প্রত্যেকটা লিখার মাঝে সত্যতা লুকিয়ে থাকে। আর আজকে যে বললেন চক চক জিনিসের প্রতি আমাদের আকর্ষণ টা বেশি,এটা একদম সত্যি ভাইয়া। যদিও সব সময় বাজারে গিয়ে কিছু কেনা হয়ে ওঠে না। কিন্তু এটা অনেক সময় দেখেছি, যে জিনিসগুলো একটু দেখতে সুন্দর লাগে সেগুলোকে আমরা প্রাধান্য বেশি দিয়ে থাকি। খুব ভালো লাগলো, আবোল তাবোল গল্পের মাধ্যমে দারুন কিছু উপস্থাপন করেন সব সময় ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপু, আপনাদের ভালো লাগে বলেই জীবনের বাস্তবতাগুলোতে তুলে ধরার চেষ্টা করি।
আরে এটা তো জানতাম না সরিষার তেল মাখাটা, তা ভাইয়া কও আজকাল ফলের দোকানের পাশে বসে থেকে থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন নাকি😉😉।আসলেই এটা একদম বাস্তব কথা চকচক করলে সোনা হয়না এটা আমরা খালি মুখস্থই করেছি কিন্তু এটা মানি না।এই যে দেখেন না মেয়েরা একটু কালো হলে ছেলেরা রিজেক্ট করে দেয় আর সুন্দরী হলে তো তার পিছ পিছ ঘুরে😉😉।
জীবনে কত কিছুর যে অভিজ্ঞতা নিতে হয়েছে! কোন চাপ নিবেন না আপু, যে ছেলেরা পিছু ছাড়বে না তাদের ঐ পার্লার এর ঠিকানা দিয়ে দিবেন, সহজ সমাধান। হা হা হা।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়লে অনেক কিছু জানা বা বোঝা যায়। চকচক করলে সোনা হয় না। তারপরেও আমরা চকচকের পেছনে ছুটি। এই নিয়ে ও অনেক উদাহরণ আছে আপনার স্টকে? 😃 হে সব চকচকের গল্পই সত্যি।পড়লাম খুব ভাল লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।
বাহ্ খুব বাস্তাব এবং সত্য একটি বিষয় নিয়ে লেখেছেন তো ভাইয়া। আমরা আসলে বাজারে গেল কেন বাস্তাব জীবনে সব সময়েই চকচকে জিনিস পছন্দ করি। কেন করি তাও আমরা জানি। এটা আমাদের মোহ। বাজারে যে ফল ওয়ালার গামছায় তেল লাগানো থাকে তেমনি ভাবে মাছের মধ্যেও ফরমালিন মেশানো থাকে। আমাদের সবারই উচিত এই চাকচিক্য মোহ থেকে ফিরে আসা। তাহলেই আমাদের উন্নতি হবে।