ঈলমার টিকা দান সম্পন্ন|| চরম অব্যাবস্থাপনা আর ভোগান্তির সাক্ষী।
চরম অব্যাবস্থাপনা আর ভোগান্তির সাক্ষী |
---|
অবশেষে গতকাল ঈলমার টিকা দিতে পারলাম। আমার এবং ঈলমার কাছে দিনটি মনে থাকবে, কারন বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আমাদের। বাংলাদেশ বলে কথা এখানে কোন কাজ সহজে হয়না। পুরো বিষয়টি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
টিকা দেয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল আরো দশ বারো দিন আগে থেকেই যখন জানতে পারলাম অনলাইনে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। অনলাইনে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে গিয়ে দেখলাম তার নাম বাংলায় লিখা থাকলেও ইংরেজি নাম সংযুক্ত করেনি। বুঝলাম বেশ ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছি আমি। পরদিন সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটে গেলাম তার জন্ম নিবন্ধন ঠিক করার জন্য। সেখানে গিয়ে বেশ কিছু টাকা খরচ করে ঠিকঠাক করে আবার ঢাকা ফেরত আসলাম দুদিন পর। এসেই টিকা নিবন্ধন শেষ করলাম। এই ভোগান্তির জন্য মনকে বোঝালাম আমি বাংলাদেশে বাস করি তাই এগুলো স্বাভাবিক ঘটনা।
গতকাল সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে ঈলমাকে পেট ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম কারন টিকা দেয়ার সময় পেট ভরা থাকতে হয়। কিন্তু মেয়েটা সামান্য খেয়ে আমার সাথে স্কুলে চলে গেল। স্কুলে এসে দেখলাম অনেকের জন্মনিবন্ধন অনলাইনে না থাকায় টিকা কার্ড নিতে পারেনি, তাদের সন্তানের টিকা দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। সবাই প্রধান শিক্ষকের রুমে ঝামেলা করছে আর তাদের সন্তানের টিকা দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। প্রধান শিক্ষক বললেন ঠিক আছে টিকা কেন্দ্রে চলুন কিন্তু আমি সুনিশ্চিত করে বলতে পারছিনা তাদের টিকা দেবে কিনা। বুঝলাম এই মানুষগুলো ভোগান্তির মধ্যে পরতে যাচ্ছেন।
আমাদের অন্য একটি স্কুলের ঠিকানা দেয়া হলো এবং টিকা ওখানে দেয়া হবে জানানো হলো। এরমধ্যে এই স্কুলেই দুই ঘন্টা চলে গেল, শুধুমাত্র প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য। যাক অবশেষে আমাদের ঠিকানায় পৌছালাম। দেখলাম মোট এগারোটি স্কুলের বাচ্চাদের এই ছোট্ট একটি স্কুলে টিকা দেয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এখানে মাঠে তপ্ত রোদের মধ্যে প্রতিটি স্কুলের আলাদা লাইন করা হয়েছে। আর প্রতিটি বাচ্চার সাথে অভিভাবক তো রয়েছেই, সবমিলিয়ে লোকারণ্য অবস্থা।
আমি পরিস্থিতি দেখে বুঝে গেলাম এখানে আমাকে বুদ্ধি খাটিয়ে আমার মেয়ের টিকা দ্রুত দিতে হবে, নাহলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে। এখানে কিছু সিকিউরিটি আর স্কাউটের লোকজন রয়েছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিন্তু তারা কোনভাবেই সামলাতে পারছেনা। সবথেকে বড় ব্যাপার আমাদের ছেলে মেয়েদের উপর উৎসুক জনতা ধাক্কা মারছে। আমি কিছুক্ষণের জন্য স্কুলের শিক্ষক সেজে গেলাম এবং লাইনের প্রথম দিকে কিছু বাচ্চার পর ঈলমাকে দাড় করালাম যাতে আমি ওর দিকে খেয়াল রাখতে পারি। এবার আমি সামনে দাঁড়িয়ে ছেলে মেয়েদের লাইনটাকে জনতার ঢল থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলাম। এতে খেয়াল করলাম ঈলমার স্কুলের শিক্ষকরা খুশি হলো।
