ট্রাভেল পোস্টঃ- বাড়িতে ফেরা
আজ - মঙ্গলবার
বাড়ি ঘর ফ্যামিলি এবং পরিবার একজন ছেলে অথবা মেয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এটি অনেকটা বটগাছের মতো যার ছায়ায় আমরা বেড়ে উঠছি এবং এই দুনিয়াটাকে নতুন করে চিনতে শিখছি। এবং সব রকম সাপোর্ট আমরা ফ্যামিলি থেকেই পেয়ে থাকি। তবে যারা অল্প বয়সেই ফ্যামিলি থেকে আলাদা হয়ে যাই তাদের মতো কষ্ট আমার মনে হয় আর কারো নেয়। যাইহোক আমি আমার জীবনে বাইরে অনেক কম থেকেছি। এই যে আমার লাইফের প্রথমবার আমি সিরাজগঞ্জে থাকছি এবং এটি আমার বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে। বলা যায় অনেক দূর!! এখন এখানে থাকতে, থাকতে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি তবে সত্যি কথা বলতে আমার এখানে একা,একা থাকতে অনেক বেশি কষ্ট হয়। বিশেষ করে আব্বু এবং আম্মুর কথা যেমন মনে পড়ে তেমনি আবার ওই যে নতুন একটা বাইক কিনে রেখে এসেছিলাম ওটার কথা আরো বেশি মনে পড়ে আর যখন এই চিন্তা গুলো মাথায় উঠে পড়ে তখন বাড়ি আসার জন্য মনের ভিতর আনচান করে। আমাদের ক্যাম্পাসের কিছু স্টুডেন্ট আন্দোলন করছে আমাদের কিছু অধিকার বুঝে নেওয়া তাগিদে এই সুযোগে আমি ভাবলাম যে একটু বাড়ি থেকে ঘুরে আসা যায়। কারণ এখনতো কলেজ ঠিক করে চলছে না আর কয়েক মাস পরেই মটটার্ম পরীক্ষা।
আর মূল সমস্যা হচ্ছে আমাদের মিটটার্ম পরীক্ষাটা প্রায় এক মাস ধরে অতিবাহিত হয় যার জন্য ওখানে একমাস হাত থেকে চলে যায় এবং পরবর্তীতে আর এক মাসের জন্য রয়েছে সুতরাং বলা যায় যে এখন দুই মাসের মধ্যে আমি বাড়িতে আর যেতে পারব না। তাই ভাবলাম যে, এই যে কিছুদিন ছুটি পাব বা ক্লাস হচ্ছে না এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে বাসা থেকে একটু ঘুরে আসি। তাই যেমন কথা তেমন কাজ ভোরবেলা উঠেই সকালের নাস্তাটা করলাম এবং আমার একটি ছোট্ট ব্যাগে আমার জামা কাপড় গুলো গুছিয়ে নিয়ে একটা ট্রেনের টিকিট কেটে চলে আসলাম শহীদ মুসিদ আলী রেলস্টেশনে। রেল স্টেশনে গিয়ে তো দেখি রেল স্টেশনের প্রায় 13 টা বেজে গেছে কারণ রেলস্টেশনের যে টিকিট কাউন্টার রয়েছে সেটাকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে কোন টিটি নেই। এবার আপনাদের কিছুজনের মাথায় এটা আসতে পারে যে তাহলে টিকিট কিভাবে মানুষ কাটতেছে? আসলে টিকিট ট্রেনের ভিতরেই কেটে নেওয়া হচ্ছে আর আমি অন লাইন থেকে আগেই টিকিট কেটে নিয়েছিলাম তাই আমার বিষয়টা আলাদা।
যাই হোক অনলাইন থেকে টিকিট কাটার পরে সেখানে লেখা ছিল যে (১:০৩ PM) এ আমার ট্রেন চলে আসবে। আমি যে ট্রেনে ভ্রমণ করছিলাম তার নাম হচ্ছে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওই ট্রেনটি প্রায় দেড় ঘন্টা লেট ছিল যার জন্য আমি ১ এর জায়গায় দুইটা তিরিশের পরে ট্রেন পেয়েছি। এবং যখন ট্রেনটা আসলো তখন আমি তাড়াহুড়া করে ট্রেনে উঠে পড়লাম এবং আমি আমার সিটে চলে গেলাম। আমার সিটটা ছিল উ নাম্বার বগির ৩০ নম্বর সিট যেটা হচ্ছে উইন্ডো সিট ছিল। আসলে আমার ট্রেনে বেশি জার্নি করলে একটু বমি সমস্যা হয় যার কারণে আমি উইন্ডোজ সেটটি বাছাই করে নিয়েছিলাম। যাই হোক অবশেষে ট্রেনটি ছাড়লো এবং ট্রেনের ভিতরে অনেক মানুষ অনেক রকম কাজ করে নিজের জীবিকা নির্ভর করছে কেউ দেখলাম যে বাদাম বিক্রয় করে কেউ ছোলা বিক্রয় করছে। অথবা কেউ আবার ব্রাশ বিক্রয় করছে। এভাবে অনেক মানুষ অনেক ধরনের কাজ করে তার জীবিকা নির্বাহ করছে এগুলো দেখে আমার সত্যি অনেক ভালো লাগলো। কারণ যেইসব মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে সেসব মানুষকে আমি অনেক বেশি পছন্দ করি এবং ভালোবাসি।
