সমাজ পরিবর্তনে আমার ভাবনা(পর্ব ০৪) শিক্ষাব্যবস্থায় ৩টি আমূল পরিবর্তন দরকার | 3 major changes needed in Edu system [10% @shy-fox
ভূমিকাঃ
ছোট্ট কোন পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেক সময় সমাজের অনেক বড় পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব। সেরকমই কিছু চিন্তা আমার মাথায় প্রায়শই ঘুরপাক খায় কিন্তু সেগুলো কখনো কারো কাছে বলা হয়ে ওঠেনা। মাঝে মাঝে ডায়েরিতে লিখে থাকি। হঠাৎ করে ভাবলাম ব্লকচেইনে এই বিষয়গুলো শেয়ার করে দেয়া যাক। হয়তো আজকে কেউ পদক্ষেপ নেবে না অথবা নেওয়া সম্ভব হবে না কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে হয়তোবা কেউ না কেউ এই পদক্ষেপ গুলো সমাজে বাস্তবায়ন করে বড় কোনো পরিবর্তন সাধন করতে পারে।
সেরকমই চিন্তাভাবনা থেকে আমার বাংলা ব্লগ
কমিউনিটি-তে সমাজ পরিবর্তনে আমার ভাবনা নামে একটি সিরিজ লিখছি যেখানে সেই সকল ক্ষুদ্র পরিবর্তনের কথা গুলো শেয়ার করবো যেই পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা সমাজ ব্যবস্থায় একটা বড় পরিবর্তন আনতে পারব অর্থাৎ আমি যদি দায়িত্বশীল হতাম তাহলে কি পরিবর্তন করতাম। চলুন শুরু করা যাক।
পর্ব ০৪: বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাব্যবস্থায় কয়েকটি আমূল পরিবর্তনের ধারণা
শিক্ষা একটা জাতির মেরুদন্ড। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতির মেরুদন্ড ততো বেশী মজবুত। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে শিক্ষার মাধ্যম এবং গ্রহণের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারই আলোকে আমার ব্যক্তিগত কিছু উপলব্ধি হলঃ শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বেশকিছু আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা খুব বেশি জরুরি। যুগের সাথে সাথে প্রযুক্তির এই যুগে যেখানে তথ্যনির্ভর সবকিছু সেই যুগে এসে শিক্ষাব্যবস্থা যদি আগের ধ্যান-ধারণা ও পদ্ধতি মোতাবেক পরিচালিত হয় তাহলে শিক্ষা অর্জনের যে মূল লক্ষ্য রয়েছে সেটা থেকে আমরা অনেকটাই দূরে চলে যাবো। তাই শিক্ষা ব্যবস্থায় কেন এবং কি ধরনের আমূল পরিবর্তন দরকার সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমি আজকে আপনাদের মাঝে তিনটি পয়েন্ট আলোচনা করার চেষ্টা করব।
প্রথমত আমরা যদি আমাদের চারপাশে দেখি তাহলে দেখব তথ্য পাওয়া আমাদের জন্য খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। আগে এমন একটা দিন ছিল যেখানে তথ্যের জন্য মানুষকে অনেক দূর দূরান্ত পর্যন্ত ভ্রমণ করতে হয়েছে এবং জ্ঞান আহরণ করার জন্য অনেক দূর দূরান্তে গিয়ে সেটাকে সংগ্রহ করতে হয়েছে। আমাদের এক শিক্ষক একবার বলেছিলেন, তিনি যখন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন তখন তিনি লাইব্রেরীতে বসে চার/পাঁচ ঘন্টা সময় নিয়ে তার শিক্ষাক্রম এর সিলেবাসকে খাতায় লিখে নিয়ে এসেছিলেন। অর্থাৎ ফটোকপি মেশিন তখন ছিল না।
বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাই কোন একটা মিটিং এর সময় যিনি সদস্য সচিব থাকেন তিনি চুপচাপ বসে থাকেন অর্থাৎ কোন কিছুই লেখেন না। তিনি একটা রেকর্ডার চালু করে দেন এবং পরবর্তীতে বাসায় বসে বসে সে গুলোকে লিপিবদ্ধ করে ফেলেন অথবা কোন ভয়েস টাইপিং এর সাহায্যে সে গুলোকে সহজে টাইপ করিয়ে নেন।
তথ্য প্রযুক্তির যুগে এই যে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে সেই পরিবর্তনগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম এবং সিলেবাসের পরিবর্তনটা অনেক বেশি জরুরী। আমরা মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশে দেখতে পাই যেখানে একটা গতানুগতিক সিলেবাস দেওয়া থাকে এবং সেখান থেকে বেশ কিছু জিনিস মানুষকে মুখস্ত করতে হয়। শিক্ষার্থীরা যে বিষয়গুলো গুগলে মাত্র এক মিনিট খোঁজাখুঁজি করলেই পেয়ে যেতে পারে সেই সকল বিষয়কে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে মাথাকে মোটা করা কিংবা মাথার ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলার কোন দরকার আছে বলে আমি বর্তমান সময়ে পেক্ষাপটে মনে করিনা।
একসময় আর্জেন্টিনার রাজধানী কোথায়, ভেনিজুয়েলার মুদ্রার নাম কি এই জিনিস গুলো মুখস্থ করার মতো বিষয় ছিল কিন্তু বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে যেখানে এই ধরনের তথ্যগুলো মাত্র ২০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে পাওয়া যাচ্ছে সেই সকল তথ্য মাথায় নিয়ে সময় অপচয় করার মতো সুযোগ বা প্রেক্ষাপট আমাদের বর্তমান সময়ের এই পৃথিবীতে আছে বলে আমি মনে করি না। অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আমাদের উচিত এমন একটা ব্যবস্থা যেখানে এই ধরনের বিষয়গুলো আমাদের মাথায় জোর করে ঢোকানোর চেষ্টা করা হবে না বরং কোন ধরনের তথ্য আমাদের মাথায় প্রবেশ করাতে হবে অথবা কিভাবে করে আমরা অথেন্টিক উৎস হতে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারব সেই বিষয়গুলো আমাদেরকে শেখানো হবে।
দ্বিতীয়তঃ এমন কিছু বিষয়কে সিলেবাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা, যে বিষয়গুলো দিয়ে আসলে প্রোডাক্টিভ কাজ করা যাবে। এমন কিছু বিষয় বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখানো হয় যে বিষয়গুলোর আসলে কোন প্রয়োগ নেই। কলা, সাহিত্য এগুলো অবশ্যই প্রয়োজনীয় জিনিস এবং দরকার আছে কিন্তু এর বাইরে এমন কিছু বিষয়বস্তু রয়েছে যেগুলো কেবলমাত্র পরীক্ষায় নম্বর পাওয়ার জন্য আমাদের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শেখানো হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক বিষয়ের একটা আউটকাম থাকা উচিত কারণ কোন একটা ডিগ্রী অর্জন করার পর অথবা একটা বিষয় এক বছর ধরে কোন একটা শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করার পর যদি সেটার কোনো আউটকাম না থাকে তাহলে সেই শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য বৃথা সময় নষ্ট করার কোন মানেই হয়না।
আমাদের দেশ বাংলাদেশে অনেক সময় দেখা যায় এমন কিছু বিষয়ে পাঠদান করানো হয় যে বিষয়ে ছাত্ররা কেবল ভর্তি হয় এবং পরীক্ষায় শুধু নম্বর পাওয়ার জন্য লিখে কিন্তু তারা এই বিষয়ে কোন দক্ষতা বা নলেজ কে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে লাগায় না বরং তারা সরকারি চাকরি বা ব্যাংকের জন্য আলাদা কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকে। একটা সময়ে গিয়ে চাকরি নিয়ে তারা দেশের অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ বা ব্যাংকিং খাতে কাজ করে থাকেন। এক্ষেত্রে সহজেই প্রশ্ন চলে আসে যে, যেই বিষয়ে তাকে চার বছর সময় নিয়ে অধ্যয়ন করানো হল সেই বিষয়ের কি আউটকাম আমরা পেলাম অথবা কোথায় তিনি তাঁর এই জ্ঞান কে প্রয়োগ করতে পেরেছেন।
এক্ষেত্রে আমার সোজাসাপ্টা কথা হচ্ছেঃ এমন কোন বিষয়ে আমাদেরকে পড়ানো উচিত যেটার যুগের সাথে অবশ্যই কোন না কোন প্রয়োজন রয়েছে এবং সেটা আউটকাম ভিত্তিক হবে। বর্তমান এই আধুনিক সময়ে যেখানে মানুষের সময়ের অনেক দাম এবং মানুষ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে সেই সময়ে ৪/৬/১০ বছর ব্যাপী কোন বিষয়ে অধ্যয়ন করে তার কোন আউটকাম থাকবে না এত বাজে সময় নষ্ট করার মত সময় মানুষের থাকা উচিত নয়। তাই এই দিকটার কথা চিন্তা করে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রোডাক্টিভ কোন কাজ করা যাবে অথবা কোন সৃষ্টিশীল কিছু করা যাবে এইরকম বিষয়বস্তুগুলোকে শুধুমাত্র বাছাই করে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে পড়াশোনা চালানো উচিত।
