আবোল তাবোল জীবনের গল্প [ সুযোগ সন্ধানী মানুষ ]
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো আছেন এবং ঈদের ছুটি উপভোগ করার পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আসলে সময় দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে এটা আমরা সবাই জানি এবং বেশ ভালো ভাবে দেখার সুযোগও পাচ্ছি কিন্তু কষ্ট লাগে যখন দেখি এই সময়ের সাথে সাথে আমাদের মানুষের স্বভাব জাত বৈশিষ্ট্যও যখন পাল্টে যায়। দেখুন আমরা মানুষ আর মানুষ হিসেবে কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদের মাঝে থাকাটা জরুরী, সময়ের সাথে সাথে আমরা সেগুলোকে আরো সুন্দর ও মজবুত করার চেষ্টা করবো নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখার জন্য। কিন্তু বাস্তবতা বলছে উল্টোটা, সময়ের সাথে সাথে আমরা যেমন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছি আমাদের সম্পর্কগুলো ঠিক তেমনি ভাবে আরো বেশী আলগা এবং হালকা হয়ে যাচ্ছে।
আজকে আবোল তাবোল জীবনের গল্পে কিছু নির্মম সত্য কথা উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো, কারন বাস্তব জীবন আমাকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সাথে ভিন্ন উপলব্ধি নিজেকে নিজের কাছেই বার বার প্রশ্ন বিদ্ধ করছে। সত্যি আমরা কোথায় যাচ্ছি, আমাদের শেষ সীমানা কোথায়? মানুষ হিসেবে আমাদের অবস্থানটা আজ কোথায়? এসব শুধু কথার কথা নয় কিংবা শুধুমাত্র প্রশ্ন করার জন্যই প্রশ্ন না। আপনি একটু সচেতনভাবে নিজের চারপাশটা দেখুন এবং বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন, আমরা যখনই সুযোগ পাচ্ছি, যখনই আমাদের সেই রকম সুযোগ সামনে আসছে, আমরা ভুলে যাচ্ছি আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। হিংস্র পশুদের ন্যায় আমরাও ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধাবোধ করছি না, নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় পিছ পা হচ্ছি না।
কিন্তু কেন? কেন এমনটা হচ্ছে? আমরা কি নিজেদের মানুষ হিসেবে ভাবতে পারছি না আর? আমরা কি নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে চাচ্ছি? মাঝে মাঝে সত্যি নিজের কাছেও খারাপ লাগে, সুবিধাবাদী এই মানুষগুলোর অবস্থানটা যখন গভীরভাবে চিন্তা করি তখন নিজেই কেমন জানি আতকে উঠি? অন্য রকম একটা ভয় নিজের হৃদয়ে কাজ করতে শুরু করে? কিভাবে এবং কেন মানুষ এতোটা নির্লিপ্ত হতে পারে? নিজের ভালোটা নাকি পাগলও বুঝতে পারে, তাহলে আমরা কেন বুঝছি না, কেন আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হচ্ছে না? আমাদের বুদ্ধিগুলো কেন শুভ না হয়ে কু মতলবের সাথে দোস্তি করছে? এতো চাহিদা আমাদের, যেটার উপযুক্ত না কিংবা সেটার যোগ্য না আমি তাহলে সেটার প্রতি কেন আকৃষ্ট হবো এবং নিজেকে ভিন্নভাবে হাজির করবো?
আসলে এই সময়টায় একটু সচেতন থাকুন এবং আপনার চারপাশের দৃশ্যগুলো দেখার চেষ্টা করুন, মানুষ রুচি এবং ক্রিয়াকলাপ কতটা নিচু মানের হয়ে গেছে সেটা খুব কাছ হতে দেখার সুযোগ পাবেন। দেখুন আজতো মাত্র ২৭ রমজান, আর গতকাল ছিলো ২৬। গতকালই দেখলাম ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা। আমি প্রতিদিন গাবতলী হয়ে সাভার আসি, স্বাভাবিক ভাড়া ২০ টাকা। কিন্তু গতকাল গাবতলী আসার পর দেখি বাস সংখ্যা কম, কম মানে ইচ্ছে করেই তারা বাসের সংখ্যা কমিয়ে রাখছে যাতে মানুষের উপস্থিতি বেশী দেখিয়ে বাড়া দ্বিগুন করতে পারে, কি দারুণ বুদ্ধি আমাদের তাই না? তারপর খুব সুন্দরভাবে মানুষ ডাকছে ডাবল ভাড়ায়, প্রশাসন ? হ্যা, তারা পাশেরই আছে এবং ফ্যানের নিচে বসে আরাম করছে কারন ডাবল টাকার ভাগতো তাদের পকেটেও কিছুটা যায়।