এভাবে টুক,টুক করে ট্রেন গাড়ি চলতে থাকলো এবং আমি জানালাই বসে বাইরের দৃশ্য গুলো উপভোগ করছি। এভাবে কয়েক ঘন্টা চলার পরে প্রায় দুই ঘন্টা পর আমাকে কপোতক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঈশ্বরদী বাইপাস রেল স্টেশনে নামিয়ে দিল। এখন সমস্যা হচ্ছে এইখান থেকে সরাসরি ট্রেন আমাদের এলাকায় যায় না তাই আমাকে একটি সিএনজি অথবা বাসে করে আমার বাড়িতে যেতে হবে। তবে আম সবসময় বাসে জার্নি করার ক্ষেত্রে একটু দূরে দূরে থাকতে পছন্দ করি। কারণ বাসে গেলে আমার অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হয়ে যায় তাই আমি তখন একটি সিএনজি ভাড়া করলাম এবং ওখান থেকে সরাসরি কুষ্টিয়াতে চলে আসলাম। কুষ্টিয়াতে আসার পরে মজমপুর গেটে একটা কাকা ভ্যানে করে আমাকে রেখে আসলো এবং ওখানে কয়েক মিনিট ওয়েট করার পরে দেখতে পেলাম যে আমাদের এলাকার কয়েকটি যাত্রী অটোতে উঠে বসে আছে। তারপরে যখন পাঁচজন যাত্রী পূর্ণ হয়ে গেল তখন ওই সিএনজি ড্রাইভার সিএনজি চালু করে দিলেন এবং আমরা আমাদের গন্তব্য দেখে রওনা হলাম।
টুকটুক করে যাওয়ার পরে অবশেষে একটি সময় পর আমি আমার বাড়ির আশেপাশে চলে আসলাম এবার ওখান থেকে শুধুমাত্র একটা ভ্যান নিয়ে আমাদের বাড়ির কথা বললেই পৌছে দিবে। কিন্তু তখন হল আরেক ঝামেলা সেটা হচ্ছে আমি যেহেতু রাত আটটার দিকে আমার এলাকায় প্রবেশ করছিলাম তখন উনারা আমাকে চিনতে পারেননি এবং আমি বললাম এখান থেকে আমাদের বাড়িতে যাব ভাড়া কত? তখন উনি বললেন ৫০ টাকা, এটা শুনে আমার সত্যি অনেক খারাপ লাগলো কারণ ওইখান থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সুতরাং ওখানে ভাড়া হয় ১০ থেকে ২০ টাকা এর বেশি নয় কারণ আমি কুষ্টিয়া থেকে প্রায় 40 কিলো পথ মাত্র ৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে এসেছি। কিন্তু উনি এখান থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব যেহেতু ১০ থেকে ১৫ মিনিট এটার জন্য উনি ৫০ টাকা দাবি করেন যেটা আমার কাছে একেবারেই অযৌক্তিক মনে হয়েছে। কারণ অন্যান্য ড্রাইভাররা এখান থেকে আমার বাড়িতে 10 টাকা দিলেই দিয়ে আসে কিন্তু যেহেতু রাত হয়ে গেছে তাই উনি আমার ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছিলেন। আমি মুখের উপর না বলে দিয়েছি এবং টুকটুক করে অবশেষে বাড়িতে ফিরে আসতে পেরেছি। এবং এসেই লেবু চা খেয়েছি যেটা আমি অনেক বেশি ভালোবাসি।
যাই হোক ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে আপনার পাশে থেকে ব্লক উপভোগ করার জন্য। আবারো খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে নতুন কোন পোস্টটি যতক্ষণ সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন আল্লাহ হাফেজ
