মৃত্যুই একমাএ সত্য!!
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
আমাদের এলাকার পাশের একটা জায়গা। ঐ এলাকার মোড় বলতে পারেন। জায়গাটার নাম রেলগেট। মূলত সেখানে গিয়ে বসে থাকা আড্ডা দেওয়া হয়। ওখানে বেশ অনেক গুলো দোকান রয়েছে। এই ২০ বছরে জায়গাটার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সেই ছোটবেলা থেকে ওখানে যাওয়া শুরু হয়েছে। এখন বলতে গেলে প্রিয় একটা জায়গা। নবীন মানুষটাকে আমি সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। একটু পাগল টাইপের। কথার মধ্যে জড়তা ছিল এবং বেশ সরল। সেজন্য অবশ্য অসংখ্য লোক তার পেছনে লাগত। বিশেষ করে এই আমাদের বয়সী ছেলেরা বেশি পেছনে লাগত। নবীন বয়সে আমাদের অনেক বড়। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি তাকে। যতদূর শুনেছি নবীন এর বাবা মা আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। ওর বাড়ি কোথাও কেউ জানে না। অনেক আগে থেকেই এখানে থাকে। এই এর দোকানে ওর দোকানে কাজ করে দেয় পানি এনে দেয়। এতে করে তারা যা দেয় সেটাই খাই।
এভাবেই চলছিল নবীন এর জীবন। কোন আত্মীয়স্বজন নেই ভবিষ্যতের চিন্তা নেই কোন লক্ষ্য নেই। বেশ ভালোই দিন কাটছিল তার। দেখতে দেখতে আমিও বড় হয়ে গেলাম। কিন্তু নবীন এর সেই সরলতা কথার জড়তা এগুলোর কোন পরিবর্তন হলো না। এখনো সে ঐভাবেই থাকে। অনেক মানুষ তার পেছনে লাগলেও সত্যি বলতে আমি কখনোই তার পেছনে লাগিনি। কোন বাজে কথা বলিনি। কারণ এটা আমার কখনোই ভালো লাগত না। একটা অসহায় মানুষ তার পেছনে লেগে এরা কী মজা পাই। যাইহোক তো ঘটনা টা আজ থেকে ৮-১০ দিন আগের। হঠাৎ শুনতে পাই নবীন এক্সিডেন্ট করেছে। কীভাবে যেন ভ্যান থেকে পড়ে গিয়েছে। এবং তার হাতে পায়ে মুখে কেটে যায় এবং বেশ ভালো আহত হয় সে। পরবর্তীতে তাকে কুমারখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শুনেছিলাম সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। অনেকেই দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু আমার দেখতে যাওয়া হয়নি। কয়েকজনের থেকে শুনেছিলাম মুখ কেটে যাওয়ায় নাকী খেতেও পারছে না কথাও বলতে পারছে না। ভেবেছিলাম চিকিৎসা চলছে হয়তো দ্রুতই সুস্থ্য হয়ে যাবে। তারপর আর কোন খবর পাইনি নবীনের। সেরকম কিছু হলেও তো জানতে পারতাম। আমিও নবীন এর কথাটা মোটামুটি ভুলে যায়। কিন্তু আজ সকালে একটা বিষয় দেখার পরে আমি রীতিমতো হকচকিয়ে গিয়েছি। শীতের সময় তার উপর আমার কোন কাজকর্ম নেই। সেজন্য ঘুম থেকে দেরীতে উঠি। তো আজ ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে গিয়েই দেখতে পাই আমার এলাকার এক ভাই পোস্ট করেছে। ভাইয়ের স্ট্যাটাসে লেখা " এই মানুষ টা আজ মারা গিয়েছে। আল্লাহ্ তাকে বেহেশতে নসিব করুন"। আরেকটু ক্রল করে নিচে গিয়ে দেখি নবীন এর ছবি।
