আমাদের নদ-নদী এবং দায়বদ্ধতা

in আমার বাংলা ব্লগ23 days ago

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি এবং ‍সুস্থ আছি। যদিও ভালো থাকার পরিবেশটা আমরা নিজ হাতে বেশ দক্ষতার সাথে নষ্ট করছি, সুন্দর প্রকৃতির বিনাশ করছি এবং প্রকৃতির সেরা উপহার নদীগুলোকে বিষাক্ত ভাগাড় এ পরিনত করেছি। পৃথিবীর একমাত্র সেরা জাতি আমরা, যারা চোখ বন্ধ করে যাবতীয় দুষিত পদার্থ নদীতে ফেলে গর্ববোধ করি। পৃথিবীর অন্য জাতিগুলো আমাদের গর্বের এই ধরনের কথাগুলো শুনলে হয়তো তাৎক্ষনিক অজ্ঞান হয়ে যাবেন। কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ তাদের বিপরীত আমাদের কাছে বরং তাদের সঠিক কাজগুলোই অবাকের বিষয়, কেমনে তারা এটা পারে, কিভাবে তাদের দ্বারা এটা সম্ভব!

আসলে আমাদের মানসিকতাই এমন, ক্ষতি যা হওয়ার প্রকৃতির হোক আমার তাতে কি আসে যায়? কি দারুণ মানসিকতা, সত্যি! যদি তা না হতো তাহলে বিশাল বিশাল গার্মেন্টস এর বিষাক্ত ও দূষিত পানিগুলো নিশ্চিন্ত মনে নদীতে ফেলতো না। অবাক করার বিষয় হলো এগুলো দেখার কেউ নেই, কর্তৃপক্ষ তো আরো বেশী উদার মনের পরিচয় দিয়ে আসছেন। কারন ক্ষতি তো তার হচ্ছে না, প্রকৃতির হচ্ছে আর সেটা নিয়ে তার ভাবার কি দরকার? এসব চিন্তা করে সময় নষ্ট না করে বরং গার্মেন্টস মালিক কিছু উচ্ছিষ্ট দিচ্ছেন রাতের অন্ধকারে কিংবা আড়ালে আবডালে, তাতেই তারা বেজায় খুশি। কত ভাগ্যবান আমরা, নিজের লাভটা ঠিক সুন্দরভাবে নিশ্চিত করার সুযোগ পাচ্ছি, কিন্তু সেটা নিয়ে প্রশ্ন করারও কেউ নেই!

man-2475527_1280.jpg

পত্রিকা পড়তে পড়তে যখন হৃদয়ের ‍শূন্যতা বেড়ে যাচ্ছিলো তখন নদী নিয়ে অতীত স্মৃতিগুলো দারুণভাবে জাগ্রত হয়ে উঠতেছিলো। এমন একটা পরিস্থিতির জন্য সত্যি প্রস্তুত ছিলাম না, বাংলাদেশের নদীর পানিতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গিয়েছে, যা সাধারণত পিএফএএস নামে পরিচিত। দেখুন পিএফএএস সাধারণভাবে ‘ফরএভার কেমিক্যাল’ বা চিরস্থায়ী রাসায়নিক নামে পরিচিত। যা হয়তো দুইশত বছরেও ধ্বংস হবে না, থেকে যেতে পারে যুগের পর যুগ। অপ্রত্যাশিত বিষয় হলো এই সকল নদীর পানিই কিন্তু কোন না কোনভাবে আমরা ব্যবহার করছি, আমাদের খাদ্য শষের মাঝে সেগুলো ডুকে যাচ্ছে। কারণ কৃষি কাজে জীবানুযুক্ত এই পানিই ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে।

সবচেয়ে আশ্চার্যজনক বিষয় হলো, যে সকল এলাকায় গার্মেন্টস শিল্প রয়েছে সে সকল এলাকার নদীর পানিতে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি বেশী মাত্রায় পাওয়া গিয়েছে, যা হয়তো আমাদের চিন্তায় বাহিরে ছিলো। এটা এমন একটা বিষয় না নিয়ে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়, যদিও আমরা এমন একটা জাতি যারা এসব নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায় না। চোখের সামনে বুড়িগঙ্গার করুণ দুর্দশা আমাদের বিচলিত করতে পারে নাই, শীতলক্ষ্যা আমাদের বিবেক কে এতটুকুও ন্যাড়া দিয়ে পারি নাই। তাহলে এসব বিষয় কিভাবে আমাদের চিন্তিত করবে? এমন প্রশ্ন আসতে পারে কিন্তু তবুও এখানে আমাদের চুপ থাকা উচিত না, কারন যুগের পর যুগ আমাদের আগামী প্রজন্ম এর ক্ষত বয়ে বেড়াবে যেমনটা আজও জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের মানুষগুলো বয়ে বেড়াচ্ছে।