তৃতীয়তঃ প্রযুক্তির এই যুগে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলাতে গেলে প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্যথায় আমরা কোন একটা স্বাভাবিক কাজ করতে গেলে অনেক বেশি সময় ব্যয় করে ফেলব। তাই প্রযুক্তির এই যুগে যারা প্রযুক্তিনির্ভর কোন অফিশিয়াল কাজ করতে তাদেরকে প্রযুক্তির যে টেকনিকগুলো রয়েছে সেই টেকনিকগুলোকে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করে খুব ভালো করে শেখানো উচিত যাতে করে তারা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে তাদের কাজ করার গতিকে অনেক বাড়িয়ে নিতে পারেন।
আমরা এরকম অনেক শিক্ষিত মানুষজনকে দেখতে পাই যারা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে কম্পিউটারের মাউস ধরতে পারেন না যদিও তাদের অনেক জ্ঞান ও দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু বর্তমান এই তথ্য প্রযুক্তির সময়ের প্রেক্ষাপটে অবশ্যই মানুষকে আইটি সেক্টরের সাথে সম্পর্কিত কাজগুলো শিখে নিতে হবে অন্যথায় তিনি যত ভালোই অফিস ব্যবস্থাপক হোন না কেন তিনি তার অফিসকে ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
আমাদের এক বস একবার বলেছিলেন যদি আপনি কম্পিউটার না শিখেন তাহলে আগামী দিনগুলোতে আপনি অনেক বেশি শিক্ষিত হওয়ার পরও নিরক্ষর এর মত হয়ে যাবেন। তাই যে সকল মানুষজন ভবিষ্যতে কোনো না কোনো অফিসে বা কোনো না কোনোভাবে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত হবেন তাদের কর্মক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত খুঁটিনাটি টেকনিকগুলো এবং অফিশিয়াল কাজ করার সাধারণ ধারণাগুলো অবশ্যই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে হাতে-কলমে শিখিয়ে দেওয়া উচিত যাতে করে তারা যেই কাজটি করেন সেই কাজটি তাদের কর্মস্থলে গিয়ে খুব ভালোভাবে এবং দক্ষতার ও দ্রুততার সাথে সমাপ্ত করতে পারেন।
শেষকথাঃ
শিক্ষা ব্যবস্থায় কোন পরিবর্তন বা পরিবর্ধন এর দায়িত্ব আমার হাতে নেই বরং এ ধরনের আমূল পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে কাজ করতে পারে। আমাদের মত সাধারণ মানুষজনের কাজ হয় শুধুমাত্র বলে বেড়ানো যদি কখনো কর্তৃপক্ষের নজরে আসে তাহলে হয়তবা তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারবেন তাই আজকে আপনাদের মাঝে এই তিনটি বিষয় শেয়ার করার চেষ্টা করলাম। কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে অথবা কেউ দ্বিমত পোষণ করলে অথবা কোন নতুন কিছু সংযোজন করার থাকলে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
এই সমাজ পরিবর্তনে ধারণা সিরিজে আমার লিখা পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
পর্ব | প্রকাশের তারিখ | বিষয়বস্তু |
---|---|---|
০১ | ১৬/১১/২০২১ | নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী দোকান খোলা রাখা |
০২ | ১৮/১১/২০২১ | অপ্রয়োজনীয় জিনিস এক্সচেঞ্জঃ মানবতার দেয়াল |
০৩ | ২২/১১/২০২১ | ধুমপানের উপর অত্যাধিক ট্যাক্স আরোপ |
আমি কে
আমি সাইফুল বাংলাদেশ থেকে। পেশায় শিক্ষক, সাবেক ব্যাংকার। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি ব্লগে শেয়ার করতে ভালবাসি। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস এবং সবার থেকে শিখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমার লেখা থেকে কেউ যদি উপকৃত হয় বা নতুন কিছু শিখতে পারে তবেই আমার লেখালেখি সার্থক। |
---|
আমি আপনার সাথে একমত। যে বিষয় গুগলে সার্চ দিলে পাওয়া যায় এগুলো মাথায় ঢুকিয়ে লাভ কি বরং যা গুগোল এ পাওয়া যায় না সেটি নিয়ে গবেষণা করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন আর সঠিক ব্যবহার জানার জন্য প্রযুক্তি কেন্দ্রীক পড়ালেখাও করা দরকার। প্রতিটি কথাই সঠিক। ধন্যবাদ ভাই ভালো থাকবেন।
নীতিনির্ধারকদের এই সকল বিষয় নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে। ধন্যবাদ আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন