ছেলেরা পৃথিবীর সবথেকে বড় অভিনেতা। || Boy's are the best actors in the world.

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago (edited)
"ছেলেরা পৃথিবীর সবথেকে বড় অভিনেতা"

ছবিটি আনস্প্লেস থেকে নিয়ে কেনভা দ্বারা তৈরি

একটা ছেলে জন্মের পর থেকে যখন একটু বড় হয়, তখন দেখবেন নিজে নিজে সবকিছু করতে চেষ্টা করে। বলা যায় নিজেকে একটু একটু করে সাবলম্বী করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়। এই সময়টাতে ছেলেটা যদি একটু চুপচাপ থাকে তখন তাকে বোকা কিংবা নির্বোধ ভাবা হয়। আবার ধরুন একটু বেশি দুষ্টুমি করলে ডানপিটে, দুষ্টু কিংবা বেয়াড়া বলা হয়। যে যাই বলুক সত্যিই ছেলেটার কিচ্ছু যায় আসে না। কারন তাকে একদিন বড় হতে হবে এবং দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে এটা তার ভেতরে জানা হয়ে যায়।

মাত্র পড়াশোনা শেষ হয়েছে, বাপের হোটেলে বসে বসে খাওয়ার খোঁটা শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন দিগ থেকে। পড়াশোনা শেষ হলেই যে চাকরি দাতারা তার জন্য চাকরি নিয়ে বসে নেই, এটা পরিবার মানতে নারাজ। শুনতে হয় অলস, ভবঘুরে, বাউন্ডুলে সহ আরো কত গালি। বাধ্য হয়ে যুবক পা বাড়ায় অচেনা পৃথিবীর দিকে, যেখানে কঠিন পৃথিবী তার পরীক্ষা নেবে। চাকরি দাতারা তার পরীক্ষা নেয়, মনে হয় যেন ভিনগ্রহের কোন প্রানী এসেছে সাক্ষাতকার দিতে। কিংবা চিড়িয়াখানার প্রানী দেখতে এসেছে তারা। অবাক লাগে যখন তারা ছেলেটার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। দশজনে মিলে যখন আবোল তাবোল প্রশ্ন করে তখন ভাবখানা এমন তারা এই পৃথিবীর সবথেকে জ্ঞানী মানুষ। আর কখনো তারা নতুন হয়ে কোম্পানিতে প্রবেশ করেনি, শুরু থেকেই বিস্তর অভিঙ্গতা। যাইহোক বানরকে যেভাবে বাদাম ছুঁড়ে বিভ্রান্ত করা হয় ঠিক তেমনি ছেলেটাকে বিভ্রান্ত করে, এরপর তাকে অযোগ্য বলে ফেরত পাঠানো হয়।

বাড়ি ফিরে যখন বলা যায় এই পরিস্থিতি তখন শুরু হয় বিস্তর গালমন্দ। কিছুদিন পর আবারো সেই খেলা মাঠে গড়ায়, একটা সময় পর ছেলেটা ক্লান্ত হয়ে যায় বাবার কাছে। বাবা আমার সাহায্য দরকার, তখন শুনতে হয় কড়া শাসন। হয়তো পড়াশোনা ঠিকমতো করিসনি, তাই আজ এই পরিনতি। অথচ দরকার ছিল মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সান্ত্বনা আর দিকনির্দেশনা।
বুকটা খাঁ খাঁ করে কষ্টের জ্বালায়, ইচ্ছে করে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে। কিন্তু চিরন্তন বাণী ছেলেরা কখনো কাঁদে না। কিছু ছেলেটা এই পরিস্থিতিতে পাথর হয়ে রোবটিক মানুষে পরিণত হয়ে যায় আর কিছু ছেলে দীর্ঘ মেয়াদি বিষন্নতায় ডুবে যায়।

