শৈশবস্মৃতি||আম্মুর অপারেশন এর টাকা চুরি হওয়ার ঘটনা।শেষ পর্ব।
♥️আসসালামুআলাইকুম♥️
আমি @bristy1, আমার বাংলা ব্লগ এর একজন সদস্য। আর আমার এই প্রিয় কমিউনিটির প্রিয় বন্ধুগণ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি৷সবার সুস্থতা কামনা করে আমার আজকের এই পোস্ট শুরু করলাম।
প্রথম পর্বের পর
যাই হোক অপারেশনের দিনটা ঘনিয়ে এলো। সেদিন সকাল বেলা যখন আম্মু ব্যাগের ভেতরের টাকাগুলো নিতে যাবে তখন দেখে ব্যাগ নেই। সব জায়গায় খুঁজেছে, কোথায় কোথায় রাখতে পারে সেসব জায়গায় খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও ব্যাগটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করলো। সবার রুমে আলমারিতে, কিন্তু কোথাও সেই ব্যাগটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তখন নানু বলেছে ব্যাগটা কি তুই সেদিন আলমারিতে রাখিস নি। কারণ এরপর যতবার রুমে এসেছি ততবার তো আমি কোন ব্যাগ চোখে দেখিনি। পরবর্তীতে আম্মুর মনে পরেছে যে ব্যাগটা তো খাটের স্ট্যান্ড এর সাথেই ছিল। কিন্তু এখন ব্যাগটা কোথায় গেল। তখন আর কি করার সবাই ধরে নিয়েছিল যে ব্যাগটা চুরি হয়েছে এবং টাকাগুলো চুরি হয়েছে।
পরবর্তীতে সেদিন আর অপারেশনের জন্য যাওয়া হলো না। সত্যি বলতে আমার নিজের কাছে খুব খারাপ লেগেছে এই কারণে যে স্বর্ণগুলো রাখার কারণে ব্যাগটা চোখে পড়েছিল। আর সেই স্বর্ণের উছিলায় ব্যাগের টাকা, বাকি স্বর্ণ সব চুরি হয়ে গেল। অনেক বেশি কষ্টদায়ক ছিল সেটি।সেখানে অনেক টাকা ছিল যা ওই সময়ের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চোর সেই খারাপ পরিস্থিতিটাকে আরো খারাপ করে দিয়েছিল। এদিকে আম্মুর অবস্থাও খুব খারাপ। তারপর ইমার্জেন্সিতে টাকা ব্যবস্থা করে তার এক সপ্তাহের মাথায় অপারেশনটা করা হয়। আলহামদুলিল্লাহ অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছিল এবং আম্মু সুস্থ হয়েছিল।
তারপর আম্মুকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু এই যে টাকা চুরি হয়েছে সেটা কে নিয়েছে এটা খোঁজার জন্য অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তখন আমাদের এক আত্মীয়- উনি বলেছেন একজন হুজুরের কাছে যেতে। তিনি বলতে পারবেন কে নিয়েছে। আসলে এটা বিশ্বাস করার মত ছিল না, কারণ কেউ এভাবে বলবে যে টাকা নিয়ে গেছে এটা কিভাবে সম্ভব। যাই হোক তবুও নানা বলল যে সেই হুজুরের কাছে গিয়ে দেখতে কে টাকাগুলো নিয়েছে এটা বলতে পারে কিনা। তখন হুজুরের কাছে কল দেয়ার পর হুজুর বলল একজন ছোট মেয়ে লাগবে। যার মাধ্যমে তিনি বের করবেন যে এই টাকাগুলো নিয়েছে। তখন ছোট বলতে আমি আর আমার খালামনি ছিলাম। কিন্তু আমি যেহেতু আমার নানুর বাড়ির আশেপাশের মানুষদেরকে ভালোভাবে চিনি না সেই হিসেবে আমি যাইনি আমার আন্টি গিয়েছিল।
সেই বর্ণনাটা ছিল অন্যরকম। তখন নাকি হুজুর আমার আন্টির হাতের বুড়ো আঙ্গুলের মধ্যে কালীর মত কিছু একটা দিয়েছিল। তারপর উনি কি যেন পড়ে আন্টির মাথায় ফুঁ দিলেন এবং আঙ্গুলে ফুঁ দিলেন। তারপর বললেন নখের দিকে তাকাতে ওই নখের মধ্যেই নাকি যে ব্যাগটা চুরি করেছে, টাকা নিয়েছে তার ছবি ভেসে উঠবে। তখন প্রথমত আন্টি বলছে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। পরবর্তীতে হুজুর বলল ধীরে ধীরে দেখো কাউকে দেখা যাবে। তখন আন্টি দেখলো প্রথমত চুল, ধীরে ধীরে চোখ এবং মুখটা ভেসে উঠলো। তখন আন্টি সাথে সাথেই তার নামটা বলে দিল। কারণ যে চুরি করেছে সে একটা ছেলে ছিল এবং ছেলেটা আমার নানুর বাসায় কাজ করতো।কিন্তু আন্টি যেহেতু দেখেছে সে হিসেবে এটা বিশ্বাস করার মতই ছিল।
সেদিন যখন আম্মু আমার কানের দুল গুলো ব্যাগের মধ্যে রেখে ব্যাগটা স্ট্যান্ডের মধ্যে রাখছিল তখন সেই ছেলেটা এবং তার মা সেখানে উপস্থিত ছিল। তারা দেখেছে ব্যাগটা ওখানে রাখা হয়েছে। তখন হুজুর বলেছিল ব্যাগটাকে একটা লাঠির সাহায্যে জানালা দিয়ে বের করে নিয়ে টাকাগুলো নেয়া হয়েছে এবং ব্যাগটাকে লাউ গাছের ঝাঁকের মধ্যে রেখে দেয়া হয়েছে। তখন মামা বাড়িতে কল দিয়ে বলল যে লাউ গাছের ঝাঁকের মধ্যে কোন ব্যাগ আছে কিনা দেখতে। সাথে সাথে আমার ছোট মামাসহ সবাই গিয়ে দেখি আসলেই সেখানে একটা ব্যাগ ঝুলানো রয়েছে,কিন্তু ব্যাগে কিছুই নেই
তারপর যখন বাড়িতে আসলো মামা আর ছোট আন্টি এবং এই ব্যাপারগুলো সবাইকে বললো তখন চোরেরা ভিন্ন ঘটনা উপস্থাপন করতে শুরু করল।তারা চুরিতো করল আবার বড় বড় কথাও শুরু করল। তারা বলেছে ঘরের মানুষই নাকি এই টাকা চুরি করেছে। নিজেরা চুরি করে এখন বাকিদের কে দোষ ফলাচ্ছে।পরবর্তীতে সে চোরদের বিরুদ্ধে কোন কিছুই করা গেল না।কারণ যে পাক্কা চোর সে কখনো স্বীকার করে না।তাই উপরওয়ালার হাতেই সব ছেড়ে দিয়েছিলাম।
তাদের রক্তে যে চুরি নামটা লেখা আছে সেটার প্রমাণ পেয়েছি কিছুদিন পরেই। সেই ছেলেটা একটা কাজে ঢাকায় থাকত। তখন সেখানে মোবাইল এবং টাকা চুরির জন্য সে থানায় বন্দী হয়েছিল। যেহেতু সে আমাদের টাকা চুরি করেছে সে হিসেবে আমরা নিজেরা কোন শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারিনি এবং আমাদের টাকা পয়সা গুলো ফেরত পাইনি। হয়তো বা পরবর্তীতে টাকা চুরি করার মাধ্যমে সে আবার ধরা খেয়েছে এবং শাস্তি পেয়েছে।ওই সময়ের জন্য টাকাগুলো অনেক প্রয়োজনীয় ছিল আমাদের জন্য। কারণ অনেকগুলো টাকা পাশাপাশি স্বর্ণ সব কিছুই সম্বল হিসেবে ব্যাগের মধ্যেই ছিল আর সেগুলো চুরি হয়ে গিয়েছে।যাইহোক যা হয়ে গিয়েছে তা তো আর কিছু করার নেই, তবে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলে হয়তোবা অনেক কিছুই ফল পাওয়া যায়।
সবাই অনেক অনেক ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। সবার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা রইল। সম্পূর্ণ পোস্টে আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। |
---|
♥️আল্লাহ হাফেজ♥️ |
---|
মোবাইল ও পোস্টের বিবরণ
ক্যামেরা | স্যামসাং গ্যালাক্সি |
---|---|
ধরণ | শৈশবের দুঃখজনক ঘটনা |
ক্যামেরা.মডেল | জে৫ প্রাইম |
ফটোগ্রাফার | @bristy1 |
লোকেশন | ফেনী |
আমি তাহমিনা আক্তার বৃষ্টি। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাংলায় কথা বলি,আমি বাংলায় নিজের মনোভাব প্রকাশ করি। আমি নিজের মত করে সবকিছু করার চেষ্টা করি। আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন জিনিস আঁকতে পছন্দ করি। বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকা, রঙ করা, নতুন নতুন কিছু তৈরি করা আমার পছন্দের কাজ। তবে রান্নাবান্না আমার ভালোলাগা, চেষ্টা করি সবসময় নিজে নতুনভাবে কিছু রান্না করার। ভ্রমণপ্রেমীদের মত আমিও ঘুরতে পছন্দ করি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
যদিও গল্পটি তোমার মুখে শুনেছি। তবে আজকে তোমার লেখার কারণে সবাই বিস্তারিত জানতে পেরেছে। তবে এরকম পদ্ধতিতে চোরকে দেখতে পাওয়ার বিষয়টি কেমন কেমন মনে হলো। হয়তো সত্যি তবে আমার কখনো এরকম এক্সপেরিয়েন্স নেই।
এই পদ্ধতিতে চোরকে ধরার বিষয়টি আমার কাছে খুব আশ্চর্য মনে হলো। এভাবে চোরকে ধরা হয় তো আমার জানা ছিল না। চুরি হওয়া জিনিসগুলো ফিরে না পেলেওজানতে পেরেছে চোরকে। অপারেশনের টাকা চুরি হওয়ার ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।
আপু আমাকে একটু দেন না উনার ঠকানা। কি কামেল লোক রে বাবা। শোনেই তো গা কেমন যেন লাগছে। আর ঐ চোর বেটারে কিছু করলেন না কেন। আমি হলেও তো আগে দু ঘা দিয়ে নিতাম। যাক সবচেয়ে বড় কথা হলো আন্টির অপারেশন টা সাকসেস হয়েছে।
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে দারুন একটি গল্প লিখে শেয়ার করেছেন। আসলে চোর ধরার জন্য যেকোনো পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। পদ্ধতিটা আপনার কাছ থেকে আজকে বেশ ভালোভাবে জানতে পারলাম। চুরি হওয়া টাকাগুলো ফিরিয়ে না পেলেও কে চুরি করেছিল এটা জানতে পেরেছিলেন। আমি হলে চোরকে আগে মেরে নিতাম। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।