স্মৃতিচারণ:"ফিরে পেলাম একফালি খেজুর পাড়ার শৈশব"
নমস্কার
ফিরে পেলাম একফালি খেজুর পাড়ার শৈশব:
শৈশব,হ্যাঁ বন্ধুরা আমি সেই শৈশবের কথা বলছি যা আমরা ফেলে এসেছি।যা বারবার হাত হাতড়েও তাকে কাছে পাবো না।পাবো না সেই আনন্দময় মুহূর্তগুলি।আর শৈশবকে পারবো না কখনো মনের গভীর বাধন দ্বারা বেঁধে রাখতে।
সময় কত দ্রুত চলে যায় তাইনা!এইতো সেদিন শৈশব কাটালাম, মনে হচ্ছে চোখের সামনে উজ্জ্বল তারার মতো জ্বলজ্বল করছে।কাক ভোর হতেই হাতে লাঠি নিয়ে কখনো আবার বাবা কিংবা মায়ের সঙ্গে খেজুর পাড়তে চলে যেতাম।আবার কখনো নিজেই খেজুর গাছে উঠে খেজুর পাড়তাম,আর গাছ তলা থেকে খেজুর কুড়াতাম।আমাদের ও আমার জেঠুদের অনেকগুলো খেজুর গাছ ছিল তখন।যদিও পরবর্তীতে আমাদের বাড়ির গাছগুলো সব কেটে ফেলা হয়।যাইহোক আবছা অন্ধকারে খেজুর পাড়তে যেতে হতো নাহলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাখিরা কিচিরমিচির শব্দে সব খেজুর খেয়ে নিতো।কারন তাদের মধ্যেও তো আন্দোলন হয়, তারাও তো খাওয়ার জন্য লড়াই কিংবা ঝগড়া করে!খাওয়ার লড়াইয়ে মেতে ওঠে সবাই।তারপর দিনে কত ছেলেমেয়ে এসে গাছতলায় যে উঁকি মেরে খেজুর কুড়াতো তার ইয়ত্তা নেই।
সেই স্মৃতিকে ঝালাই দিতে আবারো এক টুকরো শৈশবে ফিরে গেলুম।কিন্তু ছোট্টবেলায় খেজুর কুড়িয়ে মুখে অনাবিল হাসি নিয়ে যে আনন্দটা পেতাম।এখন সেই আনন্দ কোথায় যেন ফিকে হয়ে গিয়েছে।সেই আনন্দ যেন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে উধাও হয়ে মিলিয়ে গেছে আত্মহারাদের মাঝে।বুঝলুম--থাক অতীতগুলি স্মৃতির পাতায় ঝকঝকে হয়ে,তাকে বড্ড বেশি সেখানেই মানাবে।।
সেই শৈশবের চেনা জায়গা ছেড়ে যখন কলকাতার পা রেখেছিলাম কয়েক বছরের জন্য।তখন বড্ড বেশি ব্যথা দিতো এই শৈশবের স্মৃতিগুলো।তাড়িয়ে বেড়াতো আমার হৃদয়কে,তখন আর খেজুরের মুখখানিও দেখতে পেতুম না।কিন্তু গ্রামের ভালোবাসার টানে যখন আবারো ফিরে এলাম তখন আবার দেখলুম সেই চিরচেনা প্রিয় খেজুর।কিন্তু সেই আনন্দটা ঠিক খুঁজে পাচ্ছি না প্রতিনিয়ত পাকা খেজুর খেয়েও।
কয়েক দিন ধরে বেশ গরম পড়েছে।আমাদের গাছের খেজুরগুলি রেমাল ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে মাথা উঁচু করে রয়েছে।যদিও কিছু খেজুর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।রোজ বেশ খেজুর পাকা শুরু করেছে।প্রতিদিন ভোরবেলা তাই ঘুম থেকে উঠেই কঞ্চির একটি লম্বা লাঠি হাতে ঝাকি নিয়ে বাইরে বের হওয়া।তারপর লাঠি দিয়ে খেজুর গাছের কাধিতে নাড়া দিয়ে খেজুর পাড়ার আনন্দ ঝপাঝপ শব্দে।এরপর খেজুর কুড়ানোর মজা।যেহেতু খেজুরের পরিমাণ বেশি তাই কালো হয়ে যাওয়া খেজুরগুলি আর কুড়িয়ে নেওয়া হয় না।তাছাড়া সারাদিনেও আর খেজুর গাছতলায় যাওয়া হয় না।আমাদের খেজুর গাছটি যেহেতু রাস্তার পাশে তাই বিভিন্ন পথিক এবং আমাদের প্রতিবেশীরা দিনের নানা সময়ে খেয়ে থাকেন।আসলে খেজুর বেলা বাড়লেই আবার কালো রঙের হয়ে যায়, মাঝে মাঝে আবার ফেলেও দিতে হয়।আবার যেদিন অনেক খেজুর পাই সেদিন চেনা কাউকে ডেকে দিয়ে দিই।গতকাল রাতে দেখলাম,, একদল শিয়াল আমাদের খেজুর গাছতলা থেকে পড়ে থাকা সমস্ত খেজুর খাচ্ছে আর মাঝে মাঝেই খ্যাক-- খ্যাক--- করে ঝগড়া করছে।