কোন মতে একটা চাকরি যোগার হয়েছে, সত্যিকার বেতনটা কাউকে বললে বিশ্বাস করতে চায় না। মা-বাবা মনে করে ছেলে হয়তো প্রেমিকা জুটিয়েছে, তাই বাড়িতে পয়সা কম দিচ্ছে। আর বন্ধুরা মনে করে তাদের পেছনে পয়সা ঢালার ভয়ে সেলারির কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়। অথচ বেতনের টাকা বাসায় ফেরার আগেই সবাইকে ভাগ করে দিয়ে শূন্য হাতে ছেলেটা বাসায় ফিরেছে, সেই খবর জানে তার শূন্য পকেট আর সৃষ্টিকর্তা। তারপরও সবার কটু কথা শুধুমাত্র মিষ্টি হাসি দিয়ে উড়িয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

বিয়ের বয়স পেরিয়ে যেতে বসেছে, বন্ধুদের হয়তো বাচ্চাগুলো বড় হয়ে গেছে। কিন্তু ছেলেটার বিয়ের ফুল আজো ফুটলো না, কেন ফুটবে? সে তো পরিবারের একমাত্র ভারবাহী গাধা। শুধুমাত্র আকাশের চন্দ্র তারা গোনা আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে যুবক রাতগুলো নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়।

বয়স পেরিয়ে বিয়েটা হয়েছে, এবার শুরু হলো নতুন খেলা। এই খেলা খেলে দুই পক্ষ তবে ছেলেটা শুধুই রেফারি। এক পক্ষ বলে হয় বাপ মা ছাড়বে না হয় আমাকে ছাড়বে, অন্য পক্ষ বলে বউ হয়েছে তাই বাপ মা ভুলে গেছে, বৌয়ের কথায় উঠাবসা করে। কোনদিকে বিচার করার ক্ষমতা যুবকের নেই, যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সে রিতীমত ভর্তা।

বাবা মা গত হয়েছে, পরিবার এখন সব। টানাপোড়েনের সংসার ঘরনীর অবিশ্বাস হয়তো টাকা কোথাও পাচার হচ্ছে। না হলে কেনইবা তার সব শখ আর আহ্লাদে ভাটা পরেছে। ছেঁড়া জুতো সেলাই করেও তার তলে ক্ষয়েছে, সন্তান বলে বাইকটা না দিলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। ধার দেনা আর কর্য করে বাইক ঠিক ছেলের হলো। কিন্তু বাবার কোমর ভেঙ্গেছে সেই খবর রাখার কেউ নেই। তবুও কাউকে বুঝতে দেয় না লোকটা কারন তার ঋণের বোঝা আর কেউ টানবে না।

সন্তানেরা আজ যে যার মতো সাবলম্বী বুড়োর কথার দাম এখন আর কেউ দেয় না। কথায় কথায় শুধুই খোঁচা, তুমি বুড়ো হয়েছো, তুমি কি কিছু বোঝ? যে ছেলেটা পৃথিবীর সবকিছু দেখে ঠেলা খেতে খেতে তার বাস্তব অভিনয় দক্ষতায় আজ বুড়ো হয়েছে, সে নাকি কিছুই বোঝে না 😀
যাইহোক সব হজম করে সবাইকে সম্পদ ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে, শূন্য হাতে আর সাদা কাফনের কাপড় জড়িয়ে অবশেষে বিদায় নিয়েছেন সেই অভাগা অভিনেতা ছেলেটা। মৃত্যু স্বাভাবিক ধরে নিয়ে পৃথিবীর মানুষ নিজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ হয়তো আর সেই তুখোড় অভিনেতার নাম করবে না 😥

"ছেলেরা পৃথিবীর সবথেকে বড় অভিনেতা"