ব্লগার | @emonv |
---|---|
ডিভাইস | Infinix note 11 pro |
শ্রেণী | ট্রাভেল |
লোকেশন | সিরাজগঞ্জ- কুষ্টিয়া |
আমার নাম মোঃ ইউনুস আলী ইমন। বর্তমানে আমি সিরাজগঞ্জ মৎস ইনস্টিটিউট এর একজন ছাত্র হিসেবে পড়াশোনা করছি। এছাড়া পরিচয় দেওয়ার মতো এখনো কিছু করে উঠতে পারেনি তবে নিজের ব্যক্তিত্ব এবং ক্যারিয়ারের উপরে কাজ চলমান......। আমি নিজেকে ভেঙে চুড়ে নতুন করে আবিষ্কার করতে অনেক পছন্দ করি এবং আমি মানুষকে সাহায্য করতে অনেক ভালোবাসি। আমি প্রায়শই নিজেকে আবিস্কার করি। কেননা এটা আমার কথায় এবং লিখাতে নতুন স্বাদ যুক্ত করে, যার ফলে আমি নিজের সবথেকে ভালো টুকু আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে পারি। আমি প্রতিদিন একবার নিজের সাথে কথা বলি, কারণ এটা আমার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দেয়। আমি ভ্রমণ করতে এবং ফটোগ্রাফি করতে অনেক পছন্দ করি। আমি প্রতিনিয়ত নতুন ,নতুন মানুষদের সাথে মিশে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতার ভালোটুকু আমার জীবনে বাস্তবায়িত করতে পছন্দ করি। আপনাকে স্বাগতম আমার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হওয়ার জন্য। ভালোবাসা রইলো অবিরাম সবাইকে 💝।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বাড়ির বাইরে যারা থাকে তারা এই অনূভুতি টা খুব ভালো করে জানে। তবে দূরে যারা থাকে তাদের বাড়ি ফেরার সময় মনের মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ এবং ভালো লাগা কাজ করে। আপনার পোস্ট টা পড়ে বেশ ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে।।
পরিবার যে কোন মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আসলে যারা পরিবার থেকে দূরে থাকে তারা একটু সুযোগ পেলেই আবার সেখানে ফিরে আসতে চায়। আপনার কলেজের ক্লাস ঠিক ভাবে না হওয়ার কারণে আপনি বাড়িতে গিয়েছেন ভালো লাগলো। রেল স্টেশনের অবস্থা তো তাহলে বেশ খারাপ। আপনি অনলাইন থেকে আগে টিকেট কেটে ভালোই করেছেন। আপনার জার্নি টা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
বাড়ি ফেরার আনন্দ অনেক বেশি। যারা পরিবার থেকে দূরে থাকে তারা এই অনুভূতি বুঝতে পারবে। ভাই আপনি আপনার লেখার মাধ্যমে নিজের অনুভূতি দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে অনেকদিন পর নিজের গ্রামে বাড়িতে যাওয়ার এক আলাদাই অনুভূতি থাকে। যেহেতু এখন মানুষ পড়াশোনা এবং বিভিন্ন চাকরির জন্য হয়তো বা তাদের বাসস্থান ছেড়ে অনেক দূরে যেতে হয়। আসলে আপনার পুরো জার্নিটা পড়ে আমার কাছে অনেক মজা লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
সবাই পরিবারের মানুষের কাছ থেকে যত বেশি দূরে থাকে ততই কিন্তু মন খারাপ থাকে। আজকে আপনি ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারের কাছে ফিরে আসছেন দেখে বেশ ভালো লাগলো। অনেকেই অনেক ব্যস্ততার কারণে অথবা কাজের কারণে পরিবার থেকে একটু দূরে থাকে। কিন্তু বাড়িতে ফেরার মজাটাই অনেক আলাদা হয়। আজকে আপনি বাড়িতে ফেরার পোস্টটি আমাদের মাঝে গুছিয়ে শেয়ার করেছেন দেখে আরো ভালো লাগলো। সুন্দর মুহূর্ত গুলো দেখতে বেশ ভালো লাগে।