হঠাৎ দুর্ঘটনার স্বীকার 😢
হ্যালো বন্ধুরা,
মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সকল সদস্যগণ,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?পরম করুণাময় ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি সুস্থ আছি।
আমি @bristychaki,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগ এর আমি একজন ভেরিফাইড ও নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশর গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।আশাকরি আজকের পোস্ট টি আপনাদের ভালো লাগবে।
দুর্ঘটনা এমন একটি জিনিস যা আমাদের প্রতিটি মানুষের সাথে কোনো না কোনো ভাবে ঘটে থাকে।কখন কার জীবনে কোন দুর্ঘটনা ঘটবে আমরা তা কেউ বলতে পারি না।কখনো কখনো হঠাৎ করেই ঘটে, আবার কখনো কখনো একটু অসতর্কতার কারণে ও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না হতে পারে,আবার কিছু কিছু দুর্ঘটনা আছে সাময়িক সময়ের জন্য কষ্ট দিয়ে থাকে।আজকেই ঠিক সেরকম একটি দুর্ঘটনার স্বীকার হয় আমার প্রতিবেশী ময়না ভাবী।আমরা যখন এই বিল্ডিংএ উঠি তখন সবাই প্রায় একসাথেই উঠেছিলাম।আর তাই তখন থেকে সবাই আমরা মিলেমিশে একত্রে থাকার চেষ্টা করি।ময়না ভাবী এবং তার হাজবেন্ড দুজনেই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চাকরিরত আছেন।
ময়না ভাবী খুবই ব্যস্ত মানুষ তারপরেও প্রতিনিয়ত না হলেও মাঝে মাঝে আমরা একত্রে বসে আড্ডা গল্প করে থাকি তাই আমাদের সম্পর্ক বেশ ভালোই বলা চলে।গতকাল রাত্রে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,আজ খুব সকাল সকালই ঘুম ভেঙ্গে গেলো তখন ভাবলাম তাহলে আমার হাজবেন্ডের সাথে কিছু সময় কথা বলি কারণ আজ ঈদের দিন তার ডিউটি সকালে সেও জেগে আছে।তাকে কল করলাম এবং কিছু সময় তার সাথে কথা বললাম।কথা চলাকালীন অবস্থায় ময়না ভাবীর ফোন থেকে আমার ফোনে কল আসলো ওপাশ থেকে ভাবী বেশ কান্নাকাটি করছিলো ভাবী বিস্তারিত জানালেন যে আজকে ঈদের দিন সকাল সকাল উনার হাজবেন্ড নামাজে যাবেন তাই সেমাই রান্না করবে বলে চুলায় এক পাতিল দুধ বসিয়ে দিয়েছেন এবং ফুটন্ত দুধের পাতিল উনি হাতে করে নিয়ে ডাইনিং রুমে এসে ওখানে একটা বিছানা পাতা ছিলো,সেটার উপরে বসতে নিয়ে বিছানায় না বসে উনি সরাসরি মেঝেতে পড়ে গেছেন।আর তখনই পুরো পাতিলের দুধগুলো ওনার হাতে পায়ে ছিটকে পড়ে আর উনি আহত হন। এই কথাটি শোনার সাথে সাথে আমি দৌঁড়ে উপরে উঠে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি বেশ গুরুতর অবস্থা হয়েছে।হাতে পায়ে জ্বালা করছিলো আর ভাবী খুবই কান্নাকাটি করছিলো।দেখে খুবই খারাপ লাগলো।
ঘটনাটি আরও বেশ কিছুক্ষণ আগেই ঘটেছিলো অনেক সকালে জন্য উনি আমাকে ফোন করেননি কারণ ওই সময় আমি ঘুমিয়ে থাকি ওটা উনি জানেন তাই আমাকে ডিস্টার্ব করতে চাননি কথাটা শুনে আমার খারাপ লাগলো। তখন আমি ভাবীকে বললাম যে এটা আপনি ভুল করেছেন,সাথে সাথে জানানো উচিত ছিলো।তার কারণ দুর্ঘটনার চেয়ে ঘুম কখনো বড় হতে পারে না!