ক্ষমতার দাপট।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
আমি প্রায় দশ বছর ধরে দেখে আসছি জাহিদ ভাইয়ের দোকান টা। যদিও সামনাসামনি উনাকে কখনো ভাই বলা হয় না আপনি বলে সম্বোধন করে থাকি। তো জাহিদ ভাইয়ের দোকান টা আমাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে গড়াই নদীর তীরে। ওখানে বসে জাহিদ ভাইয়ের লেবু চা মটকা চা এবং নদীর প্রকৃতি উপভোগ করার মধ্যে অসাধারণ একটা অনূভুতি ছিল। এভাবেই চলছিল। দেখতে দেখতে আমাদের স্কুলজীবন শেষ হয়। কলেজে ভর্তি হয়। কিন্তু জাহিদের দোকানে যাওয়া চলতেই থাকে কিন্তু কমে যায়। মোটামুটি সপ্তাহে একদিন যেতাম। তবে শেষদিকে এসে ঐদিকে যাওয়া একটু বেড়ে গিয়েছিল। প্রায় দিনই যেতাম। মূলত একাকিত্ব কাটাতে যেতাম। আবার ওখানে যেসব বন্ধুরা আসত তাদের সঙ্গে দেখ হতো ভালো লাগত। সবমিলিয়ে জাহিদ ভাইয়ের দোকান ছিল আমাদের জন্য পূর্ণমিলনী একটা স্থান।
ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় ছয় মাস আগের। আগষ্ট মাসের ঘটনা। আমার ঢাকা যাওয়ার ঠিক আগের দিনের কথা। ঐদিন বিকেলে আমি এবং আমার দুই বন্ধু নাভিদ ও ইকরা ঐখানে নদীর পাশে বসেছিলাম এবং জাহিদের চা খেয়েছিলাম। ঐদিন আমার বেশ মন খারাপ হয়েছিল। কারণ প্রায় তিন মাসের জন্য প্রিয় শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তবে ঐদিন যে আমি আরেকটা জিনিস শেষবারের মতো দেখছি ঐখান সেটা আমি জানতাম না। যাইহোক চা খেলাম ঐদিন বিল নাভিদ দিয়েছিল। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। বসে থাকতে বেশ ভালো লাগছিল। কিন্তু আর বসে থাকা যাবেনা। বাড়ি গিয়ে সব গোছানো লাগবে। সেজন্য চলে আসি। পরবর্তী তিন মাস ঢাকা ছিলাম। ঐ গড়াই নদী আমার শহর এবং ঐ স্থানটা অনেক মিস করতাম। মাঝে মাঝে মনে হতো এখনই ছুটে চলে যায়। যা হবে দেখা যাবে। কিন্তু সম্ভব হতো না।
এরপর প্রায় তিন মাস পর নভেম্বরে যখন আমি বাড়ি ফিরে আসি। প্রথম দিন যেতে পারিনি। পরের দিন চলে যায় ওখানে জাহিদ ভাইয়ের দোকানের পাশে গড়াই নদীর তীরে। কিন্তু ওখানে গিয়ে ঐরকম কিছু দেখব আমি আশা করিনি। এবং ঢাকা থাকতেও এমন কিছু শুনিনি। দেখি জাহিদ ভাইয়ের দোকান টা আর নেই। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে অন্য যে দোকান গুলো ছিল একটাও নেই। কারণ টা বুঝতে না পেরে বেশ কিছুক্ষণ বসে ছিলাম। পরবর্তীতে বাড়ির দিকে ফিরে আসি। পরবর্তীতে আমার বন্ধু নাভিদ এবং আরও কয়েক জনের মাধ্যমে জানতে পারি আমি যাওয়ার কয়েকদিন পরেই নাকী পৌরসভা থেকে লোক এসে দোকানগুলো ভেঙে দিয়ে গেছে সরকারি জায়গা বলে। ব্যাপার টা তখন সাধারণ ভেবেছিলাম। যে সরকারি জায়গা সেজন্য এমনটা করতেই পারে।
কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি এই জায়গা দোকান ভালো ব্যবসা এইজন্য নাকী মেয়র ভালো একটা টাকা দাবি করে। মানে যাকে বলে চাঁদা। কিন্তু জাহিদ ভাই সহ বাকি রা অতো টাকা দিতে রাজি না হওয়াই আইনের দোহাই দিয়ে তাদের দোকান গুলো ভেঙে দেওয়া হয়। এবং জাহিদ ভাইয়ের কিছু করারও ছিল না। একটা সময় বিকেলে ওখানে মানুষের কারণে পা রাখা যেত না। কিন্তু এখন বিকেলে গেলে মানুষ দেখাই যায় না। জায়গাটা একেবারে লোকশূণ্য হয়ে পড়েছে। আমি এখনও প্রায়ই যায় ওখানে। গেলে জাহিদের দোকান টা অনেক মিস করি। মিস করি জাহিদ ভাইয়ের লেবু চা এবং মটকা চা। ক্ষমতার দাপটে চিরকালই মানুষের উপর এমন অত্যাচার হয়ে আসছে। কিছু সময় এটা একেবারে অসহনীয় হয়ে যায়। জাহিদ ভাই এখন নতুন দোকান নিয়েছে হাইওয়ের পাশে। কিন্তু আগের মতো দোকানে সেই ভীড় জৌলুস কোন টাই আর নেই।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ক্ষমতার দাপটে গোটা পৃথিবী অন্ধ হয়ে গেছে। আসলে ভবিষ্যতে আরো খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। যাইহোক এমন চমৎকার একটা আড্ডা আর সময় কাটানোর জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে জেনে ভীষণ খারাপ লাগলো। লোকটা আবারো অন্য জায়গায় দোকান করছে কিন্তু আগের সেই জৌলুস আর নেই। যাইহোক মন খারাপ করিও না, সব সৃষ্টিকর্তার ইশারায় হয়।
আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া ক্ষমতার দাপটে বর্তমান সবকিছুই সম্ভব। আমাদের দেশের রাজনীতির কথা আর কি বলবো। সাধারণ জনগণ যেখানে বেঁচে কিনে আয়োজগার করে খাচ্ছে আর তারা সেগুলো ধ্বংস করে দিল। যাইহোক আল্লাহ না মারলে কেউ হয়তো মরে না জাহিদ ভাইও হয়তো বেঁচে আছে। তবে নতুন দোকান নিয়েছে আস্তে আস্তে আবার হবে আগের মতো বেঁচা কেনা। ধন্যবাদ ভাইয়া।
আসলে এখন গোটা পৃথিবীতে ক্ষমতার দাপট বেড়েই যাচ্ছে৷ যার ক্ষমতা রয়েছে সেই নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করে এবং সব সময় অনেক জোর খাটাতে থাকে৷ সে মনে করে তার কাছে ক্ষমতা রয়েছে, এর প্রয়োগ যদি মানুষকে জুলুম অত্যাচার করে না প্রয়োগ করা হয় তাহলে এই মানুষ তার ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারবে না৷ এই ব্যক্তিটি নতুন জায়গায় দোকান দিয়েছে শুনে খুব ভালো লাগলো এবং আশা করি পরবর্তীতে তার ব্যবসা আগের মতই চলতে থাকবে৷ অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য৷