contamination-4286704_1280.jpg

আমাদের দেশের অধিকাংশ গার্মেন্টস খুবই পরিকল্পিতভাবে নদী কিংবা খালের পাশে গড়ে তোলেছে যাতে তাদের বিষাক্ত রাসয়নিক পদার্থযুক্ত পানিগুলো অবলিলায় নদী কিংবা খালে ফেলতে পারেন। আবার দেখুন, আমাদের দেশের অধিকাংশ গার্মেন্টস মালিকগণ কোন না কোনভাবে বিদেশী অন্য একটা দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে তাদের পুরো পরিবারকে সেখানে নিরাপদে রেখে আসছেন। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা তাদের জন্য দেশ হতে অবৈধ পথে নিয়ে যাচ্ছেন, এটা আমার মুখের কথা নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন সময় পত্রিকায় প্রকাশিত টাকটা খরব। যাইহোক, আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না বরং নদী ও নদীর পানি ভয়াবহ এই দূষনের বিষয়টি মানতে পারি নাই বলে কিছু অনুভূতি শেয়ার করার চেষ্টা করেছি মাত্র।

শৈশবে আমরা দল বেঁধে যেমন শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দিতাম, ঠিক তেমনি শুশুক অতিরিক্ত উপস্থিতি দেখে দ্রুত আবার নদীর কিনারায় চলে আসতাম ভয়ে। কতটা সুন্দর ও নিরাপদ ছিলো নদীর পরিবেশ ও পানি তখন। কোন কারনে আমাদের সাপ্লাই পানি বন্ধ হয়ে গেলে, রিক্সা কিংবা ব্যান গাড়ি ভাড়া করে নদীর পানি নিয়ে আসতাম বাড়িতে, এটা কল্পনা করা যায় তখন এই নদীর পানি দিয়ে রান্নার কাজ চলতো বাড়িতে বাড়িতে! আজ সেই নদীর পানি দেখলে হৃদয়টা আতকে উঠে, অন্য রকম একটা চিৎকারের গোঙানি নিরবে বাতাসে মিলিয়ে যায়। কেউ নেই কোথায় এসব দেখার!

চাইলে রিপোর্টটি আপনারাও পড়ে দেখতে পারেন প্রথম আলো

Image taken from Pixabay 1 and 2

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break .png
Leader Banner-Final.pngbreak .png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break .png

Banner.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 23 days ago 

প্রতিদিনের মত করে আজও বেশ সময় উপযোগী পোস্ট নিয়ে আমাদের মাঝে চলে এসেছেন। আসলে আমাদের দেশের নদীগুলোই সব এখন দুষিত হয়ে গেছে। আর এগুলো দেখার মত এখন আর কেউ নেই। অথচ কোন এক সময় ছিল যখন এই নদীর পানি দিয়েই মানুষ কতই না কাজ করতো। এমন অবস্থা থেকে আমাদের কে শুধু মাত্র আমাদের মানুসিকতাই উদ্ধার করতে পারে।

 23 days ago 

যেই থালায় খায়, তারই তলায় ফুটা করে এটা পারফেক্ট উদাহরণ আমাদের দেশের গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরিগুলো। লংটার্ম প্লানের অভাবে আমাদের এই অবস্থা। একটা সময় WALL-E মুভির মত হয়ে যাবে পরিবেশ এটা নিশ্চিত।

 23 days ago 

আমাদের দেশের সরকার এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা এসব ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। তাইতো গার্মেন্টস মালিকরা নিশ্চিন্তে বিষাক্ত কেমিক্যাল যুক্ত পানি নদীতে ফেলতে পারছে। চোখের সামনে শীতলক্ষ্যা নদীটা শেষ হয়ে গেলো। দুর্গন্ধ যুক্ত পানির কারণে নৌকায় উঠতে ইচ্ছে করে না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের অবস্থা যে আরও ভয়াবহ হবে, সেটা বলাই যায়। কারণ সার্বিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। প্রথম আলোর নিউজটা দেখে খুব খারাপ লাগলো। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 23 days ago 

আমাদের দেশের মানুষ যত ধনী হোক না কেন যত শিক্ষিত হোক না কেন মানসিক দূষণ কিন্তু কমবে না। মানসিক দূষণ যেখানে বেশি সেখানে পরিবেশ দূষণ হবে। কারণ বিভিন্ন ধরনের বড় বড় শিল্প কারখানার লাভের চিন্তা করে মানুষ হাজার হাজার নদী ধ্বংস করতেছে। যে কেমিক্যাল গুলো পানির সাথে মিশিয়ে যাচ্ছে তাতো কখনো পানি ভালো থাকার কথা নয়। পত্রিকা পড়লে বোঝা যায় দেশের ক্ষয় ক্ষতি কি পরিমাণ হচ্ছে। লেখাগুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলো।

 22 days ago 

আমরা নদী কে আমাদের সুবিধামতো ব‍্যবহার করছি। অবস্থা টা এমন ঐটা যেন ময়লা ফেলার ভাগার। ক্রমেই অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। শিল্প কারখানার পাশে যে নদীগুলো আছে সেগুলো পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই না এগুলো করে তারা টাকার জোরে খুব সহজে পারও হয়ে যাচ্ছে। আপনার আমার স্মৃতিময় সেই নদী আজ ধ্বংসের মুখে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 61620.03
ETH 3394.18
USDT 1.00
SBD 2.50