গতদিন যখন ট্রেনে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম একজন ছোট ছোট প্যাকেটে করে এই দেশি খেজুর বিক্রি করছে ।সেটাও আবার 10 টাকা করে প্যাকেট,আবার দেখুন অনেকে টাকার বিনিময়েও খেজুরের সন্ধান-ই পাচ্ছে না।আর আমরা কালো রঙের হয়ে গেলেই ফেলে দিচ্ছি, কত অদ্ভুত ব্যাপার তাইনা!খেজুর জিনিসটা একদিনের বেশি রাখাও যায় না রং বদল হয়ে কেমন একটা হয়ে যায় যেন।যাইহোক আজ এই খেজুরগুলিই পেড়ে আনলাম গাছ থেকে।মনে হচ্ছিলো স্বপ্নচারিতার মতো এক ফালি আনন্দ টেনে হিঁচড়ে জোর করে যেন ছিনিয়ে আনলাম শৈশবের সেই খেজুর পাড়াকে কেন্দ্র করে।☺️☺️
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
টুইটার লিংক
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Thanks.
ঠিক বলেছেন ছোটবেলায় খেজুর পড়া নিয়ে অনাবিল হাসিতে মুখরিত হয়ে উঠতাম। খেজুরপাড়ার আজকের এই দৃশ্যটা দেখে সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমিও ছোটবেলায় অনেক খেজুর পেরেছি এবং এখনো পেরে খাই। ধন্যবাদ দিদি আপনাকে এমন সুন্দর একটি মুহূর্ত আমাদের দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
আপনি এখনো খেজুর পেড়ে খান জেনে ভালো লাগলো, ধন্যবাদ ভাইয়া।ভাইয়া, পেড়ে বানানটি এটা হবে কেমন!
দেশি খেজুর খেতে ভালো লাগে একদমই ছোটতে মানে খেজুরের ভীতরের স্বাস যখন নরম থাকে তখন আর একদম পেকে গেলে ওর ছাল গুলো খুব মিষ্টি লাগে।আপনি একদম মিষ্টি পাকা পাকা খেজুর পেড়েছেন দেখছি।আসলে এখন খেজুর পাড়লেই ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায়।অপেক্ষায় থাকতাম কখন পাখি দু একটা খেজুর ফেলবে আর আমরা তা কুড়িয়ে পাবো।ধন্যবাদ দিদি খেজুর পাড়ার অনুভূতি ভাগ করে নেয়ার জন্য।
হ্যাঁ দিদি ,নরম বেলায় কাঁচা খেজুরের বিচি খেতাম ছোটবেলায়।এখন আর ভালো লাগে না খেতে,ধন্যবাদ আপনাকে।
খেজুর আমার খুবই প্রিয় একটি ফল। প্রত্যেক বছর আমি আমাদের কাছ থেকে খেজুর পেড়ে খেয়েছি। তবে এ বছর আর স্বভাব হচ্ছে না যেহেতু বাড়িতে নাই। যাইহোক আপনার এই সুন্দর একটি পোস্ট পড়ে আমার অতীতের অনেক স্মৃতি মনে পড়ল। বেশি দারুন ছিল আপনার আজকের পোস্ট। এ খেজুর খেলে কিন্তু শরীরের খুব উপকার।
ভাইয়া,আপনার মন্তব্যে অনেক বানান ভুল রয়েছে।আশা করি পরবর্তীতে খেয়াল রাখবেন, ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।আসলেই খুবই উপকারী খেজুর।