বাস্তবধর্মী শৈশবগল্প: "বাইক সমাচার"

in আমার বাংলা ব্লগ7 hours ago (edited)

নমস্কার

কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন ঈশ্বরের কৃপায়।আমিও মোটামুটি ভালোই আছি।এইজন্য আজ চলে আসলাম আমি @green015 যথা নিয়মে আপনাদের মাঝে নতুন একটি শৈশবের বাস্তব গল্প শেয়ার করতে।

বাস্তবধর্মী শৈশবগল্প: "বাইক সমাচার"

IMG_20240814_001932.jpg
সোর্স

আমরা সবাই ফিরে পেতে চাই আমাদের শৈশবের কিছু সুন্দর মুহূর্তগুলিকে।কিন্তু কিছু মুহূর্ত এমন স্মৃতি হয়ে যায় যেটির সম্মুখীন আমরা দ্বিতীয়বার হতে চাই না।তেমনি একটি শৈশবের বাস্তবধর্মী গল্প বলবো আজ আপনাদের সঙ্গে।তবে আজকের বলা শৈশবের ঘটনাটি ঘটেছিল আমার সঙ্গে।যদিও সেই স্মৃতি মনে পড়লে আজো আমার হাসি পায় আবার ক্ষোভ জন্মায় নিজের উপর।তাই সেই শৈশবে ঘটা ঘটনাটি শেয়ার করবো আজ আপনাদের সঙ্গে। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা শৈশবের ছোট গল্পখানি।তো চলুন শুরু করা যাক এই গল্পের মূল কাহিনীতে--

দিনটি ছিল মঙ্গলবার।সময়টা ছিল ফুরফুরে হাওয়ায় এক মনোরম পরিবেশ।আমাদের ওখানে মঙ্গলবার তখন হাট বাজারের দিন ছিল।বহু দূর দুরান্ত থেকে বাজার করতে আসতো মানুষেরা।যদিও এখন সেই বাজার অনেকটাই শ্রীহীন হয়ে পড়েছে।কারন প্রত্যেক গ্রামের মোড়ে মোড়ে এখন বাজার বসে।যেটা আগে সম্ভব ছিল না,যাইহোক একদিন মঙ্গলবার গেলাম বাজারে।বাজারের মধ্যে যেহেতু বাবার গামছা-লুঙ্গির বসতি দোকান ছিল তাই বাবা প্রথমে গিয়েই সকালে বাজার সেরে নিতেন।তারপর সেই ব্যাগ ভর্তি সবজির বাজার রেখে দিতেন দোকানে।যদিও আমাদের বাড়িতেও প্রচুর সবজি লাগানো হয়ে থাকে।তবে আমার পরিবার একটু সবজি ও মাছ খেতে বেশিই ভালোবাসে তাই এই সবজির সমাহার কেনা আরকি।আর প্রথম সকালে নতুন যখন বাজার বসে তখন সবজি কিনলে দাম একটু বেশি নিলেও টাটকা সবজি কেনা যায়।আর আমার বাবা তাই বাজারের সেরা ও টাটকা সবজিই কিনতে পছন্দ করেন সবসময়।সেই দিন কোনো ক্রমে সবাই কাজে ব্যস্ত।আমার ঘাড়ে দায়িত্ব পড়লো বাজারের ব্যাগ নিয়ে আসার।আমাদের বাড়ির অন্যরা নানা কাজে ব্যস্ত তখন।

আমাদের বাড়ি থেকে বাজারের দূরত্ব ছিল মাত্র 2 -2.5 কিলোমিটার।আমি গ্রামের মেয়ে তাই হাঁটতে ভয় পায় না বরং বেশ ভালোবেসেই হেঁটে পথের দূরত্ব শেষ করতে পারি।যাইহোক সেদিনও বাবার কাছ থেকে বাজারের সেই সবজি ভর্তি ব্যাগ নিয়ে হেঁটে আসলাম এক কিলোমিটারের মতো।তখনই দেখা হয়ে গেল আমার এক কাকার সঙ্গে।

ছোটবেলায় যখন বাইকে চড়তাম তখন দুইপাশে পা দিয়েই।কিন্তু তখন আমি বেশ বড়ো হয়ে গিয়েছি,তাছাড়া বাইকে চেপে বসা হলেও তখন আমার সঙ্গে কিছুই থাকে না বলতে গেলে।তাই বাড়তি সমস্যায় পড়তে হয় না, আমার কাকা তখন তার বাইকে করে বাড়ির দিকে যাচ্ছে।পথে দেখলেন আমি হেটে হেটে যাচ্ছি বাজারের ব্যাগ নিয়ে তাই বললেন চলে আয়---আমি তো বাড়িতেই যাচ্ছি ভাত খেতে।কারন কাকার নিজের ব্যবসা ছাড়াও সে বাইকের ভাড়াও টানতেন।প্রথমত আমি ইতস্তত করলাম, কিন্তু কাকা বললো---- ভয় নেই তুই উঠে বস।

