আমাদের শৈশব কৈশোর।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
প্রতিটা জেনারেশনের ছেলে মেয়েদের রুচি যে আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনি এক জেনারেশনের সঙ্গে অন্য জেনারেশনের মতের অমিল রুচির অমিল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেমন অমিল ছিল আমার দাদার সঙ্গে আমার বাবার এবং আমার বাবার সঙ্গে আমার এবং ভবিষ্যতে আমার এবং আমার সন্তানের ক্ষেএেও সেটাই হবে। আমাদের শৈশব কৈশোরে এইরকম ইন্টারনেট স্মার্টফোন সহজলভ্য ছিল না। তখন আমরা বিনোদনের জন্য বিভিন্ন দেশীয় খেলা খেলতাম। একটু বড় হলে শুরু করলাম ক্রিকেট ফুটবল খেলা। কিন্তু খেলাধুলা করার পরে বিনোদনের একটা অংশ অপূর্ণ থাকত। ওটা আমরা পূরণ করতাম টিভি দেখে। আমাদের শৈশবে তখন মোটামুটি রঙিন টিভি সব বাড়িতেই ছিল সঙ্গে ছিল ডিশ কানেকশন। প্রতিটা ছেলে মেয়েই কার্টুন পছন্দ করে। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না।
আমার পছন্দের কার্টুন গুলোর মধ্যে ছিল নারায়ন দেবনাথ এর নন্টে ফন্টে, বাটুল দি গ্রেট, নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় এর টেনি দা এছাড়া গোপাল ভাঁড় টভ এন্ড জেরি অন্যতম ছিল। তবে এই কার্টুন গুলো প্রতিদিন হতো না। সপ্তাহে একটা নির্দিষ্ট দিন সাধারণত রবিবার জি-বাংলাই হতো। আর তখন এইরকম স্মার্টফোন এবং নেট কানেকশন ছিল না, যে ইচ্ছা হলো আর সার্চ দিয়ে দেখে নিলাম। সেজন্য পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম কার্টুন শো গুলো দেখার জন্য। নন্টে ফন্টের বন্ধুত্বের মাঝে কেল্টুর শয়তানি। সুপারেন্টেড স্যারকে দিয়ে নন্টে ফন্টেকে শাস্তি দেওয়া নন্টে ফন্টের খাবার চুরি করে খাওয়াই ছিল কেল্টু দার কাজ। তারপর কেল্টু দা ছিল আদু ভাইয়ের যোগ্য শিষ্য। বছরের পর বছর ফেল করে থাকত একই ক্লাসে। বাটুল দ্যা গ্রেট অন্যতম একটা পছন্দের কার্টুন ছিল। বিচ্চু বাচ্চুর বাদরামি এবং বাটুলের বীরত্ব গাঁথা সব কাজকর্ম বেশ উপভোগ করতাম।
তবে আমি সবচাইতে বেশি উপভোগ করতাম টেনি দ্যা কার্টুন টা। টেনি দা এবং তার অন্য তিন মূর্তি হাবুল, প্যালা এবং ক্যাবলা মোট চারমূর্তির কতশত কান্ডকারখানা। সেই লম্বা দেহের অধিকারী টেনি দা পড়ালেখায় ভালো ক্যাবলা বাঙাল ভাষা বলা হাবুল এবং সারাবছর সিংহী মাছের ঝোল খাওয়া প্যালা। টেনি দা যেমন খাদ্যরসিক তেমনি ছিল গুলবাজ। বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা গল্প বলাই যার কোনো জুড়ি নেই। এককথায় হাসানোর দিক থেকেও টেনি দ্যা কার্টুনের বিকল্প ছিল না আমার কাছে। এছাড়া গোপাল ভাঁড়, টম এন্ড জেরি অন্যতম ছিল। তবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কাকাবাবু সন্তু গল্পের আলোকে তৈরি বিভিন্ন মিশন কার্টুন যেমন সবুজ দ্বীপের রাজা, বজ্রলামা রহস্য, পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক, মিশন কাশ্মীর, মিশর রহস্য, ভয়ংকর আফ্রিকা সবমিলিয়ে দারুণ ছিল এগুলো। এগুলো দেখে প্রচুর অ্যাডভেঞ্চার পেতাম আমি পাশাপাশি অনেক উপভোগ করতাম।
কিন্তু এখন কোথায় সেই দিনগুলো। আমরা এই কার্টুন গুলোর পাগল ছিলাম। সপ্তাহে একদিন অপেক্ষা করে থাকতাম এই কার্টুন শো গুলো দেখার জন্য। কিন্তু বর্তমানের ছেলে মেয়েরা একটু অন্যরকম। এরা বাংলা ভাষায় চেয়ে বিদেশী ভাষার কার্টুন বেশি দেখে। একটা কথা বলি আমার এলাকার ৭-১০বছরের ছেলে মেয়েরা হিন্দিতে মোটু পাতলু দেখতে দেখতে এমন একটা অবস্থা হয়ে গিয়েছিল যে তারা চেষ্টা করত হিন্দিতে কথা বলতে। আমার এক ভাইয়ের ছেলে তো বলতো "মা মুঝে ভুক লাগি, মুঝে খানা দো" বুঝেন অবস্থা টা হা হা হা। তার উপর এদের কাছে ইন্টারনেট স্মার্টফোন খুবই সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। সেজন্য এরা আমাদের মতো অপেক্ষা করে না আমাদের মতো উপভোগও করতে পারে না। তবে ক্রমেই আমাদের বাংলা ভাষার এইসব মাস্টারপিস কার্টুন গুলো জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে বিদেশী এইসব সস্তা হাসির কার্টুনের কাছে। এই কার্টুন গুলোতে ভাঁড়ামো ছাড়া আর শিক্ষনীয় কিছুই থাকে না।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
খুব ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার অনুভূতিগুলো পড়ে।
আমিও কার্টুন দেখতে খুব পছন্দ করতাম আজও ছেলের সাথে কার্টুন দেখি।তবে টেনি দা আমার দোখা হয়নি।বাকি সব কটাই আমি দেখেছি।টম এ্যান্ড জেরির মারামারি আবার দুজনের জন্য দুজনের টান সত্যিই ভালো লাগে।আর আমরা সপ্তাহ জুড়ে বসে থাকতাম কার্টুন দেখার জন্য। সে এক অন্য রকম অনুভূতি ছিল।আজ আর ছেলেমেয়েরা অপেক্ষা করে না।ইচ্ছে হলেই ইউ টিউবে দেখে নেয়।খুব ভালো লাগলো । ধন্যবাদ আপনাকে।