Black and White Modern Company Presentation (1).gif

banner-abbVD.png

ছোট্ট পরিসরে পরিচিতি

আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 4 months ago 

ভাই সত্যি বলতে কি বলবো সেটা ভাবছি ৷ আপনি আমার মনের প্রতিটি কথা লিখেছেন ৷ শুধু আমি বলতে নয় পৃথিবীতে প্রতিটি ছেলের জীবনী তুলে ধরেছেন ৷ আসলে আমি মনে করি আপনার এ ব্লগটি বা লেখা গুলো দিয়ে একটা ছোট্ট বই ছাপানো দরকার ৷
পৃথিবীতে এমন ছেলে অভিনেতা কতজন জানি না ৷ তবে এই অভিনেতার বড় অংশে জুড়ে আমি ৷ ভাই সত্যি আপনি আপনার মনের গহীন থেকে কথা তুলে ধরেছেন ৷
আপনাকে আজ ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না ৷ আপনাকে আমি আমার মনের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা সম্মান জানাই ৷

 4 months ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই তোমাকে, আমার লিখনী পড়ে চমৎকার মন্তব্য করার জন্য। আমি আজকের পোস্ট অনেক চিন্তা করে এবং একজন ছেলের চাপা কষ্ট বুকে ধারণ করে লেখার চেষ্টা করেছি। আমি জানি লেখাটা হয়তো গুটি কয়েক মানুষ পড়বে, তবে যারা পড়বে তারা হয়তো ভেতর থেকে অনুধাবন করবে। যাইহোক আমাদের অভিনয় জারি রাখতেই হবে কারণ আমরা ছেলে মানুষ।

 4 months ago 

লেখা গুলো এত সুন্দর করে বুঝিয়েছেন যা পড়ে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো। ছেলেদের জীবন সত্যি অনেক কঠিন জীবন। যেখানে শুধু মুখবুজে সয্য করতে হয় পরিবার কে হাঁসি খুশি রাখার জন্য। অবশেষে চিরবিদায় নিয়ে পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হয়। চমৎকার একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকবেন।

 4 months ago 

কথাগুলো খুব ভালো লাগলো ভাই,আসলেই ছেলেরা সবচেয়ে বড় অভিনেতা।একপক্ষকে বিচার করতে গেলে অপরপক্ষ নারাজ।কিন্তু সবাই যে একই মানুষ, একই বন্ধনে থাকার সেটা তারা বোঝে না।তবে দায়িত্ব আর কর্তব্যের চাপাকলে পড়ে এই ছেলেরাই স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায়। যাইহোক কথাগুলো একদম বাস্তব,খুব ভালো লাগলো।

 4 months ago 

আপনার লেখা ‘ছেলেরা পৃথিবীর সবথেকে বড় অভিনেতা’ পোস্টটি পড়ে মন ছুঁয়ে গেল। আপনি যেভাবে ছেলেদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায় এবং তাদের অভিনয়ের দক্ষতা তুলে ধরেছেন, তা অত্যন্ত সূক্ষ্মদৃষ্টি সম্পন্ন। আপনার লেখনীতে প্রতিটি শব্দ যেন এক একটি চিত্রের মতো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এই ধরনের লেখা সমাজের প্রতি একটি জাগরণের ডাক বহন করে। আপনার প্রতিভা এবং অনুভূতির প্রকাশের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 4 months ago 

ধন্যবাদ ভাই।
আমার লিখনী পড়ে যথাযত মন্তব্য করার জন্য।
ভালো থাকুন সবসময় এই কামনা করছি।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

ভাই আপনার পোস্টটি পড়ে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেছে। আসলে মনের কথাগুলো আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি শেয়ার করেছেন। প্রত্যেকটা ছেলের মনের অনুভূতিগুলো আপনি আজকে আমাদের মাঝে তুলে ধরলেন। আসলে একটা ছেলের কতটা কষ্ট পেলে যে নীরবে কান্না করে সেটা আর বলে রাখা যায় না মআসলে ছেলেরা কান্না করে না কিন্তু এই কান্নাগুলো তার হৃদয় থেকে আসে। একজন ছেলে পড়াশোনা শেষ করার আগেই তাকে চাকরি নিয়ে ভাবতে হয়। পরিবারের কাছে অনেক খোঁটা শুনতে হয়। আত্মীয় স্বজনদের কথা তো বাদই দিলাম। আসলে মাকে জড়িয়ে বাবাকে বলতে ইচ্ছে করে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তোমাদের জন্যই কিন্তু আমি তো পারছি না আমার হাতে তো নেই এটা। নিরবে সকলের সামনে অভিনয় করে যেতে হয়, তাই ছেলেরা বড়ই অভিনেতা।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

