জীবনে কতকিছুই তো হারাইলাম।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
জীবনে ছোট থেকে কতকিছুই তো হারাইলাম! হারাইলাম নিজের কাছের মানুষ, হারাইলাম নিজের পছন্দের জিনিস গুলো। হারাইলাম নিজের সেই শৈশব কে। কিন্তু কোন কিছু হারানোর দুঃখ স্থায়ী হয়নি। যেমনটা স্থায়ী হয়ে গিয়েছে তোমাকে হারানোর দুঃখ টা। ছোটবেলার অনেক শখের লাল বলটা। মেলা থেকে যেটা আব্বার কাছ থেকে আবদার করে করে কিনেছিলাম। সেটাও হারাইলাম। তখন খারাপ লেগেছিল কিন্তু সেই দুঃখটা এতোটা স্থায়ী হয়নি তো। নিজের হাত খরচের টাকা জমিয়ে কেনা খরগোশ টা। বেশ পছন্দের ছিল আমার। প্রতিদিন বিকেলে নিয়ে মাঠে যেতাম। ওকে নিয়ে সময় টা কাটতো। একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে দেখি আমার সেই খরগোশ টা আর নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। বিশ্বাস করো সেদিন আমি অনেক কেঁদেছিলাম। সারারাত না খেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা হারোনোর কষ্ট টাও তো এতোটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
আমার পছন্দের বিড়াল সাইমন। পুরো দেড় বছরের বেশি সময় আমার সঙ্গে ছিল। একেবারে আমার নিজের কেউ মনে হতো ওকে। একটা সময় গিয়ে ওকেও হারাইলাম। কোথায় তখনও তো এতোটা কষ্ট হয়নি। তখনও তো দুঃখ এতোটা স্থায়ী হয়নি আমার। সাইমনের বিচ্ছেদ টাও ভুলে গিয়েছিলাম কয়েকদিনের মধ্যেই। স্কুল থেকে দ্রুত বাড়িতে ফেরার তাড়া। কারণ মাঠে দ্রুত যেতে হবে খেলতে। দেরি করলে বড় ভাইয়েরা খেলতে নেবে না।কোথায় সেই বিকেল টাও তো হারাইলাম। পুরো ছয়টা ঘন্টা অপেক্ষা করে থাকা। ঘড়িতে চারটা বাজলেই স্কুলের ঘন্টা বেজে উঠতো। সমস্ত বাঁধা পিছে ফেলে দিতাম দৌড়। শেষ পযর্ন্ত ঐ মূহূর্ত টাও তো হারাইলাম। কোথায় দুঃখগুলো তো এতোটা স্থায়ী হয়নি তখনও। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে মায়ের চোখ ফাকি দিয়ে পুকুরে গোসল করতে যাওয়া। বন্ধুদের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুরে গোসল করা সাতারে প্রতিযোগিতা করা। কোথায় সেই সময় টাও তো হারিয়েছি কিন্তু দুঃখটা তো এতোটা স্থায়ী হয়নি।
শীতের সকাল চারিদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন। যেদিকেই তাকায় শুধু সাদা। তার মধ্যে ঘুরে বেড়ানো হাঁটতে বের হওয়া। কোথায় সেই সময় টাও তো হারিয়েছি। এতোটা খারাপ তো লাগে না। ছোটবেলা থেকেই আমি বেশ শান্তশিষ্ট। বাড়ি থেকে খুব একটা বের হতাম না। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় স্কুল কলেজ থেকে আমারও কিছু বন্ধু হয়। না সেই সংখ্যা টা হয়তো অনেক না খুবই সামান্য। কিন্তু দিনশেষে তো তাদেরও হারাইলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি আমি একা। কোথায় সেটা নিয়েও তো এতটা কষ্ট পাইনি দুঃখটা আমার স্থায়ী হয়নি। নিজের এগারো বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। তখনও বাস্তবতা টা আমি বুঝতে শিখিনি। সেজন্য হয়তো তার বিচ্ছেদ টা তখন আমাকে খুব একটা কষ্ট দেয়নি। কিন্তু এখন তার বিচ্ছেদ তার অভাব বুঝতে পারি। কিন্তু নিজের নিয়তি ভেবে সেটাও মেনে নিয়েছি। হাজার অভিযোগ হাজার অপূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও সেই দুঃখটাও তো স্থায়ী হয়নি। তাহলে...
তাহলে তোমাকে হারানোর দুঃখটা এতোটা স্থায়ী হচ্ছে কেন। নিজের কাছের কতকিছুই তো হারিয়ে ফেললাম। হারিয়ে ফেললাম সেই সময় গুলো সেই মানুষ গুলো। এবং আমি নিজেও নিজেকেও হারিয়ে ফেলেছি। সারাদিন বকবক করা ছেলেটা এখন একেবারে নিশ্চুপ হয়ে থাকে। নিজের দুঃখ কষ্ট অভিযোগ গুলো আর কাউকে জানায় না। নিজেই নিজেকে সাত্ত্বনা দিয়ে সবকিছু ভুলে যায়। কিন্তু তুমি এসেছিলে এই জীবনে একটা নতুন দিশা হয়ে। দেখিয়েছিলে সম্ভাবনার আলো। পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি হয়তো দাও নি কিন্তু চলে যাবে সে কথাও তো কোনদিন বলোনি। তবে আমি জানতাম তুমি একদিন ঠিকই চলে যাবে। কিন্তু তারপরও জানার পরেও তোমাকে হারানোর দুঃখটা স্থায়ী হলো কেন? জীবনে কতকিছুই তো হারাইলাম ভবিষ্যতেও অনেক কিছু হারাব কিন্তু তোমাকে হারানো পর আমার যে আফসোস সেটা আর কখনোই হবে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: কথাগুলো একেবারেই কাল্পনিক। এগুলো আমার কথা ভেবে গুলিয়ে ফেলবেন না। তবে হ্যা আমার মতোই কোন এক সাধারণ ছেলের কথা এগুলো।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
সব মানুষকেই তার পছন্দের মানুষ, পছন্দের পশু,শৈশব, কৈশোর গুলো হারিয়ে হারিয়ে জিবন টা পার করতে হয়।আসলে ভাঙ্গা গড়া,ভার জিত নিয়েই মানুষের জিবন।আপনার বিড়াল সাইমনকে হারিয়েছেন ও খরগোশ টি হারিয়ে গেছে জন্য কান্না করেছেন তাই খারাপ লাগছে।ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্ট টি করার জন্য কারণ এই পোস্টে অনেক কিছু হারানোর বেদনা,কষ্ট জানতে পারলাম আপনার জিবন থেকে।