যাইহোক ভাবীর দুইটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে ওদেরকে সামলানোর জন্য লোকের দরকার ছিলো ওনার হাজব্যান্ড কে বললাম আপনি বাচ্চাদেরকে সামলান আমি ভাবীকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি।কোনোরকমে জামা কাপড় পড়িয়ে নিয়ে ভাবীকে নিয়ে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম।রাস্তায় গিয়ে দেখি একটাও রিক্সা কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আজ ঈদের দিন সবাই সকালবেলা নামাজের জন্য রিক্সা বের করতে পারেননি হয়তোবা।কিছুদূর গিয়ে দেখি একটি সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে তারপর সেই সিএনজি ওয়ালাকে বললাম ভাই অসুস্থ মানুষ হাঁটতে পারছে না একটু যদি আপনি হাসপাতালে পৌঁছে দিতেন!উনি প্রথমে রাজি ছিলেন না কারণ হাসপাতাল খুবই কাছে, উনি যেতে চাচ্ছিলেন না তারপরে অসুস্থ শুনে এবং অনেক অনুরোধ করার কারণে যেতে চাইলেন।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা হাসপাতালে পৌঁছে গেলাম গিয়ে এমার্জেন্সি বিভাগে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি একজন মহিলা ডাক্তার বসে আছেন।তাকে বিস্তারিত বলা হলো এবং তাকে পোড়া স্থান দেখানো হলো।সাথে সাথে একটি ক্রিম লিখে দিলেন এবং আনতে বললেন।এখন তো আবার পড়ে গেলাম বিপাকে একে তো রাস্তায় কোনো রিক্সা নেই তার মধ্যে এত্তো সকালে কোনো ওষুধের দোকান খোলা পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না!তারপরও কিছু করার নেই আনতে তো হবে।ওনাকে ওখানে বসিয়ে রেখে আমি রাস্তায় নেমে আসলাম এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম একটাও রিক্সার দেখা পাচ্ছি না।অনেকক্ষণ পর একটা রিক্সার দেখা মিললো।তারপর আমি বাজারের দিকে আসলাম এবং যতগুলো ওষুধের দোকান আছে সবগুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম কোথাও কোনো দোকান খোলা নেই।দেখে খুবই খারাপ লাগলো হয়তোবা ক্রিমটা লাগালে উনি একটু হলেও আরাম বোধ করতো।তারপর রিক্সায় চড়ে পুরো বাজার এবং পুরো শহরটা ঘুরে ঘুরে অবশেষে একটি দোকানের দেখা মিললো।তারপর রিক্সা থেকে নেমে কাগজটা বের করে দেখিয়ে বললাম এই ক্রিমটি কি পাওয়া যাবে?উনি বললেন আছে তখন অনেকটাই স্বস্তি পেলাম।
ক্রিম টি কিনে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে চলে গেলাম।গিয়ে ওনার পোড়া জায়গায় লাগিয়ে দিলাম।তারপর ডাক্তার কিছু ওষুধ লিখে দিলেন তারপর আমরা ওখান থেকে বের হয়ে আবার রিক্সা নিয়ে সেই ওষুধের দোকানে চলে আসলাম।এবং ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সবগুলো ওষুধ কিনে নিয়ে তারপর বাসায় আসলাম।ময়না ভাবীকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারপর আমি আমার বাসায় চলে আসলাম।দুপুরবেলা একবার গিয়ে দেখে এসেছি তাদের খাবার-দাবারের কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা!তখন ভাবী বললেন যে গতরাতেই তিনি কিছু রান্না করে রেখেছিলেন সেগুলো দিয়ে তাদের দিন চলে যাবে তাই আর আমাকে রান্না করে দিতে হলো না।
সন্ধ্যার পর আবার একটু গিয়ে দেখে আসলাম কেমন আছে!হাতের অবস্থা বেশ গুরুতর অনেকটা ভোগান্তি দিবে তাকে বোঝা যাচ্ছে।আসলে একটা সুস্থ মানুষ কখন অসুস্থ হয়ে যাবে তা কেউ বলতে পারেনা।আজকে একটা ঈদের দিন ছিলো হয়তো বা তাদের অনেক পরিকল্পনা ছিলো পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ করে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু একটি দুর্ঘটনার জন্য তাদের সমস্ত পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে গেলো।ঈশ্বর কার ভাগ্যে কখন কি লিখে রাখে কেউ তা বলতে পারেনা।ঈশ্বর সব সময় সবার উপর সহায় হোক এই প্রার্থনা করে শেষ করছি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে আপু কার ভাগ্যে কখনো কি ঘটে বুঝা মুশকিল। সত্যি ময়না ভাবির ঘটনা পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। আর আমরা যতই সতর্ক থাকি না কেন বিপদ আসার সময় এমনিতেই আসবে।আসলে আজ ঈদের দিন তাই হয়তো নামাজের জন্য গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না।যাইহোক তারপর গাড়ি ডাক্তার ঔষধ সব কিছু পেয়েছেন এটাই অনেক। দোয়াকরি ময়না ভাবি তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন। ধন্যবাদ আপু পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ওহ খুবই দুঃখজনক ঘটনা ঈদের দিন এমন দূর্ঘটনা ৷ আসলে আমাদের জীবনে চলার পথে কখন কিভাবে দূর্ঘটনা ঘটবে তা কেউ বলতে পারবো না ৷ ঠিক যেমন ময়না ভাবির সাথে ঘটেছে ৷ ঈদের দিনে এমন দূর্ঘটনা ভাবা যায় ৷ যা হোক দূর্ঘটনা তো আর বলে আসে না ৷ দিনশেষে ময়না ভাবির সুস্থতা কামনা করছি ৷
আপনার পোস্টটি পড়ে সত্যি অনেক খারাপ লাগল ময়না ভাবীর জন্য। প্রতিবেশী আপনার এই ভাবি পাতিলের গরম দুধগুলো তার গায়ে পড়েছে। আসলে কখন কিভাবে মানুষের জীবনে দুর্ঘটনা আসে বলে আসে না। তবে এটি ঠিক কিছু কিছু দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। তবে আপনি তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছেন শুনে খুব ভালো লাগলো। আসলে মানুষের জন্য মানুষ। আল্লাহ সবাইকে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করুক। এবং ময়না ভাবির জন্য দোয়া রইল। যেন আল্লাহ তাআলা তাকে সুস্থ করে দেয় তাড়াতাড়ি।
সত্যি খুবই খারাপ লাগলো ঘটনাটি পড়ে, আসলে প্রতিবেশী এমন হওয়াই উচিত যে নিজে বিপদে পড়েও প্রতিবেশীর ঘুম নষ্ট করতে রাজি ছিলেন না। দোয়া করি উনি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠুক। উপস্থাপনা সুন্দর ছিলো তবে দুটো বানান ভুল ছিলো।
জ্বি ভাইয়া ঘটনাটি সত্যিই অনেক খারাপ লাগার মতোই।একে-অপরের দুঃখ কষ্ট বুঝতে পারা এবং সবসময়ই পাশে থাকার নামই হলো প্রতিবেশী।ছোটখাটো অনেক গুলো বানান ভুল ছিলো ভাইয়া সবগুলো ঠিক করেছি।ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া।দোয়া করবেন ভাইয়া।🙏🙏
শরীরের কোন অঙ্গ যেকোন ভাবে পুড়ে গেলে যে কতটা কষ্ট হয়, সেটার অভিজ্ঞতা আমারও কিছুটা রয়েছে দিদি। তবে আপনি যে ওই মানুষটাকে সাহায্য করেছেন এবং তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছেন, এটা সত্যিই প্রশংসনীয় একটি কাজ । তবে একটা জিনিস ভেবে একটু খারাপ লাগলো যে, উনার এবং উনার পরিবারের ঈদটা পুরোপুরি মাটি হয়ে গেল এই ঘটনার কারণে।