তখন আমি রীতিমতো লাফ দিয়ে উঠে পড়ি। তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার। কিন্তু পরবর্তীতে একে একে সবকিছু মনে পড়ে। হ্যা নবীন তো এক্সিডেন্ট করেছিল। হয়তো বেশি খারাপ হয়েছিল তার শরীরের পরিস্থিতি। সেজন্য এইটা হয়েছে। তখন আমার খারাপ অবশ্যই লাগছিল। কিন্তু তার চেয়ে বেশি লাগছে। মানুষ টাকে কষ্ট করে আর বেঁচে থাকা লাগবে না। শীত, গরম এইরকম প্রাকৃতিক পরিবেশে কষ্ট করে আর বেঁচে থাকা লাগবে না। জীবন নামক এই সংগ্রাম থেকে সে একেবারে পুরোপুরিভাবে মুক্তি পেয়ে গেল। আমাদের রেলগেটে আর এই মানুষটাকে কখনোই দেখা যাবে না। নবীন হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করেনি কখনো। কিন্তু মানুষকে ঠকানো মিথ্যা বলা, চুরি বাটপারি কারো মনে দুঃখ দেওয়া এগুলো কখনো করেনি ও। আশাকরি সৃষ্টিকর্তা ওকে পরকালে বেহেশতে নসিব করবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাই আপনি আজকে আমাদের মাঝে একদম চিরন্তন সত্যা একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। হ্যাঁ ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন মৃত্যুই হচ্ছে একমাত্র সত্যা। আমাদের সবারই একদিন এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আর এই মৃত্যু থেকে কেউ রেহাই পাবে না। ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্টে আমাদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা শুরুপ শেয়ার করার জন্য।
রক্তের সম্পর্কের কেউ না হলেও কিছু মানুষ মনের মধ্যে রেখাপাত করে। আপনার লেখা পড়ে তাই মনে হলো, নবীনের মৃত্য আপনাকে/আপনাদের কষ্ট দিয়েছে।আর এটাই মানুষের ধর্ম। ওপারে ভাল থাকুক আপনাদের রেল গেটের নবীন। লেখাটি শেয়ার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
মৃত্যুটা অবধারিত এই কঠিন সত্যটা আমাদেরকে মেনে নিতে হবে। তবে নবীনের মৃত্যুটা খুবই দুঃখজনক। যদিও সেই এতিম ছিল আপনার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল। আসলেই যারা এতিম তাদের কোন ভাল স্থান থাকে না। তারা মানুষের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার গুলো পেতে পারেনা। মানুষ তাদেরকে অসহায়ের চোখে দেখেন সব সময়। অবশেষে এক্সিডেন্টের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে ত্যাগ করলেন। গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো।
আমাদের সকলকে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। কেউ সবসময় দুনিয়াতে থেকে যেতে পারবে না। এই এতিম ছেলে নবীন যেভাবে দুর্ঘটনার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করল তা খুব খারাপ লাগলো। আপনার সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিল শুনেও খুব ভালো লাগলো। সে এতিম হওয়ার কারণে সে তার পরিবার এর ভালবাসা পায়নি।
আসলে অনেক মানুষ আছে যারা কি না সহজ সরল মানুষকে দেখলে পিছনে লাগে মজা নেয় তাদের কথাও আচরণে।নবীনও সেরকমই একজন মানুষ ছিলেন অনেকের কাছে। আসলে অনেক সময় কারো মৃত্যুর খবরে এক বাক্যে একটি শব্দই বের হয় মুক্তি পেয়েছে। আসলে মৃত্যুই মুক্তি।নবীনও কষ্টের জিবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পরিশেষে যে কথা গুলো বলেছেন তাতে মন ছুঁয়ে গেলো।। আসলেই মানুষ ঠকানো,ছল চাতুরী, মিথ্যা বলা ধার্মিক কোন ব্যাক্তির থেকে নবীনের মতো মানুষ হাজার গুণে ভালো।সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই ওনাকে স্বর্গবাসী করবেন। ধন্যবাদ।