আমরা ছোট বেলায় দেখেছিলাম, শুধুমাত্র ঈদের দিনটায় ভাড়া কিছুটা বেশী নেয়া হতো এবং তারা বলতেন তাদেরকে কিছুটা ঈদ বখশিশ দেয়ার জন্য, মানুষও সেটা দিতে কার্পণ্য করতো না। সত্যি বলতে ঈদের দিনটি হতো আনন্দের সবাইকে নিয়ে সমানভাবে, তাই সবাই যার যার অবস্থান হতে চেষ্টা করতেন আনন্দটা ভাগ করে নেয়ার জন্য। কিন্তু এখন ২৬ রমজান হতেই মানুষদের অনেকটা জিম্মি করেই ভিন্নভাবে টাকা আদায় করে নেয়া হচ্ছে। ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা, এখন মানুষগুলোকে তো তার গন্তব্যে যেতেই হবে আর প্রশাসন যেহেতু ঠান্ডা বাতাস খাওয়ায় ব্যস্ত সেহেতু বিকল্প উপায় নেই, কষ্টের টাকা এভাবেই খোয়াতে খোয়াতে প্রিয় মানুষগুলোর কাছে যেতে হবে, ঈদের আনন্দটা সুন্দরভাবে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
যে কথা বলতেছিলাম, বাসের হেলপারটি কিছুটা বয়স্ক টাইপের ছিলো এবং বেশ গরম গরম কথা বলতেছিলো, ভাড়া বেশী দিতে হবে না হলে বাস যাবে না, যাত্রী উঠানো যাবে না। অন্য দিন যত মানুষ উঠাতে পারে বাসে সেই চেষ্টা করতো কিন্তু আজ কাউকে উঠতে দিচ্ছে না ভাড়া বেশী দিতে রাজি না হলে, কারন এই লোকগুলো কিছুটা সময় পর যখন দেখবেন বাসের সংখ্যা আরো কমে গেছে তখন আরো বেশী ভাড়া দিয়ে যেতে রাজি হয়ে যাবেন, এটা তারাও সুন্দর বুঝে। আমি খুব গভীরভাবে হেলপারকে দেখার চেষ্টা করলাম, এভাবে মানুষদের জিম্মি করে, টাকা আদায় করে সেটা কি আদৌ তারা ভোগ করতে পারে? সত্যি পারে না কারন ভিন্নভাবে আয় করা টাকাগুলো সর্বদা ভিন্নভাবেই শেষ হয়ে যায়, সেটাকে সঠিকভাবে ভোগ করার সুযোগ আর পাওয়া যায় না।
আমি দেখলাম সেই হেলপারের দুটো পা-ই ফোলা এবং বেশ রোগাক্রান্ত, কিছু কিছু জায়গা হতে রক্তও ঝড়ছে। হয়তো মানুষ নিজের ভালোটাও আজকাল বুঝতে পারে না, অবৈধ ইনকামের ঝাঁঝ যে কোন দিক দিয়ে বের হয়ে যাবে সেটা কল্পনাও করতে পারে না। যেটা আমি ভোগ করতে পারবো না, যেটা আমার জন্য স্বস্তিকর হবে না, সেটার প্রতি কেন আমি আকৃষ্ট হবো? আর মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি একটা দায়িত্ববোধ তো থাকতেই হবে নাকি? সুযোগের সঠিক ব্যবহার তো করে পশুরা, হিংস্র জানোয়াররা, তাহলে আমরা যে মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব সেটা দাবী করার সুযোগ থাকলো কই?
Image taken from Pixabay 1 and 2
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
>>>>>|| এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
কিন্তু কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে আমি মনে করি মানুষের মনুষ্যত্ব বোধ দিন দিন লোপ পাচ্ছে। তাছাড়া আরো একটা কথা আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট সেরকম ও হতে পারে।
স্বার্থের কামনার কাছে মানবতা আজ দারুণভাবে পরাজিত, মনুষত্ব্য আজ নিস্তব্ধ লোভের মানসিকতার কাছে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দিনে দিনে আমাদের মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। তাই তো আমরা স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝি না। হয়তো আমাদের প্রাপ্যটা আমরা মাঝে মাঝে পেয়ে যাই আবার মাঝে মাঝে পাইনা। তাই বলে যে হিংস্র হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এমনটা নয়। মানুষ হিসেবে আমাদের অবস্থান ধীরে ধীরে নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রেই নিজেকে ঘৃন্য প্রমাণ করার চেষ্টা করছি। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
মনুষ্যত্ব আজ নির্জীব, স্বার্থটা আজ চঞ্চল,
সুযোগের অপেক্ষায় সবাই-মানবতার নিরব বিদায়।
সত্যি ভাইয়া মানবতা আজ বিলুপ্তির পথে। মানুষ এখন আর মানুষ নেই।আগে দেখতাম রিকশা থেকে নামলে বলতো সামনে ঈদ, তাতেই কিন্তু কিছু বাড়তি টাকা দিতাম।আর তাদের দেখলে মায়া ও লাগতো। এমন ভাবে আকুতি ভরা চোখে চাইতো।আর এখন ফোর্স করে রীতিমত। 🙄 কি আর বলব।কথাগুলো খুব বাস্তবতা নির্ভর। ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
সময়োপযোগী একটি লেখা প্রকাশ করেছেন,ভাই। কেন যে আমরা এমন করছি,কিসের নেশা যে আমাদের পেয়ে বসেছে তাও আমরা জানি না। দিন দিন "মানুষ মানুষের জন্য" প্রবাদটির তাৎপর্য ফিকে হয়ে যাচ্ছে। তবুও আমার ভাবনা, শুভবুদ্ধির উদয় হোক সবার।