কিন্তু আমার মাথায় তখন একটি চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে আমি বসবো কিভাবে এই ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে।সেটাও আবার একপাশে পা দিয়ে,,, তবুও ভেবেছিলাম আমি পারবো।তাই সাহস করে উঠে বসলাম বাইকের একপাশে পা দিয়ে ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে, কিন্তু মনে বড্ড ভয়।ধরার ঠিক লাইন খুঁজে পাচ্ছি না, কাকা বললো---বসেছিস।একটুখানি জবাব দিলাম---হু।

তারপর বাইকে স্টার্ট দিয়ে ওমনি যেই চালান দিলো আমি তো বাজারের ব্যাগ নিয়ে ছিটকে গিয়ে পড়লাম মাটি আর পিচের রাস্তাতে।মাটির ধুলায় তখন আমার ব্যাগের কিছু সবজি লুটোপুটি খাচ্ছে,বেশ ভয় পেলুম।সঙ্গে হাতে ও কোমরে একফালি ব্যথা অনুভব করলাম।কাকা বললো----ঠিক আছিস তো ।আমাকে আবার উঠতে বললে আমি আর উঠি নাই,বললাম--- আমি হেঁটে চলে যেতে পারবো।তাই কাকাও চলে গেলেন, ততক্ষনে আমাদের পাশের গ্রামের এক পরিচিত লোকের দোকান ছিল সেখানে।বলতে গেলে তিনি আমার এক বান্ধবীর বাবা,আর আমার মেজো জেঠু যেহেতু চেয়ারম্যান তাই অনেক মানুষ আমাদেরকেও চেনেন।আমরাও কমবেশি অনেককে চিনি,যাইহোক সেই ব্যক্তি আমাকে ধরে তার দোকান ঘরে বসালেন আর আমার মাথায় জল দিয়ে হাত বুলিয়ে দিলেন।আমার তখন খুবই মাথাও ঘুরছে,,পড়ে থাকা কিছু সবজি তারা কুড়িয়ে ব্যাগে রাখলেন।তারপর বললেন---মা তুমি একটু রেস্ট নাও বসে,যখন ঠিক হবে তখন বাড়ি যেও ধীরে ধীরে হেঁটে।আমি ওখানে মোটামুটি 15- 20 মিনিট অপেক্ষা করেছিলাম তারপর বাজারের ব্যাগ নিয়ে হেঁটে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম।

কিন্তু সেই দিন নিজের প্রতি এতটা লজ্জা,ক্ষোভ আর অভিমান জন্ম নিয়েছিলো যে,,সারাপথ শুধু একটি কথাই ভাবতে ভাবতে বাড়ি গিয়েছি----বাইকে না উঠলেই ভালো করতাম বোধহয়।।


আশা করি আমার আজকের অনুভূতিগুলি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।পরের দিন আবার নতুন কোনো বিষয় নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে, ততক্ষণ সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

পোষ্ট বিবরণ:

6nSeSEzKEwjJN68tMqgZXvpyk1cf2ihqXgmWESDgXSh21PkpkXyXwzmWEkSA7U2PjRr7VoGxjyzQFnZHCkVBWn57JTVUvY7omc512mhJJX...vDZX3Fcaov38Zxjxq21rAE9wN1b8HnrBKZamZjaRXZMJVUcaVKGLWFRFVNG6MXCo9ptvvGTefY61oasZ4TrQFVwMiYWBFUH8ivxFm1LbtvBRqtkowye4ZCeEyk.png

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং: "শৈশবের গল্প"
ডিভাইসpoco m2
অভিবাদন্তে@green015
লোকেশনবর্ধমান

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

আমার পরিচয়
আমি রিপা রায়।আমার স্টিমিট ইউজার আইডি @green015.আমি একজন ভারতীয়।আমি একজন বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করি।আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।বাংলা ভাষায় মন খুলে লেখালেখি করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।

IMG_20240429_201646.jpg
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 6 hours ago 

Thanks.

 6 hours ago 

খুব আশা নিয়ে পড়ছিলাম গল্পটা কিন্তু অল্পতেই শেষ হয়ে গেল,আরও কিছুটা অংশ লিখলে হয়তো মনের তৃপ্তি মিটতো।যাইহোক আপু, আগেকার সময়ে সপ্তাহে ১দিন বা ২দিন হাট বসতো। আর এখন তো সেগুলো নেই। তবে সেদিন আপনি বাজার বাড়িতে নেয়ার দায়িত্ব পেলেন,আর যেতে যেতে কাকার সাথে দেখা।কিন্তু তারপর কি হলো,তা জানার অপেক্ষায় রইলাম।

 6 hours ago 

ওহ,@bristy1আপু দুঃখিত।এখন পড়লে আশা করি আপনি পরিপূর্ণতা পাবেন।ধন্যবাদ আপনাকে।।

 6 hours ago 

হ্যা আপু মাত্র পড়লাম,আসলে এমন গল্পগুলো পড়তেই ভালো লাগে।ধন্যবাদ আপনাকে।

 6 hours ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপু,আপনি সময় নিয়ে পড়েছেন জেনে খুশি হলাম💝।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60814.60
ETH 2715.64
USDT 1.00
SBD 2.44