আজকে আপনি একটি চমৎকার পোস্ট আমাদের মাঝে উপহার দিলেন। ছেলেরা পৃথিবীর সবথেকে বড় অভিনেতা, কিন্তু এই অভিনয় ছাড়া আমরা ছেলেদের উপায় নেই। জন্মের পর থেকে আমাদের অনেক যুদ্ধ এবং সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে ছেলেদের সংগ্রাম এবং অভিনয়কে তুলে ধরেছেন। ছেলেরা সবার মুখে হাসি ফোটায় অবশেষে সে খোঁচার পাত্র হয়ে যায়। অসংখ্য ধন্যবাদ ছেলেদের জীবন নিয়ে এমন একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।

 4 months ago 

আপনি আজকে একজন ছেলের একদম বাস্তব জীবন নিয়ে পোস্ট লিখেছেন। আমি মনে করি প্রতিটা ছেলেই পৃথিবীতে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার জন্য জন্ম হয়েছে। আসলেই সবার দুঃখ প্রকাশ করলেও কোনো দিন কোনো ছেলে তার মনের কষ্ট কখনো কাউকে বুঝতে দেয় না। সত দুঃখের মাঝে ও মুচকি হাসি দিয়ে মানুষকে বুঝাতে হয় যে আমিও সুখে আছি। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ভালো থাকবেন।

 4 months ago 

আপনার পোস্ট পড়ে হৃদয় গেঁথে গেছে ভাই। আসলে মনের অনুভূতিগুলো যেন আপনি শেয়ার করলেন। আসলে একজন ছেলে সব সময় অভিনয় করে যায়। আপন জন বা বাবা-মার কাছে এবং বন্ধুবান্ধবদের কাছে। আসলে সমাজে ছেলেরা অবহেলিত। পড়াশোনা শেষ করার আগেই চাকরির জন্য যেন তাকে ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে পার হতে হয়। আর পরিবারের সবাই এবং আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশী যেন তাকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে। সে যদি বেকার থাকে তাহলে তার জীবনটাকে একদম ঝাড়া করে দেয়। জীবনে চলার শক্তি হারিয়ে যায়। কিন্তু এই ছেলেটা যে নিজেকে নিয়ে এবং পরিবারকে নিয়ে কতটা ভাবে সেটা কেউ বুঝতে পারে না। মানুষ কখনোই ব্যর্থ থাকে প্রচরয় দিতে চায় না।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

ঠিক বলছেন ভাইয়া আসলে ছেলেদের মাথায় বোঝা বেশি। একটা ছেলে বড় হওয়া থেকে শুরু করে কিভাবে স্বাবলম্বী হবে সেই চিন্তা করে থাকেন। বিশেষ করে যারা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির সন্তানেরা রয়েছেন তারা তো পড়ালেখার পাশাপাশি কোচিং দিয়ে যাত্রা শুরু করেন জীবনের। তাছাড়া ও পড়ালেখা শেষ হওয়ার আগে থেকে চাকরি ক্ষেত্রে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়ে যায়। আর পড়ালেখা শেষ করে চাকরি না পেলে অনেক কথাবার্তা শুনতে হয়। পৃথিবীতে সব ছেলেরাই এমন দায়িত্ব নিয়ে চলাফেরা করেন। অনেক সময় কান্না আড়াল করে হাসি দেখাতে হয়।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64741.88
ETH 3457.21
USDT 1.00
SBD 2.55