ভাইয়ের বিয়ে |পর্ব-১|
হ্যালো বন্ধুরা
মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সকল সদস্যগণ,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?পরম করুণাময় ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি সুস্থ আছি।
আমি @bristychaki,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগ এর আমি একজন ভেরিফাইড ও নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি পোস্টের ভিন্নতা আনার।আজ তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নতুন পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
বিয়ে
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে সমগ্র জীবনে যে-দশটি সংস্কার বা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান রয়েছে তন্মধ্যে বিবাহ শ্রেষ্ঠ । বিবাহের দ্বারা স্বামী সস্তানের জনক হয়ে লাভ করেন পিতৃত্ব এবং স্ত্রী জননীরূপে লাভ করেন মাতৃত্ব। বিবাহের মাধ্যমে মাতা, পিতা, পুত্র, কন্যা, সকলকে নিয়ে গড়ে ওঠে সুখের সংসার, যাকে কেন্দ্র করে প্রেমপ্রীতি, স্নেহ, বাৎসল্য প্রভৃতি মানব মনের সুকুমার বৃত্তিগুলো পরিপূর্ণরূপে বিকশিত হয়।শুভলগ্নে নারায়ণ, অগ্নি, গুরু, পুরোহিত, আত্মীয় এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণকে সাক্ষী রেখে মঙ্গলমন্ত্রের উচ্চারণ, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয় যজ্ঞ এবং কতগুলো লোকাচারের মাধ্যমে । বিবাহ অনুষ্ঠানের অনেক পর্ব আছে। যেমন- আশীর্বাদ, অধিবাস, বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ, গায়ে হলুদ (গাত্র হরিদ্রা),বর-বরণ, শুভদৃষ্টি, মালাবদল, সম্প্রদান, যজ্ঞানুষ্ঠান ও সাতপাকে বাঁধা, সিঁথিতে বিবাহ চিহ্ন,সপ্তপদীগমন, বাসি বিয়ে, অষ্টমঙ্গলা প্রভৃতি । এর মধ্যে কিছু পর্ব শাস্ত্রীয়, আর কিছু অঞ্চলভেদে লোকাচার ।
ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ইতিমধ্যে একটি পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি তা আপনারা অনেকেই দেখেছেন।অনেকদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠান তাই সকলেই বেশ আগ্রহী এবং আনন্দিত।বিয়ের অনেক দিন আগে থেকেই আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর ধুম পড়েছিলো তা হয়তোবা @shapladatta এর পোস্টের মাধ্যমে অনেকেই দেখেছেন।
আইবুড়ো ভাত
বিয়ের দুই একদিন আগে আইবুড়োভাত হয়। নানা রকমের ভাজা, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, মাছের বিভিন্ন পদ, মাংস, চাটনি ইত্যাদি নানা রকমের পদের সমাহার। প্রথম গ্রাস কনে বা বরকে খাইয়ে দেন তাদের মা,পরে অন্যান্য সদস্যরা খাইয়ে দেন।তারপর
আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরা সবাই হবু বর বা হবু কনেকে আইবুড়ো ভাত খাওয়ান।আমিও আইবুড়ো ভাতের আয়োজন করেছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বাসায় এনে খাওয়াতে পারি নাই।মাঝরাতে রাস্তায় গিয়ে খাবার দিয়ে আসতে হয়েছিলো।ঐদিন ভাই অনেক জায়গায় আইবুড়ো ভাত খেয়ে নিজের কিছু কাজ সেড়ে আমার বাসায় আসতে আসতে রাত ১ টা বেজে গেছিলো পরেরদিন অফিস আছে তাই ওকে ঢাকা পৌঁছাতেই হবে সেজন্য আর বাসায় আসা হয়নি।এদিকে তো আমি সকল আয়োজন করে অপেক্ষায় ছিলাম।কি আর করা শেষমেশ রাত ১ টার সময় রাস্তায় গিয়ে ভাইকে খাবার দিয়ে আসতে হয়েছিলো।পরের দিন খেতে পেরেছিলো কি-না সন্দেহ আছে।এটা ছিলো অন্য রকমের আইবুড়ো ভাত যা একেবারেই নতুন এবং চিরকাল মনে রাখার মতো বিষয়।
অধিবাসের স্নান
বিয়ের আগের দিনে অধিবাসের স্নান দিয়ে বিয়ের নিয়মকানুন শুরু হয়।পাঁচজন আইও পিঁড়ির উপরে কাঁচা হলুদের সাতটি চাকা সাতটি পান সুপারি ও সাতটি আদার চাকা সাজিয়ে নেন।তারপর নিয়মঅনুযায়ী সেই হলুদ বেঁটে ছেলেকে প্রথমে তার মা কপালে হলুদ ছুঁয়ে দেন সাত বার।তারপর ঘটের জল সাতবার মাথায় দিয়ে মা সেখান থেকে চলে যান তারপর বাকি সবাই ভালো করে পুরো শরীরে কাঁচা হলুদ মাখিয়ে স্নান করানো হয় এবং এই স্নানের নাম হলো অধিবাসে স্নান।অধিবাসের স্নান হওয়ার পর থেকে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত সে আর রাতবেরাত বাড়ির বাহিরে থাকতে পারবে না।ধারণা করা হয় গায়ে কাঁচা হলুদের গন্ধে খারাপ কুদৃষ্টি বা উপরের খারাপ হাওয়া বাতাস গায়ে লাগতে পারে এবং এতে করে ক্ষতি হতে পারে।যদিওবা এটার কতোটুকু সত্যতা আছে সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। ছোটবেলা থেকে দেখে এবং জেনে আসছি এতোটুকুই।
গায়ে হলুদ
গায়ে হলুদের দিন সকাল বেলা স্নান করানো সবকিছুই ঠিকঠাক মতো হয়েছে তারপর সন্ধ্যায় আমরা সবাই যে যার মতো সেজেগুজে ভাইয়ের সাথে কিছু ছবি তুলি তারপর ভাইয়ের হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়।পরেরদিন খুব সকাল সকাল বিয়ের উদ্দেশ্য রওনা দিতে হবে সেজন্য খুব বেশি সময় আনন্দ উপভোগ করতে পারিনি।তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমাতে হবে এই চিন্তা সবার মাথায় ছিলো।তাই তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠান শেষ করতে হয়েছিলো।
আজ এ পর্যন্তই,আবার দেখা হবে পরবর্তী পর্বে সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশা করে শেষ করছি।
আমাদের উইটনেস কে সাপোর্ট করুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপু আপনাদের শাস্ত্র মতে যেগুলো বিয়ে হয় সেগুলো কিন্তু বেশ আনন্দের হয়। অনেক নিয়ম কানুন মানা হয়। সেই সাথে বেশ মজা করা হয়। সত্যি আপু অনেকদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছেন আর সুন্দর সময় কাটিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো। শাপলা আপুর পোস্ট আমিও দেখেছিলাম।
ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে খুব আনন্দ করেছেন সবাই। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে খুব নিয়ম কানুন মেনেই আপনাদের বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করা হয়। আর প্রত্যেকটা নিয়ম কানুন মানার পাশাপাশি খুব মজাও করেন। ফটোগ্রাফি গুলো দেখে ভালো লাগলো। সবাইকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
বিয়ের যে এত নিয়মকানুন, সেটা আমার জানা ছিল না দিদি। আপনার আজকের পোস্ট পড়ে সেই বিষয়ে অনেকটাই ক্লিয়ার হয়ে গেলাম। তবে একটা জিনিস জেনে খারাপ লাগলো যে, ভাইকে আইবুড়ো ভাত বাড়িতে এনে খাওয়াতে পারলেন না। তার পরিবর্তে রাস্তায় গিয়ে তাকে খাবার দিয়ে আসতে হলো। যাইহোক, প্রথম পর্বটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছেন দিদি। ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে।