ছোটবেলার স্মৃতিচারণ ; ডিফেন্স রাসেল।

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ রবিবার, ২৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে


soccer-1447356_1280.jpg

Source


এলাকার ফুটবলে সবাই চাই গোল করতে। সবাই চাই স্টাইকার এর পজিশনে খেলতে। কিন্তু মাঠের বাকি পজিশনে খেলার মতো খেলোয়ার পাওয়া যায় না। অনেক জোর করে একটা গোলকিপার ম‍্যানেজ করতাম। আর আমাদের থেকে ছোট যেগুলো থাকত তাদের বলতাম যা ডিফেন্স সামলা। গোল হলে তোর খবর আছে হা হা। কিন্তু একটা ছেলে ছিল। রাসেল ছিল আমাদের থেকে বছর দুই এর ছোট। ছেলেটা ডিফেন্সে খেলতে বেশ পছন্দ করতো। এবং খেলত বেশ দারুণ। বেশ লম্বা ছিল এবং পায়ে ছিল দারুণ শর্ট। সেজন্য ওর বেশ সুবিধাই হতো। এবং আমরাও নিশ্চিত থাকতাম যাক একটা ভালো ডিফেন্স পেয়েছি। মাঠের বাইরে রাসেল যতটা শান্ত স্বভাবের ছিল মাঠে গিয়ে যেন তার চেয়ে বেশি দূরন্ত ছিল। ওকে ড্রিবল করে গোল দেওয়া বেশ কষ্ট হয়ে যেত। ওখানে গিয়ে হয় আমরা ওয়ান টু ওয়ান পাস খেলতাম বা সরাসরি শর্ট করতাম। সবমিলিয়ে দিনগুলো দারুণ যাচ্ছিল।

রাসেল ছেলেটা লেখাপড়ায়ও বেশ ভালো ছিল। ক্লাস ফাইভে বৃওি পেয়েছিল। ওকে নিয়ে ওর পরিবারের লোকজন বেশ আশাবাদী ছিল। আমার মনে আছে ও আমাদের সঙ্গেই স্কুলে যেত। আমার থেকে বছর দুই এর ছোট ছিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস। আমি তখন ঐ ক্লাস নাইন এ পড়ি এবং রাসেল পড়ে ক্লাস সেভেনে। বেশ কিছুদিন হলো রাসেল খেলতে আসছিল না। আমাদের বাড়ি থেকে ওদের বাড়ি ছিল একেবারেই কাছে। তো একদিন মাঠ থেকে খেলে বাড়ি ফেরার পথে খোঁজ নিলাম রাসেলের। দেখলাম ওর জ্বর এসেছে। ভাবলাম হয়তো সাধারণ জ্বর এসেছে কদিন পরেই কমে যাবে। রাসেল কে বলে আসলাম ঠিক আছে সুস্থ‍্য হলে খেলতে যাস। রাসেল বলল আচ্ছা ঠিক আছে। তারপর কেটে গিয়েছে বেশ কিছুদিন। কিন্তু রাসেল খেলতে আসলো না। আমি ভাবলাম হয়তো ও এখনো সুস্থ‍্য হয়নি। সেজন্য আর মাথা ঘামায়নি।


childhood-2480813_1280.jpg

Source


দিনটা ছিল শনিবার। যথারীতি আমি বিকেল চারটার পরে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছি। এলাকার মধ্যে কেবলমাএ ঢুকেছি। আমি যে রাস্তা দিয়ে যেতাম আমার এলাকায় ঢোকার আগেই আমাদের এলাকার কবরস্থান পড়তো। তখন দেখি বেশ কয়েকজন বাঁশ কাটছে কেউ কবর খুড়ছে। বেশ কৌতূহল হলো আবার কে মারা গেল। তখন আমার এক বন্ধু এসে বলছে ইমন রাসেল মারা গেছে। কথাটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। আমি বললাম ঠিক বলছিস তুই। পরে বাড়িতে গিয়ে সাইকেল টা রেখে স্কুল ড্রেস টা পাল্টে রাসেলদের বাড়িতে যায়। হ‍্যা দেখি এলাকার অধিকাংশ মানুষ সেখানে। রাসেল আর নেই। পরবর্তীতে জানতে পারলাম গতকাল রাত থেকেই ওর শরীর টা বেশ খারাপ হয়ে যায়। একেবারে দূর্বল হয়ে যায় ও। ওর অবস্থা খারাপ দেখে ওর বাবা মা একজন প‍্যারা-মেডিকেল ডাক্তার কে নিয়ে আসে। সেই ডাক্তার স‍্যালাইন পুশ করে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

তারপর ক্রমেই রাসেল একেবারে সাড়া প্রদান বন্ধ করে দেয়। শেষমেশ অবস্থা খারাপ দেখে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ওর বাবা মা কিন্তু ততক্ষণে ও আর নেই। সবাই বলাবলি করছিল ওর বাবা মা ওর চিকিৎসা করাইনি সেজন‍্য এমন পরিণতি। বিষয়টি আজও আমার মনে দাগ কেটে রয়েছে। মনে পড়লেই বেশ খারাপ লাগে। ভাবতেই অবাক লাগে। আসলেই মানুষের জীবন কতটা অদ্ভুত। একটা সময় একসঙ্গে খেলেছি ঘুরেছি আরও কত আড্ডা দিয়েছি। কিন্তু এই অল্প বয়সে ও সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। মাএ ১৩ বছর বয়সে ও সবাইকে ছেড়ে চলে গেল। এটা তো ওর যাওয়ার সময় না। কিন্তু নিয়তি কতটা নিষ্টুর এটা দেখলেই বোঝা যায়। তারপর থেকে আমাদের জীবন আমাদের মতোই চলতে থাকে। শুধুমাত্র তারপর থেকে আর কোনো নির্ভরযোগ‍্য ডিফেন্স পাইনি। সেই আত্মবিশ্বাস পাইনি। দিনগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। ওর পরিবার এলাকার লোকজন সবাই ওকে হয়তো ভুলে গিয়েছে। কিন্তু এখনো ফুটবল মাঠে গোল খেলেই আমার রাসেলের কথা মনে পড়ে।



সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



IMG_20230518_131529.JPG

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png



Posted using SteemPro Mobile

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59834.01
ETH 2665.66
USDT 1.00
SBD 2.46