সবার স্বপ্ন বাড়ি যায় না!!
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
চৈত্র মাসের এক শেষ বিকেলে পথের ধারে কাঁদছিল ছেলেটা। ছেলেটা তখন একেবারে দুধের শিশু। কেউ হয়তো তার অপকর্মের ফল পথে ফেলে দিয়ে গেছিল রাস্তায়। এবং যার ফল ভোগ করছিল ঐ নিষ্পাপ শিশুটা। পরবর্তীতে শিশুটার জায়গা হয় স্থানীয় এতিম খানায়। এতিম খানার প্রধান ছেলেটার নাম দেয় বৈশাখ। কারণ তখন বৈশাখ মাসের আগমন হতে যাচ্ছে। ঐ খানে বৈশাখের মতো আরও অনেক শিশু ছিল। ওরা সবাই এতিম ওরা কেউ তাদের বাবা মায়ের খোঁজ জানে না। ধীরে ধীরে এভাবে বড় হতে থাকে বৈশাখ। দেখতে দেখতে বৈশাখ অনেক বড় হয়ে যায়। বৈশাখের বয়স তখন ২১ বছর। এখন সে আর এতিম খানায় থাকে না। এতিম খানায় লেখাপড়ার ব্যবস্থা থাকাই সে ঐদিকে নজর দেয়। এবং লেখাপড়ায় ভালো হওয়াই সব জায়গাই ও এগিয়ে যায়। এক পর্যায়ে গিয়ে বৈশাখ দেশের স্বনামধন্য একটা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাই।
এখন বৈশাখ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই থাকে। ইউনিভার্সিটি জায়গা টা বেশ দারুণ লাগে বৈশাখের। সারাদিন লেখাপড়া বন্ধুবান্ধব নিয়ে কেটে যায় বৈশাখের। এবং নিজের খরচ চালানোর জন্য কয়েকটা টিউশনি করে বৈশাখ। কিন্তু ঈদ, পূজা এগুলো আসলেই ওর খারাপ লাগে। এককথায় বলতে গেলে ও এগুলো ভয় পাই। ঈদ, পূজা এগুলো তো উৎসব এগুলো আসলে আবার কারো খারাপ লাগে নাকী?? হ্যা লাগে বৈশাখের লাগে। ঈদের সময় আসলেই ইউনিভার্সিটিতে ছুটি পড়ে। এবং সেই ছুটিতে হলে থাকা প্রায় সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে যায়। শুধু ছাএরা না সব কর্মচারী দারোয়ান শিক্ষক সবাই যায়। সবাই যায় পরিবারের সাথে ঈদ উৎযাপন করতে। পূজার সময়েও ঠিক এইটাই হয়। সবাই ছুটিতে বাড়িতে যায়। এবং হল একেবারে ফাঁকা। তখন হলে পুরোপুরি একা থাকে বৈশাখ।
বৈশাখ জানে না ও হিন্দু না মুসলিম। ঈদ অথবা পূজা কোনটা ওর উৎসব। বৈশাখ জানে ও এতিম ওর যাওয়ার কোন জায়গা নেই। কোথায় যাবে ও। ঈদের সময় টা বা পূজার সময় টা ওর কাছে যেন এখন একটা সমস্যা। এইজন্যই ঈদ বা পূজা আসলেই ও ভয়ে থাকে। অন্য শিক্ষার্থীরা যেখানে খুবই উৎফুল্ল কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন চিএ বৈশাখের ক্ষেএে। এভাবেই বৈশাখ কাটিয়ে দিল তার জীবনের ২১ টা বছর। এখন বৈশাখ মাঝে মাঝে নীরবে একান্তে সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিযোগ করে। কেন তার এই অবস্থা কেন তার বাবা - মা পরিবার নেই। এতে তার কী দোষ। সৃষ্টিকর্তা কী ওকে এমন জীবন না দিলে পারতেন না। কিন্তু বৈশাখের এই বোবা কান্না শোনার কেউ নেই। এই কথাগুলো শোনে শুধু হলের চারটা দেয়াল। ঈদের ছুটি শেষ হয় ক্যাম্পাসে আবার সবার আগমন শুরু হয় একে একে।
বন্ধুদের ঈদ উৎযাপনের ছবি পরিবারের সঙ্গে কাটানো মূহূর্তের কথা বন্ধুরা এসে তাকে বলে। সেগুলো শুনে একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে চুপ করে থাকে বৈশাখ। তার আর এখন আফসোসও হয় না। এভাবেই তো চলছে এই এতোগুলো বছর। তার বাকী জীবন টাও হয়তো এমনই যাবে। শুধু বৈশাখ না আমাদের আশেপাশে আমাদের পরিচিত এমন অনেক মানুষ আছে। যাদের কোন পরিবার নেই এতিম খানায় থাকে। ঈদ আসে ঈদ যায় পূজা আসে পূজা যায় কিন্তু তাদের আর বাড়ি যাওয়া হয় না। এভাবেই কেটে যায় তাদের জীবন। সত্যি সবার স্বপ্ন বাড়ি যায় না। এই গানটা যেন তাদের জন্য বৃথা। আমাদের উচিত আমাদের পরিচিত কেউ এমন থাকলে তার খোঁজ নেওয়া। সম্ভব হলে তাদের সঙ্গে ঈদ করা। আবার আমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে আমরা চেষ্টা করব পাশ্ববর্তী কোন এতিম খানায় যেতে। এতিম ঐ বাচ্চাগুলোর সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে। ওদের কে ঈদে নতুন পাঞ্জাবি কিনে দিতে। আমরামরা তো এতোটুকু ওদের জন্য করতেই পারি। না হলে আমরা কিসের সৃষ্টির সেরা জীব??
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
হুমমম ভালো লিখেছেন আজকের লেখা গল্প টি ৷ বৈশাখের মতো এমন হাজারো বৈশাখ আমাদের আশে পাশে একাকীত্ব কে সাথে নিয়ে বেচে আছে ৷ তারা জানে না তাদের বাবা মা তারা কখন পায় নি মায়ের আদর পায় নি বাবার ছায়া ৷
সত্যি আজকের লেখা কথা গুলো সত্যি অসাধারণ ছিল ৷ অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই অনেক সুন্দর একটি পোষ্ট তুলে ধরার জন্য ৷
ধন্যবাদ ভাই। সুন্দর মন্তব্য করেছেন।
আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা অবহেলিত। বিশেষ করে বৈশাখের মতো যারা ছেলে মেয়েরা রাস্তার ধারে বড় হয় তাদের আবার কোন স্বপ্ন থাকে না। তারা শুধু বেঁচে থাকে নিজেদেরকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হয় সে উদ্দেশ্য। যদিও বৈশাখ বেশ বড় হয়ে গেল নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে পারে। কিন্তু সে তো জানে না হিন্দু কিনা মুসলিম। সেই কোন ধর্ম পালন করবে সেটাও জানে না। এমন বৈশাখের মতো হাজারো মানুষ রয়েছে যাদের স্বপ্ন বাড়ি যায় না। গল্পটি আপনি বেশ ভালই সুন্দর করে লিখলেন।
জী আপু ঠিকই বলেছেন। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।।
বৈশাখ এর মতো এরকম অনেক এতিম ছেলে মেয়ে রয়েছে দেশে-বিদেশে, যাদের কাছে ঈদ কিংবা দুর্গাপুজো কোন মাইনে রাখেনা। আসলে আপনার আজকের গল্পটা একটু ভিন্ন ধরনের এবং যথেষ্ট হৃদয়স্পর্শী। এটা অনেকটা সত্যি যে, গভীরভাবে আমরা একবারও ভেবে দেখি না এই মানুষগুলোর জীবন আসলেই কতটা কষ্টকর। তবে আমাদের উচিত এই মানুষগুলোর পাশে থাকা।