প্রায় এক ঘন্টা রোদে পোড়ার পর বুঝলাম অবস্থা বেগতিক , এভাবে রোদে দাড়ালে বাচ্চরা অসুস্থ হয়ে পরবে। প্রধান শিক্ষক আমাকে বেশ সম্মান করেন, আমি তাকে বললাম টিকার সিরিয়াল আর কতক্ষন পর আমাদের স্কুল পাবো। তিনি বললেন আরো চারটা স্কুল পর। না এভাবে রোদে আর দাঁড়িয়ে থাকা মোটেও সম্ভব নয়। প্রধান শিক্ষক মহোদয়কে বললাম, যেহেতু টিকা দিতে দেরি হচ্ছে তাহলে বাচ্চাদের অন্তত স্কুলের ক্লাসরুমে বসাতে পারলে অন্তত আরামে থাকতো তারা। তিনি বললেন বুদ্ধিটা মন্দ নয়। তিনি ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে আমাদের চার তলায় ক্লাশরুম ব্যাবহারের অনুমতি পেলেন। আমাদের দ্রুত সেখানে বাচ্চাদের নিয়ে যেতে বলা হলো। আমি বাচ্চাদের লাইনের শুরুতে থেকে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতে থাকলাম আর অবশেষে চার তলায় পৌঁছে সবাইকে চারটা ক্লাশরুমে আমরা বসাতে পারলাম। এখন ছেলে মেয়েগুলো মোটামুটি হাফ ছেড়ে ফ্যানের ঠান্ডা বাতাসে বসলো। সবাইকে মোটামুটি পানি খাইয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করলাম। এরমধ্যে ঈলমার খিদে পেয়ে গেলো, ভাগ্যিস একটা কেক আগে থেকেই আমার সাথে ছিল। ঈলমাকে কেক খাওয়ানোর পর ও কিছুটা স্বস্তি বোধ করলো।
বাচ্চারা আরাম পেয়ে দুষ্টুমি আর খেলা ধুলায় মেতে উঠলো। আমি কিছুটা সময় বসে ওদের দুষ্টুমি দেখলাম আর আমার ছোটবেলার কথা মনে করছিলাম। এই অফুরন্ত আনন্দ একমাত্র শৈশবেই সম্ভব।
আরো দেড় ঘণ্টা ক্লাশ রুমে বসে থেকেও যখন আমরা টিকার সিরিয়াল পাচ্ছিলাম না। এরমধ্যে বেশ কিছু স্কুলের টিকা দেয়া শেষ, আর এদিকে অভিভাবক সব অস্থির হয়ে উঠেছে। কয়েকজন তো প্রধান শিক্ষকের সাথে বেশ গরম ব্যাবহার করে বসলেন। যাক অবশেষে প্রায় তিন ঘন্টা পর আমাদের স্কুলের সিরিয়াল এলো, সবথেকে আনন্দের ব্যাপার ছিল ঈলমাকেই প্রথম টিকা দেওয়াতে পেরেছিলাম কিন্তু ছবি তোলার মতো কোন অবস্থাতেই ছিলাম না।
দ্রুত টিকা দিয়ে ঈলমাকে নিয়ে ওখানে থেকে বেরিয়ে দুজনে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লাম। তাকে একটা জুস আর বাটারবন কিনে দিলাম এবং পনেরো মিনিট একটি কনফেকশনারি দোকানে ওকে বিশ্রামে রাখলাম।
অবশেষে বাসায় ফেরার রাস্তা ধরলাম। কিন্তু মনে মনে ভাবলাম হায়রে বাংলাদেশ যেখানে শিশুদের টিকা দিতে পাঁচ ঘণ্টা রোদে পুড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর ভোগান্তি হলো নিত্যসঙ্গী।
ছবি যন্ত্র | রিয়েলমি সি-২৫ |
---|---|
ছবির অবস্থান | সংযুক্তি |
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1572481807215636482?t=qtmOv1YKOn2G3chsggj-vQ&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বাংলাদেশ এ এখন আমাদের ভোগান্তি হলো নিত্যসঙ্গী। ছোটদের টিকা দিতে যদি ৫ঘন্টা লাগে তাহলে তো সত্যি বিষয়টি খুবই খারাপ লাগার কথা। আসলে কিছুই করার নেই। যাক ঈলমার টিকা দেওয়া হয়েছে জেনে ভীষণ খুশি হলাম। ঈলমার জন্য শুভ কামনা রইলো 🤲
লিমন কোন কাজ এখন সহজ আর সুন্দরভাবে হয়না, চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সব জায়গায়। যাক শেষ পর্যন্ত টিকা দিতে পারলাম এটাই বড় বিষয়।
ধন্যবাদ তোমায় চমৎকার মন্তব্যের জন্য।