সমাজ পরিবর্তনে আমার ভাবনা || পর্ব ২ || মানবতার দেয়াল || Wall of Humanity [10% @shy-fox]
ভূমিকাঃ
ছোট্ট কোন পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেক সময় সমাজের অনেক বড় পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব। সেরকমই কিছু চিন্তা আমার মাথায় প্রায়শই ঘুরপাক খায় কিন্তু সেগুলো কখনো কারো কাছে বলা হয়ে ওঠেনা। মাঝে মাঝে ডায়েরিতে লিখে থাকি। হঠাৎ করে ভাবলাম ব্লকচেইনে এই বিষয়গুলো শেয়ার করে দেয়া যাক। হয়তো আজকে কেউ পদক্ষেপ নেবে না অথবা নেওয়া সম্ভব হবে না কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে হয়তোবা কেউ না কেউ এই পদক্ষেপ গুলো সমাজে বাস্তবায়ন করে বড় কোনো পরিবর্তন সাধন করতে পারে।
সেরকমই চিন্তাভাবনা থেকে আমার বাংলা ব্লগ
কমিউনিটি-তে সমাজ পরিবর্তনে আমার ভাবনা নামে একটি সিরিজ লিখছি যেখানে সেই সকল ক্ষুদ্র পরিবর্তনের কথা গুলো শেয়ার করবো যেই পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা সমাজ ব্যবস্থায় একটা বড় পরিবর্তন আনতে পারব অর্থাৎ আমি যদি দায়িত্বশীল হতাম তাহলে কি পরিবর্তন করতাম। চলুন শুরু করা যাক।
পর্ব ০২ : আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস ও খাবার দিয়ে যান আর যাদের প্রয়োজন তারা নিয়ে যান
মানবতার দেয়াল নামটির সাথে বাংলাদেশের অনেকেই হয়তো পরিচিত। এই শব্দ দুটির যেমন খুব সুন্দর তেমনি এর কাজটিও অনেক সুন্দর। মানবতা এসেছে মানুষের মানবিক গুণাবলী বা মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকে। এখানে এমন একটা দেয়াল এর কথা বলা হচ্ছে যেখানে মানবতার জন্য কাজ করা হচ্ছে। মানবতার দেয়াল এর যে ধারণা সেটা নিয়ে আজকে কিছু কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব।
বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির সামনে দেয়ালে আপনারা দেখতে পারেন একটি দেয়াল যেখানে মানবতার দেয়াল নাম দিয়ে কিছু হ্যাঙ্গার ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর সেই দেয়ালে কিছু কথা এরকম লেখা আছে যে, আপনার প্রয়োজনীয় পোশাক নিয়ে যান এবং আপনার অপ্রয়োজনীয় পোশাক রেখে যান। অর্থাৎ এটি একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি যেখানে আপনি আপনার অব্যবহৃত অথবা কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে না এরকম কোন পোশাক এখানে রেখে যেতে পারেন এবং এই পোশাকটি যদি কারো দরকার হয় তাহলে সেখান থেকে নিয়ে যেতে পারে।
Source: https://pixabay.com/illustrations/help-refugees-refuge-charity-1019912/
এটা এক ধরনের দান তবে এখানে একটা সিস্টেম এপ্লাই করা হয়েছে যে সিস্টেমে তিনি দান করছেন তাকে কেউ দেখছে না আবার যিনি দান গ্রহণ করছেন তাকেও কেউ দেখছে না। এর মাধ্যমে একটা বিষয় নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে যে, দান গ্রহীতাকে দাতার কাছে যেতে হচ্ছে না। আমরা জানি, আমাদের সমাজে এরকম অনেকেই আছে যারা অভাব এর মধ্যে আছে কিন্তু মানুষের কাছে হাত পাততে চান না। এই শ্রেণীর মানুষের জন্য এটা একটা সহজ সমাধান বলে মনে করি।
যদিও মূলভিত্তি হওয়া উচিত ছিল যারা অভাবে আছেন তাদেরকে খুঁজে খুঁজে দান করা। কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির জন্য অনেক সময় আমাদের জন্য এটা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তাই এই পদ্ধতিটি আমার কাছে অনেক পছন্দের। অন্তত বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে এটা অনেক বেশি ফলপ্রসূ।
কোন একটা দেশের ঘটনা একবার এরকম পড়েছিলাম যে, রেস্টুরেন্টে যারা খেতে চান তারা খাবার দাবার শেষ করার পরে যাদের কাছে টাকা থাকে তারা আরো কয়েকজনের জন্য খাবার ওখানে ক্রয় করে রেখে যান। যারা ক্ষুধার্ত আছেন তারা সে রেস্টুরেন্টে গিয়ে প্রথমে খোঁজ করেন এরকম কোন পার্সেল রাখা আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে তাকে সেটা রেস্টুরেন্ট থেকে দিয়ে দেওয়া হয়। এই ব্যবস্থাটিও অনেক চমৎকার একটি ব্যবস্থা মনে হয়েছে আমার কাছে।
যারা বিত্তবান আছেন তারা খুব সহজেই এভাবে করে মানুষকে খাওয়াতে পারেন আর এতে করে যিনি খাওয়াচ্ছেন তিনিও জানতে পারবেন না কাকে খাওয়াচ্ছেন আবার যিনি খাচ্ছেন তিনিও জানতে পারবেন না যে কার সৌজন্যে তিনি খাচ্ছেন। এই ব্যবস্থাটা আমাদের দেশে চালু করা উচিত। আমাদের দেশের গরীব মানুষের সংখ্যা একটু বেশি তারপরও ধনীরা যদি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে হয়তোবা এরকম একটা সিস্টেম আমরা এখানেও চালু করতে পারি।
Source: Image by ladybug1093 from Pixabay
মানবতার দেয়াল এর মাধ্যমে বস্ত্র দান করার এই পদ্ধতির সাথে অনেকেই একমত হন না এজন্য যে পুরাতন কাপড় দান করা হচ্ছে। আসলে পুরাতন কাপড় যেটা অপ্রয়োজনীয়' সেতো আরেকজনের জন্য হয়তোবা প্রয়োজনীয় হতে পারে। তাই পুরাতন কাপড় দান করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। তবে যখন আমরা দান করব তখন উত্তম জিনিস দান করা উচিত। যারা পুরাতন কাপড় এখানে দান করছেন তারা এটাকে কেবলমাত্র দান হিসেবে করছেন তা নয় বরং ব্যক্তিগত জীবনে তারা অনেক জায়গায় উত্তম জিনিস এবং টাকা পয়সা দান করছেন। এটা দান করার একটা উপায় বা পদ্ধতি যেটা মূল দান নয়। অপ্রয়োজনীয় জিনিস ঘরে রেখে লাভ কি বরং এটা থেকে যদি কেউ উপকৃত হয় তাহলে সেটাই আমাদের সবার জন্য কল্যাণকর।
মানুষ মানুষের জন্য এবং দিনশেষে আমাদেরকে অন্যের জন্য কাজ করতে হবে। সেজন্য যে কোন সিস্টেমে প্রয়োগ করা হোক না কেন। সবকিছুর শেষে এটাই নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা গরিবদের জন্য কিছু করছি। আর যখন ধনীরা গরিবদের জন্য কিছু করবে এবং গরিবরা এটা থেকে উপকৃত হবে তাহলেই সমাজের মধ্যে আস্তে আস্তে শান্তি ও ব্যালেন্স তৈরি হবে। এবং আমি মনে করি এরকম সিস্টেম চালু থাকলে মানুষ খাদ্য কষ্টে ভুকবে না বা বস্ত্র কষ্ট থাকবে না। আর এতে করে সমাজে অপরাধ অনেকাংশেই কমে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। ভোগবাদী চিন্তা থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। পরের তরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মন মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
Source: Image by S K from Pixabay
তাহলে বুঝতেই পারছেন যদি আমি সরকারপ্রধান হতাম তাহলে প্রত্যেক এলাকায় এরকম কিছু স্টল বা বক্স সেট করে দিতাম যেখানে মানুষ তারা প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যাবে যা অন্যদের প্রয়োজন হলে তারা নিয়ে যাবে সেটা খাবার বস্ত্র কিংবা অন্য যে কোন কিছু হোক না কেন। আর নির্দিষ্ট কিছু রেস্টুরেন্টে এরকম ব্যবস্থা চালু করতাম।
শেষকথাঃ
অনেক সময় একটা ছোট্ট ধারণা বড় কিছু করে দিতে পারে। আমার শেয়ার করা ধারণা গুলো অনেক ছোট এবং সাধারণ। কিন্তু এগুলো প্রয়োগ করতে পারলে সমাজে একটা ব্যাপক পরিবর্তন আনয়ন করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি। এই পোষ্টের মাধ্যমে কেউ যদি উপকৃত হতে পারেন তাহলেই এই পোষ্ট লিখার স্বার্থকতা এবং কোন পরামর্শ ও মন্তব্য থাকলে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।
এই সমাজ পরিবর্তনে ধারণা সিরিজে আমার লিখা পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
পর্ব | প্রকাশের তারিখ | বিষয়বস্তু |
---|---|---|
০১ | ১৬/১১/২০২১ | নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী দোকান খোলা রাখা |
আমি কেঃ
ভাই আপনার চিন্তা ধারাকে সাধুবাদ জানাই আপনার কথাগুলো খুবই ভালো লেগেছে আপনি অনেক চিন্তা করেই এ কথাগুলো বলেছেন আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।
এই ব্যবস্থাটা সত্যিই আসলে একটা দারুণ ব্যবস্থা হতো।অর্থাৎ রেস্টুরেন্টের বলা কথাটা। আমি এই ব্যাপারটা কয়েকটা শর্ট ফিল্মে দেখেছি। তবে কোথাও ওইভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেতে আমি এখনো দেখিনি। তবে আমার মনে হয় এই নিয়মটা যদি চালু হয় তাহলে অনেকেই সাহায্য পাবে। আপনি সব সময় খুব দারুণ কিছু ব্যাপার নিয়ে কথা বলেন।
আর আপনি অনেক পোস্ট পড়েন ও বরাবরই ভাল মন্তব্য করেন
যৌক্তিক ও যৌতিকতা,নিয়ে লেখাটি আমার মনে ছাপ ফেলে। যা লেখনির মাধ্যমে তুলে এনেছেন। লেখনী হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার এই কামনায়
আমি একটু ধর্মের প্রসঙ্গ নিয়ে আসি ইসলাম ধর্মে যাকাত নামে একটি ব্যবস্থা চালু আছে আর আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ যাকাত সঠিকভাবে আদায় করি এবং যাকাতের সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করি তাহলে ও সমাজ পরিবর্তনে আমাদের একটা ভূমিকা থাকবে বলে আমি মনে করি। এছাড়া মানবতার দেয়াল বা রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত খাবার কিনে রেখে আসা এগুলো সবি নিঃসন্দেহে একএকটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ
জি। ঠিক বলেছেন