আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [ ত্যাগের মহিমা ]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আশা করছি সবাই ভালো আছেন। শুরুটা করছি আজ একটু ভিন্নভাবে, কারণ ত্যাগের মহিমায় আলোকিত হওয়ার একটা মাস শেষ করলাম আমরা মাত্র। তাই প্রত্যাশা করছি ত্যাগের মহিমায় আলোকিত হয়েছে সকলের হৃদয়। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় আমরা জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে পরিবর্তন করে ফেলেছি, যার কারনে আমাদের কাছে যে কোন ক্ষেত্রে ত্যাগের কোন গুরুত্ব নেই বরং আমরা সর্বদা ভোগ কিংবা বিলাসের ক্ষেত্রে একটু বেশী আগ্রহী। দেখুন সবাই সবটা পারে না, হয়তো পারার চেষ্টা করে ঠিকই কিন্তু তাই বলে পারতেই হবে এই কথা কিন্তু জোর দিয়ে বলতে পারবেন না। আমরা সবটা চাই, সকল ক্ষেত্রে নিজের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চাই কিন্তু সেখানে যখন ব্যর্থ হই, তখনই আমরা নীতি চুত্য হয়ে পরি এবং ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে সেটা অর্জন করার চেষ্টা করি।

এই মানসিকতার কারনেই আমরা ত্যাগের বিষয়টি বুঝতে চাই না বা বুঝতে অপারগ। কারন আমরা যেটা নিয়ে চিন্তা করি না, সেটার প্রতি কোন আগ্রহ দেখাই না এবং চিন্তা/আগ্রহ না থাকার কারনে সেটা বুঝার আন্তরিকতা আমাদের মাঝে থাকে না। একটা কথা আমরা প্রায় শুনে থাকি, আর সেটা হলো ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিকে জাগানোটা খুবই সহজ কিন্তু যিনি না ঘুমিয়ে ঘুমের ভান ধরে আছেন তাকে কিভাবে জাগাবেন? এই কথাটি এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যে বুঝতে চাইছেন না তাকে কিভাবে বিষয়টি বুঝাবেন? আপনি যতই যুক্তি বা ব্যাখ্যা উপস্থাপন করুন না কেন, উনিতো কোনটাই গ্রহণ করবেন না। তাই এই ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে বলা যায় আপনার সকল চেষ্টা ব্যর্থ হবে।

কিন্তু কেন আমরা এই ধরনের মানসিকতাকে লালন করছি? কেন আমরা এর থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি না? আমি জানি না এই প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর আপনাদের জানা আছে কিনা অথবা আমরা এই প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে কি চিন্তা করছেন। তবে হ্যা, আমি আপনাদের মতামত জানার অপেক্ষায় রইলাম। কারন আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন, যাদের জ্ঞানের সীমা আমার থেকে অনেক বেশী গভীর এবং অনেক সুন্দরভাবে কোন বিষয় উপস্থাপন করতে পারেন।

light-gc4d595d87_1920.jpg

তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে করি সেটা হলো, ভোগের মানসিকতা আমাদের মনকে এতোটা বেশী আচ্ছন্ন কিংবা আমাদের বিবেককে এতো বেশী কলুষিত করেছে যে, আমরা এর বাহিরে ভিন্ন কিছু চিন্তা করতে পারি না। আমরা আদতে কোন বিষয়ে কাউকে ছাড় দিতে রাজি নই। যার উৎকৃষ্ট প্রমান হলো নিজের আপন ভাইকেও নূন্যতম ছাড় দেই না। কারন ঐ যে প্রাপ্তিটা আমার থাকবে, আমি কেন ছাড় দেব? অথচ এটা চিন্তা করি না যে, আমি যে বিষয়ে ছাড় দিতে প্রস্তুত না সে একই বিষয়ে অন্যরা কেন আমাকে ছাড় দিবে?

কি আজব অবস্থান আমাদের! আমরা নিজেরটা যতটা সুন্দরভাবে বুঝি কিংবা চিন্তা করি ঠিক ততোটা কম বুঝি অন্যদেরটা এবং অন্যদের বিষয়গুলো। অথচ আমার জন্য আমি যেটা ভালো হিসেবে বিবেচনা করছি, অন্যরা ঠিক তাদের জন্য সেটা ততোটা ভালো মনে করবে, এটাই ছিলো স্বাভাবিক বিষয় যা আমাদের মাথায় ঢুকে না বা আমরা বুঝতে চাই না। দেখুন যদি শুধুমাত্র প্রাপ্তি বা ভোগের মাঝে শান্তি লুকায়িত থাকতো, তাহলে কোন মা তার সন্তানদের জন্য কোন প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতেন না, কোন পিতা তার সন্তানদের দিকে চেয়ে নিজের পাতের খাবার তাদেরকে দিতেন না, কোন ভাই নিজের কষ্টের সম্পদ তার বোনকে দিতেন না, আর বাকীগুলো নাইবা বল্লাম।

life-g6a058d6d9_1920.jpg

আপনি দেখুন, একটু পরীক্ষা করুন ত্যাগ বা নিজের ভোগের বিষয় হতে অন্যদের কিছু দান করলে সেটাতে কতটা শান্তি বা হৃদয়ে প্রশান্তি মেলে। দশ টাকা হয়তো আপনার আমার জন্য কিছু না কিন্তু একজন পথ শিশু, যার কাছে এটা বিশাল কিছু। একদিন একজন পথশিশুকে একটা আইসক্রিম কিনে দিয়ে দেখুন, তার মুখের হাসিটা আপনার হৃদয়ের কতটা গভীরে প্রভাব ফেলতে পারে, একটু অনুভব করার চেষ্টা করুন তার সুখের হাসি কিংবা আপনার প্রতি তার কৃতজ্ঞতাট। কোন কিছু ত্যাগ করার মাঝে যতটা সুখ বা শান্তি আসে, ভোগ বা প্রাপ্তি মাঝে সর্বদা সেই সুখ বা প্রশান্তিটা পাওয়া যায় না।

পৃথিবীর শুরু হতে আজ পর্যন্ত যারা নানাভাবে নিজেদের ত্যাগের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন, তারা আদতে মোটেও বোকা ছিলো না, বরং আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন প্রকৃত সুখটা কোথায় রয়েছে। কিন্তু আমরা সত্যি খুবই নির্বোধ, যার কারনে এতো এতো দৃষ্টান্ত আমাদের সম্মুখে জ্বলজ্বল করছে কিন্তু আমরা সেগুলোর কোন প্রভাব নিজের হৃদয়ে ঢুকাতে পারছি না, আফসুস শুধুই আমাদের জন্য, আফসুস শুধুই আমাদের বিবেকের তরে! কবে আমাদের বোধদয় হবে, কবে আমাদের বিবেক জাগ্রত হবে এবং আমরা ত্যাগের মহিমায় নিজেদের হৃদয়কে আলোকিত করতে পারবো?

Image Taken from Pixabay 1 and 2

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break .png
Leader Banner-Final.pngbreak .png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break .png

Banner.png

Sort:  
 2 years ago 

অনেক সুন্দর ভাবে পোস্ট টি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সত্যি বলতে কি আমাদের চাওয়া এবং প্রাপ্তির মধ্যে ব্যত্যয় ঘটে তখনই আমরা যেকোন উপায়ে সে জিনিসটি অর্জন করতে চাই। মানুষের ক্ষতি করে হলেও। আরেকটা কথা বেশ ভালোই লেগেছে যে ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে ঘুম থেকে উঠানো যায় কিন্তু জাগ্রত মানুষ যদি ঘুমের ভান করে থাকে তাহলে তাকে কখনোই ঘুম থেকে উঠানো যাবে না। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

হ্যা, এটাই বাস্তবতা আমরা যতক্ষন ভান ধরে থাকবো ততোক্ষন কেউ আমাদের জাগাতে পারবে না।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Please check my new project, STEEM.NFT. Thank you!
default.jpg

Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.

Manually curated by @jasonmunapasee

r2cornell_curation_banner.png

"বোধোদয়" এর জায়গাটা আমাদের
লোভের কালিমায় গেছে লেপে,
তাইতো ত্যাগের মহিমা আজ
আবোল-তাবোল এ গেছে ঢেকে।

ভাবি একটা করি একটা
কাজে নাই কথার মিল,
কঞ্জুস মনটাকে তুলিয়ে ধরি
আমার দরিয়া দিল্।

 2 years ago 

বাহ দারুণ ছন্দে রিপ্লাই দিয়েছেন তো, সত্যি দারুণ হয়েছে। ধন্যবাদ

দোয়া করবেন ভাই।

 2 years ago 

একটা কথা আমরা প্রায় শুনে থাকি, আর সেটা হলো ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিকে জাগানোটা খুবই সহজ কিন্তু যিনি না ঘুমিয়ে ঘুমের ভান ধরে আছেন তাকে কিভাবে জাগাবেন

ভাই আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি অনেক কিছু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলাম। আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এরকমই যারা ঘুমিয়ে থাকে তাদেরকে জাগানো যায়, কিন্তু যারা ঘুমের ভ্যান করে থাকে তাদেরকে শত চেষ্টা করে জাগানো যায় না। কারণ সে নিজের ইচ্ছাতেই জাগতে চাচ্ছে না। আসলে আমাদের সমাজে এরকম অনেক মানুষ আছে। আমরা শুধু ভোগ করতে চাই। কাউকে কিছু দিতে চায় না। আসলে ভোহের মাঝে সুখ নেই,ত্যাগের মধ্যে রয়েছে সুখ এবং শান্তি। তাই শান্তি এবং সুখে অর্জন করতে হলে ত্যাগ করা শিখতে হবে। তাহলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা হবে উন্নত এবং শান্তিময়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে কথাগুলো তুলে ধরার জন্য।

 2 years ago 

আমরা বেশ উচ্চস্বরে সর্বদা বলে থাকি, সচেতন হতে হবে, সচেতন হওয়া প্রয়োজন কিন্তু কাদের সচেতন করবো, যারা জেগে ঘুমিয়ে আছেন তাদের? এটা কোনদিনও সম্ভব না।

 2 years ago 

আমাদের বিবেক সত্যিই ঘুমিয়ে আছে,কিছুতেই জাগ্রত করতে পারছিনা কারণ জাগ্রত করতে চাচ্ছিনা আসলে।ত্যাগ এর শান্তিটা যদি বুঝলাম তাহলে পৃথিবী হতো সর্গ।

 2 years ago 

সত্যি কবে যে আমাদের বিবেক জাগ্রত হবে, আমরা প্রকৃত সত্যগুলো অনুধাবন করতে পারবো!

 2 years ago 

ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিকে জাগানোটা খুবই সহজ কিন্তু যিনি না ঘুমিয়ে ঘুমের ভান ধরে আছেন তাকে কিভাবে জাগাবেন?

ভাইয়া আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা লিখেছেন। আসলে যে ঘুমিয়ে থাকার ভান করে থাকে তাকে কখনো জাগানো যায় না। আমরা যদি নিজেরাই নিজের বিবেককে জাগ্রত করতে না পারি তাহলে অন্য কেউ কখনই নিজের বিবেককে জাগ্রত করতে পারবে না। নিজের প্রচেষ্টায় আমরা যদি নিজের মানসিকতাকে পরিবর্তন করি তাহলেই সব কিছু বদলানো সম্ভব। কিন্তু কেন আমরা এই মানসিকতা লালন করি তা হয়তো আমার জানা নেই তবে এতটুকু বলতে পারি আমরা যদি এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই তাহলে অবশ্যই ভোগের চেয়ে তাদের মাঝে বেশি প্রশান্তি খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। আমরা কোন কিছু ভোগ করতে চাই কিন্তু ত্যাগ করতে চাই না। আমরা যদি ত্যাগের মহিমা উপলব্ধি করতে পারি তবেই নিজের মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারব। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ♥️♥️

 2 years ago 

ভোগ কোনদিনও হৃদয়ে প্রশান্তি আনে না, বরং হৃদয়কে আরো বেশী দুর্বল করে দেয় কিন্তু ত্যাগ সর্বদা হৃদয়ে প্রশান্তি আনয়ন করে এবং হৃদয়ে আরো বেশী চঞ্চলতা তৈরী করে।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 68220.71
ETH 3321.59
USDT 1.00
SBD 2.74